হীরামনি মাহাতো
হীরামনি রাত্রি দিয়ে গা ঘষে , জ্যোৎস্না দিয়ে ধোয় |তার তৈলচিক্কন চুলে অমানিশার পূজা হয় | গায়ে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে | চোখে জল আসলে ঘোর শ্রাবণে বৈষ্ণব মহাজন পদাবলী আঁকে| হাসলে রতি হিংসে করে|
হীরামনি এর মরদ দাঁতাল | রোজ নিজের বিবমিষার মধ্যে নগ্নতাকে সহ্য করে হীরামনি শুধু কোল ভরার আশায় | আবশ্যিক কর্ম শেষে মরদ ঘুমায় আর হীরামনি নদীর ধারে আসে | রাত্রি তার প্রসাধন , জ্যোৎস্না তার রূপটান | হীরামনি নদীতে নামে | বোঝে সে নামলেই নদীটা মরদ হয়ে যায় | নদীর জল তার স্তন ছোঁয় | হীরামনি শীৎকার করে | তার নগ্নতার প্রতিটা বিন্দু তে জলকণার ফেনায়িত আবেগে সে শোনে মায়ি মায়ি ডাক | হীরামতি বলে , তুর মতো বেটা হোক বটেক |
দিন যায় , মাস যায় | হীরামনি গর্ভবতী হয় | উদর স্ফীত হয় , স্বপ্নও স্ফীত হতে থাকে , ঠিক যেমন করে অনাগত কাল নিয়ে স্ফীত আশায় মানুষের মন স্বাস্থ্যবতী হয় | কিন্তু সব আশাই কি আর অমৃত দেয় ? অমৃতের পশ্চাতে থাকে দুরন্ত হলাহল | কখন যে কাকে সে নীলে নীল করে দেবে সে বুড়ো বাবা র ও অজানা | বুড়ো বাবার থানে মানত করেও শেষ রক্ষা হলো না | হীরামনি মৃত সন্তান প্রসব করলো |
অমন পাহাড়ি ঝর্ণা হীরামনি , কবির কাব্য যেন শুকিয়ে নিরস গদ্য হয়ে গেলো | হীরামনির সব রাগ গিয়ে পড়লো নদীটার ওপর | সেদিন রাতে চোখে শ্রাবণ নিয়ে সে দাঁড়ালো নদীর ধারে | সব খুলে নিরাভরণ সে ঝাঁপিয়ে পড়লো নদীর বুকে | তীব্র আক্রোশে জল এ আঘাত করতে করতে বললো , কেনে নাই দিলি , বল তুই , নে নে আমার সব নে তু | নদী খল খল করে উঠলো | পূর্ণিমায় জলের টান ছিল বেশি | পাড়ে ওঠার চেষ্টাই করলো না হীরামনি | ভেসে যেতে লাগলো কোনো এক অনির্দেশ্য ভবিষ্যতের দিকে | আর কেবলি জলস্রোতে শুনতে লাগলো ডাক , মায়ি মায়ি
No comments:
Post a Comment