Sunday, October 6, 2019

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী

সূর্যমুখী

বামুনের মেয়ে, রোজ নাইতে যাবেই যাবে বড় দীঘির ঘাটে।
অন্ধকারে পথ ঠাওরে, সূর্য উঠার আগে।
  সূর্যের প্রথম কিরণ চাই তার ভিজে কাপড়ে ভিজে শরীরে  ।
পাল্টাতে পারেনি কেউ আজ অবধি সেই আর্য কন্যার ব্রত।
শীত গ্রীষ্ম বারোমাস।
তারপর সূর্য মন্ত্র জপ-- ওম জবাকুসুমং--
কে যেন কানে ঢেলে দিয়েছিলো সূর্য প্রনামের নিয়ম।
ক্রমে সেই পুজা, প্রেমে পরিনত।
সুর্য স্তবে সূর্য তুষ্ট।
হতে তো হবেই --
একদিন রথে করে নেমে এলো সূর্য।
আধা ভিজে শরীরে চোখ বন্ধ একমনে সূর্য মন্ত্র জপ --
হঠাত জলদগম্ভীর সেই আওয়াজ।
কি চাও মেয়ে!
কেন আমারে কর বিচলিত!
সূর্য কনার মতো ঠিকরে পড়া রঙ নিয়ে ক্ষণিক বিস্মিত ক্ষণিক বিহ্বল মেয়ে ।
উঠলো বলে- তোমাকে চাই--
পতি হও, প্রেমিক হও--
আঁতকে সূর্য উঠলো বলে-
ওকি কথা!!
আমি যে দেবতারে!!
দেবতা আর মানুষের মিলন কি সম্ভব  কখোনো! অন্য বর চাও--
কাঁদলো মেয়ে কাটলো মেয়ে।
তবুও অনড় নিজ কথা খানিতে।
--পায়ে পড়ি ,কথা শোন বাড়াও হাত প্রভু। আমি যে তোমার প্রেয়সী প্রেমের পিয়াসি।
নইলে-- নইলে  করবো এ দেহ ত্যাগ তোমার সামনে। অভিশাপ আর অভিযোগে ছিন্ন ভিন্ন হবে। পৃথিবী হবে আলোক বঞ্চিত।
ধ্বংস হবে সৃষ্টি।
--না না মেয়ে ওকি কথা!!
সৃষ্টির মূল্য বোঝ। নইলে তুমি যে পাপিষ্ঠা হবে।
তবুও নাছোড় মেয়ে।
শেষে সূর্য বলল--
তাহলে দাঁড়াও এখানে,-- যাবেনা কোথাও। আমি গিয়ে আসি পৃথিবীর চারিদিকে। যাবার সময়ে নিয়ে যাবো সাথে করে।
বলে সূর্য চলে গেলো আর এলোনা।
মেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে একমনে, সূর্য স্তবে, সূর্যের আশায়।
দিন যায় রাত যায়।
কেউ তাকে নাড়াতে পারেনা।
ক্রমে মৃত্যু আসে নিয়ে যেতে তাকে।
তার ও চোখে আসে জল।
নিরুপায় তবু মরন সাথি হয়।

কিছু দিন পরে সেই স্থানে দুটি পাতা দিয়ে একটি কুঁড়ি দেখা দেয়।
বড় হয় সেই গাছ।
কলি দেখা যায় গায়ে-
ফুল ফোটে অপরূপ হলদে বরন যেনো মেয়েটার রঙ।
চেয়ে থাকে সে ফুল সূর্যের দিকে ।
হেলে পড়ে সূর্য, ফুল ও পড়ে হেলে।
দিন কাটে দিন ঢলে সূর্যের পানে চেয়ে।
যেনো আজও আছে বামুনের মেয়ে সূর্যের আশে।
সে ফুল দেখে লোকে ,দেখে সবাই, দেখে সূর্য নিঠুর।
ক্রমে তার নাম পড়ে' সূর্যমুখী'।
আজও যে ফোঁটে সূর্যের আশে তার পানে চেয়ে--

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...