Wednesday, May 8, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

মনন স্রোতের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, পাঠক সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। 

শুভ জন্মদিন

সম্পাদক প্যানেল

যে প্রজন্ম দেশের হাল ধরতে চলেছে আগামীতে, এখন সে প্রজন্মের যত্ন নেওয়া এবং ভবিষ্যতে সে প্রজন্মকে স্থান করে দেওয়া আমাদেরই কর্তব্য। রাষ্ট্রের কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আমাদের সকলেরই রয়েছে। সাহিত্য জগতটাও এর বাইরে নয়। সমাজের পুরাতন ব্যাবস্থাকে আধুনিক সভ্যতার আওতায় নিয়ে আসার মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহিত্যের অবদানও অনস্বীকার্য। ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্ত থেকেই এক বছর আগে আত্মপ্রকাশ করেছিলো মনন স্রোত। শুরুতে আমরা ভাবিনি এত'টা জনপ্রিয়তা পাবে। আজ এক বছর পরে মনন স্রোতের নিয়মিত পাঠক সংখ্যা দেশে বিদেশে প্রায় ৬ হাজার। সকলের সহযোগীতা ও ভালোবাসায় মনন স্রোতের পথচলা এখন অনেকটাই মসৃণ।

আজ মনন স্রোতের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে সকল পাঠক, লেখক এবং কবিদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতেও একটি ওয়েব ম্যাগাজিন হিসেবে মনন স্রোত তার সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করে, সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে কথা বলার ইতি টানছি।

                  শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                      জয় দেবনাথ
                          সম্পাদক

কবি প্রণাম

ছবিতে মনন স্রোতের মডেল শিল্পী সুমন / ক্যামেরায় দ্বীপজ্যোতি চক্রবর্তী

শৌভিক বাগচী

যাওয়ার আগে

যাওয়ার আগে কতগুলো
শব্দ দিয়ে গেলাম |
শব্দ গুলোর নীরব বিচরণ
হয় তো তোমার তুমিকে
তুলে দেবে বহুদূর
ওই আকাশে ,মেঘ সোহাগীর
বুক জুড়ে থাকবে তুমি |
তোমার শরীরে থাকবে
মাটির গন্ধ ,
চেতনায় অনিবার্য বৃষ্টি
এরই মাঝে বয়ে যাবে
নির্ঝরের স্রোত
অবিরাম ,অবিশ্রান্ত শব্দের স্রোত
মনন স্রোত |

সোনালী রায় বাগচী

বিবর্তনবাদ

মরুভূমির বালুকণা শুষে নেয়
রাতজাগা স্বপ্নের জলবিন্দু গুলিকে ।
পোড়া কাঠের গন্ধে ক্রমশঃ
সজীব হয়ে ওঠে চিতার আগুন ।
এও হয়তো আত্মশুদ্ধিই একপ্রকার ।
জমিয়ে রাখা ক্লেদ বেঘোর জ্বরের
প্রলাপ হয়ে উগরে দেয় লাভা ।
ক্রমেই স্তরীভূত হয় চেতনার অন্তর্দ্বন্দ্ব ।
ঘিরে থাকা উত্তাপ আচমকাই ছুঁয়ে দেয় তোমার হিমালয় কঠিন শীতলতাকে ।
বুঝি এখান থেকেই জন্ম ,
একটা নতুন জীবনের ।

শান্তনু চক্রবর্তী

ক্রিটিকাল রেস স্টাডিজ

কিছু কিছু শব্দের উচ্চারণে নীরবতা বিরাজ করে
আর ঠিক এরকমই একটি শব্দ বিভাজন
ছোটোবেলায় জল বিভাজিকা ও অনু পরমাণু বিভাজন ছাড়া
তেমন কিছুই ঠিক মনে নেই
এখন সাহিত্যের ছাত্র
থিওরি বা তত্ত্ব পড়ি
সহজ সহজ সব কথা কঠিনভাবে বলা
তেমনই একটি থিওরি ক্রিটিকাল রেস স্টাডিজ
রেসিজম কাকে বলে তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে আমাকে
আফ্রিকা বা আমেরিকা ভ্রমণ করতে হয়
ইন্টারনেটের সাহায্যে
কখনো ভাবিনি আমার শহরে
কালো দুজন মহিলা যখন অটোতে উঠে
আমার পাশে বসে
তামাটে চামড়ার ড্রাইভার ও আমি
নাকে হাত দিই আর ওরা নেমে গেলে
দু-দফায় থুতু ফেলে প্রায়শ্চিত্ত করি
এবং ওদের খাটাশ ও বর্বর ভেবে
চুপচাপ দুজনেই নিজের জাতিগত উচ্চাভিমান নিয়ে গর্ববোধ করি
তবে পরীক্ষায় কিন্তু আমি রেসিজমের উদাহরণ হিসেবে
আফ্রিকা ও আমেরিকার কথাই বলব।

সুমন পাটারী

আগুন ও ছাই

আমার সমস্ত সুখ দুঃখ
চারদিক থেকে এসে
ঢুকে গেছে একটি বিন্দুর ভেতর
সেই বিন্দুতে ফুটে উঠেছে একটি ফুল

ফুলটি রোদে মাথা তুলেছে
ফুলটি বাগানে পাপড়ি মেলছে
বিজ্ঞাপনের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।

দিখন্ডিত আকাশের নিচে
প্রজাপতির ভিড়,

ফুটতে ফুটতে ফুলটি আগুন হয়ে যাচ্ছে
দেখতে দেখতে আমি ছাই হয়ে যাচ্ছি।

অভীককুমার দে

উৎ সব

উৎসের চোখে চশমা,
কাচের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে উৎ সব !

কত কি ধরতে গেলে আরও আসে কত !
শত সহস্র যোজন দূরে রোদের আলো,
কাতর পাথর মাটি;
অদৃশ্য ঘোড়া পালাবার পথ খোঁজে
একা, ভবঘুরে বাধাহীন মায়াপথ
শূন্যে শীতল পাটি ?

এসব দেখেই চশমার জালে জল
জ্বলে চোখ, জলে ঝুলে থাকে উল্টো ছবি, তবু
কোনও বিরহের ঢেউ জাগা শূন্য বুকে
সুখের সুর খুঁজি মমনস্রোতে।

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

দা  গ 

মেঠোপথে প্রান্তরেখা ছোঁবার পরপরই
হাতছানি দেবো ভেবে রেখেছি মনে মনে
যখন চোরাই নুপূ র বেজে উঠবে উদোম ফাঁকামাঠে
তার কী সময় হবে উনুনআঁচ ফেলে রেখে দিগন্তে দৌড়ুবার

ঘর ছেড়ে যাবার আগে পরিপাটী রাখতে হয় সবকিছু
যাতে কোনো পরকিয়া দাগ না লেগে থাকে  ভুল করেও৷

সৈকত সরকার

হলুদি ব্যাপারি

১.
দাঁড়ান!
চমৎকার চমকানো একটি শিরোনাম খেয়ে যান,
স্বাদটা মন্দ নয়
মরিচ মশলা দিয়ে কষানো।

২.
চতুর্থ খুঁটির বারোআনাতেই ঘুণ,
কতিপয় চাটু অবসরে যাওয়া মেকুরের স্থলাভিষিক্ত।
অশ্বডিম্ব হতে বাচ্চা ফুটবে কবে তা নিয়ে তর্ক,
লেজধরে নাচানাচি মিথ্যা ফানুসের।
পৌনে পাতার বিজ্ঞাপনে ঢেকে গেলো -
শহরের বুকে ধর্ষিত ঝি মানুষের।।

৩.
স্বাবকতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ
তুমি হলুদি ব্যাপারি
এতই যদি ভয়
তবে ছাড়ো খবর!
তৈল মর্দন সার্থ উদ্ধার
সত্য দিলে কবর!

কল্যাণব্রত বসাক

দ্বান্দ্রিক সতী (শেষ পর্ব)

ওকে, এভাবে যখন যা খুশি হবে তা তো হয় না ।
বুঝলাম দেহ মনের এককেন্দ্রীকরণ হল- জাহান্নাম  বুঝলি অভিক জাহান্নাম ।
রবির কথা প্রায় শেষ না হতেই উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে উঠল শ্যামল ।
এমন সময় দুই ব্যাটারির টর্চ নিয়ে হাতে হন্তদন্ত হয়ে হাজির হল সান্টু । ও হাঁপাচ্ছে । কিছু একটা চমক দেওয়া খবর নিয়ে এসেছে  দেখেই বোঝা গেল। শ্যামলের হাত থেকে এক ঝটকায় সিগারেটের টুকরোটা নিয়ে  কষে দুই-টান দিলো। সবাই উত্তেজনায় টান-টান।
জানিস বন্ধু রুমিসি আর সমুদার বিয়ে হয়ে গেছে।  'বিনামেঘে বজ্রপাত ' বাংলায় একটা কথা আছে তার যথাযথ বোধগম্য করার সুযোগ উপস্থিত আগে কারোর হয়নি। এই মুহূর্তে  সকলে যথাযথ অর্থে বুঝালো বিনামেঘে বজ্রপাত কাকে বলে।

  হতবাক অভিক অস্ফুটে বললো ' বাচ্চা দুটি'। সিগারেটের সুখটান  বড় আয়েসে টেনে ফুস-স-স করে লম্বা ধোঁয়া ছেড়ে সান্টু জবাব দিলো সমুদার কাছেই থাকবে ।
তাইতো,এবার তুই ক'চে অভিক হেতি কি সতী ,না অসতী ,না নষ্টা,  নাকি সমুদারে এতদিন যাচাই কইরছে, সমুদা আসলে হেতি রে  ভালোবাসেনি। জোরালো জিজ্ঞাসা স্বপনের।অভিক মনে মনে ভাবলো জান জট পৃথিবীর সেরা জট, এই মহিলার চরিত্রের জট আরো সেরা। হেরে যাওয়া ভঙ্গিতে শেষবারের মত আমতা , আমতা  করে প্রকাশ্যে বললো - সবটাই নির্ভর করে সমাজের ঔদার্য আর দৃষ্টিভঙ্গীর উপর । একটা ঘন্টা আমি যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছি, রবি সেভাবে করেছে না, রবি যেভাবে করেছে শ্যামল সেভাবে করবে না , এর চেয়ে বেশি কিছু না ।

অনেক রাত হয়েছে । সবাই বাড়ির দিকে পা বাড়ালো । আসর মুলতুবি রইলো সেদিনের মত । যেতে যেতে ক্রিকেট প্রেমিক রবি বললো - সমাজের কষানো ফিল্ডিং আর কঠোর সমালোচনা নিন্দা বলের সামনে রুমিদির সতীত্বের উইকেট ভেঙে গেছে এটা ঠিক । কিন্তু যেহেতু এখনো বিতর্কিত , চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন উপরের এই থার্ড আম্পায়ার যিনি নিস্ফলক দৃষ্টিতে সব দেখেছেন ।
তিনিই শেষ কথা বলার মালিক ।

দুলাল চক্রবর্তী

শুধু তোমারী জন্য

ফাগুনের ফুড়ফুড়ে হাওয়া
কোকিলের কুহুতান,
মনে করে দেয়
নিজের অজান্তে,
ঋতুরাজ তব আগমন।
পলাশের রক্তলাল রং
মনের আকুতিকে ছু্ঁয়ে
বলে দেয় আমি এসেছি।
বরণ ডালা সাজায়ে
পুণ্য প্রভাতে তোমারি দ্বারে।
মনের তিয়াষ মনের বাসনা
হাজারো রঙিন স্বপ্ন!
অনন্তকাল ধরে রবে নিরবধি
ধরাতো যাবেনা তারে,
শত পসরার মাঝে
খুঁজেমরি শুধু আমি,
অবুঝ আমার চেতনা।
তবুও তৃপ্ত, গ্লানিহীন আমি
তব পদচারনায়।
অনুভবে শুধু পেতে চায়
আমারি আকুল বাসনা।

পূজা মজুমদার

প্রথম বার্ষিকী
            

গতবছরের আজটা
আছে  মনে   
স্মৃতিগুলি ধরা দেয় আনমনে
সেই সারাটা দিন খুনশুটি
তারপর
দুটি বিপরীত মন ডুবেছিলো
গুটি গুটি.

অবাক ছিলো দুজনাই,
অতীতকে কখনোও 
মনে না করে দেওয়ার
ছিলো রোশনাই!

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত দুটো....

একজন ছিলো ঘর ছূট্,  
একজন ছিলো নিজ বাড়ি

সুখের জোয়ারে

কিছুটা নিজের করে 
পাওয়ার দরবারে 
মেতেছিলো দুটি মন,

কিছু প্রেম এভাবে 
রয়ে যায় সমাপ্ত
আজ দুজনকে 
হারতে হলো সমাজের কাছে!

হারাতে হলো নিষ্পাপ বন্ধুত্ব ।

মানতে পারলো না সমাজ বুদ্ধুরাম ও পাগলীকে।
কেনো এমনটা হলো 
জবাবটা দিবে কে?
ফিরবে কি সেই ৭ মে??


মুকিম মাহমুদ মুকিত

গোরস্থান
  


এ হলো সমাধি
নতুন পাওয়া উপহার, 
জঙ্গলে পরিপূর্ণ শহর
চারপাশ ঘোর অন্ধকার। 
এরা রঙিন প্রতিবেশী
নিশ্চুপ ঘুমন্ত পাড়া,
কোন বাগানে বাঁশের বেড়া
সদ্য লাগানো চারা। 
এ শহরে যান্ত্রিকতা নেই
নেই কোন কৃত্রিমতা,
ভালো মানুষ সাজার প্রয়োজন নেই
নেই মিথ্যা আবেগিকতা। 
এ হলো নিয়তি
জানালা দরজা বিহীন ঘর,
এ শহর আপন হয়, 
যখন অন্য শহর করে পর।

মোঃ রুবেল

জীবন সংগ্রাম

অবিশ্রান্ত জীবন বহমান হিল্লোল দৌড় ঘোড়ায়।

নিবৃপিত লক্ষ্যে অধিষ্ঠিত হওয়ার ঘর্ম ক্ষরিত প্রচেষ্টায় ব্যস্ত সবাই।

কোথাও সুগম ,কোথাও বা দুর্গম পথের সমাহার ।

তবু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বুকে- করব জয় নিশ্চয় ;

সম্মুখপানে যতই  আসুক বাধা,উপদ্রব আর ভয়।

ডারউইনবাদানুযায়ী জীবনাসরে শুধু আপন অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিযোগিতার খেলা;

প্রস্তুতির প্রান্ত নেই, চলে প্রাত হইতে নিদ্রাহীন রাত্রি বেলা।

সংগ্রামে বিজিতরা করে চিত্ত বিলাসী নৃত্য ;

পরাভূতরা থাকে গুটিয়ে অল্প সময় নয়তো অনন্ত।

সাফল্য-ব্যর্থতা হল নৈসর্গিক নীতি;

নিবৃত্ত হবেনা কখনো তার গতি।

মনে রেখো---

ব্যর্থতায়  নয় যে শেষ;

শেষেতে থাকে শুরুটার পাদদেশ।


সামিন শুভ

বিচ্ছেদ


ব্রেকআপ দু'টি শব্দ
পাশে ডেট'টা লিখে নিও,
ধুকা দিয়েছে সে 
বলে ঘৃন্য অসৎ প্রিয়।
অপমানিত হবনা আর 
নিজেকে মানিয়ে নেব,
যদি চাওয়ার থাকে বলো
অনায়াসেই দিয়ে দেব।


মোবাইল ফোনে রেমিন্ডার-এ
ডেট'টা লিখে নিও,
প্রতি বছর ২৪'মে
যতখুশী গাল দিও।
বলো কুৎসিত মন
আমি লোচ্চা কি চরিত্রহীন 
অপবাদ নিয়েই বাচবো আমি 
কাটবে প্রহর দিন।।


অভ্রজিৎ দেবনাথ

সভ্যতা


এই পথে হেঁটে গেছে কত যাযাবর

দিগন্ত ছাড়িয়ে মরুপার মাড়িয়ে আশ্চর্য মিশর।

বালিয়াড়ির স্রোতে না জানি কোথা থেকে

উড়ে আসে এক টুকরো পাথর; পরশ পাথর!

সেই থেকে শুরু হয় বিকাশ,

অন্ধকার প্রজন্ম গুহার বাইরে এসে চোখ মেলে প্রথমবার।

আকাশে উদিত হয় রামধনু, ঝিলমিল করে চারপাশ।

তারপর বৃষ্টি আসে,

ধুয়ে নিয়ে যায় এক নিমেষে যা কিছু ছিল অর্জিত।

ভাঙ্গা-গড়া সব নিয়তির খেলা জেনেও

চাবুক দিয়ে নিজের আমিত্বকে প্রহার করি বিনা কারনে।

তখনও বসন্ত ছিল-

আমি বসন্তের গায়ে হলদে রং মাখি,

যা কিছু মহান ছিল নকল করি লুকিয়ে;

আরেকটু ভেতরে যাওয়ার বাসনা

দুনিয়ার সৃষ্টিকে গন্তব্যভ্রষ্ট করে দেয়।

আমার আমিত্বে সবকিছু জ্বলে-পুরে রাখ হয়ে যায়।

অবশেষে একদিন এই চিতাভস্ম থেকে বেরিয়ে আসে চারাগাছ;

আমি তাতে জল দিই,

আমার অলক্ষ্যে চারাগাছ ধীরে ধীরে বড় হয়ে

গড়ে তুলে সিনোজোয়িক যুগের নতুন সভ্যতা।



সোমেন চক্রবর্তী

একতারা


             
তাল কেটে যাওয়ার পরও যে গানটা গেয়ে চলেছি
সেই গান কখনো জাগরণী হয় না,
একথা বলে কোরাসের সব শিল্পীরা 
আমার হাতে একতারা ধরিয়ে চলে গেছে বহুদূরে

আজকাল তাই একা একাই বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়
বকুল ফুলের বাহানায় ঝরে পড়া গানের কলি খুঁজি 
নির্ভুল হবার মহড়া করি প্রতিটি কেটে যাওয়া তালের ফিকে রঙে

নিজের ভিতরের সব অস্থি মজ্জা ঝেড়ে চৌরাস্তার লাইটপোস্টের নিচে
লাউয়ের শুকনো খোলের মতো পড়ে থাকি  
কোনো এক তৃষ্ণার্ত বাউলের অপেক্ষায়।


উৎপল দেবনাথ

হাজার বছর পুরোনো


 হাজার বছর পুরোনো নীল রঙকে খোঁজি

রোদের গায়ে গা ঘেঁষে 

তপ্ত আগুন পুরে দগ্ধ হয়ে

আমি ম্লান,কিন্তু শরীরটা বেঁচে আছে।

হাজারও বছরের পথ বাকি

কিন্তু যাবো কোথায়?

তাও জানা নেই, তোমাকে ছুঁয়েছি কিনা

রঙবে রঙের কত রঙ আজ ধরা দেয়

তাতে ছুঁই কিন্তু স্বাদে অতৃপ্ত 

পুরোনো সেই নীল রঙের ভাবনা এখন নিজেকে অস্থির করে তোলে।

পাহাড়ের  গা বেয়ে চুঁয়ে পরা ঝরনা 

সাদর আমন্ত্রণ নিয়ে আসে।

আমি যাই অঙ্গবিহীন স্বাদ নিয়ে আসি।

পথটা জানা নেই, নিরুদ্দেশ

সেই রাজ আমলের রাজ্যে নাচনাওয়ালি ঘরে, ভোর বিছানায় উঠে

আবার সেই পথের খোঁজ।


হারাধন বৈরাগী

হারাধন বৈরাগী


                       

 

কৃষ্ণগহ্বরে

   
 পড়ন্ত রোদ।নবীনছড়ার বুক চিড়ে আসামআগরতলা লাইফলাইন ডোরাকাটা অজগরের মতো  শুয়ে আছে।পাশে গ্রামসেবককেন্দ্রের বারান্দায় একটা চেয়ারে পাঁচের মতো বসে আছে গৌতম।এই কেন্দ্রে বিএলডাব্লিউ সে। মোবাইলে একটি কন্ঠ বেজে উঠেছে, - আমি অন্ত:স্বত্তা- - - সব পাকা করে রেখেছি। কালই  আমাকে - - অন্যতায় মহিলাকমিশন--।গৌতমের ত্রিভুবনে সুনামী উঠেছে।সে এখন কাকে কী বলবে? স্ত্রী স্বেতা ও আত্মজ কৌস্তুবের মুখোমুখি কি করে দাড়াবে? আত্মহনন ছাড়া তার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।জয়পরাজয় নয়, মাথার ভেতর গুমড়ে ওঠছে কালনিশিডাক।

               হাতের মোবাইলটা ঢিল মারে জাতীয় সড়কে। আগরতলা থেকে গৌহাটিগামী সেকেন্ড-এসকর্টের যমদুতগুলো তার বিগড়ে যাওয়া মগজে  গনধোলাই দিতে দিতে ছুটে চলেছে কামরূপের দিকে। স্বেতা, কৌস্তব-ওরা যেন এই মুহূর্তে মঙ্গলের অধিবাসী।ইচ্ছে করলেও তাদের কাছে যাওয়া যাবে না।আঙুলের ডগা থেকে একটা তীব্র যন্ত্রণা উপরের দিকে ওঠে মাথা অবধি - - হুল ফুটাচ্ছে।

 

       মনে আছে স্বেতার সাথে বিয়ের পর ফিরাযাত্রায় ‘গৌতমের সাথে দেখা হয়েছিল তার  তুতোশালিকা এনার্জির সাথে।প্রথম দর্শনেই এনার্জি গৌতমকে খুব কাছে টেনে নিযেছিলো়।রাতে সে গৌতমের সাথে শুতে গিয়ে স্বেতাকে বলেছিলো-দিদি ওখানে শুলে জামাইবাবু ডিসটার্ব করবে নাতো? স্বেতাও রহস্যময়ীর মতো বলেছিলো-একদিন না হয় ডিসটার্ব করেই ফেললো! আর কোন কথাই বলেনি এনার্জি ।বিছানায় শুয়েই লেপের নীচে গৌতমকে জড়িয়ে ধরেছিলো।একটি পা তুলে দিয়েছিল তার প্রোস্টেটের উপর।রাতে এনার্জিকে ডিসটার্ব নয়, এনার্জির ডিসটার্বেই সারারাত ঘুমোতে পারেনি সে। তারপর দেও ছুড়ি লঙ্গাই বেয়ে অনেকজল গড়িয়ে গেছে ---।

          নারীনেত্রী এনার্জির সাথে ঘটনাচক্রে ফের দেখা - দামছড়াতে।আর সেদিনই বাইকে চেপে দশরথদেব সেতু পেরিয়ে তারা হারিয়ে গেল - - কানমুনের উদোমপ্রকৃতির কোলে। ।এনার্জির এনলার্জবাহু সেদিন উপেক্ষা করতে পারেনি গৌতম।তার মাঝে এমন একটা আদিম উচ্ছাস ছিল যা স্বেতার ছিল না।শরীরি বিভঙ্গে এনার্জি যেন  আগুনের গোলা।সোনামী উঠে আসলো জংগলের গভীরে।পুরোটা সময় তার মাথার ফুসেওঠা চুলগুলি টেনেহিঁচড়ে দিতে হয়েছিল গৌতমকে! এরপর মাসতিনেক কেটে গেছে ,আর দেখা হয়নি এনার্জির সাথে।অনেক কল এসেছে।কোন না কোন ছুতো‌য় সে এড়িয়ে গেছে।

       গৌতম বুঝেছে এনার্জির সাথে আর দেখা করা ঠিক হবে না।  স্বেতা বোন হলেও এনার্জি তাকে সহ্য করতে পারছে না। ।সেদিন উদোমবাহু এনলার্জ করে লালাভ চোখ তুলে বলেছিলো তাকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবেনা।যে করেই হোক একটা বিহিত করতে।স্বেতার প্রসঙ্গ তুলতেই বলেছিল,তোমার আমার মাঝে আর কোন উপস্থিতি আমার পছন্দ নয়, কথাটা মনে থাকে যেন! এরপর থেকে এনার্জির ডাকে আর সাড়া দিতে সাহস করেনি গৌতম।

 আগামীকাল রোববার।বাড়ি যাবার কথা।গৌতম কি বাড়ি যাবে? নিজেকে এই মুহূর্তে প্রেতাত্মা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।মনে হলো তার শরীরটা হালকা হয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাতাসে উড়ছে।কোথাও ভর মিলছে না।মনে হল যেন গাড়ি চলছে।হেডলাইটের তীর্যকআলো একটার পর একটা অন্ধকারপর্দা ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে ভেতরে ।মাথাটা ভীষণ ভারী। দমবন্ধ হয়ে আসছে।পৃথিবী থেকে মেঘ উবে যাচ্ছে।বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আশমানজমিন খাঁ খাঁ করছে। তার অন্তিমযাত্রা যেন মহাকাশের কোন কৃষ্ণগহ্বরের দিকে।যেখানে গেলে আর কিছু থাকবে না,স্থানকাল আবৃত হয়ে হারিয়ে যাবে।

 সহসা সম্বিত ফিরে এসেছে।কে যেন ভেতর থেকে কানের কাছে বারবার ফিস ফিস করে বলছে, আত্মহনন নয়, আত্মনিবেদন ছাড়া তোর কাছে আর কোন পথ খোলা নেই।তুই বাড়ি ফিরে যা। একমাত্র শ্বেতাই পারবে এই চরমসন্ধিক্ষণে কৃষ্ণগহ্বরের পথ থেকে তোকে ফিরিয়ে এনে এই নীলগ্রহের ধূলিতে বৃষ্টির আঘ্রাণ দিতে।

বিজন বোস

মানবজমিন

মানবজমিন পড়ে আছে নেই চাষবাস
আছে ধিক্কার নিন্দা শ্লোগান --মুর্দাবাদ ,
ক্রুঢ়তা হিংসা বিদ্বেষ  সন্দিহান
হৃদয়ে গহনে উড়ে অবিশ্বাসী নিশান ।
ধ্বংসাত্মক বাক্য অনাবাদের ফল
পতিত কলুষিত সার-বীজ স্নিগ্ধ শীতল জল।
প্রগাঢ় আঁধার ভয়ার্ত বিনিদ্র রজনী
জগদ্দল পাথরে ঠাসা একদা সমৃদ্ধির জমি ,
অবিচার অনাচার ব্যভিচার উত্পীড়ন ধ্বনি
হাহাকার হাস্যোল্লাস শুনায় উদ্ভট বাণী ।
মৃত্যুদূত ক্ষণে ক্ষণে দাপিয়ে বেড়ায়
তবু বাঁচার আশা উঁকি মারে মনের কোনায় ।

পৌলমী সাহা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ


সাদা কাগজে কালো কালিতে,

লিখেছো অনেক ছন্দ আর গীতি।

বাস্তবতা আর সকলের মনের কথা,

তোমার লেখায় হয়েছে সম্মুখীন।

আলো আঁধারে আনন্দ বিপ্লবে,

তোমার লেখা তোমার গীতি,

বহন করেছে যুগ যুগান্তর হতে,

অনেক অনুভূতি অনেক স্মৃতি।

দেশের জন্য  উজাড়  হতে,

সত্যের জন্য লড়াই করতে।

এবং ভালোবাসার জন্য উদার থেকে,

প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হতে!

সেকথা তুমি  বর্ণন করেছো,

তোমার প্রতিটি লেখনিতে।

কলম রূপী তলোয়ার,

বর্তমান যুগে বহু মূল্যবান।

নবীন  প্রয়াসের কাছে,

তা জানান দিতে তোমাকে ,

আবারো দরকার।

কারণ তুমি সেই অনন্য বিশ্বকবি,

আমাদের সকলের প্রিয় মননের রবি।


প্রীতম শীল

আনন্দের জায়গা এখানে

হারিয়ে গেছে জীবনের ছন্দ।
বুঝি না আর ভালো মন্দ। 
চারদিকে শুধু বিষাদের গন্ধ। 
মানুষে মানুষে শুধুই দ্বন্দ্ব।


দিকে দিকে শুনি ক্রন্দন। 
ভয়ে আতঙ্কে আছে মন।
পাল্টে গেছে ভাই সমাজ।
মানুষ নেইকো মানুষ আজ।


প্রতিযোগিতায় ছুটছে মানুষ। 
হারিয়ে গেছে মান আর হুশ।
সবাই বলে আমার শুধু আমার।
পৃথিবী আজ লাশের খামার।


এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। 
স্তব্ধ আজ রিতি নীতি।
চলছে ভাই প্রতিশোধের পালা।
পৃথিবীর পানে কঠিন জ্বালা।


জ্বলছে পৃথিবী পুরছে সবাই। 
যুদ্ধ নয় আর শান্তি চাই। 
এ সমাজ বদলে দাও। 
ভালোবাসা খুঁজে নাও। 


কমলেন্দু সেনগুপ্ত

মে দিবস

পেলব ডানার  এক সুকুমারী পাখি

গান ভাসিয়েছে ভারি বাতাসে। আজ ভোরে।
চাষি ক্ষেতে নিরেন দিয়েছে বোধহয়
মাটির বুনো গন্ধে চারপাশ ময়ময়।
লাল জবার কুঁড়ি আকাশে দিকে
হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে
যেন এক দল মেয়ে স্কুলের পোষাকে
নতুন দিনের প্রার্থনা সঙ্গীত গাইছে।

উহু! এসব বুক দিয়ে ভালো না বেসে

আমি অবশ্যই কোথাও এক পা নড়বো না
বৃষ্টি ফোঁটা আমার ঠোঁটে তৃষ্ণা পরখ করে
মরা ঘাস আমার পায়ে বিপ্লবের আকুলতা।
কেননা সময়ের আর বিশষ সময় নেই হাতে
যে আমায় আরও একবার দেখতে দেবে
মে দিবসের এই দিনটা লড়াই সংগ্রামে
ঘেমে নেয়ে বৃষ্টি স্নাত ফুল হয়ে হাসছে বিশ্বে।



বিশাল বিশ্বাস

বাবা

বাবা মানে একটি ভরসারস্হল                       খরস্রোতা নদে ঝিলমিল  জল                    বৃষ্টিস্নাত দিনে ছত্রের হাতল,                          কিংবা প্রখর রোদে ছায়াবৃত্ত অঞ্চল,,            

বাবা মানে পরিবারের সামনে হাসিমুখের আবরনে লুকিয়ে রাখা বেদনা,
নিজে সারাদিন না খেয়েও,উদরপূর্তির ফুটিয়ে তুলা বাহানা,                                               ৫টাকা বাঁচাতে দু'মাইল হাঁটা,,                   পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পূরোনো জামা-প্যান্টকেও নতুন বলে চালনা,,                         বাবা মানে অশ্রু যার ঘামে নির্যাসিত,,              শিঁকল যার আরাম-আয়সে বাঁধিত,,                   হাসি যার পরিবারের মুখে প্রস্ফুটিত,,            
বাবা মানে এক লড়াকু নেতা,,                     সংগ্রামী মেজাজী,আত্মবলিদানই যার জীবনগাঁথা!

আশিসরঞ্জন নাথ

হলদে পাখী


এসো গাঁদা ফুল

এসো চাঁপা ও শর্ষে ফুল

মন হারানো হলদে রঙের বাহারে। 
বসন্তের রঙ হলুদ
ভালবাসা ও প্রেম মাখামাখি 
মন উড়ে উড়ে বেড়ায়
কত কথা কত গান
মন জুড়ে বাউল বাতাস
একবার কে একজন বলেছিল
হলুদ নাকি সুবিধাবাদী রঙ
আমি তার মানে বুঝি নি আজও
শর্ষে,গাঁদা,চাঁপা কি তবে সুবিধাবাদী ! 
হলুদকে যে যা-ই বলুক
সে আমার প্রিয় রঙ
হলদে পাখি দেখলে আমার মন
প্রজাপতির মত উড়তে চায়
আমি হলদে পাখি হতে চাই তখন। 
হলদে পাখির ঠোঁট কিন্তু লাল
বড্ড বেশি রকমের লাল।


সুব্রত দেববর্মা

সেক্রেটারিয়েটে বসবে হাট


যেদিন সমস্ত কৃষকেরা মাঠ ছাড়বে

রওনা দেবে মহাকরণে

সেদিন হবে আসল বিপ্লব

শ্রমিকেরা সেদিন নামবে রণে।

পুঁজিপতি ইনভেস্টের 

সেদিন পাবে ভীষণ টের,

পেটে দায়ে নোট কামড়াবে

মাঠের দিকে ছুটবে ফের।

সেদিন হবে আসল বিপ্লব

কৃষকেরা যেদিন ছাড়বে মাঠ,

রাস্তার ধারে বিধানসভা

আর সেক্রেটারিয়েটে বসবে হাট।

সেদিন তুমি বুঝবে

লড়াইটা জাতের নয় ভাতের,

লড়াইটা বন্দুক আর গুলির নয়

মগজ এবং হাতের।


গোপালচন্দ্র দাস

শব্দ শিকার


মুখে লম্বা দাড়ি বিশেষজ্ঞ গবেষণা

ঘর নির্জন রাস্থায় প্রতিদিন শব্দ শিকার

পুরনো শব্দের ভিড় সবুজ মাঠে

নদী উজান বিলে ঘাতক মাছের পাখনা

পানকৌড়িরা উড়ে যায়।

শহরের ব্যস্থ বিপণী জোনাকির স্তুপ

উষ্ণ বাতাস অলস হলেই

জেগে উঠে নির্ঘুম আততায়ী

শব্দেরা মরে গেলে

আর কেউ উড়তে পারে না।


Tuesday, May 7, 2019

উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

"কী হলো ? এমন পানসে মুখ করে বসে আছিস কেন ?!" আশেপাশে কাউকে না দেখে রণিত ঠুকলো বিজিতকে।

প্রশ্নটা শুনেই রণিতের দিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বিজিত বলল, "ধুস্ , মাথাটা একেবারে বিগড়ে দিল ..."

- কে কী করল ? কী হলো আবার ?
- কী আর হবে ! যাচ্ছিলাম ঐ দিকে। শুনলাম, গলির মোড়ে একজন খুব বক্তৃতা করছেন শিক্ষা-শিক্ষক-শিক্ষাদান ইত্যাদি নিয়ে।

- তাতে তোর বিগড়ে যাবার কী হলো ? ভালোই তো হচ্ছিল। গলির মোড়ে সাধারণত এমন টপিক নিয়ে তো আলোচনা হয় না ! এগুলো তো স্কুল কলেজে হয়ে থাকে।

- তাইতো বলছি।
- তা'লে তুই বিগড়ালি কেন ? বরং বিগড়ে না গিয়ে তোর বোঝা উচিত ছিল উন্নয়ন এখন গলিমুখী। দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে।

- ঠিক। সেটাই বলছিলাম। আর বেশিদিন বাকি নেই।
- কী হবে ?
- দেখবি, কিছুদিন পরে মুদির দোকানেই প্যাকেট ভর্তি 'শিক্ষা' কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।

- তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে ! তুই হয়তো বা জানিস না, মুদির দোকান না হলেও, এমন বেশ কিছু দোকান চালু আছে- যেখানে সত্যিই প্যাকেট ভর্তি 'শিক্ষা' পাওয়া যায়।

- মানে ?! এ তুই কী বলছিস ?! প্যাকেটে শিক্ষা পাওয়া যায় ?  কী রকম  ?
- মানে খুব সোজা। বলতে পারিস, মুড়ির মতন।
- মুড়ির মতন ?!
- হ্যাঁ, আরেকটু মিহি করে যদি বলি, তবে বলব, ছাতুর মতন। চিবোতেও হয় না। জাস্ট ... ডাস্ট।ডাস্ট-শিক্ষা! জল দিয়ে গুলে, গিলে ফেললেই হল।

- তাই নাকি ?!
- বিলকুল। কিন্তু সেখানে একটাই শর্ত - ফেলো কড়ি, খাও বড়ি, ধরো ছড়ি।

- বাহ্ ! কী অদ্ভুতভাবে মিলে যাচ্ছে তো ! অনেকটা তোর মতোই তিনিও বলছিলেন চেঁচিয়ে-শিক্ষাদান-
শিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে।

- অ্যাই শোন, আমি কিন্তু চেঁচাচ্ছি না মোটেও। বরং খুব মিহি করে বলছি।

- আসলে কি জানিস, ঐ 'শিক্ষাদান' শব্দটার মধ্যেই মনে হয় কিছু একটা গন্ডগোল আছে।

- মানে ?! বুঝতে পারলাম না তোর কথা !
- আমার কী মনে হয় জানিস ? শিক্ষা, মোটেও দানের বিষয় নয়। শিক্ষা শুধুই গ্রহণের বিষয়। অর্থাৎ শিক্ষা শুধু গ্রহণযোগ্য। দানযোগ্য নয়। শিক্ষা দান করা যায় না।

- যাঃ বাবা ! এ আবার কেমন কথা ! কীসব বাজে বকছিস ?! গ্রহণ থাকলে তো - দানও থাকবে। দান ছাড়া গ্রহণ কী করে হবে ?
- না, সেটা শুধু বস্তুর ক্ষেত্রেই খাটে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়। তবে এটাও ঠিক যে শিক্ষা এখন বস্তুই। জাস্ট কমোডিটি । পণ্য ।

- অ্যাই দ্যাখ, তুই কিন্তু আবার বেলাইন হয়ে যাচ্ছিস।

- আমি মোটেই বে-লাইন হচ্ছি না।
- তবে এসব কী বলছিস তুই ?! যুগ যুগ ধরে শিক্ষাদান নিয়ে কত কথা হয়ে গেল। আর আজ কিনা তুই বলছিস ....

- শোন, আমি শুধু একটা সোজা কথা বলছি - মানুষের পক্ষে মানুষকে শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। যদি সত্যিই সম্ভব হতো- তবে এতো যুগ পরে আমাদের এই হাল হতো না। এ নিয়ে মানুষ মানুষকে দোষারোপ করত না, আপশোসও করত না।

- মানে ? ঠিক কী বলতে চাইছিস তুই ?!

- আসলে কি জানিস, আমরা সবসময় ভুল করেই ভাবি - আমরা কিছু দিচ্ছি ... অন্যকে । এই দিচ্ছি, সেই দিচ্ছি, শিক্ষা দিচ্ছি, আরো কত কিছু দিচ্ছি - ইত্যাদি। আসলে এই ভাবনাতেই  একটা মস্ত ভুল রয়েছে।

- কেমন ? 
- হ্যাঁ । আসলে যুগ যুগ ধরে এত শিক্ষা পেয়েও আমরা এই শিক্ষায় আজও শিক্ষিত হতে পারলাম না যে - যা কিছু আমরা হাতিয়ে নিচ্ছি- নিজের মনে করে, সেগুলো কিছুই আমাদের নয়। সবই...প্রকৃতির। ......অথচ চেয়ে দ্যাখ, প্রকৃতির এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই !

- তাতে কী হলো ?! প্রকৃতির মাথা থাকলে তো- মাথা ব্যথা হবে! না কি ?

- তুই নিজেও ভালো জানিস, যে বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলছি, তাতে মাথা আর লেজের কী সম্পর্ক।

- তা বুঝলাম। কিন্তু তোর কথা মতো -শিক্ষা যদি শুধু গ্রহণ করার বিষয়ই হয়, দানের বিষয় না হয়, তবে তো শিক্ষক শব্দটার কোনো মানেই থাকে না।

- কেন থাকবে না ? আছে। অবশ্যই আছে। তিনি তো পথ দেখাবেন। কিন্তু সেই পথ চলতে গিয়ে পথিক কী দেখবেন, কী শুনবেন, কী ধরবেন, কী নেবেন, কী বুঝবেন - এসব একান্তই তার নিজের বিষয়। এটা কেউ তাকে শিখিয়ে দিতে পারে না।

- কিন্তু আজকাল তো দেখছি, যে কেউই একটা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে শিক্ষা সম্পর্কে শিক্ষাদান করতে থাকেন ! কী দিতে হবে , কীভাবে দিতে হবে , ইত্যাদি। ....এটা তবে কী ?

- শিক্ষার হদ্দমুদ্দ । শিক্ষার নাম করে কিছু পুরোনো পদ্ধতি বা ধার করা বিষয় উগলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। ঐ ক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষার বিষয়টি অধরাই থেকে যায়। সস্তার বাজিমাত হয়। প্রকৃত - অধরাই থাকে । তাতে অবশ্য একশ্রেণির লাভই  হয়।

- তুই যে ঐ বারবার প্রকৃত-প্রকৃত বলছিস, সেটা আসলেই কী....বল দেখি।

- সেটা ....জাস্ট ইউনিক। মৌলিক, স্বতন্ত্র। এর মানে, শিক্ষাটা তখনই প্রকৃত, যখন সেটা প্রত্যেকের জন্যই স্বতন্ত্র, ভিন্নভাবে অর্থবহ।

- যাঃ বাবা ! তবে তো দেখছি,তোর কথা মতো-
এককোটি মানুষের শিক্ষার জন্য এককোটি স্কুলের দরকার !!
- মোটেও না। স্কুল দিয়ে শুধু কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি চালু হয় মাত্র। এগুলোও আবার কারো কারো নিজস্ব। এতে শিক্ষা আর কতটুকু হয় ? যদিও বা কিছু হয়- সেটা জাস্ট - সিন্ধুতে বিন্দুর মতো !

- সব গুলিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি জল মিশিয়ে তরল করে বল না শুনি। তবে বুজতে পারব।

-অ্যাই দ্যাখ, যেখানে জল কিছুতেই মেশানো যায় না সেখানেও জল মেশাতে বলছিস !
- তবে উপায়টা কী ?

- আচ্ছা, তোর মনে আছে ? সুনির্মল বসুর সেই কবিতাটি ? "সবার আমি ছাত্র" ?
- আছে।

- স্যার কিন্তু আমাদের সেটা মুখস্থ করিয়ে শেখাননি। স্যার পড়তেন। আমরা শুনতাম। তাতে প্রতিটি শব্দ তার যথার্থ মানে নিয়ে আমাদের অনুভবে ধরা দিত। বলতে পারিস - মরমে পৌঁছে যেত।

- তাইতো ! সেটা তো শুনে শুনেই শিখেছিলাম।

- হ্যাঁ। "আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে / কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে।"
- আবার -  "নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম আপন বেগে চলতে।"

- দ্যাখ, এখানে ইঙ্গিত আছে, কিন্তু আদেশ নেই। বলা আছে, চলন আছে, গমন আছে, গতি আছে, আশা আছে । কিন্তু হতাশা নেই। স্বার্থপরতা নেই । কেড়ে নেওয়া নেই। ইচ্ছে পূরণের ইচ্ছে আছে। কিন্তু যাতনা নেই। শৃঙ্খলার নামে - শৃঙ্খল নেই।

- একদম। তবে কি তুই এখন ভোটাভুটি করতে যাচ্ছিস ?
- কিসের জন্য ?
- গণতন্ত্রের স্বার্থে।
- গণতন্ত্র ?!
- বাহ্ রে ! তুই কি এটাও জানিস না যে, গণতন্ত্র শব্দটা উচ্চারণ না করে এখন পিঁপড়েরাও মুখে অন্ন তোলে না ! ওদেরকেও এখন গণতন্ত্রের মানে জানতে হয়।
- এত্তসব জানি না।
- কিন্তু তোকে তো জানতে হবে। তোকে বুঝতে হবে, যেভাবে বোঝা উচিত ঠিক সেভাবে।

- শিক্ষা দিচ্ছিস ?

- আরে নাহ্ ! কিন্তু তোকে বুঝতে হবে, কোনদিকে পাল্লা ভারী - শিক্ষাদানের পক্ষে, নাকি শিক্ষাগ্রহণের পক্ষে !

- আবার ঝামেলা করছিস !

- দেখবি শিক্ষাদানের লাইনটাই বড় হয়ে গেছে। ঐখানেই ভিড় বেশি। আর অন্যপক্ষে, মানে ঐ শিক্ষাগ্রহণের লাইনে দাঁড়িয়ে তোর তখন জামানত জব্দ হবে।

- হোক জামানত জব্দ। তবুও আমি শিক্ষাগ্রহণের স্বার্থেই শিক্ষাদান নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ছাড়ছি না।

- দেখিস ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আবার ঘাট হয়ে যাস্ না যেন !
- কী বললি ?
- না, বলছিলাম - রবি ঠাকুরের "তোতা কাহিনী"র তোতার কথাটা মনে রাখিস। আর অনিয়ম, অনাচার আর অনাসৃষ্টির মাঝেও বেঁচে থাকার শ্বাসটুকু জিইয়ে রাখিস । নয়তো .......

- নয়তো কী ?
- নয়তো বিপদ হতে পারে।
- কেমন ?
- হয়তোবা রবিঠাকুর আবার জেগে ওঠে এসে জিগ্যেস করতে পারেন -
বলতো দেখি, আমার এই পঙতির গূঢ় অর্থটা কী ?

   " আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি
     রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি ?
     শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার
        নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।"

বিজিত খুব বিমর্ষ হয়ে রণিতের দিকে  চেয়ে বলল,
বুঝলি, দূঃখ একটাই - যখনই কোনো একটা বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে অনেক দূর এগিয়ে যাই - দেখি, গুরুদেব যেন শেষ কথাটি বলে দিয়ে চুপটি করে বসে আছেন !!

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...