Saturday, September 21, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

সম্পাদকীয়

সবসময় সব সংখ্যা বিনোদনের হয়না।
মাতৃভাষা যখন আক্রান্ত হয়, মানুষ তখন কোন ভাষায় প্রতিবাদ করে! এই প্রশ্নটা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। বাংলা ভাষার ইতিহাস এবং চলার পথ এখনও মসৃণ নয়, সেটা পৃথিবীর যে ক'টা বাঙালি জানে। ভারতীয় বাঙালিরা তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

এই সংখ্যায় আপনি প্রতিবাদ করার একটা বার্তা তো পাবেনই। মানসিকতা পরিবর্তন করার জন্য গবেষণামূলক প্রবন্ধও পাবেন। আমরা চেষ্টা করেছি সেভাবেই সাজানোর। প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যে মানুষগুলো নিরলসভাবে শ্রম দান করেন তাদের মধ্যে মডেলিং বিভাগের দুজনের নাম অন্যতম। সুমন এবং দ্বীপজ্যোতি স্বার্থহীনভাবে নিরিবিলি মনন স্রোতকে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে শ্রমদান করছেন, তাদের মনন স্রোত পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রতিটি সংখ্যার প্রতিটি ত্রুটির জন্য সম্পাদক দায়ী। সব দায় মাথা পেতে নিলাম। সবশেষে একটি ওয়েব ম্যাগাজিন হিসেবে মনন স্রোতকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে সহযোগীতা করবেন এই আশা রাখছি।

জগতের সকলের মঙ্গল হোক।
জয় হিন্দ।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত

ছবিতে : সুমন ও সহযোগীতাবৃন্দ || ক্যামেরায় : দ্বীপজ্যোতি

দীপক দাস

অহংকার৷

অহংকার সম্পর্কে  সবার  একটি নেতিবাচক  ধারণা  আছে, অথচ অহংকারের ইতিবাচক দিকটির প্রতি  আমরা উদাসীন   এই প্রবন্ধ অহংকারের ইতিবাচক  দিকগুলি তুলে  ধরবে।

আমরা  ভারতবাসী  হিসাবে কী আমাদের  অহংকার? আমাদের  একটা গৌরবময় অতীত আছে। আমাদের  দেশ সারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে  বেদ,উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত ওগীতা।অতীতকে নিয়ে  এই গর্ব বা অহংকার  আগামী দিনের  উন্নতির  সহায়ক  নয় কী?আমরা  গর্ব করি ভারত  মাতার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে।  বিদ্যাসাগর,রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী,নেতাজী, বিবেকানন্দ,জওহরলাল এদের নিয়ে। সমগ্র  ভারতবাসীর কাছে এরা প্রেরণা স্বরূপ।এই হিংসাদীর্ণ পৃথিবীতে ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান মহাত্মাগান্ধী উপহার দিয়েছেন অহিংসা মন্ত্র ওতার প্রয়োগ,তাইতো আইনস্টাইন  বলেছেন, গান্ধীর মত একজন ব্যক্তি এই পৃথিবীতে  আগে কখনো আসেনি,আর কখনো আসবেনা।প্রায় প্রতিটি জাতির এরকম জাতীয়  বীর  আছে, যদি না থাকেতবে তা সে জাতির দুর্ভাগ্য এবং সে জাতিজগতে শ্রেষ্ঠ  আসন লাভ করতে পারবেনা।অহংকার মানুষের  এক মহত্তম প্রবৃত্তি যার জন্য সে মরতে দ্বিধা  করেনা।যেমন  মহাভারতের  যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে  দুর্যোধনকে পান্ডবদের  মধ্যে  যে কোন একজনের সংগে যুদ্ধ করার আহ্বান করা হয়।দুর্যোধন  অহংকারী, কারন সে বীর,সে বেছে নেয় ভীমকে।এই অহংকারের জন্যই দুর্যোধন চিরকাল মানুষের  মনের মধ্যে  থেকে  যাবে। কর্ণের ছিল  দানের  অহংকার। সে সব বুঝেও তার অক্ষয় কবচ কুন্ডল দান করে দেয়।এই অহংকার প্রতিটিমানুষ অর্জণ করুক।পুরুরাজা পরাজিত, বন্দী,তবু সে অহংকার  পোষন করে, সে রাজার মত ব্যবহার চায়।এ ধরনের  রাজা ইতিহাসেে কটি দেখাযায়?
দারাশিকো'কে হাতির পিঠে করে নিয়ে  যাওয়ার সময় এক ভিখারি ভিক্ষা চাইল তার কাছে, সে অবস্থায় ও বন্দী দারাশিকো তাঁর গায়ের  একমাত্র  আলোয়াানটি ভিক্ষুককে দিয়ে  দেয়।তাঁর  কাছে  দেওয়োার মত কিছু  ছিল না।রাজকীয়  অহংকার

ন দারাশিকোকে  এই মহান কাজে অনুপ্রেরণা  দিয়েছে। মৃত্যু মুহূর্তে র এই অহংকার  কালের  কপোততলে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে।
তারাশংকরের জলসাগর বইয়ে এক ক্ষয়িষ্ণু  জমিদার তাঁর আজন্মের অহংকার  সে ছাড়তে নারাজ।তার আভিজ্যাত্যের অহংকার  তাঁকে  করো কাছে  ছোট  হতে বাধা দেয়।বইয়ে তার শেষ পরিনতি  অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর এইরূপবেেদনাদায়ক বলেই চরিত্রটি আজো এত উজ্জ্বল।প্রতিটি মানী মধ্যেই কিছু না কিছু অহংবোধ আছে।তবেযদি কেউ এ সম্পর্কে খুব  সচেতন  থাকেতাকে আমরা অহংকারী বলে থাকি।

নারী পুরুষের ক্ষেত্রে যাদের  রূপের অহংকার  আছে,সে নিজেকে  সহজে খলো করেনা।আর যৌবনের  ধর্মই হল অহংকার বা অহংকারীকে জয় করার চেষ্টা। সুতরাং অহংকারীইতো কাম্য।
রাজনীতির  ক্ষেএে আজকে এত অধঃপতনের কারন কী?কারন অহংকারী লোকের  রাজনীতিতে একান্ত অভাব।আজকাল বেশির ভাগ রাজনীতি বিদদের বংশ বিদ্যা,ধন,কোন কিছুর জন্য গর্ব করার মত কিছু  নেই  তাদের।তাইতারাযে কোন কাজ করত দ্বিধা নেই।
পৃথিবীর  দিকে  যদি  তাকাই সেখানে ও বিচিত্র  রূপে  অহংকারকে দেখব।ইংরেজ  অহংকার করে তাদের  শ্রেষ্ঠ  নাট্যকার শেকসপিয়ার  এর জন্য। ফরাসীদের অহংকার তাদের  শ্রেষ্ঠ  ছবি মোনালিসার জন্য। জার্মানির অহংকার  তাদের  আর্যরক্তনিয়ে।জাপানীদের অহংকার দেশপ্রেম ও রাজার প্রতি আনুগত্য নিয়ে। দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধে  জাপানের  হাজার  হাজার  যুবক হারিকিরির মাধ্যমে জীবন  বিসর্জন  দেয় পরাজয় বরনের গ্লানি থেকে  বাঁচার  জন্য। জাপান ও জার্মানি  আজও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ  দেশ। রাশিয়ার  গর্বের  জায়গা হল টলস্টয়, তুর্গেনিভ,গোর্কি চেখভ, দস্তইফেস্কি।আমেরিকানদের অহংকার তাদের  গনতন্ত্র  নিয়ে। ব্রাজিলবাসীর অহংকার  তাদের  কালোমানিক পেলেকে নিয়ে।  গুর্খাদের অহংকার  তাদের  বিশ্বস্ততা  নিয়ে, সারা পৃথিবী  জানে একথা।তারা জীবন দিয়ে তা রক্ষা করে।একটি  দেশকে বড় হতে সাহায্য করে এমন অহংকার  তো কাম্যই।
তাইতো বিশ্বকবি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  বলেছেন, মানুষ  এই জন্য  অহংকার  করতে পারেযে,সেই  ঈশ্বরের  স্রষ্টা। কেননা এই সৃষ্টির পেছনেএবং সৃষ্টির সকল কিছু জগড়েযে পরম তিনি  যা কিছু  দেখেন-এই আমির চোখ দিয়াই দেখেন।নিজেকে  তিনি  মানুষের  ব্যক্তিচৈতন্যের ভেতর দিয়ে  অনন্ত ঐশ্বর্যে,অনন্ত মহিমায় অনন্ত সৌন্দর্য মাধুর্য  অবলোকন  ও আস্বাদন করছেন। আমি না হলে এ দেখা  যে সম্পূর্ন হতনাতা তানয় সম্ভবই হতনা।তাই আমি কবিতায় কবি বলছেন "আমরই চেতনার রংএ পান্না হল সবুজ  চুনি  উঠল রাঙা হয়ে/আমি  চোখ  মেললুম  আকাশে  /জ্বলে উঠলো  আলো।
তুমি সুন্দর মানুষ  একথা  বলে বলেই বিধাতা  জানতে পারেন  তা।মানুষ  চেতনায় ঘনীভূত  হয়ে আমি  রূপে যে পর্যন্ত ডেকে  না বলবে আমি ভালোবাসি সে পর্যন্ত বিধাতা কী  করে জানবেন  তাঁর নিজের  প্রেমময়ত্বের সন্ধান?
তাই  কবির কথায় বলা যায়," এ আমার  অহংকার /সমস্ত মানুষের  হয়ে/ মানুষের  অহংকার  পটেই বিশ্বকর্মার বিশ্বশিল্প"।

সত্যরঞ্জন দে

স্বাধীনতা 

তুমি  কি পেরেছ ,বলি প্রদত্ত 

বীর সন্ততির স্বপ্ন সাকার করতে?

দিয়েছেতো ঢের  জীবন, 

কিন্তু  স্বর্গ যাত্রীর উপচে ভিড়ে, বৈতরণীতেই সলিল সমাধি !

এখনো তুমার পথে পথে ,ভিক্ষুকের ভিড় 

ধর্মযোগীর লালসায় ,বিবস্র মা-ঝি 

কর্মযোগীর রক্তে ,সিক্ত তুমার দেহ 

ধর্ম-বর্ণের বেড়া জালে তুমি আবদ্ধ !

অদ্ভূত এক অন্ধকার , তুমার আকাশে 

চন্দ্র সূর্য্যের আলোয়, কিছুই দেখা যায় না

মানুষ শঙ্কায়   ঘুরপাঁক খাচ্ছে 

এখন আলেয়ার আলোই ,একমাত্র ভরসা !

স্বাধীনতা , তুমি আছোতো এখনও 

তেরঙ্গা সজ্জিত রাজপথে ,শহীদের বেদিতে 
রাজা -মহারাজার প্রগলভে ,ইতিহাস পাঠ্যে 

কচি -কাঁচাদের মিষ্টি মুখে ?

সামিন শুভ

মৃত্যু ছবি

মরণের মরণ পেতে
বৃদ্ধতার কিছু চায়না,
জীবনের বিষাদ যেন
মৃত্যু নামের আয়না।
নিজেকে হারায়ে শুধু 
মরণ ব্যাধি খুঁজি,
মরণ আমার খেলছে সাথে 
লুকোচুরি রোজি|

স্বপ্না দেবনাথ

দোটানা


কেন জানিনা আজ নিজেকে এত একা লাগছে,

না পারছি ঘুমোতে, না পারছি বসে থাকতে।

মনের ভিতর কেমন জানি একটা দোটানা ভাব,

না পারছি ত্যাগ করতে, না পারছি গ্রহণ করতে।

ত্যাগ করতে চাইছি, মন বারণ করছে, 

গ্রহণ করতে চাইছি মন সায় দিচ্ছেনা।

কখনো মন বলে উঠে মা, বাবা, ভাই,

আবার পরক্ষণে বলে যারে ভালোবাসি সে ছাড়া অন্য কেউ নাই।

কী করবো ভেবে নাহি পাই,

তোকে ছাড়া অন্য কোথায় যাই!

যেই মনে তোরে এতদিন বেসেছি ভালো,

আজ সেই মনে কীভাবে তোরে বাসবো না ভালো?

তোকে নিয়ে ছিলো কত আশা, কত স্বপ্ন, কত ভালোবাসা,

আজ ছোট্ট কারণে মোর ঘরে তোর নেই কোনো বাসা।

আহারে মনে নেই তোকে, চোখে ঘুম নেই,

চারিদিকে শুধু বিষণ্ণতা।

জানিনা তোকে ছাড়া কীভাবে বাঁঁচবো?

এতদিন আদর দিয়ে কাছে ডেকে এনেছিল যারে,

আজ তাকে মনে দুঃখ ও আঘাত দিয়ে ঠেলে দিচ্ছি দূরে।

লোকনাথ আর শিবের চরণে বসে

বলছি যা করছি তোর ভালোর জন্য করছি।

তোকে ছাড়া বাঁচা এই কথা আসেনা মনে, মন না বোঝে,

বসে বসে ভাবি আমি এই রাতে,

কী করে যে থাকবো আমি কাল প্রভাতে।


সুমন দেবনাথ

মডেল হিসেবে তুমি



তুমি কখনো মডেলিং -র খাতায় নাম লিখিয়েছো ?

লেখাওনি ?


কি বলছো ?

আরে তবে শোনো বলছি ।

মডেলিং করা খুব সহজ জানো তো?

সুন্দর করে কথা বলা ,

একটু ঠিক-ঠাক করে বসা , চলা এটাই তো মডেলিং ।

তাই না ?

আসলে মডেলরা খুব আরামে থাকে জানো তো ?

কোনো সমস্যাই নেই তাদের জীবনে ।

একটা অনুষ্ঠানের প্রতিযোগি হয়ে নাম লেখাতে গেলেও তোমার শরীরের প্রতিটা অংশকে মনোযোগ দিয়ে সমান ভাবে পরীক্ষা পাশ করতে হয় ।

কোথাও আবার তোমাকে রোদে দাঁড়িয়ে , বৃষ্টিতে ভিজে নিজের শরীরের মাধ্যমে অপরকে মনোরন্জিত করতে হবে , নয়তো তোমার নাম থাকবে শেষের পাতায় ।

সুযোগে তোমাকে অনেক হাত স্পর্শ করতে চাইবে , সেই খেলা থেকেও নিজ ইচ্ছায় তোমাকে পরাজয় হয়ে ফিরে আসতে হবে ।

নয়তো পরিবারের নাম বদনাম হবে ।

কিন্তু তুমি নক্ষত্র হও সবাই চাইবে ।

কখনো বিছানা ভাগ করার প্রস্তাব আসে তবে ,

নিজ বদনাম না রটাতে কেউ পিছিয়ে যায় আর , কেউ উজ্বল হতে অপরিচিত কারোর বুকে রাত কাটায় ।

তবুও মডেলদের মুখে হাসি রাখতে হয় ।

কারণ হাসি ছাড়া তোমাকে কেউ কাছে টানবে না যে !

কাজের সুযোগ আসবেনা যে !

ছবিতে তাদের সুন্দর দেখাবেনা যে !

বাড়িতে নিজ হাতে জল না নিয়ে খাওয়া ব্যক্তিটাও মডেল হিসেবে আরেক জনকে নেশাক্ত করে দিতে পারে শুধু পরিবার চালানোর কথা ভেবে ।

মডেলদের আবার কিসের দুঃখ ?

শরীরের প্রতিটি অংশ দিয়ে রূপ ঝরাতে তাদেরকে অপরের কথায় নিজ শরীরকে ভাঙতে-গড়তে হয় ।

এটা আবার কিসের কষ্ট ?

ঠিক ভাবছো ।

আসলে মডেলরা শুধু ভালোবাসা দিতে নয় ,

তারা ভালোবাসা পেতেও চায় ।

মডেল কথাটির মধ্যেই যেমন সুগন্ধ মাখা আছে ঠিক এই মডেলরাও তোমার-তোমাদের জীবনকে পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে পারে ।

শুধু সময় করে একবার মডেলদের কাছে টেনে ভালোবেসে দেখো ।

অনুপম দেব

সত্যের জয় হবে নিশ্চয়


সত্যের পথে চলতে গেলে 
শতেক বাধা আসতেই পারে,
তাই বলে কি বন্ধু তুমি 
সত্যের পথ ছেড়ে দেবে?
সত্যের পথটা কাঁটা বিছানো 
কদমে কদমে বাঁধা আস
এই পথে চললে সাথী 
দুনিয়াটা চিনতে পারবে,
সত্যের পথে বাঁধা হাজার 
তবে নেই সেথায় পরাজয় 
সত্যের পথে চলে দেখ বন্ধু 
তোমার জয় হবে নিশ্চয়I


উজ্বল ভট্টাচার্য

কথা দিলাম মাগো 

হ্যাঁ,মাগো জানি পাপী আমি পাপী;  

পাপ তখনই শুরু হয় যখন জঠরে দিই লাথি।      তবু তুমি হাসিমুখে কষ্ট সহ্য করে;                    

কাপুরুষকে আনলে ঘরে সোহাগ ও আদরে।    

বায়না করতাম,খেতাম না যে

কেঁদে দিতে তুমি;       

তখন মাগো জানতে কি,

একদিন খাওয়াবোনা আমি।    

কত স্বপ্ন দু-নয়নে,কত আশা তোমার বুকে;   

হিরের মানিক বড়ো হয়ে রাখবে তোমায় সুখে।    বড়ো হলো খোকা,চাকরি পেলো আনলো সুন্দর বউ;

চাকরের পরিচয় তোমার ধীরে ধীরে তুমি আর সেই মা নও।                           

বউয়ের মুচকি হাসি হৃদয় কারে,মায়ের হাসি বেদনার;   

মায়ের ঔষধ খরচা বিশাল ভার,

ওটাতো কিছুই না করলে বউ গয়নার আবদার।   

দুদিন বাদেই নাতি এলো ঘরে,চাঁদের মতো মুখটি; 
ছুঁতে দেয়না শহুরে বউ,বলে গাইয়া ময়লায় হাতভর্তি।      

হঠাৎ একদিন ছেলে-বউয়ে মায়ের হাতটি ধরে ;  

টেনে হিঁচড়ে বিতাড়িত করে স্নেহময়ীরে।         

বৃদ্ধাশ্রম হয় শেষ ঠিকানা জনমদুখিনী মায়ের;     

খোলা আকাশে তাকিয়ে ভাবে আসবে খবর মানিকের।          

খবর যে আর আসেনা,হ্যাঁ একদিন আসে স্বর্গপুরী থেকে;

সেদিন মাকে সাঁজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে যায় পালকিতে।                 

পঁয়ত্রিশ বছর কেটে গেলো,মাগো তোমায় ভীষণ মনে পড়ে;         

আমার আচরণ যেমন ছিল, খোকাও আজ তেমনি করে।   

ধৈর্য ধরো, তোমার খোকা আসছে দ্রুত বেগে;    দুদিন বাদেই যে খোকা আমার সসন্মানে বিদায় দেবে।               

কথাদিলাম মাগো,আসবো তোমার গর্ভে আরও একবার;   

এবার বিষাক্ত পুত্র হয়ে নয়,নতুন রূপে লক্ষ্মীশ্রী কন্যার।  


বনানী দেবনাথ

আগমনী                           

 মা আসছেন বছর পরে ,                             

 সাজছে ভুবন আগমনীর সুরে ।                       

 দুগ্গা মায়ের আগমনে,                                       

খুশির জোয়ার সবার মনে।

ভুবন মাতার বোধনে, চারিধারে মিলন মেলা।

মাটির প্রতিমায় শক্তি খোঁজো,
জ্যান্ত মাতার মন কি কেউ বোঝো?
মা আছেন, প্রতিটি নারীর মাঝে
সারা বছর জুড়ে কল্যাণময়ীর  সাজে,
তবে কেন নারীশক্তির আজ এত অবমাননা?
লক্ষ টাকার প্রতিমা গড়ে, দেশের মেয়েরে কর    লাঞ্ছনা ।

সোনার অলংকারে মাকে সাজিয়ে,
বোধনে পূর্বেই, ঘরের মেয়েকে দাও বিসর্জনে    ভাসিয়ে।
ধর্ম কেবল মন্ত্রপাঠে নয়, ধর্ম হোক প্রতি নারীর      সম্মানে,
বল দুগ্গা মাই কি জয়, ভুবন সাজুক মাতৃ
আবাহনে।

সজীব পাল

 মানবতা

যারা নিয়েছো পকেটে মানবতা 
হাতে নিয়েছো দুর্জয় অস্র ,
ওই সীমান্তের উপর রক্তের বিনিময়ে 
এঁকেছো যারা হাজার সন্তানের ছবি ;
সভ্যতাকে যারা ধুলোয় মিশিয়ে দিতে 
করেছো নিজ মানবতা হত্যা!
আজ তাদের দুষ্কৃতীর প্রতিবাদে
কলম হাতে হয়েছি মানবতার কবি।
কংক্রিটের শহর আজ ম্লান অসহায় 
নিয়নবাতির ক্ষীণ আলোয় আলোকিত 
যাদের অস্পষ্ট সচেতনতার ছবি,
তারা আজ মানবতাকে দাবানলে ছাই করছে।
দেখেছি ঘুমের প্রতিটি মোচড়ে ,
রয়েছে অনাহারী চৌরাস্তার মোড়ে ।
খোলা আকাশ আজ তাদের সম্বল,
মাটি তাদের স্বপ্নের বিছানা,
ওই অমানবের কীটগুলি
তাদের করেছে আরো পথের কাণ্ডারি ।
কেউ শুনতে পায় না তাদের মনের 
দেশ গড়ার পাঁচালির সুর!
দলে দলে রঙের বিচিত্র মানব
খেলেছে দেশে সভ্যতার পোশাকে অসভ্য খেলা।
জ্বলে উঠুক নিরস্ত্র প্রতিবাদ,
শিশুর সত্য জ্ঞানের কথামালায়।
জীর্ণতার উপদেশে না থাকুক হিম,
আজ বরফেও হোক অগ্নির তীব্র তেজ।
ফিরে আসুক মানবতা না থাকুক বৈষম্য ,
তোমার শহর আর আমার সবুজ গ্রামের মাঝে।
ঝলসে উঠুক মানবতা এক নতুন সাজে ।

পরিতোষ সরকার

এক জোড়া ফড়িং

উপরে নীল আকাশ,
পাশে মাঝি পাল তুলে থেকে থেকে,
তুমি-আমি নৌকায় এক কোণে বসা।
এক হাত সাগরের জলে ডুবিয়ে
আর হাত রেখেছ আমার হাতে।
অগণিত কচুরিপানা
শরীরে উন্মাদের গন্ধ।
সাদা বক জলের নীচে কাটা খুঁজে
কিন্তু তোমার চোখ পড়ে
এক জোড়া ফড়িংয়ে।
তুমি হেসেছিলে।
কি দুঃসাহস জলের আধ ইঞ্চি উপরে
দুটি প্রাণ ভেসে বেড়ায় প্রেমের টানে।
মাঝে মাঝে মাঝির সুর
সামনে বিশাল ইমারত।

দেবব্রত চক্রবর্তী

তোমার আগমনে

আগমনির শাঁখ বাজবে 

বাজবে কাঁসর ডাক,
রং তুলিতে মা সাঁঝবে 
সাঁঝবে নতুন সাঁঝ।


গন্জে তোমার জীবন পুতুল
রঙ্গে তোমার কাঁদা,
হাসবে তোমার ভক্ত মাগো 
হাসবে ঠাকুর দাদা ।


কুঁড়িয়ে তুমি খাচ্ছো মাগো
বস্তা ভরা স্বপ্ন নিয়ে,
ছেড়া কাপড় পরে তুমি
হাটছো তোমার প্যন্ডেলে প্যন্ডেলে ।


দেখছো নাকি ত্রিনয়নে 
মূর্তি তোমার পুরছে আগুনে ,
ইচ্ছে হয়না হোক পুজো তোমার
ভবঘুরে আর পথিক সন্তানের।


অনুপম রায়

অবশেষে আমি

এখনও অনেক লাশ গুনছি,
লাশের রক্ত দিয়েই সকাল বিকাল স্নান সেরে আসি;
প্রতিদিন মানুষের পচা মাংস খেতে হয়
নিজেকে পুষ্ট করার জন্য 
নিজের শিকড়ে রক্ত ঢালি;

এভাবেই দিন যাবে আর সন্ধ্যা নেমে আসবে,

লাশের পালাবদল হবে
দায়িত্ব নিতে অবশেষে আমি যাব!


সংগীতা শীল

অশিক্ষিতা মা



অশিক্ষিতা মা আমার

পড়াশোনা জানে না,
ভদ্র সমাজে ইংরেজিতে

কথা বলতে পারে না।    
স্কুলে যাবার আগে মা   
অনেক জ্ঞান দেয়,
ঝগড়া করলে কারো সাথে
হিসেব নিকেশ নেয়।

গুরুজনকে শ্রদ্ধা প্রণাম
ছোটোদের স্নেহ আদর,
মায়ের কাছে শেখা সব,
করতে গুনের কদর। 
অতিথি আসলে মা উচাটন মন,
অতিথি যেন নররূপে নারায়ণ।।
মা আবার অন্নপূর্ণা 
না খেয়েই সুখি,
কখনো দেখিনি মাকে
একটুকুও দুখি। 

অসুস্থ হলে পড়ে 
বাড়ি মাথায় করে,
ক্ষণে ক্ষণে মা যেন
নিজে নিজেই মরে।
মাঝে মাঝে মা কারিগর ভারী
জুতু থেকে জামা সেলাই সব যেন তারই।
প্রতিটি মা'ই সেরা শিক্ষক পৃথিবীর পড়ে
আমার এ শ্রদ্ধাঞ্জলি শিক্ষকদের তরে।

দুলাল চক্রবর্তী

নিজেরে হারায়ে খুঁজি

তোমার যৌবনের ওই ভরা গাঙে
ভাসিয়ে ছিলেম তরী,
দু'হাত ভরে লুটে নেবো
রূপ নগরের পরী।
দু'জনাতেগড়বো মোরা
সাধের খেলাঘর,
স্বপ্ন ভেঙে হলো খান খান
চিরতরে পর।

পূব আকাশের লাল আভাতে
রং যে নাহি লাগে,
সাধের সৌধ অরুন আলোয়
মলিন রক্ত রাগে।

ঝরে পড়া বকুলগুলি
অনাদরে রয়,
হারিয়ে গেছে আমার 'আমি'
নেইতো পরিচয়।
বর্ষা রাতের অন্ধকারে
হারিয়ে গেছে স্মৃতি,
মনে আমার ছিন্ন বীণার
রোদন ভরা গীতি।

হারিয়ে গেছে, ফুরিয়ে গেছে,
স্বজনহারা দিন,
মনের ভিতর আগুন জ্বলে
স্বপ্ন মলিন।

বিপ্লব দে

তবুও ডেকো

অভিমানের ঠিক কতটা বোঝ তুমি ?

দুপুর রাত্রিতে দাঁড়িয়ে আছি ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে ।

কি হল খুলবেনা দ্বার ।

আমি আজ কামুক নই ,

দুহাত ভরে নিয়ে এসেছি অর্ধেক আকাশ প্রেম ।

অভিমানের বর্ষণে আমি ভিজে সঁপ সঁপ ,

তোমার প্রেমের ছোঁয়ার উষ্ণ হতে চাই ।

তবুও যদি তোমার অভিমান ভাঙে ,

ডাক নাম ধরে ডেকো আমায় ।

ডাক নাম আমার প্রেম ।


উর্মি সাহা

আমি কি এর অধিকারী?


আমি নন্দিনী।
মায়ের নন্দা আর বাবার,

বাবার রাজকন্যা!

আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা,

আমি পি•এচ•ডি করছি

সার্টিফিকেটগুলি আজ ফাইলকভারে জমা, 


আর সময় অসময়ে--,

ফেইসবুক-এর দেওয়ালে ঠাই পাওয়া।

আমার গায়ের রং হালকা শ্যাম বর্ণের;

আর ঘন কালো খোলা চুল ঠাই পায় কোমরে।

একদিন বিকেলে প্রফেসর মেসেজ করলেন---,

কি! ভালো আছো তো??


যথারীতি উত্তর করলাম,,- 

হ্যাঁ স্যার; ভালো আছি।

ধীরে ধীরে সম্পর্কটা, কেমন অগোছালো হয়ে গেল। 

রোজ লেট নাইট অজস্র মেসেজ-

পিকচার আপলোড; আরো নানান কতো কি!!একদিন তিনি আমায় কফি অফার করলেন

হাজার বারণে-ও হাত চেপে-

বললেন যাওয়া যাবে কি আমার সাথে?

চুপিসারে বললেন, হাত রেখো কিন্তু আমার কাঁধে!

তখনও তার সঠিক মন্তব্য-

বুঝতে পারলেও, বুঝতে চাই নি আমি;

চাই নি তাকে নিজের কাছে ছোট করতে।


প্রফেসর বলে কথা-

কফির বাহানায় সে নিয়ে গেল নিজের ফ্ল্যাটে,

সংকোচবোধে জিজ্ঞেস করলাম-


কফিটা কি এইখানেই হবে?

মুখ চেপে বললো-

ঠোঁট ছুঁয়ে কোনো শব্দ যেন না আসে,

লবণ ভেঁজা চোখেও

চোখ রাখলাম তার আত্মসাতের দৃষ্টিতে।

ঘরে আটকে রেখে আত্মসাত করলো সে আমায়।

আহা কি রক্ত স্রোত,

এই যেন ছিলো তার তৃপ্তি

এই যেন ছিলো তার শান্তি।


স্নেহাশীষ রায়

সমাজবিরোধী আমি   


যাক আপনি অন্তত আমার মত সমাজবিরোধী নন ।

সমাজ- বিরোধী !! 

আমি সমাজ-বিরোধী !

আমি মানিনা সমাজের ডাইনিপ্রথা,  

মানি না যুক্তিহীন কথা , মানিনা হৃদয়হীন যুক্তি , পেতে চাই কু-সংস্কার হতে মুক্তি ।। 

আমি সামাজ-বরোধী !

মানিনা বুদ্ধ , খ্রীষ্টান, মানিনা  হিন্দু, মুসলমান।

অ-মানুষকে করিনা সন্মান ।। 

আমি সমাজ-বিরোধী !

পথ-দুর্ঘটনায় আহতকে আমি

আগে হাসপাতালে ভর্তি  করি ,

যান-চালকের দোষগুন পরে বিচার করি ।।

আমি সমাজ- বিরোধী ! 

রক্তক্ষরণ মানতে পারিনা ,

তবু রক্ত দান করি ।

মৃতদেহ কবর বা পোড়াতে বারণ করি ।

মরণোত্তর দেহদান করি , 

একাজে উৎসাহিত করি ।

আমি সমাজ-বিরোধী !

শরিয়তি প্রথা নয় , শাস্ত্রীয় প্রথা নয় ,

ভারতীয় আইনি প্রথার সংস্কার 

ও প্রয়োগে বিশ্বাস করি ।।

আমি সমাজ-বিরোধী !

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বেসরকারীকরন

মেনে নিতে পারি না । 

শিক্ষা ও চিকিৎসা সুরক্ষায় 

বিএসএফের মত  স্বাস্থ, শিক্ষা নিশ্চয়তা বাহিনী

গঠনের দাবী করি ।।

আমি সমাজ-বিরোধী !

রামমোহন নই , বিদ্যাসাগর নই ,

গ্যালিলিও নই , ডিরোজিও নই ,

অসামাজিক জীব ও নই , 

সামাজিক কোন দিদি, দাদার বশীভূত নই ।

মেধার বশীভূত হই ,মনুষ্যত্বের বশীভূত হই ।।

আমি সমাজ-বিরোধী  ।।


উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...