মা , তুই কার !
গল্পের এক চরিত্রে কেউ কবিতায় , কেউ গানে , কেউ ছন্দে , কেউ নৃত্যে বা কেউ আড়ম্ভর স্বাচ্ছ্যন্দে যে যেভাবে পারছে তোকে বরণ করছে | আবার অন্যচরিত্রে কেউ চোখের জলে , কেউ ভ্রুন হত্যা করে , কেউ জীবন বলি দিয়ে , কেউ শরীর বিক্রি করে , কেউ লালসার শিকার হয়ে যে যেভাবে পারছে তোকে বরণ করছে |
—আসলে দূর্গা তুই কেমন ? কী তোর চাহিদা ? কেন আসিস বছর বছর ? পাপের ধ্বংস করে অধর্ম বিনাশে পালক-সংহারক হিসাবে আসিস নাকি দুঃখ জর্জরিত মানব সমাজকে হিংস্রতার চরমতম পর্যায়ে নিয়ে যেতে আসিস !
শুনলাম তুই নাকি মা শক্তিমাতা ? তবে কোথায় তোর শক্তি ? ও , তুই বুঝি মহিষাসুর মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেছিস , তাই আজ মানবাসুরের এত বাড়বাড়ন্ত ? কেন , তোর ত্রিশুল কি ভোঁতা হয়ে গেছে ? নাকি তোর তৃতীয় চোখ অন্ধ হয়ে গেছে ? যদি অন্ধ না ই হয়ে থাকে তবে যারা দিনে দুপুরে কিংবা রাতের অন্ধকারে তোকে কামড়ে হিঁচড়ে খায় , রক্তাক্ত করে তোর আঁচল , তারা কেন তোর অঞ্জলি দেয় ? কেন নিস্ তাদের অঞ্জলি ? তাদের কে কি চিনতে পারিস না তুই ? তোর ত্রিঁশুলে এক খোঁচায় কেন এইসব মানবাসুরদের হৃদপিন্ডটা ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারিস না ?
তবে কোথায় ভয় তোর ! কেন দ্বিচারিচতা ? নাকি আজকাল আমাদের অফিসের বাবুদের মতো তুইও ঘুষ খাওয়া শিখে গেছিস ! আকাশ ছোঁয়া উঁচু উঁচু প্যন্ডেল , বড় বড় সোনার গয়না এসব দেখে তুইও বুঝি লোভ সামলাতে পারিস না ! শত পাপ করেও মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে দিলে আজ বুঝি তুইও খুব খুশি হয়ে যাস ... তাই না মা !
আসলে জানিস মা , যখন দেখি টাকার অভাবে উপযুক্ত চাঁদা দিতে পারিনি বলে প্যান্ডেলের বাবুরা ভর্ৎসনা করেন তখন একটু একটু কষ্ট হয় | কিন্তু কাউকে বলি না ! কেন বলি না জানিস মা , মাত্র তিনদিনের জন্য তুই আসিস , তাই তোর যখন তৃতীয় নয়ন অন্ধ সেখানে আমার দুঃখের কথা তোকে কী আর বলব , তুই তো অতিথি ! তোর এখন আর আমায় দেখার বা কষ্ট অনুভব করার হৃদয় বা চোখ কোনোটাই নেই | যদি থাকত , তাহলে আমার লক্ষীটাও একটা জামা কিনতে পারত , আমার গনেশ-কার্তিকরাও একটা প্যান্ট কিনতে পারত ! তাই আমার নিষ্ঠুর হৃদয়ে আক্ষেপের সহিত একটা কথাই বার বার উঁকি মারে..
'মা , তুই কার !'
—তবে , জবাব চাইনি , ইচ্ছে হলে বলে যাস্...
No comments:
Post a Comment