Wednesday, May 8, 2019

হারাধন বৈরাগী

হারাধন বৈরাগী


                       

 

কৃষ্ণগহ্বরে

   
 পড়ন্ত রোদ।নবীনছড়ার বুক চিড়ে আসামআগরতলা লাইফলাইন ডোরাকাটা অজগরের মতো  শুয়ে আছে।পাশে গ্রামসেবককেন্দ্রের বারান্দায় একটা চেয়ারে পাঁচের মতো বসে আছে গৌতম।এই কেন্দ্রে বিএলডাব্লিউ সে। মোবাইলে একটি কন্ঠ বেজে উঠেছে, - আমি অন্ত:স্বত্তা- - - সব পাকা করে রেখেছি। কালই  আমাকে - - অন্যতায় মহিলাকমিশন--।গৌতমের ত্রিভুবনে সুনামী উঠেছে।সে এখন কাকে কী বলবে? স্ত্রী স্বেতা ও আত্মজ কৌস্তুবের মুখোমুখি কি করে দাড়াবে? আত্মহনন ছাড়া তার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।জয়পরাজয় নয়, মাথার ভেতর গুমড়ে ওঠছে কালনিশিডাক।

               হাতের মোবাইলটা ঢিল মারে জাতীয় সড়কে। আগরতলা থেকে গৌহাটিগামী সেকেন্ড-এসকর্টের যমদুতগুলো তার বিগড়ে যাওয়া মগজে  গনধোলাই দিতে দিতে ছুটে চলেছে কামরূপের দিকে। স্বেতা, কৌস্তব-ওরা যেন এই মুহূর্তে মঙ্গলের অধিবাসী।ইচ্ছে করলেও তাদের কাছে যাওয়া যাবে না।আঙুলের ডগা থেকে একটা তীব্র যন্ত্রণা উপরের দিকে ওঠে মাথা অবধি - - হুল ফুটাচ্ছে।

 

       মনে আছে স্বেতার সাথে বিয়ের পর ফিরাযাত্রায় ‘গৌতমের সাথে দেখা হয়েছিল তার  তুতোশালিকা এনার্জির সাথে।প্রথম দর্শনেই এনার্জি গৌতমকে খুব কাছে টেনে নিযেছিলো়।রাতে সে গৌতমের সাথে শুতে গিয়ে স্বেতাকে বলেছিলো-দিদি ওখানে শুলে জামাইবাবু ডিসটার্ব করবে নাতো? স্বেতাও রহস্যময়ীর মতো বলেছিলো-একদিন না হয় ডিসটার্ব করেই ফেললো! আর কোন কথাই বলেনি এনার্জি ।বিছানায় শুয়েই লেপের নীচে গৌতমকে জড়িয়ে ধরেছিলো।একটি পা তুলে দিয়েছিল তার প্রোস্টেটের উপর।রাতে এনার্জিকে ডিসটার্ব নয়, এনার্জির ডিসটার্বেই সারারাত ঘুমোতে পারেনি সে। তারপর দেও ছুড়ি লঙ্গাই বেয়ে অনেকজল গড়িয়ে গেছে ---।

          নারীনেত্রী এনার্জির সাথে ঘটনাচক্রে ফের দেখা - দামছড়াতে।আর সেদিনই বাইকে চেপে দশরথদেব সেতু পেরিয়ে তারা হারিয়ে গেল - - কানমুনের উদোমপ্রকৃতির কোলে। ।এনার্জির এনলার্জবাহু সেদিন উপেক্ষা করতে পারেনি গৌতম।তার মাঝে এমন একটা আদিম উচ্ছাস ছিল যা স্বেতার ছিল না।শরীরি বিভঙ্গে এনার্জি যেন  আগুনের গোলা।সোনামী উঠে আসলো জংগলের গভীরে।পুরোটা সময় তার মাথার ফুসেওঠা চুলগুলি টেনেহিঁচড়ে দিতে হয়েছিল গৌতমকে! এরপর মাসতিনেক কেটে গেছে ,আর দেখা হয়নি এনার্জির সাথে।অনেক কল এসেছে।কোন না কোন ছুতো‌য় সে এড়িয়ে গেছে।

       গৌতম বুঝেছে এনার্জির সাথে আর দেখা করা ঠিক হবে না।  স্বেতা বোন হলেও এনার্জি তাকে সহ্য করতে পারছে না। ।সেদিন উদোমবাহু এনলার্জ করে লালাভ চোখ তুলে বলেছিলো তাকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবেনা।যে করেই হোক একটা বিহিত করতে।স্বেতার প্রসঙ্গ তুলতেই বলেছিল,তোমার আমার মাঝে আর কোন উপস্থিতি আমার পছন্দ নয়, কথাটা মনে থাকে যেন! এরপর থেকে এনার্জির ডাকে আর সাড়া দিতে সাহস করেনি গৌতম।

 আগামীকাল রোববার।বাড়ি যাবার কথা।গৌতম কি বাড়ি যাবে? নিজেকে এই মুহূর্তে প্রেতাত্মা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।মনে হলো তার শরীরটা হালকা হয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাতাসে উড়ছে।কোথাও ভর মিলছে না।মনে হল যেন গাড়ি চলছে।হেডলাইটের তীর্যকআলো একটার পর একটা অন্ধকারপর্দা ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে ভেতরে ।মাথাটা ভীষণ ভারী। দমবন্ধ হয়ে আসছে।পৃথিবী থেকে মেঘ উবে যাচ্ছে।বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আশমানজমিন খাঁ খাঁ করছে। তার অন্তিমযাত্রা যেন মহাকাশের কোন কৃষ্ণগহ্বরের দিকে।যেখানে গেলে আর কিছু থাকবে না,স্থানকাল আবৃত হয়ে হারিয়ে যাবে।

 সহসা সম্বিত ফিরে এসেছে।কে যেন ভেতর থেকে কানের কাছে বারবার ফিস ফিস করে বলছে, আত্মহনন নয়, আত্মনিবেদন ছাড়া তোর কাছে আর কোন পথ খোলা নেই।তুই বাড়ি ফিরে যা। একমাত্র শ্বেতাই পারবে এই চরমসন্ধিক্ষণে কৃষ্ণগহ্বরের পথ থেকে তোকে ফিরিয়ে এনে এই নীলগ্রহের ধূলিতে বৃষ্টির আঘ্রাণ দিতে।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...