Saturday, September 21, 2019

সমীর ভাদুড়ী

ভারত আমার ভারতবর্ষ “নমামি মাতৃভাষা, জননী ভারতমাতা তুমি মোর সকল সহায়, তুমি মোর সকল আশা, তুমি মোর শ্রেষ্ঠ সাধন, তুমি মোর সব ভরসা ।’’ ভারতমাতাকে ভালবাসা যেন আমাদের জন্মগত অধিকার ।মা যেমন আমাদের খুব যত্ন করে লালন পালন করে বড় করে তুলে তেমনি ভারতমা্তা ও আমাদের আগলে রেখেছেন।আমরা নিজেদের ভারতমায়ের সন্তান ভেবে গর্ববোধ করি।সেই গর্বের বিষয় এবং ভারতমাতার প্রতি অপত্য স্নেহ এবং ভালবাসা বিভিন্ন কবিতা, গান, গাথা, উপকথার মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করি।যার দেশপ্রেম নেই তার হ্রদয়ে প্রেম নেই। প্রেম হল মানবিক স্নেহতরুর সর্বাপেক্ষা সুপরিনত ফল, দেশপ্রেম মা্নবসংস্কৃতির সর্বোচ্চ সাফল্য।প্রকৃতপক্ষে বলতে গেলে দেশপ্রেম মানুষের সহজাত। নিজের পরিজনকে এবং যেখানে জন্মেছে সেই পরিবেশ ও প্রকৃতিকে মানুষ ভালবাসে।জন্মভূমির মানুষের প্রতি জনপদ, বন, ও নদীর প্রতি শস্যভূমির প্রতি মমতা জন্মে, জন্মভূমির প্রতি কর্তব্যবোধ জাগে। দেশপ্রেম কখনোই অন্যকে আঘাত করেনা, অন্যায়ের বিরোধীতা করে।স্বামী বিবেকানন্দ যখন বলেছেন - “ আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই, বল মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মন ভারতবাসী, চন্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই।’’কথাগুলির মধ্যে জাত্যাভিমান নেই , আছে মানবতাবোধ আর দেশপ্রেমের গভীর উপলব্ধি, মানুষের প্রতি ভালবাসা। ভগিনী নিবেদিতা দেশপ্রেমিক ছিলেন বলেই আয়ারল্যান্ড থেকে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসে ভারতকে নিজের দেশ বলে গ্রহন করতে পেরেছিলেন এবং ভারতবাসীর সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এই দেশপ্রেম বিশ্বকে কলুষ মুক্ত করে , মানুষকে উদার করে তুলে , মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাষ জন্মায়। “সবাই আমার আপন হোক কেউ যেন আর না রয় পর । সকল বিদেশ সকল প্রবাস হোক হে আমার আপন ঘর।।’’ এই পূন্যভূমি ভারতবর্ষ সব জাতি গোষ্ঠীর মানুষকেই আপন করে নিয়েছে। ভারতমাতা সবাইকেই নিজের কোলে আশ্রয় দিয়েছে। মায়ের সেই স্নেহভরা কোলে সবাই সম আনন্দে উৎসবে মেতে আছে। “ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রীষ্টিয়ান , শিখ বা ইহুদী, মুসলমান, আমার চক্ষে সব সমান যত আছে নানা জাতি, সবাই আমার আপনার জন সবাই আমার জ্ঞাতি।’’ মুনী ঝষির দেশ ভারতবর্ষে সবাই সমান এখানে জাতি- বর্ণ- ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করছে।সকল ভারতবাসীর মধ্যে স্বদেশ প্রীতি ও বিশ্বপ্রীতি থাকা একান্ত জরুরি। স্বদেশপ্রীতি দেয় নির্ভীকতা, দেয় কর্মঠতা, দেয় আত্ম নির্ভরের সাহস, দেয় স্বাবলম্বী প্রবৃত্তি, দেয় অতীতের কলঙ্গিত ইতিহাসকে পরিবর্তিত করে ভবিষ্যতের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টির প্রেরনা। ভারতমাতা আমাদের প্রকৃত মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠতে শিক্ষা দেয়। প্রকৃত মানুষ অপর মানুষকে অবজ্ঞা করেনা, ঘৃনা করেনা, দুর্বলকে পদদলিত করেনা, অক্ষমকে নিষ্পেষন করেনা। বিশ্বময় যার ভালবাসা সমগ্র বিশ্ব তার আপন। সমগ্র বিশ্ব যার আপন সেই পকৃত মানুষ। গঙ্গা- যমুনা- সরস্বতীর দেশ এই ভারতবর্ষ এখানে নানা ভাষার নানা মতের লোক বসবাস করেন, ভাষার ব্যবধান সত্তেও একজন বাঙ্গালীর কাছে মহারাষ্ট্র বিদেশ নয়, একজন উড়িয়ার কাছে কাশ্মীর বা আসাম বিদেশ নয়, একজন কর্নাটকীর কাছে বিহার বা মাদ্রাজ বিদেশ নয়, এর ফলেই ভারতে এমন এক আশ্চর্য ধরনের সর্বসহিষ্ণু স্বদেশপ্রেমের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে, যা আয়ারল্যান্ড বা ফিনল্যান্ডে সম্ভব ছিলনা, যা ব্রিটেন বা স্পেনে সম্ভব নয়।এই স্বদেশপ্রীতিই মানবজাতির উন্নয়নের পরম সহায়ক বস্তু। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারক ও বাহক কাজী নজরুল ইসলাম সাধারন মানুষের চিন্তায় স্বাধীনতার যে রূপ কল্পনা করেছেন- “ রবেনা দারিদ্র, রবেনা অসাম্য, অন্ন পাবে নাগরিক গ্রাম্য।’’ দেশপ্রেম, জাতিয়তাবোধ, হল আমাদের সমাজের মূল্যবন সম্পদ এই সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সবার কর্তব্য ।বর্তমানে আমাদের সমাজে সাম্প্রদায়িকতার কালো মেঘ নেমে এসেছে। সাম্প্রদায়িকতা সভ্যতাবিরোধী ব্যপার, সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেশের লজ্জা। প্রতিদিন ই কোথা ও না কোথাও দাঙ্গা হাঙ্গামা হচ্ছে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় হিন্দু মুসলমান মিলিতভাবে পথে গান গেয়েছে- “ রাম রহিমকো জুদা না করো ভাই দিলকো সাচ্চা রাখোজী’’। তবু ও বার বার হিন্দুর হাতে বাঁশ আর মুসলমানের হাতে ছুড়ি উঠছে। যাঁরা নিজের প্রান বলি দিয়ে ভারতমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে তাঁরা কি এই দুর্দিনের স্বপ্ন দেখেছিল? তাই আমাদের সবার সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে গর্জে উঠতে হবে।পরাধীনতার কালোছায়া যেন আমাদের ভারতমাতাকে আর গ্রাস না করতে পারে। “ সবারে মিলাও সবার সাথে সবারে করহে সবার প্রান।’’ আমরা ভারতমায়ের যে সুন্দর রূপের স্বপ্ন দেখি সেই রূপকে বাস্তবায়িত করে তুলতে পারলেই নিজেদের ভারতমায়ের সন্তান বলে গর্ববোধ করতে পারবো। “ এ ভারত জাগবে আবার জাগবে রে ভাই তপোবলে, এ দেশের অতুল গরব ডুববেনা আর অতল জলে।’’

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...