অহংকার৷
অহংকার সম্পর্কে সবার একটি নেতিবাচক ধারণা আছে, অথচ অহংকারের ইতিবাচক দিকটির প্রতি আমরা উদাসীন এই প্রবন্ধ অহংকারের ইতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরবে।
আমরা ভারতবাসী হিসাবে কী আমাদের অহংকার? আমাদের একটা গৌরবময় অতীত আছে। আমাদের দেশ সারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে বেদ,উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত ওগীতা।অতীতকে নিয়ে এই গর্ব বা অহংকার আগামী দিনের উন্নতির সহায়ক নয় কী?আমরা গর্ব করি ভারত মাতার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে। বিদ্যাসাগর,রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী,নেতাজী, বিবেকানন্দ,জওহরলাল এদের নিয়ে। সমগ্র ভারতবাসীর কাছে এরা প্রেরণা স্বরূপ।এই হিংসাদীর্ণ পৃথিবীতে ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান মহাত্মাগান্ধী উপহার দিয়েছেন অহিংসা মন্ত্র ওতার প্রয়োগ,তাইতো আইনস্টাইন বলেছেন, গান্ধীর মত একজন ব্যক্তি এই পৃথিবীতে আগে কখনো আসেনি,আর কখনো আসবেনা।প্রায় প্রতিটি জাতির এরকম জাতীয় বীর আছে, যদি না থাকেতবে তা সে জাতির দুর্ভাগ্য এবং সে জাতিজগতে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করতে পারবেনা।অহংকার মানুষের এক মহত্তম প্রবৃত্তি যার জন্য সে মরতে দ্বিধা করেনা।যেমন মহাভারতের যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে দুর্যোধনকে পান্ডবদের মধ্যে যে কোন একজনের সংগে যুদ্ধ করার আহ্বান করা হয়।দুর্যোধন অহংকারী, কারন সে বীর,সে বেছে নেয় ভীমকে।এই অহংকারের জন্যই দুর্যোধন চিরকাল মানুষের মনের মধ্যে থেকে যাবে। কর্ণের ছিল দানের অহংকার। সে সব বুঝেও তার অক্ষয় কবচ কুন্ডল দান করে দেয়।এই অহংকার প্রতিটিমানুষ অর্জণ করুক।পুরুরাজা পরাজিত, বন্দী,তবু সে অহংকার পোষন করে, সে রাজার মত ব্যবহার চায়।এ ধরনের রাজা ইতিহাসেে কটি দেখাযায়?
দারাশিকো'কে হাতির পিঠে করে নিয়ে যাওয়ার সময় এক ভিখারি ভিক্ষা চাইল তার কাছে, সে অবস্থায় ও বন্দী দারাশিকো তাঁর গায়ের একমাত্র আলোয়াানটি ভিক্ষুককে দিয়ে দেয়।তাঁর কাছে দেওয়োার মত কিছু ছিল না।রাজকীয় অহংকার
ন দারাশিকোকে এই মহান কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। মৃত্যু মুহূর্তে র এই অহংকার কালের কপোততলে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে।
তারাশংকরের জলসাগর বইয়ে এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার তাঁর আজন্মের অহংকার সে ছাড়তে নারাজ।তার আভিজ্যাত্যের অহংকার তাঁকে করো কাছে ছোট হতে বাধা দেয়।বইয়ে তার শেষ পরিনতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর এইরূপবেেদনাদায়ক বলেই চরিত্রটি আজো এত উজ্জ্বল।প্রতিটি মানী মধ্যেই কিছু না কিছু অহংবোধ আছে।তবেযদি কেউ এ সম্পর্কে খুব সচেতন থাকেতাকে আমরা অহংকারী বলে থাকি।
নারী পুরুষের ক্ষেত্রে যাদের রূপের অহংকার আছে,সে নিজেকে সহজে খলো করেনা।আর যৌবনের ধর্মই হল অহংকার বা অহংকারীকে জয় করার চেষ্টা। সুতরাং অহংকারীইতো কাম্য।
রাজনীতির ক্ষেএে আজকে এত অধঃপতনের কারন কী?কারন অহংকারী লোকের রাজনীতিতে একান্ত অভাব।আজকাল বেশির ভাগ রাজনীতি বিদদের বংশ বিদ্যা,ধন,কোন কিছুর জন্য গর্ব করার মত কিছু নেই তাদের।তাইতারাযে কোন কাজ করত দ্বিধা নেই।
পৃথিবীর দিকে যদি তাকাই সেখানে ও বিচিত্র রূপে অহংকারকে দেখব।ইংরেজ অহংকার করে তাদের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার শেকসপিয়ার এর জন্য। ফরাসীদের অহংকার তাদের শ্রেষ্ঠ ছবি মোনালিসার জন্য। জার্মানির অহংকার তাদের আর্যরক্তনিয়ে।জাপানীদের অহংকার দেশপ্রেম ও রাজার প্রতি আনুগত্য নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হাজার হাজার যুবক হারিকিরির মাধ্যমে জীবন বিসর্জন দেয় পরাজয় বরনের গ্লানি থেকে বাঁচার জন্য। জাপান ও জার্মানি আজও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ। রাশিয়ার গর্বের জায়গা হল টলস্টয়, তুর্গেনিভ,গোর্কি চেখভ, দস্তইফেস্কি।আমেরিকানদের অহংকার তাদের গনতন্ত্র নিয়ে। ব্রাজিলবাসীর অহংকার তাদের কালোমানিক পেলেকে নিয়ে। গুর্খাদের অহংকার তাদের বিশ্বস্ততা নিয়ে, সারা পৃথিবী জানে একথা।তারা জীবন দিয়ে তা রক্ষা করে।একটি দেশকে বড় হতে সাহায্য করে এমন অহংকার তো কাম্যই।
তাইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, মানুষ এই জন্য অহংকার করতে পারেযে,সেই ঈশ্বরের স্রষ্টা। কেননা এই সৃষ্টির পেছনেএবং সৃষ্টির সকল কিছু জগড়েযে পরম তিনি যা কিছু দেখেন-এই আমির চোখ দিয়াই দেখেন।নিজেকে তিনি মানুষের ব্যক্তিচৈতন্যের ভেতর দিয়ে অনন্ত ঐশ্বর্যে,অনন্ত মহিমায় অনন্ত সৌন্দর্য মাধুর্য অবলোকন ও আস্বাদন করছেন। আমি না হলে এ দেখা যে সম্পূর্ন হতনাতা তানয় সম্ভবই হতনা।তাই আমি কবিতায় কবি বলছেন "আমরই চেতনার রংএ পান্না হল সবুজ চুনি উঠল রাঙা হয়ে/আমি চোখ মেললুম আকাশে /জ্বলে উঠলো আলো।
তুমি সুন্দর মানুষ একথা বলে বলেই বিধাতা জানতে পারেন তা।মানুষ চেতনায় ঘনীভূত হয়ে আমি রূপে যে পর্যন্ত ডেকে না বলবে আমি ভালোবাসি সে পর্যন্ত বিধাতা কী করে জানবেন তাঁর নিজের প্রেমময়ত্বের সন্ধান?
তাই কবির কথায় বলা যায়," এ আমার অহংকার /সমস্ত মানুষের হয়ে/ মানুষের অহংকার পটেই বিশ্বকর্মার বিশ্বশিল্প"।
No comments:
Post a Comment