Sunday, October 6, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম || সবাইকে শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

সম্পাদকীয় পাতা

এর আগে মনন স্রোত এত কম সংখ্যক লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়নি! ধারাবাহিকতার একটা বিড়ম্বনার দিক হলো এর থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। বিজ্ঞপ্তিতে আমরা শারদীয়ার জন্য লেখা চেয়েছিলাম। অজানা কারণে প্রচুর ধারাবাহিক লেখা আমাদের কাছে এসেছে। এই সংখ্যায় পুজোর লেখা বাছাই করা খুবই কষ্টকর ছিলো। একটা ধারাবাহিক সংখ্যাকে শারদীয়ার সংখ্যায় পরিণত করার মতো কাজ আসলে খুব একটা সহজ নয়। যাইহোক যারা এই সংখ্যায় লিখেছেন এবং যাদের লেখা আমরা এই সংখ্যায় প্রকাশ করতে পারিনি সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ছোট হলেও এই সংখ্যায় যতটা সম্ভব গুণগতমান ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। বিচার করার দায়িত্ব পাঠকের। সবশেষে মনন স্রোতকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে আপনার এভাবেই সহযোগীতা করবেন এই আশা ব্যক্ত করে কথা বলার ইতি টানছি।

                  শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                       অষ্টমী বৈষ্ণব
                   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা
                   শারদীয়া || মনন স্রোত

শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী

সূর্যমুখী

বামুনের মেয়ে, রোজ নাইতে যাবেই যাবে বড় দীঘির ঘাটে।
অন্ধকারে পথ ঠাওরে, সূর্য উঠার আগে।
  সূর্যের প্রথম কিরণ চাই তার ভিজে কাপড়ে ভিজে শরীরে  ।
পাল্টাতে পারেনি কেউ আজ অবধি সেই আর্য কন্যার ব্রত।
শীত গ্রীষ্ম বারোমাস।
তারপর সূর্য মন্ত্র জপ-- ওম জবাকুসুমং--
কে যেন কানে ঢেলে দিয়েছিলো সূর্য প্রনামের নিয়ম।
ক্রমে সেই পুজা, প্রেমে পরিনত।
সুর্য স্তবে সূর্য তুষ্ট।
হতে তো হবেই --
একদিন রথে করে নেমে এলো সূর্য।
আধা ভিজে শরীরে চোখ বন্ধ একমনে সূর্য মন্ত্র জপ --
হঠাত জলদগম্ভীর সেই আওয়াজ।
কি চাও মেয়ে!
কেন আমারে কর বিচলিত!
সূর্য কনার মতো ঠিকরে পড়া রঙ নিয়ে ক্ষণিক বিস্মিত ক্ষণিক বিহ্বল মেয়ে ।
উঠলো বলে- তোমাকে চাই--
পতি হও, প্রেমিক হও--
আঁতকে সূর্য উঠলো বলে-
ওকি কথা!!
আমি যে দেবতারে!!
দেবতা আর মানুষের মিলন কি সম্ভব  কখোনো! অন্য বর চাও--
কাঁদলো মেয়ে কাটলো মেয়ে।
তবুও অনড় নিজ কথা খানিতে।
--পায়ে পড়ি ,কথা শোন বাড়াও হাত প্রভু। আমি যে তোমার প্রেয়সী প্রেমের পিয়াসি।
নইলে-- নইলে  করবো এ দেহ ত্যাগ তোমার সামনে। অভিশাপ আর অভিযোগে ছিন্ন ভিন্ন হবে। পৃথিবী হবে আলোক বঞ্চিত।
ধ্বংস হবে সৃষ্টি।
--না না মেয়ে ওকি কথা!!
সৃষ্টির মূল্য বোঝ। নইলে তুমি যে পাপিষ্ঠা হবে।
তবুও নাছোড় মেয়ে।
শেষে সূর্য বলল--
তাহলে দাঁড়াও এখানে,-- যাবেনা কোথাও। আমি গিয়ে আসি পৃথিবীর চারিদিকে। যাবার সময়ে নিয়ে যাবো সাথে করে।
বলে সূর্য চলে গেলো আর এলোনা।
মেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে একমনে, সূর্য স্তবে, সূর্যের আশায়।
দিন যায় রাত যায়।
কেউ তাকে নাড়াতে পারেনা।
ক্রমে মৃত্যু আসে নিয়ে যেতে তাকে।
তার ও চোখে আসে জল।
নিরুপায় তবু মরন সাথি হয়।

কিছু দিন পরে সেই স্থানে দুটি পাতা দিয়ে একটি কুঁড়ি দেখা দেয়।
বড় হয় সেই গাছ।
কলি দেখা যায় গায়ে-
ফুল ফোটে অপরূপ হলদে বরন যেনো মেয়েটার রঙ।
চেয়ে থাকে সে ফুল সূর্যের দিকে ।
হেলে পড়ে সূর্য, ফুল ও পড়ে হেলে।
দিন কাটে দিন ঢলে সূর্যের পানে চেয়ে।
যেনো আজও আছে বামুনের মেয়ে সূর্যের আশে।
সে ফুল দেখে লোকে ,দেখে সবাই, দেখে সূর্য নিঠুর।
ক্রমে তার নাম পড়ে' সূর্যমুখী'।
আজও যে ফোঁটে সূর্যের আশে তার পানে চেয়ে--

ছবিতে সুমন || ক্যামেরায় রনি

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী

সূর্যমুখী

বামুনের মেয়ে, রোজ নাইতে যাবেই যাবে বড় দীঘির ঘাটে।
অন্ধকারে পথ ঠাওরে, সূর্য উঠার আগে।
  সূর্যের প্রথম কিরণ চাই তার ভিজে কাপড়ে ভিজে শরীরে  ।
পাল্টাতে পারেনি কেউ আজ অবধি সেই আর্য কন্যার ব্রত।
শীত গ্রীষ্ম বারোমাস।
তারপর সূর্য মন্ত্র জপ-- ওম জবাকুসুমং--
কে যেন কানে ঢেলে দিয়েছিলো সূর্য প্রনামের নিয়ম।
ক্রমে সেই পুজা, প্রেমে পরিনত।
সুর্য স্তবে সূর্য তুষ্ট।
হতে তো হবেই --
একদিন রথে করে নেমে এলো সূর্য।
আধা ভিজে শরীরে চোখ বন্ধ একমনে সূর্য মন্ত্র জপ --
হঠাত জলদগম্ভীর সেই আওয়াজ।
কি চাও মেয়ে!
কেন আমারে কর বিচলিত!
সূর্য কনার মতো ঠিকরে পড়া রঙ নিয়ে ক্ষণিক বিস্মিত ক্ষণিক বিহ্বল মেয়ে ।
উঠলো বলে- তোমাকে চাই--
পতি হও, প্রেমিক হও--
আঁতকে সূর্য উঠলো বলে-
ওকি কথা!!
আমি যে দেবতারে!!
দেবতা আর মানুষের মিলন কি সম্ভব  কখোনো! অন্য বর চাও--
কাঁদলো মেয়ে কাটলো মেয়ে।
তবুও অনড় নিজ কথা খানিতে।
--পায়ে পড়ি ,কথা শোন বাড়াও হাত প্রভু। আমি যে তোমার প্রেয়সী প্রেমের পিয়াসি।
নইলে-- নইলে  করবো এ দেহ ত্যাগ তোমার সামনে। অভিশাপ আর অভিযোগে ছিন্ন ভিন্ন হবে। পৃথিবী হবে আলোক বঞ্চিত।
ধ্বংস হবে সৃষ্টি।
--না না মেয়ে ওকি কথা!!
সৃষ্টির মূল্য বোঝ। নইলে তুমি যে পাপিষ্ঠা হবে।
তবুও নাছোড় মেয়ে।
শেষে সূর্য বলল--
তাহলে দাঁড়াও এখানে,-- যাবেনা কোথাও। আমি গিয়ে আসি পৃথিবীর চারিদিকে। যাবার সময়ে নিয়ে যাবো সাথে করে।
বলে সূর্য চলে গেলো আর এলোনা।
মেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে একমনে, সূর্য স্তবে, সূর্যের আশায়।
দিন যায় রাত যায়।
কেউ তাকে নাড়াতে পারেনা।
ক্রমে মৃত্যু আসে নিয়ে যেতে তাকে।
তার ও চোখে আসে জল।
নিরুপায় তবু মরন সাথি হয়।

কিছু দিন পরে সেই স্থানে দুটি পাতা দিয়ে একটি কুঁড়ি দেখা দেয়।
বড় হয় সেই গাছ।
কলি দেখা যায় গায়ে-
ফুল ফোটে অপরূপ হলদে বরন যেনো মেয়েটার রঙ।
চেয়ে থাকে সে ফুল সূর্যের দিকে ।
হেলে পড়ে সূর্য, ফুল ও পড়ে হেলে।
দিন কাটে দিন ঢলে সূর্যের পানে চেয়ে।
যেনো আজও আছে বামুনের মেয়ে সূর্যের আশে।
সে ফুল দেখে লোকে ,দেখে সবাই, দেখে সূর্য নিঠুর।
ক্রমে তার নাম পড়ে' সূর্যমুখী'।
আজও যে ফোঁটে সূর্যের আশে তার পানে চেয়ে--

অর্পিতা আচার্য

আগমনী

অনেক দূরের গন্ধ লেগে থাকে
তোমার আকাশ বার্তায়
সাদা মেঘের ফেনায়িত ধূম্রজালে ভর দিয়ে
ভোরের ভৈরবী পাঠিয়ে দাও মুঠো ভরে
রাত্রির প্রসব বেদনাক্লান্ত ঝিনুক-গহ্বরে
তারা কিছু মুক্তো বোনে
এই যে আজ রাত ভর জানালায় জাগবে
একটি ম্লান গাছের ডাল ,
সেই ডালে একটি চুপ পাখি , ভীতু পাখি
অন্ধকারের বুনোটে তিরতির কাঁপছে তার
ধূসর ছোট্ট বুক
তারও তো মননে শরৎ ভোর , ডানায় সমুদ্রস্বন

পাঠিয়ে দিয়েছ গুচ্ছ শিউলি সকাল
ইথার তরঙ্গে
পাঠিয়ে দিয়েছ মেঘ ছেঁড়া ছেঁড়া , ঝুলবারান্দায়
বিমগ্ন রাত্রি জুড়ে কালো ক্যানভাসে
বুলিয়ে শুভ্র তুলি আঁকবো তাকে

আমার এই দ্রবীভূত হৃদয় আকাশে

শৌভিক বাগচী

হীরামনি মাহাতো

হীরামনি রাত্রি দিয়ে গা ঘষে , জ্যোৎস্না দিয়ে ধোয় |তার তৈলচিক্কন চুলে অমানিশার পূজা হয় | গায়ে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে | চোখে জল আসলে ঘোর  শ্রাবণে বৈষ্ণব মহাজন পদাবলী আঁকে|  হাসলে রতি   হিংসে করে|

হীরামনি এর মরদ দাঁতাল  | রোজ নিজের বিবমিষার মধ্যে নগ্নতাকে সহ্য করে হীরামনি শুধু কোল  ভরার আশায় | আবশ্যিক কর্ম শেষে মরদ ঘুমায় আর হীরামনি নদীর ধারে আসে | রাত্রি তার প্রসাধন , জ্যোৎস্না  তার রূপটান | হীরামনি নদীতে নামে  | বোঝে সে নামলেই নদীটা মরদ হয়ে যায় | নদীর জল তার স্তন ছোঁয় | হীরামনি শীৎকার করে |  তার নগ্নতার প্রতিটা বিন্দু তে জলকণার ফেনায়িত আবেগে সে শোনে মায়ি মায়ি ডাক | হীরামতি বলে , তুর মতো  বেটা হোক বটেক |

দিন যায় , মাস যায় | হীরামনি  গর্ভবতী হয় |  উদর স্ফীত হয় , স্বপ্নও স্ফীত হতে থাকে , ঠিক যেমন করে অনাগত কাল নিয়ে স্ফীত আশায় মানুষের মন স্বাস্থ্যবতী হয় | কিন্তু সব আশাই কি আর অমৃত দেয় ? অমৃতের পশ্চাতে থাকে দুরন্ত হলাহল |  কখন যে কাকে সে নীলে নীল করে দেবে সে বুড়ো বাবা র ও অজানা |  বুড়ো বাবার থানে মানত করেও শেষ রক্ষা হলো না | হীরামনি মৃত সন্তান প্রসব করলো |

অমন পাহাড়ি ঝর্ণা হীরামনি , কবির কাব্য যেন শুকিয়ে নিরস গদ্য হয়ে গেলো | হীরামনির সব রাগ গিয়ে পড়লো নদীটার ওপর | সেদিন রাতে চোখে শ্রাবণ নিয়ে সে দাঁড়ালো নদীর ধারে | সব খুলে নিরাভরণ সে ঝাঁপিয়ে পড়লো নদীর বুকে | তীব্র আক্রোশে জল এ আঘাত করতে করতে বললো , কেনে নাই দিলি , বল তুই , নে নে  আমার সব নে   তু  | নদী খল খল করে উঠলো | পূর্ণিমায় জলের টান ছিল বেশি | পাড়ে ওঠার চেষ্টাই করলো না হীরামনি | ভেসে যেতে লাগলো কোনো এক অনির্দেশ্য ভবিষ্যতের দিকে | আর কেবলি জলস্রোতে শুনতে লাগলো ডাক , মায়ি মায়ি

মিঠুন দেবনাথ

মা , তুই কার !

গল্পের এক চরিত্রে কেউ কবিতায়  , কেউ গানে , কেউ ছন্দে , কেউ নৃত্যে বা কেউ আড়ম্ভর স্বাচ্ছ্যন্দে যে যেভাবে পারছে তোকে বরণ করছে | আবার অন্যচরিত্রে কেউ চোখের জলে , কেউ ভ্রুন হত্যা করে , কেউ জীবন বলি দিয়ে , কেউ শরীর বিক্রি করে , কেউ লালসার শিকার হয়ে যে যেভাবে পারছে তোকে বরণ করছে |
   —আসলে দূর্গা তুই কেমন ? কী তোর চাহিদা ? কেন আসিস বছর বছর ? পাপের ধ্বংস করে অধর্ম বিনাশে পালক-সংহারক হিসাবে আসিস নাকি দুঃখ জর্জরিত মানব সমাজকে হিংস্রতার চরমতম পর্যায়ে নিয়ে যেতে আসিস !
     শুনলাম তুই নাকি মা শক্তিমাতা ? তবে কোথায় তোর শক্তি ? ও , তুই বুঝি মহিষাসুর মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেছিস , তাই আজ মানবাসুরের এত বাড়বাড়ন্ত ? কেন , তোর ত্রিশুল কি ভোঁতা হয়ে গেছে ? নাকি তোর তৃতীয় চোখ অন্ধ হয়ে গেছে ? যদি অন্ধ না ই হয়ে থাকে তবে যারা দিনে দুপুরে কিংবা রাতের অন্ধকারে তোকে কামড়ে হিঁচড়ে খায় , রক্তাক্ত করে তোর আঁচল , তারা কেন তোর অঞ্জলি দেয় ? কেন নিস্ তাদের অঞ্জলি ? তাদের কে কি চিনতে পারিস না তুই ? তোর ত্রিঁশুলে এক খোঁচায় কেন এইসব মানবাসুরদের হৃদপিন্ডটা ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারিস না  ?
    তবে কোথায় ভয় তোর ! কেন দ্বিচারিচতা ? নাকি আজকাল আমাদের অফিসের বাবুদের মতো তুইও ঘুষ খাওয়া শিখে গেছিস ! আকাশ ছোঁয়া উঁচু উঁচু প্যন্ডেল , বড় বড় সোনার গয়না এসব দেখে তুইও বুঝি লোভ সামলাতে পারিস না ! শত পাপ করেও মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে দিলে আজ বুঝি তুইও খুব খুশি হয়ে যাস ... তাই না মা !
      আসলে জানিস মা , যখন দেখি টাকার অভাবে উপযুক্ত চাঁদা দিতে পারিনি বলে প্যান্ডেলের বাবুরা ভর্ৎসনা করেন তখন একটু একটু কষ্ট হয় | কিন্তু কাউকে বলি না ! কেন বলি না জানিস মা , মাত্র তিনদিনের জন্য তুই আসিস , তাই তোর যখন তৃতীয় নয়ন অন্ধ সেখানে আমার দুঃখের কথা তোকে কী আর বলব , তুই তো অতিথি ! তোর এখন আর আমায় দেখার বা কষ্ট অনুভব করার হৃদয় বা চোখ কোনোটাই নেই | যদি থাকত , তাহলে আমার লক্ষীটাও একটা জামা কিনতে পারত , আমার গনেশ-কার্তিকরাও একটা প্যান্ট কিনতে পারত ! তাই আমার নিষ্ঠুর হৃদয়ে আক্ষেপের সহিত একটা কথাই বার বার উঁকি মারে..

'মা , তুই কার !'
—তবে , জবাব চাইনি , ইচ্ছে হলে বলে যাস্...
   
          

সুব্রত দেববর্মা

নবমীতে

দশ বছর পর নবমীর রাতে,
প্রাক্তনের সাথে হটাৎ দেখা
দাঁড়িয়ে ছিল সে দশ-মিটার তফাতে ।

কাছে আসতেই ক্ষুদ্র আলাপচারিতা,
সেই যেমন শুরু করেছিলাম আগের মতই
শুধু বাঁদিকে অল্প ডাইভার্ট ছিল তার নরম চুলের সিতা ।

তার চোঁখের দিকে তাকিয়ে কথা হয়নি বলা...
অন্যদিকে চেয়েই জিগ্যেস করলাম ঘুরতে যাবে ?
যদি হটাৎ পিছুটান সজোরে মারে কানমলা,
সেই ভয়টা তো ছিলই।
কিন্তু অভয় এলো এক কথাতেই
বাইকে চড়তেই জিজ্ঞেস করলাম " আর? "
তারপর ছুটিয়ে দিলাম আমার সস্তার স্প্ল্যান্ডার।

জানতে পারলাম ওর নাকি কর্পোরেট জব...
বাড়ি গাড়ি এলসিসিয়ান সবই আছে
আমিই শুধু নেই আর আছে বাকি সব ।

আমি জানালাম আমার ইদানিং বন্ধুদের কথা...
পুরনো একখান গিটার আর ছেড়া জিন্স
এখন এরাই যে আমার জীবনানন্দের "সেন বনলতা"।

অনেক্ষন পর সে কফির দোকানের সামনে...
দাঁড়াতে চাইলো,আমি না বলাতে সে বায়না ধরলো
আমি এই বারও ওকে না বলি ক্যামনে।

বাইক থামতেই সে খুশি হয়ে
বললো, " আজো তুমি আমার সাথে হেরে যাওই... "
আমি সামনের দিকে চেয়েই আস্তে শুধুলাম
" আমি জিততে চাইনি তো কখনই "।

এবার আমি ফিরবই কারন আমাকে ফিরতে হবে তাই...
ওর গলিটা আমার চেনা, শেষ দশবছরে দুবার এসেছি
একবার ইচ্ছায়, আরেকবার অনিইচ্ছায়।

ওকে ছেড়ে আসার পর যখন বাড়ি ফিরলাম...
কৈ আগের মতো তো মনখারাপ হয়নি
সবই ঠিকঠাক ছিলো বটে,
শুধু বাড়ির জন্য দশমীর মিষ্টিটা ভুলে গেছিলাম।

আলমগীর মাসুদ

আলমগীর মাসুদের দুটি অণুগল্প

১. দোজখের দারুণ হিসাব

আমার সকল প্রার্থনার ফল আমার মায়ের জন্য। মা যেনো পায়—আমার সোয়াব সবটুকু। একদিন সকাল সকাল এক জোড়া কানের দুল আমি খোলে নিয়েছি মায়ের! বিধবা মা’কে আরেকবার আমি আমার চোখ দিয়ে দেখলাম। হ্যাঁ এবার দেখলাম, মায়ের কান দুটি দারুণ শূন্য শূন্য!
আমি জানি বিশ্বাস শব্দটা দারুণ অসত্য বর্তমান পৃথিবীর ঘরে। তবু আমি সত্যি দেখেছি, মায়ের কানে আঙুল রাখতেই আমার বুক আর কলিজা কেঁপেছিলো সেদিন। পাছে বিধবা মা’কে একবারও আন্দাজ করতে দিইনি আমার—মুহূর্তের সে মিথ্যা অভিনয়। মাথা নুয়ে আসলেও বাবার কাছেই শিখেছি, নারীদের সামনে পুরুষকে সবসময় সিংহের চরিত্রে থাকতে হয়! অথচ অপরাধের ঘ্রাণ ঢাকতে ঢাকনা হিসেবে ওইদুটি ধুল-ই সেদিন সিংহ হয়েছিলো আমার। আর আমি ছিলাম মায়ের সামনে সামান্য একটি বিড়াল।
বাবার কাছে সিংহের চরিত্র শিখলেও মা’কে কিছুই দিইনি কখনো। তবে দারুণ আশ্চর্য তিনটি মনেরাখার স্মৃতি পুষে রেখেছি। যেমন, পৃথিবীতে আমাকে আনতে দেহের সঙ্গে লড়াই! আমার মুখে একদিন মাগি শব্দটি শোনা! আর হ্যাঁ, দ্বিতীয়বার গায়ের কাপড়টার মতো কানদুটিকেও আমি সাদা করে দিয়েছি মায়ের!

আমি জানি, আমার প্রার্থনার ফল এজীবনে অর্ধেকও জমা হয়নি। আমি জানি, সোয়াবের পূর্ণকাজ আমার এখনও শুরুই হয়নি। আমি নিশ্চিত, একাল পরকাল কোনোকালেই আমি মায়ের কাজে আসিনি! অতএব আমার শেষ প্রার্থনা, ঈশ্বর যেনো আমাকে দোজখের বাসিন্দা বানায়। আর আমার মা’কে রাখুক বেহেস্তে।

২. রামঠাকুর আশ্রমে একদিন

প্রেমটা এক বা দুই বছরের বেশি কখনোই টিকে না আমার। বলা যায়, আমিই রাখি না। ১২ সালের শুরুর দিকে সায়েরা নামের এক টেনে পড়ুয়া মেয়ের সাথে আমার প্রেম হয়। আবেগী মেয়েটার সবকিছুই আমার ভালো লাগতো। শুধু ভালো লাগতো না, কথায় কথায় সেভ করার তাগিদটা।

সরকারি নামকরণ এক শহীদ সড়কের গোলচত্বরে আমাকে দাঁড় করিয়ে হাতে গুঁজে দেয়, পাঁচ শ টাকার একটি মুজিবমার্কা নোট। বললাম, 'এটা কেনো?'
সায়েরা হুকুম দিয়েই জানান দিলো, 'বিকালে দেখা করবা রামঠাকুর আশ্রমের ফুলবাগানটিতে।' সাথে আরো বলে দিলো সে, 'সেলুন থেকে মুখ পরিস্কার করে আসবা।'
মুজিবমার্কা নোটটি বারকয়েক তাকে সাধলেও নেয়নি! অগত্যা রিকশাওয়ালাকে বললাম, 'মামা যা।'

একটা বিয়ার খেয়ে, শহরের অমরবাবুর দোকান থেকে বাকি টাকার চকলেট নিলাম প্রেমিকার সে টাকায়। ঠাকুরের কৃপায় রামঠাকুর আশ্রমটিতে পুজোর ফুল সবসময় দারুণ ফোটে। আজও বাগানে অনেক ফুলের দেখা। সেভহীন চেহারায় সারার হাতে পেকেটটি দিয়ে বললাম, 'ভালোবাসার মানুষকে গিফট করলে সবার আগে ঠাকুরজি খুশি হয়। তাই এই চকলেটগুলো তোমার জন্য নিয়ে আসলাম।'
চকলেটসহ পেকেটটি মাটিতে ফেলে সারা দ্রুত পায়ে চলে যাওয়ার সময় উচ্চস্বরে বলেই দিলো, 'তুমি আর আমার সাথে কখনোই যোগাযোগ করবা না।'

'হাহাহা...'
মুহূর্তে রামঠাকুর আশ্রমের মূর্তিটাকে অসহায় শিশুর মতোই মনে হলো আমার। কারণ দেশের বহু মন্দিরে আমার প্রেম খাঁটি হলেও, সেবার-ই প্রথম সায়েরা চলে গেলো কোনো এক পবিত্র স্থান থেকে। আর রামঠাকুর আশ্রমের মূর্তিটা তখনও তাকিয়ে ছিলো— আমার হাসিমাখা মুখের দিকে।

বিজন বোস

জগৎ জননী মা

অসুরদলনী শান্তি স্বরূপিনী
মৃন্ময়ী ত্রিনয়নী মা তুমি ,
সর্বজীবে শান্তি দায়িনী
নতমস্তকে প্রণমি আমি ।
মিথ্যা ব্যভিচার অনাচার সৃষ্টি
ভুলুণ্ঠিত বিপথগামী সভ্যতা কৃষ্টি
সদাতৎপর তুমি প্রতিষ্ঠায় সত্যের জয় ,
মাতারূপে তুমি পূজিতা ভূলোকে
পুত্র-কন্যা ধন্য তোমার আলোকে
তমসা বিদীর্ণ করি ধরা দাও শান্তির আহ্বানে কোটি চিত্তে জাগে সুখ তোমায় আভূমি প্রণামে ।

সত্যের পূজায় নিয়োজিত মুখোশধারী যারা
জাগাও তাদের বিবেক  ;ঘুচাও আঁধার কারা,
অর্থ যশ প্রতিপত্তি যাদের কিছু নাই
তাদের জন্য আজ শুভকামনা চাই ।
তুমি শ্যামা তুমি দুর্গা
সকল সন্তানের তুমি জগৎ জননী দশভূজা মা
এসো শরতের হিমেল হাওয়ায়
কাশফুলের স্নেহের দোলায় ,
ধুনুচি নাচের ড্যাম  কুড় কুড় ঢাকের ছন্দে তালে
নাশো দুষ্ট দস্যু দাম্ভিকগণে ,
শান্তিধারা ছড়িয়ে দিয়ে
আনন্দের হিল্লোল বাজাও সবার মনে প্রাণে ।

সমীর ভাদুরী

শৈশবের পূজার স্মৃতি

পূজার ঠিক দুই মাস আগে থেকেই আমার একটা লাল রঙের প্লাস্টিকের কৌটুতে টাকা জমানো শুরু করতাম। বাবা স্কুলে যাওয়ার সময় যে এক টাকা দুই টাকা দিতেন সেই টাকাটা জমিয়ে রাখতাম। আর এই সময়ের মধ‍্যে যদি কোনো আত্মীয় বাড়ীতে আসতেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা কারন যাওয়ার সময় হাতে টাকা দিয়ে যেতেন কিছু কিনে খাওয়ার জন‍্য। এই মুহুর্তটার অপেক্ষায় থাকতাম কিন্তু মা বাব যতক্ষন না অনুমতি দিচ্ছেন নিতে ও পারছিনা। অনুমতি পেলেই নিয়ে নিতাম আর ঐ লাল কৌটুতে রেখে দিতাম। তারপর মহালয়ার অপেক্ষা ।মহালয়া মানেই মায়ের আগমন বার্তা। মহালয়ার আগের দিন রাতে ঘুমানোর আগে প্রার্থনা করার সময় ঠাকুরকে বলতাম ভোরবেলা কারেন্ট যেনো থাকে নয়তো মহালয়া দেখতে পারবোনা। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠার আগেই গ্রামের অন‍্যরা এসে ডাকতে শুরু করতো কারন তখন গ্রামে সবার ঘরে টেলিভিশন ছিলো না। ঐ সময়ে সবাই মিলে মহালয়া দেখার আনন্দ আর কখনো পাইনি । এখন মহালয়া আসলেই সুন্দর মুহুর্তগুলি চোখের সামনে ভেসে উঠে। পূজার একমাস আগেই বাবা জামা কাপড় কিনে দিতেন। বাজারে যাওয়ার পর দিদি কয়টা জামা কিনবে তার উপর নির্ভর করতো আমি কয়টা জামা কিনবো কারন দিদি যতটা নেবে আমাকে ও ঠিক দামে ততটাই দিতে হবে। বাবার আরেকটা অভ‍্যাস ছিলো বাজারে গিয়ে যেই পোশাকটা কিনতাম তার মধ‍্যে যে কোনো একটা দোকানেই আমাকে পরিয়ে বাড়ীতে নিয়ে আসতো আর আমি ও একদম প্রস্তুত থাকতাম পরে আসার জন‍্য। বাড়ীতে এসে সবাইকে ডেকে এনে পূজার জামা কাপড় দেখানোর আনন্দই ছিলো অন‍্যরকম। মহালয়ার পর দেখতে দেখতেই পূজার ঢাকে কাঠি। ষষ্ঠী রাতে অপেক্ষায় থাকতাম বাবা কখন বাড়ী আসবেন আর বাবার কাছে জানবো মূর্তি কেমন করে সাজিয়েছে। বাবা বললে ও শান্তি নেই কখন ভোর হবে আর এক দৌড়ে গিয়ে মূর্তি দেখবো। ভোর হতেই সব বন্ধুরা মিলে মন্ডপে গিয়ে মূর্তি দেখতাম আর চুলচেরা বিশ্লেষন বিশেষ করে অসুর কে নিয়ে। আর আলোচনায় আরো থাকতো বিসর্জনের সময় কে কোন অস্ত্রটা নিয়ে যাবো। বাবা পূজার সময় যে বন্দুক আর ক‍্যাপ কিনে দিতেন তাতে সন্তোষ্টি হতোনা আরো চাই!!! আরো চাই মানেই লাল কৌটুতে জমানো টাকা। সেই টাকা দিয়ে ক‍্যাপ, বেলুন, খাওয়াদাওয়া আর ঘুরাঘুরি চালিয়ে নিতাম। বাবার নির্দেশ ছিলো পূজার চারদিন অযাচক আশ্রমে সকালবেলা উপাসনা করতেই হবে! আমাকে আশ্রমে যেতেই হতো আর আমার বন্ধুরা পূজা মন্ডপেই থাকতো। তারপর তারা অস্টমীতে অঞ্জ লী দিতো আমি দিতামনা। বাবা মাকে এই ব‍্যাপারে প্রশ্ন করলে বলতো আশ্রমে অঞ্জ লী দিলেই মা দুর্গা পেয়ে যান। আমি ভাবতাম অঞ্জ লী দেই আশ্রমে দুর্গা মা কী করে পাবেন!! এতো আনন্দের মধ‍্যে কখন যে দশমী চলে আসতো বুঝতেই পারতাম না। দশমী আসা মানেই বাবার কাছে বায়না আমি যে কোনো একটা ঠাকুর নিজে গোমতী নদীতে বিসর্জন দেবো। অনেক রাতে বিসর্জন হতো তাই বাবা কে বলতাম আমি ঘুমিয়ে গেলে ও যাওয়ার সময় যেনো আমাকে নিয়ে যান । সেই বিসর্জনে যাওয়া আর কোনোদিন ই হয়ে উঠতোনা। তারপর আসতো লক্ষী পূজা, দীপাবলী আর ভাই ফোটা। ভাই ফোটা মানেই পরীক্ষার ঘন্টা বেজে গেছে । পরীক্ষার প্রস্তুতি একদম তুঙ্গে। লাল কৌটু গুছিয়ে রেখে দিতাম আবার আগামী বছরের জন‍্য।

সত্য রঞ্জন দে

এই শরতে 

মন  চাই ,শরতের ঐ সাদা মেঘের ভেলায় 

ওকে নিয়ে ,পরিযায়ীর মতো দিগন্তে পাড়ি দিতে ,

ভালোবাসার নিগূঢ় বাঁধনে , আঁখিতে আঁখি  রেখে মরনে মিশে যায়  !

মন চাই , শরতের  নিরালা বাতাসে,ওকে নিয়ে 
নদী তীরে কাশবনে অনন্ত চলতে ,  
জীবন যন্ত্রনা ভুলে,মনের মাধুরী মিশিয়ে,
এক স্বপ্নিল জীবন বুনতে !
তবু আজ , বাস্তবের কষাঘাতে 
মনের অলি-গলি বিষাদে খাঁ-খাঁ করে,
তোমার সৃষ্টির মহিমায়,পৃথিবী থরো-থরো 
যেন অসুরেরা এখনও জীবিত !
তোমার আহবানেও ,আকাশে কালোমেঘের আনাগুনা ঢাকেরসুরে হৃদয়ে ঝড় উঠেনা,শিউলিঝরে না আঙ্গিনায় 
সাজু -সাজু রব নেই ,পৃথিবী যেন নিরুত্তাপ ,
দশমীর পূর্বেই যেন কান্নার রোল !

তোমার মুখেও পিত্রালয়ে যাবার সেই সুখ নেই
সন্তানের ভাবনায় যেন বিভোর 
মাগো ,বৃথা এত আয়োজন ,এর চেয়ে ছিল বেশ 
লালপাড়ের সাদাশাড়ি ,কুঁড়েঘরে অর্ঘ্যদি অর্পণ ?

উর্মি সাহা

মা, ভালো আছো?


মা!

এই মায়াবী দেহ দিল মা,
মা-ই প্রথম শিক্ষা গুরু।
মা,তোমার চরণতলেই ত্রিভুবনের সব সুখ।
মা,তুমিই দেবীর রূপ।
মা-ই শক্তির মন্ত্র-,,,
মা-ই স্বস্তির শেষ পর্যায়।


কিন্তু মা•••

তুমি ভালো আছো?

এই নরপিশাচরা তোমায় ভালো রেখেছে কি??


জানো মা•••

রোজ নিস্তব্ধতায় পার্থক্য অন্বেষণে ব্যস্ত আমি,

তুলনা করি;তোমার আর জন্মদাত্রী মায়ের।। 
কিন্তু আজও আমি ব্যর্থ।
তবে মা,সর্বস্থানে আছে বিভেদ-


ঘরের মায়ে আর মন্দিরের মায়ে।

সম্প্রদায়ে যে তুমি বিভাজিত মা
এই সমাজ আজ বিকলাঙ্গ হয়ে উঠেছে;
এখন প্রয়োজন শুধু তোমার আদর্শের,,!
ঘরের মায়েরা লাঞ্চিত আজ অকারণ।
মা, তোমার দশভুজে অস্ত্র অসাধারন,,,
ঘরের মায়ের দু'হাত বেঁধে করছে অবাধ নিপীড়ন।

তাই বলছি, মা•••••
ভালো আছো তো?
এই ভোগ বিলাসি নরজাতি; 
তোমায় ভালো রাখবে তো?


উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...