Sunday, October 6, 2019

সমীর ভাদুরী

শৈশবের পূজার স্মৃতি

পূজার ঠিক দুই মাস আগে থেকেই আমার একটা লাল রঙের প্লাস্টিকের কৌটুতে টাকা জমানো শুরু করতাম। বাবা স্কুলে যাওয়ার সময় যে এক টাকা দুই টাকা দিতেন সেই টাকাটা জমিয়ে রাখতাম। আর এই সময়ের মধ‍্যে যদি কোনো আত্মীয় বাড়ীতে আসতেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা কারন যাওয়ার সময় হাতে টাকা দিয়ে যেতেন কিছু কিনে খাওয়ার জন‍্য। এই মুহুর্তটার অপেক্ষায় থাকতাম কিন্তু মা বাব যতক্ষন না অনুমতি দিচ্ছেন নিতে ও পারছিনা। অনুমতি পেলেই নিয়ে নিতাম আর ঐ লাল কৌটুতে রেখে দিতাম। তারপর মহালয়ার অপেক্ষা ।মহালয়া মানেই মায়ের আগমন বার্তা। মহালয়ার আগের দিন রাতে ঘুমানোর আগে প্রার্থনা করার সময় ঠাকুরকে বলতাম ভোরবেলা কারেন্ট যেনো থাকে নয়তো মহালয়া দেখতে পারবোনা। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠার আগেই গ্রামের অন‍্যরা এসে ডাকতে শুরু করতো কারন তখন গ্রামে সবার ঘরে টেলিভিশন ছিলো না। ঐ সময়ে সবাই মিলে মহালয়া দেখার আনন্দ আর কখনো পাইনি । এখন মহালয়া আসলেই সুন্দর মুহুর্তগুলি চোখের সামনে ভেসে উঠে। পূজার একমাস আগেই বাবা জামা কাপড় কিনে দিতেন। বাজারে যাওয়ার পর দিদি কয়টা জামা কিনবে তার উপর নির্ভর করতো আমি কয়টা জামা কিনবো কারন দিদি যতটা নেবে আমাকে ও ঠিক দামে ততটাই দিতে হবে। বাবার আরেকটা অভ‍্যাস ছিলো বাজারে গিয়ে যেই পোশাকটা কিনতাম তার মধ‍্যে যে কোনো একটা দোকানেই আমাকে পরিয়ে বাড়ীতে নিয়ে আসতো আর আমি ও একদম প্রস্তুত থাকতাম পরে আসার জন‍্য। বাড়ীতে এসে সবাইকে ডেকে এনে পূজার জামা কাপড় দেখানোর আনন্দই ছিলো অন‍্যরকম। মহালয়ার পর দেখতে দেখতেই পূজার ঢাকে কাঠি। ষষ্ঠী রাতে অপেক্ষায় থাকতাম বাবা কখন বাড়ী আসবেন আর বাবার কাছে জানবো মূর্তি কেমন করে সাজিয়েছে। বাবা বললে ও শান্তি নেই কখন ভোর হবে আর এক দৌড়ে গিয়ে মূর্তি দেখবো। ভোর হতেই সব বন্ধুরা মিলে মন্ডপে গিয়ে মূর্তি দেখতাম আর চুলচেরা বিশ্লেষন বিশেষ করে অসুর কে নিয়ে। আর আলোচনায় আরো থাকতো বিসর্জনের সময় কে কোন অস্ত্রটা নিয়ে যাবো। বাবা পূজার সময় যে বন্দুক আর ক‍্যাপ কিনে দিতেন তাতে সন্তোষ্টি হতোনা আরো চাই!!! আরো চাই মানেই লাল কৌটুতে জমানো টাকা। সেই টাকা দিয়ে ক‍্যাপ, বেলুন, খাওয়াদাওয়া আর ঘুরাঘুরি চালিয়ে নিতাম। বাবার নির্দেশ ছিলো পূজার চারদিন অযাচক আশ্রমে সকালবেলা উপাসনা করতেই হবে! আমাকে আশ্রমে যেতেই হতো আর আমার বন্ধুরা পূজা মন্ডপেই থাকতো। তারপর তারা অস্টমীতে অঞ্জ লী দিতো আমি দিতামনা। বাবা মাকে এই ব‍্যাপারে প্রশ্ন করলে বলতো আশ্রমে অঞ্জ লী দিলেই মা দুর্গা পেয়ে যান। আমি ভাবতাম অঞ্জ লী দেই আশ্রমে দুর্গা মা কী করে পাবেন!! এতো আনন্দের মধ‍্যে কখন যে দশমী চলে আসতো বুঝতেই পারতাম না। দশমী আসা মানেই বাবার কাছে বায়না আমি যে কোনো একটা ঠাকুর নিজে গোমতী নদীতে বিসর্জন দেবো। অনেক রাতে বিসর্জন হতো তাই বাবা কে বলতাম আমি ঘুমিয়ে গেলে ও যাওয়ার সময় যেনো আমাকে নিয়ে যান । সেই বিসর্জনে যাওয়া আর কোনোদিন ই হয়ে উঠতোনা। তারপর আসতো লক্ষী পূজা, দীপাবলী আর ভাই ফোটা। ভাই ফোটা মানেই পরীক্ষার ঘন্টা বেজে গেছে । পরীক্ষার প্রস্তুতি একদম তুঙ্গে। লাল কৌটু গুছিয়ে রেখে দিতাম আবার আগামী বছরের জন‍্য।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...