Thursday, December 24, 2020

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

বড়দিনের শুভেচ্ছা সকলকে

মনন স্রোত || ত্রিপুরা || ডিসেম্বর

সম্পাদকীয়


কথার শব্দে কবিতারা জেগে উঠে। চোখে পড়ে সময়। কালে কালে আমরা পেরিয়ে যাচ্ছি অনেক মুহূর্ত। রেখে যাচ্ছি কোথাও নিজেদের বিচরিত দাগ। বছরের শেষ সংখ্যা এটি। সাজানো হয়েছে নতুন লেখকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। 

সারা দেশে সভ্যতার ঈশ্বরদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছেন সৃষ্টিশীল মানুষেরা। মনন স্রোত নৈতিক সমর্থন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। সারাবছর আমরা সমীক্ষা ও গবেষণামূলক প্রকল্পে সকলের সহযোগিতা পাই। বছরের শেষ প্রান্তে এসে আমরা আবারও তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই সংখ্যায় যারা লিখেছেন সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ত্রিপুরা রাজ্যের শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা হিসাবে মনন স্রোতের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে সকলের সহযোগিতা পরামর্শ সর্বাবস্থায় কাম্য।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

বর্তমানে আমাদের সমীক্ষা চলছে....

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

উল্টো পুরাণ 
   
চিঠি লিখি আবার ছিঁড়ে ফেলি 
একটা অন্যমনস্ক মন না কি ব্যর্থ প্রেমিক 
উজাগর রাতে সন্ধ্যা আরতি শেষে 
নিখোঁজ জঙ্গলে ঢুকে যায়
পাতায় পাতায় কার নাম খুঁজে 
ক্রমশ গাছেরা হিংস্র হয়ে ওঠে
বন-পশুরা নির্বিবাদ মিলমিশে পটু...

এ দেখি উল্টো পুরাণ আকাশ জুড়ে ঘুরে 
সপ্তকাণ্ড রামায়ণের শেষে 
সীতার পিতৃত্ব নিয়ে বিস্তর গবেষণা 
এক পরশ পাথর 
স্বপ্নের হাত ধরে বাস্তবের পথ হাঁটা
প্রেম পড়ে থাকে চিঠির ভেতর 
আমি চক্কর কাটি বহিরাবরণে     
গুটিপোকা বন্দি যেন জন্মজন্মান্তর।

সুমতি দেবনাথ

চাষির ফল

 
হিরে মাণিক তো নয় ,
মেহনতের ফল ।
বসে বসে ভোগ করে 
কাপুরুষের দল ।
কাঠ ফাটা রোদ আর 
কিছু চাল খুদ ,মানায় অদ্ভুত। 
এইভাবে দিনে দিনে
বেড়ে চাষার ছেলে,
উচচশিক্ষা তরে তাকে
বিদেশে দেয় ঢেলে। 
শিক্ষিত হয়ে ছেলে 
আজ শহর বাসী ,
মাথাকুটে  মরে এখনো ,
বাবা সম হাজারো চাষী ।

রুবেল হোসেন

বন্ধুত্বের বাঁধন

ঝড়ের ঘূর্ণিপাকে সুদূরে নয়,
পাশে থাকার নাম বন্ধুত্ব!
ভুল দেখে সরে যাওয়া নয়,
ভুল শুধরে দিয়ে ভালোবাসার নাম বন্ধুত্ব! 
মিথ্যে বলে মন ভুলানো নয়,
সত্যি বলে সাহস জোগানোর নাম বন্ধুত্ব! 
সময়ের সাথে পাল্টে যাওয়া নয়, 
সময়কে পাল্টে জবাব দেওয়ার নাম বন্ধুত্ব! 
আলো থেকে অন্ধকারে সরিয়ে দেওয়া নয়, 
অন্ধ মুছে আলোর উজ্জ্বলে আলোকিত করার নাম বন্ধুত্ব!
ব্যস্ততার মধ্যে অজুহাত দেখানো নয়, 
খানিকটা সময় নিয়ে কেমন আছিস জানতে চাওয়ার নাম বন্ধুত্ব! 
বন্ধু মানে রাগ নয়, নয় অভিমান, 
বন্ধু মানে সুখে দুঃখে সমান সমান ভাগ!
বন্ধু মানে অগ্নিকাণ্ডে মৃদু ম্লান হাওয়া, 
বন্ধু মানে অল্প খাবার দু'জন মিলেখাওয়া! 
ভুলব না আজ তোকে আমি, রাখবো বুকে সদা, 
আমার বুকে বন্ধু হয়ে থাকবে সুতোয় বাঁধা। 

শাহেলী নমঃ

ঠাম্মা                                                                   

ছড়াৱ লগেদি দেখি ইগ্গা শিবলিঙ্গ । আৱে বেলহাতা কোন্ডে হামু? বনতুলসী হুল আৱ হাতা আনি শিবেৱ মাথাত দিসি। মাথাৱ উচেদি হানুমান লক্টেৱ, বনেৱ তুন ভাল্লুক বাইব়- অৱ ...বা........বু.. ।কোনোমতে ইন্ডিয়াত আই উইটলাম।

ঠাম্মা গো! আই মাত্ৰ কোই আসিলা?

আন্ডা শেখেৱ গো লগে জমি হাল্টাহাল্টি কইৱছি।হেতাৱা গেছে গই আন্ডা কৈইহাড়াত।হাত্ৰেৱ(জমিন) উচে দি  বাড়ি ইগ্গা দেখস যে, আন্ডা হিয়ানে উইটছিলাম। শেখেৱ গো চাইৱ দুয়াৱি মাডিৱ ঘৱ এক্কান আছিলো, এক্কই ঘৱেত্তে ৱান্দাবাড়া বেগ্গিন কইৱছি।

ভইন আন্ডা অক্কন যে বাইত্তে (বাড়িতে) আছি ইয়ান হুৱাগান টিলা আছিলো। তোৱ দাদুগুনে অল্প অল্প কৱি মাডি (মাটি) কাডি -কাডি হমান কৱি বাড়ি বাইনচে। এ টিলা কাইট্টেৱ সমে (সময়) কত আতিৱ (হাতিৱ) দাঁত , বাঘেৱ  আডডি(হাঁড়) হাইছে ৱে.......। কালাডেবাৱ তুন তিৱপা আনি জঙ্গল কাডাইছে, যে বড্ডা  বড্ডা অজগৱ আছিলোৱে। অন তো কিচ্ছু নাই।

ঠাম্মা ....বাংলাদেশ তুন কিল্লাই আইসো?

আৱে হিয়ানে যুদ্ধ লাইগজে ,থাইকবাৱ লাই দেৱ না হেতাৱা, কিত্তাম? নাইলে হিয়ানে আন্ডা যত বড্ডা উডান ওলা বাই(বাড়ি) আছিলো, চাইৱ ঘাট ওলা দিঘি আছিলো।দিঘিৱ তে এক মাছ আছিলো যে .... তোৱ তুন ও বড্ডা। বোত হুৱানা দিঘি। এক ঘাট আছিলো আন্ডা নমঃশূদ্র গো, হছিম-আলা(পশ্চিম) ঘাট ইয়ান আছিলো মিঞা গো। আৱ এক্কান আছিলো কাজলিৱ বাপেৱ গো। শেষমাথাৱ গান গেৱামি- (গ্ৰামবাসি) গো লাই আছিলো।
এই দিদি ঠাম্মিৱ তো পৱশু জন্মদিন ।
_ ও... হ্যাঁ। ঠাম্মা এবাৱ কাৱে কাৱে নিমন্তন কইৱবা।

ভইন এসব লাইগদো -ন আৱ।
তোৱা আৱ কাছে আসত আৱে চাওৱে ,ইয়ান ই বোত।
_ বাৰ্ডে তো হবেই । 
ঠাম্মা নামক মূল্যবান মানুষটাৱ কাছ থেকেই মায়াময় অতিত জানতে পাৱবে, মজাদাৱ গল্প শুনতে পাৱবে।ওৱা হাৱিয়ে গেলে এগুলো ও হাৱিয়ে যাবে।
ঠাম্মাৱ অনেক বয়স হয়েছে।প্ৰায় অসুস্থ থাকেন। উনি আমেদেৱ ছেড়ে চলে যাবাৱ পৱ ওনাৱ সন্তানৱা হাজাৱ লোক নিমন্ত্ৰন কৱে শ্ৰাদ্ধ শান্তি  কৱতেই পাৱে। এসব কৱে কী হবে? ওনাৱ মন্ডপ এৱ সামনে হয়তো অনেক ৱকমাৱি মিষ্টি ,ফল সবাই দেবে।ওনাৱ প্ৰিয়জন ওনাৱ সব পছন্দেৱ খাবাৱ ৱান্না কৱে ওনাৱ জন্য মন্ডপেৱ সামনে দিয়ে আসবেন।
কী হবে এতকিছু দিয়ে, এত কিছু যাৱ জন্য  আয়োজন কৱা হয় সেই তো থাকে না। যদি এত ঘটা কৱে আয়োজন কৱাৱ ইচ্ছা থাকে ,মানুষটা বেচেঁ থাকতে কৱুন। ওনাৱ ধুমধাম কৱে জন্মদিন পালন কৱা হোক। উনি দেখে যাক সন্তাৱা ওনাকে কতটা ভালোবাসে।যতদিন উনি আছেন ততদিন ওনাকে আনন্দ দিন। চলে যাবাৱ পৱে কৱে লাভ কী?

সংগীতা দাস

তুমি আমার

তুমি যে আমার প্রিয়!
তোমাতেই যে রয়েছে আমারই বাস;
শান্তি, নির্মল ও গহীনতম আঁশ!

তুমি সূর্য্য, তুমি আকাশ;
তুমি যে আমার প্রাণের আবাস
স্নিগ্ধ, কোমল ও আবেগপ্রবণ ডাল!

আলোকের এই ঝর্নাধারা,
বহিছে যে অন্তরের পবিত্রতা
নিবৃত্তি, সরলতা ও নিবারকতার সহিষ্ণুতা

ভুবন মোহন রূপময়তার স্থান,
তুমি যে আমার সুন্দরতম অন্ত:স্তরে;
আনন্দ, সুখ আর স্বর্গের বাস!

             

অমিত রুদ্র পাল

বিন্দু শিশির 

বিন্দু শিশির বুকে থাকুক 
নিবিড় শ্বাসে মাথা রাখুক ।
সদ্য ভোরের গর্ভ ফুটে
যখন শিহরণ অনুভবে উঠে
আমি হয়তো ..
কুয়াচ্ছন্ন পাখির ডানায়
রৌদ্র হয়ে পৌঁছতে পারিনি ,
কিংবা হয়তো আমি ..
সবুজ চোখে নাম জুড়ে
সিক্ত হয়ে একটু মুড়ে 
বলে উঠতে পারিনি 
ভালোবাসি !
বিশ্বাস করো ....
ছড়ানো ঘাসের মতো 
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছি
ক্ষানিকটা স্পর্শে লজ্জাবতী,
আদৌ কি তা !

বিন্দু শিশির বুকে থাকুক 
নীরব শীতে ডুবে থাকুক ।
কাঁপছে কাঁচা হৃদয়ে
তুমি আবরণ 
একটু ছুঁয়ে দেখো 
যদি হয় উন্মোচন ।

সুমিতা স্মৃতি

স্বপ্ন
     
স্বপ্ন আমার অনেক বড়ো, অনেক বড়ো আশা
জানি স্বপ্ন পূরণ হবে, আছে মনে ভরসা।

দুর্বল আমি নই হে স্বপ্ন, আছে বুকে বল
তাই আমার বিশ্বাস হব একদিন সফল। 

স্বপ্ন আমায় ঘুমোতে দেয় না, জাগিয়ে রাখে সদা
স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাই সর্বদা। 

জানি আমার স্বপ্নের রাস্তা এতটা সহজ ও নয়
তবুও আমি লক্ষ্যে পৌঁছাব আছে এই প্রত্যয়।

স্বপ্ন'ই মানুষকে জীবিত রাখে, জাগায় প্রাণে প্রাণ
স্বপ্ন ছাড়া মানুষের জীবন মৃত্যুর সমান।

জগন্নাথ বনিক

অসহায় অন্ধমেয়ে

আমি আজ বড়ো অসহায় মাগো 
একা একা বসে থাকি ঘরে।
দুই নয়নে আলো দেখতে পাই না 
জীবনটা কাটে  মোর অন্ধকারে ।

বয়স টা যখন ষোলো হলো 
মনে মনে ভালোবাসার স্বপ্ন জাগলো।
কেউ এসে বলেননি আজও 
আমাকে ভালোবেসে দেখাবে চাঁদের আলো ।

মনের জোরের বিশ্বাস ছিলো 
এই পৃথিবীর আলো দেখবো ।
তাই তো আমি ভর্তি হলাম 
প্রতিবন্ধী ভাই বোনদের স্কুলে ।।

ব্রেইল মেশিনের সাহায্য নিয়ে 
উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে।
একা বসে থাকিনা ঘরে 
আমি অন্ধমেয়ে।।

পৃথিবীর আলো দেখবো বলে 
একা একা গেলাম  হাসপাতালে ।
ডাক্তার বাবুর সু চিকিৎসায়
ফিরে পেলাম  আমার নয়নের আলো ।

চোখ খোলে যখন প্রথম দেখি 
   ডাক্তার বাবুর মুখ।
মনের আনন্দে অশ্রু ঝড়ে 
দেখতে পেলাম এই পৃথিবীর আলোর সুখ ।

সুজন দেবনাথ

বড্ড অসহায়

একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে নেমেছি পথে,
বাস্তবতার ভিড়ে পূর্নতা পাওয়ার আশে।
মনে হয়,,
কুল হীন সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসেই চলেছি
একাকিত্ব আমি, কেউ নেই পাশে।
অসহায় অনুভব করেছি অনেক
কেটেছে জীবন একা।
চলতে পথে মিলেছে কত, ভেবেছি আপন
স্বপ্ন ভেঙে হৃদয়াতুর হলো। 
আলো ভেবে আলেয়ার পিছে
ছুটেছি বহুকাল,  
অবশেষে দেখি সব স্বার্থান্বেসির পাল!
নিস্বার্থে ভালোবেসেছি, 
দিয়েছি মন উজার করে, 
দু-হাত ভরে করেছি গ্রহণ সবাকার করুনা।
অবহেলায়, তাচ্ছিল্যতায় 
একটা একটা করে কখন যে,
আমার মুঠোভরা স্বপ্নরা হারিয়ে গেলো 
বাস্তবতার ভিড়ে বুঝতেই পারলাম না।
পিছন পানে তাকিয়ে সেই ভিড় থেকে
হাড়ানো স্বপ্ন কুড়িয়ে নেবার সাহস হয়নি,
মেটেনি সেই আশা দু-চোখে কুয়াশা, 
আর স্বপ্ন নয় বাস্তব নিয়ে বাঁচা এবং
বাঁচানোর তাগিদেই চাই 
এক নব উন্মুক্ত আলোকিত সূর্যোদয়।
জীবনের চরম শিখরে পৌঁছাবার বৃথা চেষ্টায়,  শূন্যতার পথপ্রান্তে দাড়িয়ে আজও

কাজী নিনারা বেগম

লহমা

আমি উড়ব শীতের পাখায় ভর করে,
শিশির ভেজা গাঁদা ফুলের পাপড়ির আবডালে লুকিয়ে আছ তূমি,
গাথব মালা , সূর্যের আড়ালে , রোদেলা আকাশের এক মুঠো সোনালী স্বপ্নের ঠিকানায়।
 জীবন গনিতের হিসেবে বিয়োগ ছাড়া,,
আজ আর কিছু নেই!
সকল‌ সমীকরণের ফল আজ শুন্য,,
 ভরসা আর বিশ্বাসে সন্মান রয়ে গেল অশরীরি উধাও।
নিয়তির নির্মম পরিহাস পরিত্যক্তা আমি!
এলোমেলো এক গোছগাছ শর্তহীন ভালো বাসা,,
এক লহমায় অন্ধকারে ডুবেছি আমি।
সম্পর্কে টানাপোড়ন এসিড দগ্ধিত আমি,,
আজ প্রতিজ্ঞা করছি!
এমন রুপকথা লিখবোনা বার বার।

গৌতম দাস

বিরহের ভালোবাসা

অকৃত্রিম ভালোবাসার বিশ্বাসের চিতা জ্বালালে আজ।
দুঃখের সাগরে ভাসতে যখন তরি হয়ে আমিই ছিলাম তোমার পাশ।
হৃদয়ের অন্তঃস্থলে এঁকেছি প্রেয়সীর ছবি।
আবেগ বহিঃপ্রকাশে হয়েছি প্রেম জগতের কবি।
কালবৈশাখী  ঝড়,বৃষ্টি, বজ্রপাত এড়িয়ে-
মেঠো পথে দাঁড়িয়েছি বৃষ্টি ভেজা প্রেমিক হয়ে।
থাকব তোমার ছায়া হয়ে ,
 বলে মুগ্ধ করেছিলে আমায়।
কোথায় সেই প্রেমময় বাণী?তোমার স্মৃতি আজ ক্ষণে ক্ষণে কাঁদায়।
তুমি আছো আনন্দ সাগরে জাহাজের নাবিকের সনে।
না বলে যদি ইঙ্গিতও দিতে , শান্তি খেলা করত রিক্ত মনে।
প্রার্থণা করি,
সুখে , স্বাচ্ছন্দ্যে , আনন্দে হও যেন রাজসুখী।
তোমার আবেগময় স্মৃতিতে, আমি হবো চিরকালের যোগী

কাউচার খান

আমি এখন বেঁচে নেই হয়তো

আমি এখন বেঁচে নেই হয়তো,
আমি এখন পঁচে গেছি, গলে গেছি!
এখন গায়ে শুধু পঁচা মাংসের গন্ধ। 
সুগন্ধি পারফিউমের মাথা ধরা গন্ধ এখন আর নেই!
ঘুনপোকা ধরা এই আমি এখন,
তোমার বৃত্তের বাইরে অতি মাত্রায় সত্যি শুন্যতায় দাঁড়িয়ে। 
এখন দিন নেই, রাত নেই,
শুধু মনে হয় তুমি বুঝি সত্যিই গগনচন্দ্র |
তিন লক্ষ চুরাশি হাজার কিলোমিটার দূরে আমি,
পৃথিবী থেকে শুধু তার আলোর ঝলকানিতে ভালোবাসতে পারি। 

সঞ্জয় দত্ত

প্রশ্ন

তুমি কেন হাসো?
তুমি কেন কাঁদো?
তুমি কেন স্বাধীনতা দাও নি আমায়?

হাজার প্রশ্ন, হাজার উত্তর,
কেন এই ধারা?

দিনের শুরুটা কেন প্রশ্ন দিয়ে হয়?
দিনের শেষটাও কেন প্রশ্ন?
সবকিছু কেন এক করে নিতে পারছি না?

কোথায় রাজা?
কোথায় তাঁর নীতি?
কেন নরপিশাচ দিকে দিকে বৃদ্ধি পায়?

শোষন কেন বেড়ে চলেছে?
শোষিত কেন চুপ আজ?

কেন এত হিংসা?
কেন এত বিদ্বেষ?
প্রতিবাদ কেন লুকিয়ে থাকে?

অস্থির হয়ে মানুষ কেন মৃত্যুকে বেছে নেয়?
হাজারো গোলাপের সুবাস কেন এক নয়?
ভালোবাসা কেন চিরস্থায়ী নয়?

ঈশিতা পাল

নীল আকাশের জোছনা   

আজ আকাশের নীল সেই জোছনায়, 
খেলা করছে ঐ পশ্চিমা বায়ু
মনের আকাশটা মাতোয়ারা হয়ে কিছু আঁকছে। 

কলঙ্কিনী সেই চাঁদটা আজ নতুন রূপ নিয়েছে
তোমাকে সূরের বাঁধনে বাঁধবে বলে,, 

আকাশের মনোমুগ্ধকর নীল জোছনায়
কষ্ঠের ছায়া বুকে জমেছে তার,, 
তৃষ্ণার্ত আমার হৃদয়, শুধু তোমার অপেক্ষায়। 

বক্ষপিঞ্জরে লুকিয়ে রয়েছে ভয়াবহ এক কষ্টের আকার, 
আছে যে কত বেদনা.. 
আমার সময়টা একেবারে থমকে দাঁড়ায়, 
প্রাণের প্রিয় যে আর আসে না।
       
            

মোঃ রুবেল

আর নয়
           
আমরা কিছু মানুষ রূপী 
অ-মানুষের কান্ডারী।
ভালোবাসার স্থানে ঘৃণা পুষি।
হাতে রক্তমাখা তরবারি।
রক্তে ভাসে রাজপথ আর,
অশ্রু ভাসায় মায়ের কোল।
রক্তে রক্তে হলি খেলায় মেতে উঠে সকল অসুর।
আর কতটা অভিশপ্ত রক্ত নদী বয়বে একালে?
রক্ত বন্যা আর নয়।
প্রশান্তিতে খুঁজি ঠাঁই।
আসুন সবাইদীপ্ত কণ্ঠে -
এক সুরে গাই ভালোবাসার জয় গান।

সৌরভ শীল

সেদিন দেখা হয়েছিল
                    

সেদিন কুয়াশার বুকে ভেসে ভেসে
ট্রেনটা চলছিল সুসু ডাক ছেড়ে
সন্ধ্যা তারা ঝাপসা আলোর কুয়াশার চাদরে
চাঁদ লুকিয়ে মেঘের আঁধারে
পাশের সিটটায় বসে কবিতার বইটা হাতে
সমিরন তোমার সাথে দেখা 
তাই আজও তোমাকে নিয়ে লিখতে বসে
ভাবছি কি  তোমার কাছে পৌঁছাবে
আমার লেখা , ঐ যে সেদিন প্রথম দেখা!
যা স্মৃতির পাতায় রয়ে গেছে
আমার ডায়েরি খাতায়
তবে কথা ছিল দেখা হবে বন্ধু
তা আজ এক বছর পূর্ণ হলো
তবে এমনটা হাওয়ার ছিল না 
তুমি কথা রাখতে পারোনি
তুমি আজ তারা দেশে!

বর্ষা দে

জাতের বজ্জাতি
   
আমরা কারা?
যদি হই উত্তরে আমরা মানুষ।
তাহলে পরিচয়ে কেন নাও ধর্মের খোঁজ।
কেন বল আমি হিন্দু আমি মুসলিম আমি খ্রিস্টান ।
 যদি আমরা সকলে মনুষ্য জাতি ওই হই 
তাহলে  
ধর্মের পেছনে ছুট কেন বাঁচাতে সম্মান?
 
যদি হয় রক্তের রং 
সকলেরই লাল।
তবে কেন বল 
সে বন্ধু অন্য জাতি
তার সঙ্গে চলতে মানা চিরকাল।

মানুষ তুমি নইকো মানুষ জাতি
ধর্মের পিছনে ঘুরে বানিয়েছ জাতের বজ্জাতি ।
যদি থাকো বেঁচে ধর্মের পিছু ছুটে 
অশুচি নামক তোমার মন,
কুরে কুরে খাবে
 তোমায় প্রতিটা দিন প্রতিটা ক্ষণ।

মনচলি চক্রবর্তী

কুটুসের একদিন 

একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে কুটুস গেছে হারিয়ে। বাড়িতে মা ফোন নিয়ে ব্যস্ত, বাবা অফিসে। হঠাৎ কুটুসের মায়ের মনে পড়ে যে কুটুস আসেনি এখনো, চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে পড়েন উনি। স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফোন করলে ওরা জানালো যে কুটুস স্কুল থেকে গাড়িতে যথানিয়মেই এসেছে,নেমেছে সে গন্তব্যস্থলে।তবে কুটুস কোথায় গেলো? 
       কুটুস স্কুলবাসে ঠিকই এসেছে কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে আনমনা হয়ে আরেক পথে পাড়ি দিয়েছে। অজানা অচেনা নিস্তব্ধ সেই পথ, চেনা জানা কেউ নেই। তাও কুটুস হেঁটে চলেছে কিসের এক হাতছানিতে। প্রথমে তার ভয় ভয় লাগছিল, আস্তে আস্তে তার ভারী মনে আনন্দ হতে থাকে। দৌড়ে অনেকটা পথ পার হয়ে যায় সে।দূর থেকে কি দেখেছিল কুটুস? কি দেখে সে এত আনন্দিত? 
       বর্তমান যন্ত্রনিয়ন্ত্রিত ব্যস্ত আধুনিক সভ্য সমাজে কুটুস যা দেখেনি কখনো, তাই সে আজ দেখেছে,  অনুভব করেছে। অজানা অচেনা পথে সে নূতন আনন্দের ছোঁয়া পেয়েছে। অবাক করেছে তাকে সবুজ সুন্দর প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য।
         সে অনেকটা দূরে চলে এসেছিল শহর থেকে। কুটুস তার অজানা পথের শেষ প্রান্তে একটি ভারী সুন্দর নদী দেখতে পেল। নদীর পাশে ঝিরঝির হাওয়ায় দুলছে কাশবন। তার মনে দোলা দিল সবুজ মাঠ, যেখানে কৃষকেরা কাজ করছে। টলটলে জলভর্তি পুকুর, খেলার মাঠে শিশুদের কোলাহল, গ্রামের ছেলেদের নদীতে জল ছিটিয়ে স্নানের দৃশ্য, বধুদের নদীর ঘাটে কাজ করা, জেলেদের মাছ ধরা, সব তার মনে বয়ে নিয়ে এল কখনো না অনুভব করা এক আশ্চর্য প্রশান্তি। কখনো কি সে পুকুরে এভাবে শাপলা, পদ্মফুল ফুটে থাকতে দেখেছে? মাঠে শিশুদের সাথে কুটুস খেলা করলো, ছুটোছুটি করলো।শৈশবের অনুভূতিগুলোর ছোঁয়া লাগলো তার মনে।নদীতে জেলেদের সাথে নেমে সে মাছ ধরা দেখলো,এমনকি মাছ ধরলো, সেকি আনন্দ তার।জলে লাফালাফি করলো ছেলেদের সাথে  মনের সব দ্বিধা ভুলে।তার স্কুলের দামী ঝকঝকে পোশাক কাদাময় হল, সে তাও খেলা করে যাচ্ছে ওদের সাথে।নদীর ধারে পাখীর কিচিরমিচির,বনফুলের গন্ধ, রাখালের গরুচরানো, কি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, কুটুস তাতে হারিয়ে গেল।মনের সবটুকু উজার করে সে আনন্দটুকু উপভোগ করলো।
        শহরে কর্মব্যস্ততার জীবনে  হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের সুন্দর শৈশব।মা বাবারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, কুটুসের মা বাবাও তার অন্যথা নয়, যেমন তার মা আজ ভুলেই গেছে তাকে স্কুল থেকে আনতে। চার দেয়ালের বাইরেও যে আছে এক অন্যরকম অবাক করা পৃথিবী তা আজ অনেক শিশুরাই জানে না, দেখেনা, অনুভবও করেনা। স্কুলের পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্টের ইঁদুর দৌড়ে,নাচে, গানে আবৃত্তিতে প্রথম হওয়ার তাগিদে ওরা খুবই আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। বাস্তবতঃ আজ শিশুরা মা বাবার ইচ্ছাপূরনের যন্ত্রমাত্র।প্রকৃতির বাস্তব শিক্ষায় শিশুরা শিক্ষিত নয়।
      কর্মব্যস্ত আধুনিক যান্ত্রিক সভ্য সমাজে শিশুরা হারিয়ে গেছে, যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সমাজে ভবিষ্যতে আর 'মানুষ' থাকবে না, থাকবে যন্ত্রমানব, যা হবে অতীব ঝুঁকিপূর্ন। শিশুদেরকে তাদের নিজের পৃথিবীতে বাঁচতে দিন, তাদের শৈশবকে অনুভব করতে দিন।
       পুলিশ ও স্থানীয় লোকদের সহায়তায় অবশেষে কুটুসকে খুঁজে পায় তার মা বাবা। তার দামী স্কুল ছিল নোংরা, কদাকার তবে তার মুখে ছিল একরাশ হাসি ও আনন্দ।

শান্তনু নমঃ

মানুষ

মর্তের জীব,বিদ্বেষী জীব তুমি।
প্রতিকুল তুমি,গোপনে কপাটে
জ্বেলে রেখেছ,অজস্র বহ্নি জ্বালি।
যেই জঠরে করেছে ধারন,
কুলে ধরেছে 'মা'।
সেই জঠরে প্রতিদানে তুমি,
মেরেছ আঘাত 'পা'।
যে কুলেতে রেখেছ মাথা,
করেছ দুগ্ধ পানl
পুরুষ  কারাবাসে,ধর্ষিত নারী,
 পেল তার প্রতিদান।
সেই দিন হয়েছে আজ বিগত, 
যে যুগে বন্দি শিখলে নারী 
পরে থাকত, শত শত।
বন্দি দ্বারের রক্তে লেখা,
 হয়েছে ইতিহাস
ভাঙো নারী ঐ শিখলখানা
ধরো তুমি,নারীসাজ।
সাম‍্যের যুগ,
নর পরবে আজ বন্দিশালায়
পুরুষ হবে দাস।
কর্মের বৃক্ষে ধরিবে ফল,নির্মম পরিহাস।
        

পিংকী দাস

আগাছা

নদীর ধারে পাহাড়ের গায়ে অরণ্যের শূন্য বুকে
অবাঞ্ছিত অনাকাঙ্ক্ষিত রূপেই
দুটো সরু পাতা জুটি নামহীন আগাছা।
পথিকের চোখে আমার সৌন্দর্য মূল্যহীন,
বিধাতার চরনে  নেই কোন স্থান।
প্রেমিকার হাতে প্রেমের উপহার আমি নই,
অযত্নের তিক্ততায় বেড়ে উঠা।
প্রকৃতির মাঝে আমি  আগন্তুক অতিথি,
মানবের উদ্যানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ
আমার সৃষ্টিই ধ্বংসহেতু , প্রানের মোহ বৃথা ।
আমার নেই কোন অধিকার , 
অবহেলিত, নিষ্পেষিত  তুচ্ছ জীবদ্দশা।

প্রসেনজিৎ দে

উদ্বাস্তু

অবেলার অযত্নের পরে থাকা মানুষ গুলি

শিখে গেছে বেঁচে থাকা কাকে বলে।

রোজ ভরসা'র পাত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকে।
দাঁড়িয়ে থাকে একই জায়গায় চাতকের মতো।
অপেক্ষার অবসান ঘটলে দুটো পোড়া রুটিতে সুখ খুঁজে নেই।

রাস্তার পাশে ড্রেনের জল গুলি হেসে বয়ে যেতে দেখা যায়।
এখন আর ব্যর্থতার অনুভূতি হয় না তার।
সেও বুঝে গেছে কারো না কারো কাছে তার মূল্য অপরিসীম।

সূর্যের আলোয় দগ্ধ হতে হতে,
রাস্তা গুলিও হঠাৎ কেঁদে উঠে,
ক্ষত হয়ে যাওয়া উলঙ্গ পা জোড়া বুকে জড়াতে।

রাস্তা প্রতিনিয়ত উদ্বাস্তুদের নিয়ে চলছে।
আজ সেও নিজেকে উদ্বাস্তু বলে দাবী করছে।

সংগীতা শীল

প্রহরীর প্রশ্ন

ধুমকেতুর গতির মতো মনের রন্ধে রন্ধে ঘা দিয়ে গেছো প্রতিবার
আহত প্রাণের দলে আমি একজন!
তবুও তোমার আঁচলে ক্ষরিত রক্তের দাগ লাগতে দিইনি,
নিকোটিনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাইনি এখনো।

দু:স্বপ্ন তাড়া করে কিছু অভিশক্ত রাতে,
সহস্র প্রশ্নের শিকল মনে আটকা পড়ে আছে,
স্মৃতির মণিকোঠায় শুধু অভিমানের ঘ্রাণ;
অভিযোগ করতে পারি না তাই আমি অভিমানী!

দিপিকা রায়

নিত্যানন্দ 

সহিষ্ণু বদনে চাহি রূপ তোমার
হাস্য নয়নে যেন মুক্তধারা। 
হরিদ্রা বর্ণ মাখা অঙ্গ, 
ললাট স্পর্শে তিলক রেখা। 

মাল্য চুম্বনে সজ্জিত কন্ঠ তোমার, 
ধুমকেতুর বিচ্যুত রশ্মিতে মুখমণ্ডল। 
পিছুটানে করলে মাতাল জগৎ সংসার, 
নামে নামে জয়ধ্বনি তোমার পদতল। 

প্রখর তপনে তপ্ত দেহাবরণ, 
চরণ স্পর্শিত কন্টক মৃত্তিকা। 
নৃত্য পথে বাহু তুলে
ডুবন্ত পরম প্রিয় কৃষ্ণ নামে।

রাজীব পাল

বৈকুণ্ঠে পথ

কণ্টকময় পাথুরে জীবন পথ
নীতি আদর্শের গল্প বিছানো
তবুও অমসৃণ অফলন্ত অফুল্ল
এ পথে ঝড়ে পড়ে রক্ত মাংস হাড়।

নীতি আদর্শের গল্পগুলো বাক্স বন্দী হতেই
ত্রিকোণ চঞ্চুর মত শক্ত পাথুরে রাস্তা ভীষণ মসৃণ
জীবন তখন সুস্বাদু উপভোগ্য।
দেহ নাহয় থাকে লৌহাবৃত্তে ঢাকা
মনে থাকে অবচ্ছায়া মৃত্যুভয় প্রতিনিয়ত।
একদিন দুমড়ে মূচড়ে যাবার জন্য তার অপেক্ষা।

আর নীতি আদর্শে আবৃত্ত জীবন
কণ্টকময় রাস্তা ধরে পৗেঁছে বৈকুণ্ঠে
সেথা উল্লাসের প্রাচুর্যে শতদল বিকশিত
অনন্ত নভোমন্ডলে ডানাখুলে সূর্যাভিমুখে
মন নিঃসংশয় নিঃসংকোচ আর সচ্চিদানন্দ।

আক্তার হোসেন

বধুয়া তোমাকে

তোর মেঘলা চোখে বন্ধু আমি
এখনো তাকিয়ে থাকি,
তোকে নিয়ে মনের গহীনে
হাজারো স্বপ্ন আঁকি।

অনেক বছর পেরিয়েও আজ
নতুন প্রেমে পড়ি,
ইচ্ছে জাগে পাখির মতো
আকাশেতে উড়ি।

বন্ধু তুই এতো মায়া
জানিস কেমন করে? 
প্রতিটা ক্ষন আমার শুধু
তোকেই মনে পড়ে।

তোর মনেতে করিস বন্ধু
কোন ফসলের চাষ?
আমার মনে শুধু বন্ধু
তোরই বসবাস।

তোর মায়াতে পড়লে আমি
জগৎ ভুলে থাকি,
সকাল সন্ধ্যা ক্যানভাসেতে
তোরই ছবি আঁকি।

বন্ধু আমি তোকে ছাড়া
কেমনে ঘুড়ি উড়াই,
সারাটাক্ষন আমি শুধু
তোকেই খুঁজে বেড়াই।

আলমগীর কবির

ছেড়া পাতা 
  
কোনো একটা সময় জীবনের যৌবন ফুরিয়ে যাবে।
চলে যাবে দেহের শক্তি।
শরীরের ত্বক হয়ে যাবে পুরোনো।
জীবনে চলার পথে যারা ছিলো, তারা অনেকেই ভুলে যাবে।
হয়ত মনে করবেনা আমায় আর কখনো।
জীবনের আয়ু চলে যাবে মৃত্যুর নিকটে,
স্মৃতিগুলো পড়ে থাকবে মায়া জড়ানো।
তখন কি মনে রাখবে আমায় কেউ?
 লিখবে কি আমায় নিয়ে কোনো কবিতা?
হয়ত পড়ে থাকবে তখন আমার লেখাগুলো,  হয়ে ছেড়া পাতা!

সোনাই সরকার

বন্ধুত্ব

বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে একত্রে মিলে কত না কথা।

একটু দেরি হলেই যে বলত তারা কালকে থেকে যাস একা,
আবার ও পর দিন আমার জন্য করত অপেক্ষা।

প্রেম করতে রয়ে থাকে বন্ধুদের বড়ো অবদান ।
বন্ধু ছাড়া  প্রেম করা "নো চান্স "।
যদি  বলি আজকে আমি প্রেম করতে যাব ক্লাস দিয়ে পাঁকি।
বলত তারা তুই প্রেম কর তোর আবার ক্লাস করতে হবে না কি ।

তুমি তাদেরকে না বললেও বুঝে নিভে তোমার মনের ভাব ।
তোমাকে দেবে না কখনও খুশি অভাব ।
দুষ্টুমি করতে করতে পার করে আসলাম বিদ্যালয় জীবন ।
প্রথম দিকে কলেজ জীবনের লাগত না মন।

কিছু কিছু বন্ধু রয়ে গেল কাছে 
কিছু বা চলে গেল দূরে, 
কিছু হয়েছে বন্ধু নতুন করে ।
কিছু বন্ধুর হয়েছে বিয়ে কিছু আবার পড়েছে প্রেমে 
আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গেল ভেঙে ।

নতুন কিছু বন্ধু পেয়েছি দিব্যি মজার বন্ধু গুলি।
বকলে ও রাগ করে না , সবাই মিলে থাকি খুশি।
তোদের  ছাড়া মোর জীবনে নেই কোনো  মূল্য ।
তোদের দিয়ে ই আমার জীবন নতুন করে পেয়েছে জন্ম ।


অভিজিৎ রায়

পরিবেশ
সৃষ্টিকর্তা অনেক যত্নে গড়ল এই প্রদেশ
আমরাই যে ভোগকর্তা  
মোদের হাতেই ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।।

কত না অন্যায় অবিচার সহ্য করছে
তবুও অক্সিজেন দিয়ে মোদের দিচ্ছে।।

 গাছপালা কাটছি মোরা প্রতিদিন
কিন্তু তবুও পৃথিবীর অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করি সারাদিন।

কত পশু, পাখী, গাছ পালা আছে এখানে
আমরাই যে এই পরিবেশের রক্ষাকর্তা
 আমরাই যে যাব একদিন স্বশানে।

প্রতিদিন অপ্রাকৃতিক উপায়ে জ্বালাচ্ছি ইট ভাটা

যার ফলে আমাদের জীবন হয়ে যাচ্ছে 
অনেকটা সাদা মাটা।।

কত আবর্জনা ফেলছি মোরা এইদিকে সেইদিকে
একবার ও ভাবিনা আমরা, 
এমন হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাটা করবে কে?

অবাগ লাগে আমার
 যে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে 
দিনা ওর কোন গুরুত্ব।
তবুও আমরা ব্যানার লাগিয়ে ডেমো করি আমরাই পরিবেশের অন্ধ ভক্ত।।

নিজ থেকেই আসতে হবে সচেতনতা
তবেই আমরা হতে পারবো এই পরিবেশের রক্ষাকর্তা।

ভালো খারাপ সব তো মোদের হাতেই 
যদি আমরা আবর্জনা সাফ
 করি সাথে সাথেই।

এই ভাবে যদি আমরা নষ্ট করি জল।
একদিন আমরা অবধারিত যাব রাসতাল।।

কি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করি মোরা
ঈশ্বর আমাদের সব দিলেও 
আমাদের কৃতকর্মে চারিদিকে হচ্ছে
 বন্যা, মহামারী আর খড়া।

সব থেকে সেরা লাগে ।
যখন গাছে বসে পাখি ডাকে।।

জীবনের সব কিছুর জানান দেয় এই পরিবেশ
প্রেমের জ্বালায় কত না নিষ্পাপ জীবন
 হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই শেষ।।

সবার কাছে একটাই প্রার্থনা আমার 
মাসে একটা করে গাছ লাগিয়ে
 কর অক্সিজেনের জোগাড়।।

পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিছন্ন থাকো সবাই
আমরাই পারবো পরিবেশকে বাঁচাতে 
আমাদের মূলমন্ত্র হবে এটাই।

পূজা মজুমদার

জবাব দেহি
  
চেঁচাতেই হবে এর কোনো মানে নেই
নীরবতাও তো একধরণের ভাষা।
যে বোঝে, সে বোঝে। না বুঝলে ছেড়ে দাও।
কবিতার কাছে নতজানু হয়ে আসা।

অসুখের মতো সময়হীনের স্রোত
ছড়িয়ে গিয়েছে উদাসীন মৃদু হাসি।

প্রতিশোধহীন রক্তের স্রোত ছুঁয়ে
আমি যেন খুব শান্ত থাকতে পারি।

শাশ্বত চক্রবর্তী

অবেলার বসন্ত

বিকেলের আকাশে মেঘের হাতছানি,ছাদের  ডাইরি নিয়ে বসলো রাইমা।ডাইরিটা খুলে একটা কবিতার নাম লিখলো, কবিতার লিখতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকালো রাইমা‌।।আজ থেকে একমাস আগে শেষ দেখা রোহণের সাথে, শেষ কথাও।এরপর ব্লক করে দিয়েছিলো রোহণ,কথা ছিল এই বসন্তের সময় ওরা শান্তিনিকেতন যাবে,,সময় কাটাবে‌।সেসব আজ স্মৃতি। দু'বছর আগে বসন্ত উৎসব এ ওদের প্রথম দেখা,,,সেই থেকে পরিচয়, কথাবার্তা, প্রেম।রোহণ অভিমাণ করে বলেছিল "বসন্ত উৎসব এর আগে দেখা হলে তোমার সাথে মনের মতো বসন্ত উৎসব পালন করতাম", রোহণের কথা শুনে হেসে উঠে রাইমা বলেছিল ,,তাতে কি?এখনি রং মাখিয়ে দাও।রোহণ বললো নাহ্, সামনের বসন্তে আমার স্ত্রী করে তোমাকে নিয়ে বসন্ত উৎসব পালন করবো।।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো রাইমার চোখ থেকে।চোখ মুছে রাইমা হেসে উঠলো। কবিতা লেখা হলো না, কাঁদা হয়ে গেলো। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।ঘরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো রাইমা‌‌। কে যেন রাইমার কানে বলে উঠলো 
     

সজীব পাল

অপরাধ 

রই আমি রোদের ভেতর দেখি কই আর চাঁদ?
চাঁদের আলোর ভেতর কান্দে কত মানুষ -
তাদের চোখেও একটু রোদ আসুক!
যেমন করে নারীর ভেতর মা আসে,
অথবা শিশির সকালে 
শিউলি সুবাস ভাসে ।
আমাকে প্রায়ই যাযাবর পাখিরা বলেন,
'কেমন করে একলা খুশিতে মাতেন?'
সমস্ত সবুজ ঘাসে রক্ত মেখে 
যারা দুমুঠো ভাত খান -
ইচ্ছে করে মন্দিরে ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে 
ওদের জন্য কিছু সুখ রান্না করি ।
এখন সমস্ত বেলা শেষে যখন 
গৃহে ফিরে আবার প্রিয়তমার শরীরে লিপ্ত হই,
বিশ্বাস করুণ পৃথিবী তখন আমার 
কঠিন পাথরের মতো লজ্জা লাগে ।
বিশ্বাসঘাতকতার আগুনে 
নিজেকে অদ্ভুতভাবে নিজের ভেতর পুড়িয়ে দেই।
তখন কোথাও লুকাবার মতো এতটুকু 
আশ্বাস কিংবা স্থান পাই না ।

স্নেহাশীষ রায়

মারবি কত আর

তোরা মারবি কত আয় রে তোরা
মারবি কত আর?
হকের কথা শুনাবো যথা
মানবো নাকো হার।
জলছুড়ে আর লাঠির মারে
দমবো নাকো মোরা,
হাজার হাজার নেমেছি পথে
ফেলতে দেশে সাড়া।
ভাবিস তোরা মুর্খ মোরা
জানিনা দেশের হাল,
হাঁটছি মোরা তীব্র বেগে
 সুখটা পেতে কাল।
বহু পথ পেরিয়ে মোরা
এসেছি তোমার দ্বারে,
পূরণ যদি হয়তো ভালো
বাঁঁচবো তোমার তরে।
সংগ্রাম আর লড়াই মোরা
শিখেছি কাজের কাছে,
হাত উঁচিয়ে এগিয়ে চলি
চিন্তা করিনা পাছে।
কষ্ট করে ফসল তুলে
নষ্ট হচ্ছে স্বপন,
তাই তো মোরা দেখছি নাকো
ফসলসুখের ধন।
তার উপরে চাঁপিয়ে দিলে
হাড় হিম করা বিল,
তাই মোরা দিয়েছি সবে
তোমার দুয়ারে খিল।

এলিনা সাহা

আমি প্রতিবাদী নারী 

আমি সেই প্রতিবাদী নারী যাকে তোমরা একবিংশ শতাব্দী থেকে চিনে এসেছো ৷
আমি সেই নিরবে নিবৃত্ত এ প্রতিবাদী নারী ৷যাকে তোমরা ঘৃণার চোখে দেখো ৷ কারন আমি যে প্রতিবাদী ৷

লিটন শব্দকর

অরণ্যলিপি২
                     
এই নির্জন সবুজ শ্যাওলা জমা
জংলা জলার মাঠে
ফিরে যাই সন্ধ্যে হলে,
সারারাত দেখি সবুজ ব্যাঙের
গলার নরম পর্দা নড়ে
ঘাসফড়িং গিলে গিলে।
আহা এই রাতগুলিও তো আগে
এমনি করে ডাকেনি কখনো
অড়বড়ইয়ের উস্কো খুস্কো পাতায়,
কার্তিক রাতে বৃষ্টি ঝেপে এলে
বিড়ম্বনায় ডুবি দিশাহারা হই
শহরের বিষন্ন প্রথায়।
তারপর ছিটেফোঁটা মেঘে
ছন্দোময় অঘ্রাণ আড়াল
সব ঘুড়ি হেসে দিয়েছে নীলে ডুব,
আবারও সন্ধ্যে হলে 
জোনাকীর ঝাঁক খুঁজে খুঁজে
একলা হবো খুব।    

সঙ্গীতা নাথ

অবেলার ঝড়ে বিধ্বস্ত বসন্ত সন্ধ্যা 
এলোমেলো বন্য হাওয়ায় 
রাতটুক কেটে যায়;
এরপর যথারীতি বেলা গড়িয়ে যায় 
দিন রাতের লুকোচুরি খেলায়
ক্রমশঃ ৠতু বদলায় 
কিন্তু কখনো কখনো চিরতরে রয়ে যায় 
অবেলার অঘটনের রেশ ।

ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় যাইনি কখনো ,
কখনো কখনো খারাপ তকমাটাও খারাপ লাগে না ,
আর দুটোর মধ্যেকার বিশাল আঙিনায় 
আমি বেঁচেবর্তে আছি বেশ ।
তাই হয় তো আজো বলতে পারি 
হ্যাঁ,  আমি বেঁচে  আছি এবং  ভালো আছি। 


করোনা নতুন করে মনে করিয়ে  দিলো
একা এসেছ একাই যাবে ;
মধ্যেকার যা কিছু সবই ক্ষণস্থায়ী। 
করোনা বুঝিয়ে দিলো 
নিজস্ব গন্ডীর ভেতরেও বেঁচে থাকা যায়। 
করোনা ভাবনার ঘরে জোয়ার আনলো
নিজের রসদ নিজেকেই খুঁটে নেওয়ার শিক্ষা দিলো।
ক্ষুধার্ত মানুষের স্বজন হারানো ক্রন্দন শোনালো,
খালি হাতে ঘরে ফেরার বাস্তব ছবি আকঁলো ।
রামধনুর রং দেখে দেখে হতাশ না হয়ে 
প্রজাপতির উড়া দেখতে শেখালো ।
করোনা নিজেকে চিনতে শেখালো 
নির্জন ঘরে নিজের সাথে থাকতে দিলো ।
কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়
তাই কিছু প্রাণ কেড়ে নিলো ।
না করোনা এখনো অতীত হয়ে যায় নি
করোনা এখনো বর্তমানকে ঘিরে রয়েছে। 

সোমেন চক্রবর্তী

যোগ্যতা 

আপনার ঠোঁটে এখন আগুন জ্বলছে
চোখে লাভা
বুকে হেমলক।
আপনি এখন চুড়ান্ত অন্ধ, বৃদ্ধ

বারুদের গন্ধ ভুলে পথভোলা মানুষের হাতে কি লাগাম ধরিয়ে দিতে পারবেন
যেটা আপনাকে নিয়ে যাবে সভ্যতার উত্তরমুখে?

পারবেন কি বৃক্ষ হয়ে যেতে;
যেটুকু গ্রীষ্মরোদ আছে তার সিংহভাগে পুড়ে যাবে পিঠ
তবুও বুকে করে আগলে রাখা ছায়া এনে
পান্তা ভাতের থালায় বেড়ে দিতে পারবেন একগুচ্ছ প্রেম?

নিরপেক্ষ দাঁড়িয়ে আপনি কি পারবেন পিতার মতো ভালোবাসতে
কিংবা মায়ের মতো চোখ মুছে দেবেন আঁচলে?

ওরকম বারুদ পূজো তো আমরাও জানি,
তবুও দেখুন বুকের ভিতর গড়ে তুলেছি সিংহাসন,
আপনি কি পারবেন সাদা হৃদয় নিয়ে এখানে এসে বসতে?

রাজীব মজুমদার

যতিচিহ্ন 

আমি দিনের পর দিন নিরলস চর্চায়
রপ্ত করি বৃদ্ধাঙ্গুলের উন্নত পরিহাস।
আমার উদ্দেশ্য বিধেয় পরস্পরকে 
প্রত্যাখ্যান করেছে বহু বছর আগে। 
চারদিকে এত এত ভগ্নস্তূপের মাঝে
একা বসে প্রেমের কবিতা লিখেছি। 
জ্যোৎস্না রাতে ম্যান্ডোলীন বাজিয়ে 
গান গেয়েছি, অথচ বাতাসে অসহ্য 
পোড়া গন্ধে আমার কামিনী কানন
প্রতারিত, সে কোনোদিন টের পাইনি!
আমি সদ্য শোকসভা থেকে আগত।
ক্রিয়া কর্ম সহযোগে বাক্য গঠন করি -
এক অসম্ভব যতিচিহ্নের পরিপক্কতায়
বিগত দূষকের চোখে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি।

অমিত সরকার

প্রত্যাশা

ঝড়ে ঝরে যায়,বাস্তু,বাস্তব গাছপালা আরো কত কিছু, 
জীবন হারিয়ে সাথে ভরসা, আশা,
যে বটগাছ টা ছায়া,বাতাস দিতো,
একদিন জ্বলে বাতাসে মিশে,
কখন ঝড়,মৃত্যু আসে কেউ জানে না,
নিমেষে স্বাভাবিকতার সব বদলে যায়, 
প্রকৃতি আর জীবন তো এক,
চিরন্তন সত্যত, তবু নিয়ম মানতে নারাজ, 
এরপর সব ইতিহাস....
সবাই না কি স্বর্গদ্বারে গিয়ে পৌঁছায়,
এই বিশ্বাসে ভরসা করে-
জানি না,সেই স্বর্গদ্বারের যাত্রা কোথায়?
একবার দেখে আসতাম-
প্রিয়জন রা কি করছেন,কেমন আছেন?

বিনয় শীল

তবলার বোল 
                 
মেরে কেটে খা,
কেটে মেরে খা।
মেরে খা
কেটে খা
খা  খা  খা ।।

দিকে  দিকে  রা,
হায়নার হা
চেচে-পুঁছে
পেটে পুরে
চুপিসারে ধা।
ধা  ধা  ধা ।।

লুটেপুটে যা
লুপেলুটে যা,
ছুটে  যা
লুটে যা
যা  যা  যা ।।

কুহুঁ রব না না
কর্কশ কা,
কদাচার ঘেটে  ঘেটে 
দূষিত  গা।
গূঢ় ভাবে  আঁটা
নষ্টামির কাঁটা 
সমাজে দুর্গন্ধ 
দগদগে ঘা।
ঘা  ঘা  ঘা ।।

অভীককুমার দে

খবর

জীবন গেছে হরের কামে হোড়া রুটি খাই, 
দুয়ার খুলি শ্মশান নামে মুখের ছবি চাই !

এতে হেতে যেতেই কঅ ব্যেকের ইসাব এক
কতা ন কই রেনি থঅ দৈনদুয়ারে ব্যেক। 

হেতে জিজ্ঞায় এতের কিইছে এন্নে রইছে বই !
মরাবাপের কাতার নিচে হিরার আংটি কই ?

মনার বাপে বুইজ্ঝে ব্যথা আসল ব্যাপার কি, 
আংটির লাইএ এত কতা ধাইছে বোদয় ঝি !

হুনা কতায় দুনা দোষ আর কিয়ের বা ডর, 
জোনা ছিড়ি বদলা ব্যেওঁশ চিতার ওঁচে ঘর। 

আকাম ইয়েন কইচ্চে যেতে কন্ডে গেছে অন
হুক্কা ন্যেতা হিয়াল হেতে গাত্তাত হান্দাই চন। 

ঝিয়ে চিনে নিজের কবর আধাহেডি হোঁতা, 
আঁডি আঁডি অইছে খবর ছিড়ি গেছে জোতা। 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

পৌষের পাঁচালি  :  হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ‍্য ও সংস্কৃতি 
                                      
'কারো পৌষমাস । কারো সর্বনাশ' । এটি একটি প্রচলিত প্রবাদ । তার অর্থ পরিস্ফুট করলেই এই মাসটির বৈশিষ্ট‍্য প্রকাশ পায় । আমাদের ষড়ঋতুবৈচিত্রের মধ‍্যে শীতঋতুর শুরু পৌষমাস থেকে । অঘ্রাণের শেষেই পৌষমাস আসে । হেমন্তের সাথে শীতের পরশ লাগে সর্বত্র । হেমন্তের শেষভাগে কুয়াশা পড়তে শুরু করে । পৌষমাসে তা আরো গাঢ় হয় । সন্ধ‍্যার পর থেকেই কুয়াশায় ঢেকে যায় চারদিক । রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে চারদিক সাদা আস্তরনে ঢেকে যায় । তা প্রায় পরের
দিন সকাল পর্যন্ত থাকে । সকালে ঘাসের বুকে মুক্তোবিন্দুর মতো শিশির জমে থাকে । প্রভাতী সূর্যের রাঙা আলো তার উপর পড়লে ঘাসের বুকে অজস্র হীরকদ‍্যুতিবিন্দুতে মাঠ-ঘাট উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । শীতও ধীরে ধীরে সংসার গুছিয়ে নিতে থাকে এই সময়ে । ইংরেজি ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে আসে পৌষমাস ।

     কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে বর্ষাকাল থেকে শুরু হয় খেতখামারের কর্মতৎপরতা । আর এই কর্মযজ্ঞের পরিসমাপ্তি ঘটে হেমন্তের শেষে । অর্থাৎ অঘ্রাণের শেষ নাগাদ । এসময়ে কৃষকের পরিশ্রমের ফসল ঘ‍রে আসে । জীবন-জীবিকা নিয়ে সংবৎস‍রের স্বপ্ন ও পরিশ্রম সার্থকতা লাভ করে । গৃহস্থের মন আনন্দে ভরে ওঠে । পৌষমাসব‍্যাপী চলে ধান মাড়াই , ঝাড়াই-বাছাই এবং শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজ । সারাবছরের রসদ এবং অর্থনীতি নির্ভর করে এইসময়ে সংগৃহীত ফসলের উপর । যার ঘরে ধান আছে তার সুদিন আছে । আর যার ঘরে ধান নেই, ফসল নেই , কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেছে কঠোর পরিশ্রমে ফলানো ফসল । তার দুঃখের অন্ত নেই । পরবর্তী বছরে ফসল আসা পর্যন্ত তাকে কঠিন অভাব অনটনের মধ‍্য দিয়ে দিন কাটাতে হবে । অনিশ্চিত জীবন তার সামনে । একারণেই প্রাগুক্ত প্রবাদটি ব‍্যবহার করা হত কৃষিভিত্তিক জীবনে । পরবর্তী সময়ে কারো সুখদুঃখের বৈপরীত‍্যের তুলনা করতে এই প্রবাদটি ব‍্যবহার করা হয় । কৃষিজীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ প্রবাদের অর্থবিস্তার ঘটে পরবর্তী সময়ে ।

         কৃষিভিত্তিক সাংস্কৃতিক জীবনে পৌষমাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।'ও মা অঘ্রাণে তোর ভরা খেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি' । সেই হাসি পৌষমাসে এসে গৃহস্থের ঘর আলো করে ঝরে পড়ে । উঠোনভর্তি সোনার ধান দেখে গৃহস্থের মনে আনন্দ ধরেনা । আনন্দের আবেশে সারামাস ধরে নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতে থাকে । যার পরিসমাপ্তি ঘটে মাসের শেষদিন অর্থাৎ সংক্রান্তির দিন । কিছুটা ব‍্যস্ততাহীন জীবনে নানাভাবে উপভোগ করা হয় এই মাসটিকে । ঘরে ধান আছে মানে ধনও আছে । অর্থনীতি সচল আছে । ধনের সঙ্গে লক্ষ্মীর সম্পর্ক । লক্ষ্মী ধনের দেবী । ধানেরও দেবী । তাই পৌষমাসকে লক্ষ্মীমাসও বলা হয় ।

      একসময় পৌষের কর্মকান্ড শুরু হয়ে যেত গ়হস্থের উঠোন থেকে । ধানের মরাইয়ে ধানের আঁটি গুছানোর পর উঠোনটাকে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ দিয়ে লেপা হত । ধান মাড়াইয়ের পর এই নিকোনো উঠোনেধান শুকোতে দেওয়া হত । ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার পর শূন‍্য উঠোনের বুক আবার ভরে উঠত নানা শিল্পকর্মে । ঊঠোনটাকে লেপার সময় সুপারিগাছের ঝরে যাওয়া পাতার খোলটাকে সংগ্রহ ক‍রে  সেই খোলের একদিকে সুন্দর করে বিশেষ সুঁচালোভাবে কেটে তা দিয়ে ভেজা লেপা উঠোনের মাটির বুকে দাগ টেনে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা হত । মেটে রঙের এই নকশা উঠোনটাকে একটা আলাদা সৌন্দর্য এনে দিত । এছাড়া নতুন ধান কুটে চাল বের করে সেই চালের গুঁড়ো দিয়ে উঠোনময় আঁকা হত আলপনা । প্রধানত মহিলারাই এই আলপনা দিয়ে থাকে । ক়ষিজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ের চিত্র থাকত আলপনায় । ধানের ছড়া, ঘট, লক্ষ্মীর পা, ধানের মরাইয়ের চিত্র, পাতা-লতা ইত‍্যাদি ছিল আলপনার বিষয় । এখন আর আগের মতো বড়ো উঠোন নেই । এক পরিবার ভেঙে দশ পরিবার হয়েছে । মাটির বাড়িঘর হয়ে গেছে দালানবাড়ি । ছোট্ট উঠোনেও সিমেন্ট কংক্রিটের ঢালাই ।তাছাড়া এখন বাজারে স্টিকারের মতো আলপনার সিট কিনতে পাওয়া যায় । কাজেই কে আর আলপনার ঝামেলা করতে যাবে ।

       পৌষমাস এলে, ঘরে ধান উঠলে  পিঠে পায়েস পুলির তৈরির ধুম লেগে যেত গ্রামের ঘরে ঘরে । গভীর রাত পর্যন্ত ঢেঁকিতে চাল কুটে গুঁড়ি তৈরি করা হত । অনেকরাত পর্যন্ত ঢেঁকিতে পাড় দেওয়ার শব্দ রাতের নিস্তব্ধতাকে ছিন্নভিন্ন করে দিত । 'ও ধান ভানো রে ভানো রে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া ।ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া'―এইসব গান গেয়ে মেয়েরা ঢেঁকিতে চালের গুঁড়ি করত । এ নিয়ে প্রতিবেশিনীর সঙ্গে চলত প্রতিযোগিতাও । ঢেঁকির যে অংশে মেয়েরা পা দিয়ে চাপ দিত  সেখানটায় ঢেঁকির নিচে একটা পিঁড়ি পেতে রাখা হত । পাড় দেওয়ার সময় ঢেঁকিটা পিঁড়িতে লাগলে জোরালো শব্দ হত । এতে করে তারা পাড়াময় জানান দিত যে তারা ঢেঁকিতে চাল কুটছে । আজকের প্রজন্মের কাছে ঢেঁকি শুধু গল্পকথা । সকাল হতেই গ্রামের প্রতি ঘরে শুরু হয়ে যেত পিঠে বানানো । বাড়ির মেয়েরা চালের গুঁড়ির সঙ্গে নানা উপাদান মিশিয়ে তৈরি করত নানারকমের উপাদেয় পিঠে । ভাঁপা পিঠে, চিতই পিঠে,  মালপোয়া, পাটিসাপটা, পুলি, ঝালপিঠে এবং পায়েস ইত‍্যাদি । পিঠে সুগন্ধযুক্ত ও সুস্বাদু করার জন‍্যে ব‍্যবহার করা হত  গোবিন্দভোগ বা খাসার চাল ।  তার মধ‍্যে কালিখাসা বা তিলককচুরির চাল সর্বোত্তম । ধনেপাতা বাটা, পুদিনাপাতা বাটা, সর্ষে বাটা অথবা সিদলের ঝাল ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠে মুখে দিলে ঝালের চোটে কান গরম হয়ে গা থেকে শীত ছেড়ে যেত । আজকের দিনের তরুণ-তরুণীরা মোমো, বার্গার, পিজা,পকোড়া ইত‍্যাদির মধ‍্যে কসমোপলিটন খাবারের স্বাদ পায় ঠিকই কিন্তু পিঠে, পায়েসের মিস্টি গন্ধযুক্ত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয় । আজকের দিনে মা-বোনেরাও তেমন আগ্রহ ও নিষ্ঠার সঙ্গে এতোসব পিঠেপুলি বানায়না ।

      পৌষ এসেছে আর খেজুরের রস থাকবেনা, 'রাব' বা 'লালি' থাকবেনা তা কখনো হতনা । খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি  এই সময়ের একটা স্বাভাবিক দৃশ‍্য । গ্রামদেশে সকাল হলেই  খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামানোর দৃশ‍্য চোখে পড়ে এইসময় । গাছিরা নিপুণভাবে গাছ কেটে এই রস সংগ্রহ করে । সারা রাত খেজুরের রস জমা হয় হাঁড়িতে । সন্ধ‍্যাবেলার রসকে বলা হয় 'সন্ধ‍্যারস' । এই রসের স্বাদ অপূর্ব । সারারাত টুপ টুপ করে ঝরে পড়ে এই রস ,হাঁড়িতে জমা হয় । মেয়েরা এই রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে পিঠের উপকরণ হিসেবে ব‍্যবহার করে । রসসংগ্রাহক সকালবেলা গ্রামে বেরিয়ে যেত রস বিক্রির জন‍্যে । খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে তা থেকে 'রাব' বা 'লালি' এবং 'তক্তিগুড়' অর্থাৎ নলেনগুড় তৈরি হয় । আজ আর পৌষমাসে গ্রামেগঞ্জে খেজুরের রসের সেই রমরমা ও তাকে নিয়ে অর্থনীতি ও কর্মব‍্যস্ততা দেখাই যায়না । খেজুরগাছও তেমন  নেই আর নেই কুশলী গাছ কাটার লোক । যার ফলে আজকের প্রজন্ম সুস্বাদু এই পানীয় এবং তার উপজাত দ্রব‍্যের আস্বাদ থেকে বঞ্চিত ।

        পৌষের সকালে ঘুম থেকে উঠে খড়কুটো, নাড়া, লতাপাতা, লাকড়ি জ্বালিয়ে উঠোনে গোল হয়ে বসে আগুন পোহানো বা নিজেদের শরীর গরম করার ফাঁকে ফাঁকে প্রভাতী আড্ডা চলত পৌষের ভোরে । আর আজকের দিনে সেই অলস সময়যাপনের ক্ষণটি কোথায় ? ভোর হতেই ছেলেমেয়েরা পিঠে বইয়ের বোঝা নিয়ে ছুটছে মাস্টারবাড়ি । আর একদল ছুটছে স্কুলবাস ধরতে প্রভাতী বিদ‍্যালয়ে যাবার জন‍্যে । ব‍্যস্ততম জীবনে ক‍্যারিয়ারের পেছনে দৌড়ুতে হচ্ছে এই প্রজন্মকে । অথবা, লেপকম্বলের নিচে হালকা ওমের মধ‍্যে  অলস সকালটা কাটানোর সৌভাগ‍্য নেই আর তাদের ।

     পৌষ এলেই শুরু হয়ে যায় বনভোজনপর্ব । ধানকাটা ফাঁকা মাঠের মাটিতে উনুন তৈরি করে সেখানে  চড়ুইভাতির আয়োজন । পৌষমাসের বনভোজন তাই নাম পোষলা । চড়ুইভাতি মানে চড়ুইপাখির মতো অল্প অল্প সংগ্রহের সম্মিলিত প্রয়াসে হত এই বনভোজন । প্রত‍্যেকের বাড়ি থেকে চাল, ডাল, সব্জি, কারো পুকুরের মাছ, ঘরে পোষা হাঁস,মুরগি ইত‍্যাদি এনে করা হত এই বনভোজন বা চড়ূইভাতি । এই খাদ‍্যদ্রব‍্যসমূহ সংগ্রহ থেকে শুরু করে রান্নাবান্না ও ভোজন সমাধা পর্যন্ত  শিশুকিশোরদের সে কী উন্মাদনা, সে কী আনন্দ তা আজকের দিনে পার্কে আয়োজিত ক‍্যাটারার পরিবেশিত পিকনিক তার ধারে কাছেও আসেনা ।
 পৌষমাসে ছিল কিছু ধর্মীয়সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও । পৌষমাসের শেষদিন অর্থাৎ সংক্রান্তির দিনের উৎসবের জন‍্যে প্রস্তুতি চলে সারামাস । পৌষসংক্রান্তির ভোররাতে কোনো জলাশয়ের ধারে আগেরদিন তৈরি করা কুঁড়ে ঘরে আগুন দিয়ে আগুন পোহাত একসময় ছেলের দল ।  একে বলা হয় 'ভেড়ার ঘর' বা 'মেড়ার ঘর' পোড়ানো । ধানকাটা মাঠের নাড়া বা খড় দিয়ে আগের দিন এই ঘর বানানো , পোড়ানো আর আগুন পোহানোর সেই সম্মিলিত উন্মাদনা এখন আর  নেই । মা-বাবারাও এখন আর তাঁদের ছেলেমেয়েদের শীতের রাতে এজাতীয় অ্যাক্টিভিটিতে ছেড়ে দেননা ।
      সংক্রান্তির দিন প্রতি ঘরে তৈরি হত  নানারকমের পিঠেপুলি ও খাবার । ভোরবেলা স্নানাদি সেরে সূর্যকে পিঠে নিবেদন করার পর চলত নিজেদের খাওয়া দাওয়ার পালা ।  এখনো সেই অনুষ্ঠান কোনো কোনো পরিবারে পালিত হলেও নমো নমো করে সারা হয়  ।আগেকার সেই এলাহি কান্ডকারখানা আর দেখা যায়না এখন আর । পৌষসংক্রান্তির দিন কীর্তনের দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে কীর্তন করে ফল-বাতাসা -কদমা-তিলাইর লুট দিত গৃহস্থের উঠোনে ।  কিঞ্চিৎ নিজেদের ভান্ডে নিয়ে নিত কীর্তনের দল । সন্ধ‍্যার সময় বিশেষ কোনো দৈবী গাছতলায় মিলিত হয়ে কীর্তনের শেষে  সংগৃহীত দ্রব‍্যগুলো প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হত ।  আজকাল আর সেই কীর্তন দেখা যায়না ।

    আর একটি বিরল অনুষ্ঠান করা হত পৌষসংক্রান্তির দিন । গৃহস্থের উঠোনে যে বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার সঙ্গে দড়ি দিয়ে গোরু বেঁধে চক্রাকারে ঘুরিয়ে ধান মাড়াইর কাজ করা হত তাকে বলা হয় 'মেহির পালা/খুঁটা' বা 'মেইর পালা/খুঁটা' । এই খুঁটির চারপাশ লেপে পুঁছে  তাকে কেন্দ্র করে আঁকা হত আলপনা । ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে খুঁটির সামনে রাখা হত সারা মরসুমে ব‍্যবহার করা কৃষিযন্ত্রপাতিসমূহ । এই খুঁটি পুজোর পর তাকে তুলে ফেলা হত । পরবর্তী বছরের জন‍্যে । গোলায় তোলা হত সংগৃহীত শুকনো ধান ।  আজ আর তেমন গৃহস্থও নেই । সেই অনুষ্ঠানও আর ,তে দেখা যায়না । 'মেহির পালা বা খুঁটি আজকের প্রজন্মের কাছে অজানা শব্দ । এখন ধান মাড়াই হয় ট্রাক্টর দিয়ে কিংবা অটোরিক্সাকে উঠোনে বিছানো ধানের উপর চালিয়ে দিয়ে অথবা ধানমাড়াই মেশিনের সাহায‍্যে । গোরু দিয়ে ধান মাড়ানো আজ ইতিহাস ।

এখনও বছর ঘুরে পৌষ আসে পৌষ যায় । পৌষের মাসব‍্যাপী জৌলুস এখন আর নেই । ধান‍্যলক্ষ্মী আজ গৃহস্থঘর থেকে বেরিয়ে কর্পোরেট ধনতেরাসে আশ্রয় নিয়েছে । প্রয়াত সংগীতশিল্পী মান্না দে-র কন্ঠের একটি গানে সে আক্ষেপ আজ ভেসে বেড়ায়―

'পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেইদিন
ফিরে আর আসবেনা কখনো
খুশি আর লজ্জার মাঝামাঝি সেই হাসি
তুমি আর হাসবে কী কখনো.....'

Saturday, November 21, 2020

আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আন্তর্জালিক কর্মকান্ডে রাজ্যের এই প্রথম আয়োজন।

সম্পাদকীয় প্যানেল

মনন স্রোতের সিলেবাসে তথ্যনির্ভর কিরাতভূমির কবিতার কাজ এসেছে। এই বিষয়ে দীর্ঘ চার মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মনন স্রোতের সদস্যরা, সন্মানিত অভিভাবকরা। সেই মুহূর্তগুলো থেকে যে অভিজ্ঞতা আমরা পেয়েছি সেগুলো এই সংখ্যাটি প্রকাশের সময় কাজে লেগেছে বলে অনুভব করি। বরাবরের মতোই সমৃদ্ধ একটি সংখ্যা প্রকাশ করতে আন্তরিক সহযোগিতা করেছে অনেকগুলো সৃষ্টিশীল হাত।

দীর্ঘদিন ধারাবাহিকভাবে একটি আয়োজন টিকিয়ে রাখা কঠিন হতো যদি সকলের সহযোগিতা না পেতাম। ২০২১ ইং বর্ষ থেকে মনন স্রোত নিজের কর্ম পরিধি, পদ্ধতিতে সংশোধন আনবে। সকলের সহযোগিতাকে পাথেয় করে নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করবে। নতুন রূপ নিয়ে আসছে মনন স্রোত। এই তথ্যটি দেওয়ার ছিলো সকলকে। তাই সম্পাদকীয় কলামের সহযোগিতা নিলাম।

এই সংখ্যাটিতে সময়ের ছাপ রয়েছে। যাঁরা লিখেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ভুল ত্রুটির দায়ভার আমার। সকলের কাছে সমাদৃত হোক এই প্রত্যাশা করি। সকলে খুব ভালো থাকুন।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত
  

ছবিতে মডেল শিল্পী সুমন || মনন স্রোত ডায়েরী থেকে

রুবেল হোসেন

শহীদের ভাই আমি

নদী দিয়ে গড়িয়ে গেছে 
অনেক অশ্রু জল, 
ইতিহাসের পাতায় পাতায় 
রইবে উজ্জ্বল। 
সময় পেরিয়ে গেছে 
বেশ অনেকটা, 
জঙ্গলী হামলায় হারিয়ে যাওয়া 
হাসানো ভাইটা। 
আটকাতে পারেনি কেউ
কোনও সেনাবল, 
মারণাস্ত্রে হামলা চালায়
শত শত দল। 
রক্তার্ত বক্ষ ছাতা 
কাঁপছে হৃদয় দ্বারা,
মায়ের মুখটি দেখার জন্য 
আজও দেয়নি সারা।
তিন রাঙ্গা পতাকার দিকে 
চাইলে গর্ব হয়, 
দেশের জন্য লড়বো আমি 
করবো না আর ভয়। 
কলম হাতে পত্র নিয়ে 
লিখছি একটুখানি, 
লিখবো শহীদ স্মরণ করে
অমর ভাইয়ের বাণী।

অদিতি সাহা

বাবা


সাত জনমের যদি কিছু হইয়া থাকে ভবে-
বারে বারে তোরই কোল বাবা! 
চাইছি আমি তবে। 
এই ভুবনের খরতাপে,তুই যে শীতল ছায়া। 
যতই কাছে থাকি তোরই, ততোই বাড়ে মায়া।। 
মায়ের মতো এই জগতে তুইও  তো বাবা আপন। 
হাত ধরে মোরে চলতে শেখাইলি,দেখাইলি কতো স্বপন।
ঘুম থেকে  রোজ জাগাইলি,মা মা বলে আমায়। 
দুহাত তুলে কোলে নিলি, স্নেহের আশিষ ছোঁয়ায়। আমার খুশি ছাড়া মনটা তোর চাইলো না তো কিছুই। 
সাজিয়ে রেখে আমায় সদা, মাঠে ঘাঠে নোংরা রইলি তুই।। 
বারো মাসের ছয় ঋতু, কতো কষ্ট করে খাটলি।
নিজের কষ্ট লুকিয়ে রেখে, আমার যতন করলি।। 
দিনের শেষের রোজগার দিয়ে, মেটালি মোর আবদার। 
মায়ের মতো জানি এই ভুবনে, বাবাও প্রতীক মমতার।। 
 পথে পথে ঘুরলি তুই মোরে            কাঁধে করে ।। 
সুযোগ পেলেই চুমুক দিয়ে দেখলি দুচোখ ভরে।। 
বড় হয়েও আজও রইলাম ছোটো, আমি তোরই কাছে। 
খুশির দোলায় মন ভরে যায়, তোর মতো বাবা আছে।

উর্মি সাহা

পথিক


কবি, তুমি থেমো না,,
তোমার পথ জলে জঙ্গলে সমৃদ্ধ--
তুমি তোমার পদ্যে পরিচিত নও,
তুমি তোমার যুদ্ধে বিকশিত।
পথিক তুমি থেমো না,,,
কবি তুমি প্রেমের জোয়ারে ভেসো না।
কবি তুমি বজ্র হও!
কঠিন হও,সত্যের তাগিদে।
স্তব্ধ করো প্রতিবন্ধকতা--,
রুদ্ধ করো অরাজকতার দরজা।
মেডেল মেমেন্টো তোমার প্রতীক নয়!!
তোমায় জয় চিহ্ন তোমার কলম।
তোমার শব্দে কাঁপুক এই পাথর শহর;
সন্ধি-প্রত্যয়ের সমন্বয়ে---,
জর্জরিত হোক মূর্খ লোকমহল।
তুমি নায়ক হও--,
তুমি নৈতিক হও,,,
জীর্ণকায় দেহগুলো সব--
চিঠি লিখুক তোমার নামে,
লোক দেখানো হোডিং গুলোর--
মাথা নামাও জাতির হাতে।
কবি,তুমি থেমো না!
চলুক তোমার পথ!!
উঁচু-নিচু উপত্যকা আর পাহাড় বেয়ে--,
মুষ্ঠিবদ্ধ হাত এগিয়ে দাও তুমি।
প্রশ্ন উঠবে হাজার!!!
যুদ্ধ আর ভালোবাসায় মাঝে দাঁড়িয়ে;
তুমি প্রেমিক হও,
সৈনিক হও মৃত্যু রুখতে।
রক্তস্রোতে তলোয়ার ভুলে--
কলম চালাও তর্ক ময়দানে,,,
কবি,তুমি থেমো না!!
তুমি অক্লান্ত পথিক হও।
কবি,তুমি মৃত্যুঞ্জয় হও।

অতনু রায় চৌধুরী

সময় 

জীবন পথে হেরে গিয়ে আজ দিশেহারা 
বোবা নিস্তব্ধ কোনো কথা বলছে না এরা ।
হারিয়ে গেছে স্বপ্ন সব, 
হারিয়ে গেছে বিলাসিতা ।
সময়ের কাঁটা এইভাবেই ঘুরে, 
হয়তো ছিল না ওদের জানা ।

মানুষ হয়ে মানুষকেই করত ওরা হাজারো অবহেলা 
সহজ সরল অনুভূতিগুলোকে নিয়ে করত প্রতিনিয়ত খেলা ।
প্রতিবাদ ছিল নিস্তব্ধ, ছিল না ন্যায় বিচার ।
সময় ঠিক ই জবাব দিয়ে দিল, 
বিনাশ হল ক্ষমতার ।

সোমা চক্রবর্তী

 আতঙ্ক 


সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি এরা চারটি ভাই।
মিলেমিশে একাকার পাপের হিসেব চাই।।

এই যুগ বলেছে সেই যুগ ভাই
কোন যুগের বিকল্প নাই,
পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে
এখন যে ভাই মুক্তি চাই।

 বাড়ছে বাড়ি, বাড়ছে গাড়ি বাড়ছে কলকারখানা।
বাড়ছে পাপ, বাড়ছে চাপ বাড়ছে আতঙ্কের আস্তানা।।

 প্রলয় আসবে, আসবে প্রলয়
 সবার মুখে বুলি
হচ্ছে প্রলয় ঠিকই তো তাই
কেমন করে চলি।

 কি করব কি করব ভেবে পাচ্ছি না কুল।
 মরণব্যাধির লাইনে এখন দাঁড়িয়েছে মৃত্যুর ফুল।।

মন্বন্তর এর মন্বন্তর
আছেই শুধু জীবন্তর,
দুর্ভিক্ষের দুরন্তর 
বাড়ছে শুধু অন্তর অন্তর।

 ধরণী যে সইবে কত অন্যায় অত্যাচার,
 আতঙ্কের মশালে স্তব্ধ হয়ে যাবে;
 ধরণীর সব আধিকার।।

দেবব্রত চক্রবর্তী

চিতাভস্ম

একটি শশ্মানের পাশ কেটে যাচ্ছি
কিছু কয়লাও ছায় ছড়িয়ে আছে;
মাটির সামন্ত স্তুপে,
একটি কলসি পড়ে আছে শুধু
অহংকার কোথাও নেই।

কলসীর জল গড়িয়ে মিশে যাচ্ছে,
দাম্ভিকতা ও ভষ্মীভূত চিতায়,
আর কয়েকটি কড়ির মধ্যে 
কোটি টাকার আভিজাত্য।

শখের গাড়ি, বাড়ি, অভিলাষা
খর-কুটের মতোই জ্বলতে জ্বলতে
মিশে গেলো মাটিতে; আর
কিছু বিষাক্ত ধোঁয়ায় ।

মৃত্যুর আগেই আমার উপলব্ধি,
চিতাভস্মে।
ওপারে কিছু নেই
এ পৃথিবীতে স্বর্গ।

অনুপম দেব

মানুষ তুমি মানুষ হলে না

মানুষ ধর্মের হলে
জাতের নামে ভাগ হলে,
তবুও তুমি জাতির হলে না
মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
মানুষ তুমি ধনী হলে

কাউকে আবার গরীব বানালে,
তবুও তুমি মানবতার হলে না
মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
কীর্তনের ধ্বনি হলে
সকালের আজান হলে,
তবু তুমি মনুষ্যত্বের হলে না
কেননা মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
মানুষ তুমি পুরুষ হলে
আবার তুমি নারী হলে,
সেই নারীও রক্ষা পেলো না
কারণ মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
নিজেরটা ভাবলে সদা তুমি
নিজের জন্য শোষণ করলে,
তবুও তুমি দেশের হলে না
মানুষ তুমি মানুষ হলে না।

পিয়াল দেবনাথ

ভারসাম্য

ঈশ্বর বলেন আমায় বিশ্বাস কর,
কর্ম বলে কর আমায়।
কেউ বলে টাকায় সর্বসুখ,
কেউ বলে খ্যাতনামায়।

জীবনের অসম পথে,
সব কি পাবি বল?
বারো মাস সুখের নামে,
মিলবে কিছু আগুন কিছু জল।

জীবন বাঁচবি যদি, করবি বোঝাপড়া,
ভুলবি না ভারসাম্য কঠিন।
ধন পেলে হয়ত শান্তি পাবিনা,
জীবনে সফল হয়ে ও হয়ত থাকবি প্রেমহীন ।

মিছিলের মুখ

জীবন কবিতা


শব্দগুচ্ছের দাবদাহে ভীষন পরিচিত শব্দ 
সমস‍্যা তোমায় ভীষণ ভালোবাসি
জানি তুমি বাসো!

দারুণ ভাবেই বাসো।

ভালোবাসা টা সমান্তরাল আপেক্ষিকতায়
টলছে শুধু হতাশার চিরকুট।
দুলছে পৃথিবীর দোলন গতি 
আর জীবন গতিতে পেয়েছি তোমায়,
তুমি আমি সমান্তরাল কোনে দাড়িয়ে  
চিৎকার করে বলবো একদিন 
ভালোবাসি.....ভালোবাসি।

অরিন্দম চক্রবর্তী

বেকারত্বের ছোঁয়া

চারদিকে কত হাহাকার, কিন্তু আমি বেশ আছি ,
শুধু একটু হাল্কা আশায় বাঁচি, এমনিতে বেশই আছি,
হাল্কা দারিদ্রতার ছোঁয়া আছে, সেটা ছাড়া সব ঠিকই আছে,
মাঝে মাঝে মধ্যপ্রদেশটাকে বোকা বানাই, অনেকটা ঐ দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো।
অনেক সময় মনে হয় যদি ছোট থাকতাম কতনা ভালো হতো,
জীবনের এই কঠিন কঠিন সত্যগুলো আমাকে দেখে ভয় পেত,
কারন তদের আমি খেলার ছলে উরিয়ে দিতাম।
যদিও এমনটা ভাবার জন্য আমি মনকে একবারও দোষ দেইনা,
শুধু ভাবার সময় একটু মুচকি হেঁসে উড়িয়ে দি।
কারণ পোড়া মনের ভাবায় জীবন ধারা থেমে থাকেনা,
সে বাঁধন ছাড়া নদীর মতো আপন বেগে ধেয়ে চলছে,
তার গতিতে প্রতিনিয়ত পিশে যাচ্ছে কিছু মেরুদণ্ড। 
সেই মেরুদণ্ড গুলো অনেক চেষ্টা করছে একটু উঠে দাঁড়াতে, লড়াই করছে প্রতিনিয়ত,

কিন্তু এই চক্রগুহ ভেদ করে কিছু সিকি ছিটকে বেরিয়ে আসছে,
আর কিছু,,,, মেরুদণ্ড ভেংগে যাচ্ছে চিরতরে,
সেই মেরুদণ্ড গুলির মধ্যে আমারও একটি আছে,
জানি পরিণতি খুবি সন্নিকটে, কিন্তু আমার অজানা, তাই বেশ আছি।
প্রতিটি রাত শেষে শুধু একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়,
আজকি ঠিক হবে আমার পরিণতি, এম্নিতেই ভালই আছি।

শাহেলী নমঃ

আমি সেই খুনি


এই মায়াৱ দুনিয়াতে.......
আমি যে এক মস্ত বড় অপৱাধী।
সমাজ আমাকে দেবেনা কাৱাদন্ড, কিন্তুু...
নিশ্চুপ আঘাতে হৃদয় আমাৱ খন্ড-বিখন্ড।
এই বসুন্ধৱা যেন এক ৱঙ্গমঞ্চ,
নিজেৱ সাথে নিজেই কৱছি অভিনয়!
নোনাজলে আঁখি ভাসলেও, ওষ্ঠে হাসি মলিন,
সবাৱ কথা ভাবতে গিয়ে....
নিজ ইচ্ছাটাই হয়েছে বিলীন।
কখনো আমি নাটকে প্ৰধান নায়িকা,
আবাৱ কখনো হতে হয় দাসী।
বেলাশেষে অবসৱ হলে মাঝে-মধ্যেই ভাবি,
আমি কী আদৌ আমাৱ মধ্যে আছি?
জীবন সমুদ্ৰে কবে আসবে ভাটা!
সেই প্ৰহৱ গুনি,
নিজস্ব স্বত্তা কে যে খুন কৱেছে, 
আমি সেই খুনি।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

অগ্রদূতী

"কবিতা"তোমার বহুমুখী রূপে 
বিমুগ্ধ আমি;
উন্মুক্ত কবরীতে শীতল ধারা
কাজলটানা চোখে অসীম উদারতা।

মেঘবর্ণ অবয়বে রূপোলী হাসি,
নানা শব্দ অলংকারে বিভূষিতা,তুমি  অনন‍্যা।
অবদাত তুমি;প্রণয়িনীও বটে
হৃদয় জুড়ে  অফুরান ভালোবাসা।

আত্মার সত্তা,না বলা ভাবনা যত
নীরবে নিস্বনে বলে যাও অনর্গল,
শুভ অশুভের বিচার আচারে নও আবদ্ধ
তুমি অপরাভূতা, উন্মুক্ত,জ্ঞানের দ‍্যোতিকা।

পথচলা বড্ড কঠিন বলে তুমি উন্মনা,
তবুও উত্তরণ এর পথ খোঁজ  অহর্নিশি।
তোমার শানিত বাক‍্যে বিদ্ধ অমানবিক মনুষ‍্যত্ব
আবার আবেগ তাড়িত চিত্তে ঝরাও অমৃত কথা।

'কবিতা' তুমি শান্ত,শিষ্টতা-নমনীয়তা তোমার প্রকৃতি,
আবার তুমি অকুতোভয়,প্রতিবাদী,দুরূহ,দুর্দম
নাদ ঝঙ্কারে জাগাও রোমহর্ষক শিহরন,
এই শটন সমাজে চেতনা জাগরনের তুমিই অগ্রদূতী।

কাউচার খান

অনুভূতি

তোমার চোখে বৃষ্টি হলেই আমার মনে ঝড় উঠে,
আমার চোখে তুফান এলে তোমার কি আর মন ছুটে!

তোমার পাড়ায় রোজ সকালে আমার পায়ের ছাপ পড়ে,
আমার পাড়ার নজরদারির তোমার কে আর খোঁজ করে!

তোমার জন্য যুদ্ধ বাধে আমার মনের সীমান্তে,
আমার জন্য যুদ্ধ হয় কি তোমার মনের ওই প্রান্তে?

তোমার বুকের পিঞ্জিরা'টা আমার তো ঠিকানা নয়,
আমার বুকের পিঞ্জিরা'তে তোমার নামে মিছিল হয়|

তোমার ভিতর আমি এখন আমার এ প্রাণ খুঁজে যাই,
আমার প্রাণের চিহ্ন নিখোঁজ তোমার কোনো খবর নাই!

পুনম মজুমদার

মাটির পসরা
                    
     উৎসবের মরসুমে
     মাটির পসরায় হাট সাজে।
     বিবর্ণ অভাবের চিত্রে
     হাজার হাজার চোখে
     শুধু মরুভূমি জাগে।
     সলতে বিহীন প্রদীপ হাতে
     বিক্রেতারা জোরে হাঁকে।
     কেহ করে দর-দাম
     কেহ বলে, হে রাম!
     এসবের এখন আর
     আছে নাকি রংবাহার!
     এভাবে যাওয়া আসা
     উষ্ণ নিঃশ্বাসে পথ চলা।
     শহরের সন্ধ্যা ডিঙিয়ে
     কুমোর পাড়ায় নামে
     নিশুতির নীরবতা।
     শত হেলা,শত পরখ সহে
     জমাট বাঁধা মাটির বুকে
     মাটির পসরা গুমরে কাঁদে
     হাজারো কুমোরের অব্যক্ত ভাষা হয়ে।

সঞ্জয় দত্ত

মাস্ক
              
কতো ক্লান্ত আমি,সুখ হয়তো ছেড়ে গেছে আমায়!
জীবন রক্ষার ভারটা নিয়ে বেশ আনন্দ বোধ করি।

বাজারে দাম আমার অনেক বেড়েছে।
নিজের সৌন্দর্য দেখে নিজেই অনুভূত হই।

দাম বেড়েছে বলে অনেকের চোখে ভালো খারাপ দুটোই।
যখন মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলি
তখন শুধু অপবাদ।

নিজের ইচ্ছেটাকে কখনো ভালোবাসতে পারিনি,
আমার জীবনে বোধহয় ত্যাগ ছাড়া কিছুই নেই!

রাহুল শীল

মূল অনুষ্ঠান

প্রতিদিন সকালে একটা চিৎকার শুনি
বৃষ্টি এসে প্রতিবাদ সমাবেশ গড়ে তুলে,
বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠে দুটি ভিন্ন মঞ্চে।

প্রতীকী পোশাক খুলতে হয় মূল অনুষ্ঠানে
সময় পেলে একটু বক্তব্য রাখার সুযোগ আমিও পাই,
ওরা ধর্মীয় উৎসব আর ধর্ষণ একই পর্যায়ে নিয়ে আনে।

বিস্তারিত জানাতে পরবর্তী অনুষ্ঠান সূচী ‌ডাকতে হয়,
বিস্ময়কর সব তথ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে,
কিন্তু সমর্থক হিসেবে যারা থাকে তাদের সবাই ধর্ষণকারী।

অবশেষে হাসপাতাল চত্বরে ময়নাতদন্তের দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হয়!

পঞ্চদীপ দেবনাথ

দু'মুঠো ভাত

ক্ষিধের জ্বালা পারিনে সইতে
দাও  আমায় দু'মুঠো  ভাত,
রেল স্টেশনে  ভিক্ষা করি
আমি দিন রাত।
তোমরা তো বড় মানুষ
আছে গাড়ি - বাড়ি,
মোদের তো নেই ধন সম্পদ
আছে নিয়মজারী।
গাছ তলায় থাকি মোরা
থাকি রাস্তার মোড়ে,
বিধাতা ও মেঘ সেজে 
তাড়িয়ে দেয় দূরে।
শিক্ষা-দীক্ষা পাইনি মোরা
পাইনি ভালোবাসা,
দু'মুঠো ভাতের জন্যে
এই দুনিয়ায় আসা।

গোপাল বণিক

চাওয়া -পাওয়া

আশায় আশায় বুনেছিলে এক বুক স্বপ্ন।
কিন্তু কথা রাখলোনা কেউই,
অথচ-
সাগরে বাঁধ দিয়ে সেতু তোমরাই গড়েছিলে,
পাহাড় কেটে সমতল তোমরাই করেছিলে,
জমি চাষ করে ফসল....
সভ্যতার উন্নয়নের চাকায় লেপ্টে আছে তোমাদের কত রক্তঅশ্রু ঘাম।

যুগ যুগ ধরে মোমবাতির মতো আত্মবিলয়।
রঙিন স্বপ্ন আঁকবে বলে,
দিনরাত এক করে প্রতীক্ষা করেছিলে
বিনিময়ে পেলে শুধু এক বুক হতাশা।

এসো,তোমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঘটে যাক
এক আগ্নেয় বিস্ফোরণ।
সেই ছাইভস্ম থেকে উঠে আসুক এক রঙিন স্বপ।
যে স্বপ্ন জন্ম দেবে এক নতুন ভোর।

পরিতোষ সরকার

রক্তিম আকাশে তোমার স্মৃতি

দিনের শেষে যখন বসন্তের লাল আবিরে
সেঝে উঠে পৃথিবী,
নীলরঙা জলাশয় যখন রক্তিম হয়ে উঠে,
জীবনানন্দের হায় চিলরা ডানা মেলে
নিজেদের প্রেমিকা আর ছোট চিলে কোঠার
উদ্দেশ্যে র‌ওনা দেয়,
সুকান্তের ঝলসানো চাঁদ উঁকি মারে
বিরাট আকাশের বুক চিড়ে;
তখন সকল ক্লান্তি ভূলে আমার প্রিয়াশ্রীর
কথা আর অসংখ্য স্মৃতি ভেসে আসে
মনের প্রতিটি আনাচে-কানাচে।
দু-একটা শ্রমিকের দল ঘরে ফিরে যায়,
জেলেরা নৌকা ঠেকায় তীরে।
আর আমি প্রিয়ার হাত ছোঁয়ার আশা নিয়ে
বসে থাকি কোনো একটা গাছের নিচে
উড়ে যাওয়া সারিবদ্ধ বলাকার পানে চেয়ে।

বিপাশা দেব

বহু সঙ্গমী

মেঘের ভাঁজে গোধূলি ল্যাং মারে
সন্ধ্যার মাস্তানকেও।

বহু সংগমির প্রথমে মুখ, পরে দেহ ..... 
পরে চাঁদের সাথে শোয়।
ফষ্টিনষ্টি চলে বহুক্ষণ.... 
সূর্য কড়া নাড়লে
দুজনের হাঁপিয়ে ওঠা
অপাপবিদ্ধ অবস্থান
দ্বিধাহীন ভাব
কি যেন দংশায়

দোষহীন জানলার কাঁচ 
স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন ধরে

চরিত্রহীনদের এইতো বিজয়। 

সাধনা দেবনাথ

মা ও মেয়ে
                      

ও পাড়ার কমলী আজ আত্মহত্যা করেছে,

তার যে মস্ত বড় দোষ,মেয়ে জন্ম দিয়েছে।
মায়েরা ছেলের সবটাই শুনে বউয়ের একটাও না।
আরে হতভাগা তুই তোর মাকে বোঝাতে পারলি না।
তুমিও তো দাদুর মেয়েছিলে,আজকে আমার মা
সেই তুমিই আমার মেয়ে হয়েছে বলে ওর মুখটিও দেখছনা।
মেয়ে হয়েছে বলে শাশুড়ি,ননদ গায়ে দিল হাত
মেয়ে জন্ম দেওয়া কি একটা মায়ের এতই অপরাধ?
পৃথিবীতে মেয়েরাই তো অনুভব করতে পারে মায়ের যন্ত্রণা।
হতভাগা ছেলেদের তো অনুভব করা ভাগ্যেই জুটে না।
দুর্গা মাকে প্রণাম কর লক্ষ্মীকে নিত্য পূজা অর্চনা-
সব মেয়ে তো মায়েরই রূপ তোমরা সেটা মান না।
মেয়েই মা, মা ও মেয়ে পরম পিতার দান।
মেয়ে হয়েও তোমরা কেন কর মেয়েদের অপমান?

শুভশ্রী দাস

ভয় দেখাবেন না

আর যাই করুন,ভয় দেখাবেন না।
কারন ঐটা ছাড়া আপনারা আর কিছুই পারেন না।
জন্ম র সময় থেকেই, এটা করো না সন্তান এর অমঙ্গল হবে।
এখানে থাকো চুপটি করে,একটা কথা বোলো না।
টাকা থাকলেই যদি ভালো মানুষ হতো,
তাহলে তো আত্মহত্যা শব্দ টাই উঠে যেত ।
ছেলেদের ভয়ে একা রাস্তায় যেও না,
বরং ছেলেকেই সঙ্গ করো।
সে যেন ভালো ছেলে হয় ।
তোমার মতের ভালো ছেলে নয় ।
আমার মতের ছেলে।
মেয়েরা নাকি হিংসুটে আর বেয়াদব।
ছেলেরা কী সবটা ভালো ।
ভালো ছেলে যেমন হয়।
ভালো মেয়েও হয়।
আর যাই হোক ভয় দেখাবেন না।
সূর্যের তেজ এর মতো রাতের অন্ধকার ও।
দুই কে মানুষ ভয় পায়।
যিনি আদি সৃষ্টির মূল,তিনিই ধ্বংস ।
ভয় যদি পেতেই হয়, তাকেই পাব।
দয়া করে আপনারা ভয় দেখাবেন না।
কে বা বলতে পারে,
আমার ভয়েই আপনি ভীত ।তাই ভয় দেখাচ্ছেন ।

অভিজিৎ রায়

অনামিকা

যে ছেড়ে যেতে চাইছিল ছেড়ে দিলাম আমি।
বিধাতা যাকে ঠিক করে রেখেছিল
এখন বুঝতে পারলাম সে যে কত দামী।।
 

শুনেছি একটা মেয়েকে কখনো বিশ্বাস করা যায় না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যাকে বিশ্বাস না করে পৃথিবীতে স্বপ্ন দেখা যায় না।।

শুনেছি একটা মেয়ে কখনো সৎ হতে পারে না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে শিখিয়ে দিল সততা ছাড়া বাঁচাই যায় না।।

শুনেছি একটা মেয়ে কখনও ভালোবাসতে পারে না,
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে শিখিয়ে দিল ভালোবাসা ছাড়া একটা মুহূর্তই বাঁচাই যায় না।।

শুনেছি একটা মেয়ের শশুর শাশুড়ীর কে অবহেলা করে।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে শশুর শাশুড়ীর কে ভগবান রূপে আগলে ধরে।।

শুনেছি একটা মেয়ের নাকি বিয়ের পর আলক্ষী রূপে পরিচিত হয়।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে সংসারে আসার পর যেন স্বয়ং লক্ষী রূপে ভূষিত হয়।।

শুনেছি একটা মেয়ের নাকি কখনো কষ্ট সহ্য করতে পারে না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে হাসিমুখে অনেক অকল্পনীয় কষ্ট সহ্য করলেও কাউকে বুঝতে দেয় না।।

একটা মেয়ের নাকি কখনো দারিদ্রতা সহ্য করতে পারে না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে ছোট বেলা থেকেই দারিদ্রতা ছাড়া কিছুই চুখে দেখলো না।।

শুনেছি একটা মেয়ের নাকি, ভালো কাউকে পেলে নিজের স্বামীকে ও ছাড়তে ভুলে না
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যার ভালোবাসায় সামনে একটা কাটাও আসতে দেয় না।।

মনে প্রশ্ন জাগছে 
কে সে এই অনামিকা যার কথা শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না।
এই অনামিকা তো সেই অনামিকা,
 যে ভগবান শিবের স্ত্রী গৌরী ছাড়া আর কেউই না।

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

রাত্রি এলো কাছে

অবশেষে রাত্রি এলো কাছে 
দুর্লঙ্ঘ পাহাড় ডিঙিয়ে একপা একপা করে 
ভেজা চোখে রাত্রি এলো 
বসনে সুসজ্জিত বাসরের সুগন্ধির মতো 
দুরারোধ্য আকর্ষণে চোখের পাতায় শিশিরের ভেজা বালু 
দুই হাতে রক্ত ক্ষত মা কালীর প্রসন্নতা 
চণ্ডীমূর্তি রাত্রি এলো 
ঘোলাজলে প্রতিবিম্ব ঢেউ খেলে 
এক থেকে শতকের রূপচিহ্ন ভেসে ওঠে 
ভাসানের আগে 

অবশেষে রাত্রি এলো কাছে 
প্রীতি ও শুভেচ্ছার সহস্র ডালা 
জোনাকির ক্ষীণ আলো সাজিয়ে 
 চন্দ্রিমার    অহংকার পদতলে মাড়িয়ে 
দুইহাতে চেপে ধরে 
রাত্রি এলো চরম প্রকাশে।   

মাহমুদ মুকিত

জীবন সারি


এই যে আকাশ কাঁদছে ভারি
দেখছে কি কেউ কার সাথে কার কখন আড়ি ? 
হঠাৎ কেন মাঝ দুপুরে নিকষ কালো সন্ধ্যে এলো
কেন-বা ওই রাতের তারা মান করে আজ খুব ঘুমালো ! 
কেউ জানে না,
ভিতর কেন জ্বলছে তবু বাইরে তার বুজছে আলো! 
কিসের ক্ষত কেমন করে
পঁচন ধরে, 
শুরুতেই নিঃশেষ হলো।
দিবস নিশি কতই খেলা 
কেউ দেখে না কারো জ্বালা
কেউ বোঝে না নিজের ছাড়া
ব্যথা কত তীব্র ভাবে দিচ্ছে নাড়া। 
আধ চক্রেই ধুঁকছে গাড়ি
ফিরছে সবে নিত্য বাড়ি
মুছে গেলে মেঘের আড়ি
জোছনা গায় সুখের সারি।

সংগীতা শীল

বকবকানি
     

সকালে ঘুম ভাঙে অনিমেষ কাকুর ঝাঁঝালো কন্ঠস্বরে । প্রতিদিন একই ডাইলগ "মজুমদার বাড়ির ছেলেকে দেখে কিছু শিখতে পারিস না? দেখ তো ছেলেটা  কেমন সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে থাকে। আর তুই কিনা ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকিস। দিন দিন অমানুষ হচ্ছিস; কাজকর্ম তো নেই, বাপের হোটেলে খাচ্ছিস দাচ্ছিস,  এভাবে আর কতদিন!"

এমন ডাইলগে বন্ধুরা সবাই কমবেশ অভ্যস্ত, এক কান দিয়ে ঢোকে, আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর হজমীগুলির মত বিকালের মিটিংও মিস হয় না।
 সেদিন বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম, দেখলাম 'সোমু' বেশ চুপচাপ। 
'হৃত্তিক'টা হুট করে বলে উঠলো; "কিরে বাপের বেটা আজও গালি খেয়ে এলি নাকি!" হাসির কথায়  বেশ জমে উঠলো আড্ডা ।

  আমি চাপা সুরে সোমুকে বললাম, বন্ধু মন খারাপ করিস না। 
সোমু বললো বাবার কথায় কষ্ট পাইনারে, নিজের উপর রাগ হয়। 
শুধালাম কেন? 
বললো "যদি আমিও 'কিষাণে'র মতো হতে পারতাম মেধাবী ছাত্র! তাহলে হয়তো রোজ রোজ কথা শুনতে হতো না।"

হেসে বললাম হাতের আঙ্গুলগুলো কি সব সমান? কিষাণ পড়াশুনোতে খুব ভালো কিন্তু ও কি তোর মতো ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে?  রমেশের মতো গাইতে পারে! অপুর  মত ভালো নাচতে পারে?  ওরা সবাই পড়াশুনোয় অশ্বডিম্ব। হাহাহা! 
আবার অখিল সারাদিন পড়েও সেই টেনেটুনে পাশ করে। পারুলকে দেখ সারাদিন ঘুরেবেড়ায় তবুও ক্লাশে টপ করে প্রতিবার। আমি মনে করি সমসাময়িককে নকল নয়, এমন কাজ করবো যেন অন্যরা আমাকে নকল করে। তাহলেই  অভিভাবকদের বিশ্বাস বাড়বে, বকবে না।

সোমু কিছুই বললো না, কিন্তু অনুভব করলাম, তার  চোখগুলিতে আলাদা একটা দ্যুতি খেলছে।

আড্ডা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে গেলাম। এভাবেই কেটে যায় কলেজ দিনগুলি।  একদিন শুনি মাস্টার কাকু ছেলেকে বকে বলছে "কি খেলা খেলিস, সোমুর মত অনারিয়াম আনতে পারিস না!"

গৌতম দাস

অবলার পথের কাঁটা
                                        
মুক্ত চিত্তে পথে হাঁটার সুযোগ নেই অবলার
শুধু কাঁটা আর কাঁটা।
হাটে ঘাটে মাঠে , তেল মেখে দাঁড়িয়ে থাকে।
কাঁটার মুখে বারবার পড়ে ঝাঁটা।
তবুও হয় না সাফ।

আরও ধৈর্য্য নিয়ে বসে, শক্ত করে বুকের পাটা।
অবলা মেধায় শ্রেষ্ঠ ইচ্ছা শক্তি যথেষ্ট।
দেশ দুনিয়ার নাম করবে একথা স্পষ্ট।
পথের কাঁটা বলে-তার কত সাহস?
সকালে বাজারে ,বিকালে যায় খেলায়
মেয়ে মানুষ!ঘরের রান্না করাটা মানায়।
উচ্চ মাধ্যমিক বাহ্ বেশ,কলেজ?অযথা টাকা নষ্ট।
কাঁটার তালে ,পরিবার বিয়ে দিতে হল সচেষ্ট।

যদি বলি জুতা কোথায়?প্রশ্নটা পাপে পূর্ণ।
ব্যাথার ঔষধ?এখনও আবিষ্কারে শূন্য।
শক্ত এই কাঁটা অতি জঘন্য।
শোনো বোনরা যদি হও সাদাসিধে!
নানা বর্ণের কাঁটা নির্দ্বিধায় পায়ে বেঁধে।।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে হল চুরমার।।
বাধা হয়ে দাঁড়াল পথের কাঁটা অবলার।।
নিঃশব্দ কান্নার ব্যাথা কী প্রাণেশয়।
সর্বনাশা কাঁটা যেন কারোর কাঁটা না হয়।
ধিক্কার! কাঁটার গায়ে অশেষ বসন্ত ফুটুক।
ভোরের তেজোমূর্তি আরও তেজি হয়ে উঠুক।

প্রীতম শীল

বেকারের আর্তনাদ
       
রাজনীতির যাঁতাকলে,
শিক্ষা আজ অসহায়।
লক্ষ বেকারের হতাশায়,
কার কি আসে যায়।
টাকার কাছে শিক্ষা আজ,
মেনেছে নিদারুণ হার।
টাকা দিয়ে মূর্খরাও জ্ঞানি হয়, 
গলায় দিয়ে অলংকার। 
বেকার বসে ভাবি হায়,
আমি বড়ো অসহায়।
এই জীবন রেখে লাভ কি?
আমি যে নিরুপায়।।
তবুও লড়াই করে,
শেষে ঝরে পড়ে।
পৃথিবী ত্যাগ করে।
ইতিহাস গড়ে বারে বারে।।
আমিও তাদেরই একজন,
এ জগৎ-সংসারে। 
অপেক্ষায় থাকবো তোমার,
পৃথিবীর ঐপাড়ে।

আক্তার হোসেন

শীতের সকাল

ঘুম ভেঙেছে পাখিদের কোলাহলে,
ভ্রমরের গুঞ্জন শোনা যায় ফুলে ফুলে। 
শিশিরের বিন্দু ছড়িয়ে পড়েছে ঘাসে,
দোয়েলেরা ডাকছে তাদের প্রিয় কার্তিক মাসে।
কাশ ফুলগুলো দুলছে শীতের হিমেল হাওয়ায়,
হয়ে উঠেছি মনমাতানো তাদের আলতো ছোঁয়ায়। 
কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে বাংলার গ্রাম, 
তাহার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে শিমূল,পলাশ, জাম।
নদীর জল বয়ে যাচ্ছে ঢেউয়ের ছন্দে ছন্দে, 
হাঁস গুলো সব চলছে তাদের মনের আনন্দে।
ধানের শীষ বেয়ে পড়ছে শিশিরের কণা, 
গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্যে মন হয়ে উঠে আনমনা।
খেজুরের রস তুলতে গাছিয়ারা যাচ্ছে আঁকাবাকা পথ বেয়ে,
অধীর অপেক্ষায় শিশুরা আছে তাদের পথ চেয়ে। 
পলাশের বনভূমির মাঝে উঁকি দিয়েছে সূর্যের সোনালী আলো, 
বাংলার শীতের সকাল কে আমি বাসিয়াছি ভালো।

পূজা মজুমদার

অকুতোভয়  

আমি ভয়ার্ত কোনো যোদ্ধা নই যে, 
সব মাথা পেতে মেনে নেবো।
আমি হেরে যাওয়া কোনো সৈনিক নই যে,
অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের সব অনিয়মকে ভেঙে
দিতে পারি করে খান খান।

আমি দিতে পারি করে দুর সব যত
অন্ধকারের তিমির রাত।
গুড়িয়ে দিতে পারি আমি সব 
সমাজের যত কালো হাত।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের যত জঞ্জাল মুছে,
মানুষকে দিতে চাই পরিত্রাণ।

অন্যায় যদি দেখি হতে তবে,
দিই না কখনও প্রশ্রয়।
আমি চাই নি নিতে কখনও কভু, 
অনিয়মের কাছে আশ্রয়।

মৃত্যকে নিয়ে পথ চলি আমি, 
করি না কখনও মরণের ভয়।
অবিচারের কাছে তবুও আমি কখনও,
স্বীকার করিব না পরাজয়।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি চাই হতে সমাজের সেই
শহীদ মায়ের সন্তান।
অন্যায়কে ভেঙে দিয়ে যারা,
হয়ে আছেন গরিয়ান।

বেঁচে যদি থাকি আমি তবে 
করে যেতে চাই এই সংগ্রাম, 
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমি
করেছি মুক্তি পণ।

আলমগীর কবীর

আমি

থাকি আমি সদা নীরব
বলতে চাইনা কোনো কথা,
আমার কোনো কথায় যদি
লাগে কারোর মনে ব্যাথা।

ইচ্ছে করে দেইনা জানি
কারোর মনে ব্যাথা আমি,
ভুলে যদি হয় দুঃখ
আমার কথায় একটুখানি।

কেউ যদি চায় আমার ক্ষতি
তাঁদের নামে লিখে ইতি,
মুছে দেব তাঁদের যত
আমার কাছে আছে স্মৃতি।

আমি কারোর চাইনা ক্ষতি
পারলে পাশাপাশি থাকি,
না পারিলে শুভ কামনা
এটাই হচ্ছে আমার নীতি।

আমি যারে বাসি ভাল
যদিও সে ব্যথা দিল,
তবুও চাই, আমি তাঁর
জ্বলোক আরো প্রদীপ আলো।

সজীব পাল

ঐতিহাসিক জীবন

যে আমাকে অগ্নিতে ঢেলে দিয়েছে,
আমি তারেই বেসেছিলাম ভালো !
অশ্বত্থ বটের মতো,
হয় তো বা-
সমুদ্রে ডুবে থাকা পাহাড়ের মতো।
জীবনের গতিপথে যত ধূসর ছাই 
তোমার নামে মারিয়েছি;তাতে ব্যথা নাই ,
অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড জানে আর জ্লন্ত অগ্নি
পোড়া পাখির ডানা পোড়ানো কত কঠিন!
অনামিকা তুমি নক্ষত্রের মূল
তাই কি এত তোমার অহমিকা?
তাই কি জীবনের সব জ্যোস্না 
নিমেষেই শোষন করে তুমি উজ্জ্বল তারা?
মনে পড়ে অনামিকা -
বিদীর্ণ আকাশে মেঘের মেলায়
কালো পর্দায় যে ফুটে ছিল জীবন্ত ছবিরা!

সৈকত সরকার

মানুষ যদি একলা হয়ে যায়


মানুষ যদি একলা হয়ে যায় তবে অমরত্বেও ঘৃণ ধরে, 
মানুষ যদি একলা হয়ে যায় তবে নীরবে অশ্রু ঝড়ে। 
একলা মানুষের -
রূপের কোনো দাম নেই গুনের কোনো দাম নেই
বিদ্যার কোনো দাম নেই বলের কোনো দাম নেই। 

নির্জন অট্টালিকা ঠিক যেনো মৃত্যু পুরী, 
অর্থ যতটা না পেট ভরায় তারচেয়ে বেশি দম্ভ বাড়ায় কিন্তু সেই দম্ভ দেখবে কে? 
জড় বস্তু কি দম্ভ বুঝে?? 
আর যেই যৌবন আকাশের চাঁদ ছিল একসময় তা মাটিতে নেমে অন্ধকার খুঁজে, 

আসলে নিজেকে বটগাছ দাবী করলেও প্রকৃত পক্ষে আমরা  একটি বিশুদ্ধ স্বর্ণলতা ছাড়া আর কিচ্ছু নই। 

কবিতা সাহা

অনিচ্ছাকৃত বিদায়
        
আমার আমিটা ভালোই ছিলাম,
সুখে ছিলাম বেশ।
এইতো সেদিন মনের দ্বারে,
হঠাৎ তোমার প্রবেশ।।
তোমার তুমিটা এখন ব্যস্ত ভীষণ,
পাই না কোনো খোঁজ।
নিদ্রাহীন রাতে বোবাকান্নায়,
আমার বালিশ ভেজে রোজ।।
সহস্র তারার উপস্থিতিতে,
তোমার আকাশ আলো।
তবে তুমি বিনে আমার আকাশ,
বড্ড অগোছালো।।
বিষাদগ্রস্ত তোমার মুখে,
হাসি ফোটাতে গিয়ে।
নোনাজল আর অবহেলা,
আমি পেয়েছি বিনিময়ে।।
এইতো সেদিন আমায় নিয়ে,
শত স্বপ্ন বুনেছিলে।
তবে আজ কি করে এত সহজে,
সব ভুলে গেলে?
মাঝপথে হাত ছাড়ার হলে,
ধরেছিলে কেন তবে?
একাকীত্বের দাবানলে পুড়ে
ছাই হচ্ছি নীরবে।।
অজুহাতের পাহাড় গগন ছুঁলো,
ইচ্ছেরা আজ মৃত।
বিরক্ত আর করবো না তোমায়,
তুমি থেকো নিজের মতো।।
তুমি চেয়েছিলে স্বাধীনতা তাই,
দিয়েছিলাম মুক্ত করে।
বিশ্বাস ছিল খাঁচার পাখি,
ফিরবে আবার ঘরে।।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,
মিথ্যে ছিল সব।
কথায় কথায় তর্ক থেকে,
সৃষ্টি কলরব।
অন্ধ বিশ্বাসের দরুণ সন্দেহ,
করিনি কভু তোমায়।
শেষমেশ আমায় অন্ধ প্রমাণ করে,
দিলে অনিচ্ছাকৃত বিদায়।

সংঘমিত্রা নিয়োগী

সময়

চলন্ত ট্রেনটি অপরিচিত স্টেশনে পৌঁছনোর প্রত‍্যাশায় বেগবান,
স্টেশন মাস্টারের সিগন্যাল এড়িয়ে ধাবিত ,
প্রতিটি ভোরে নতুন রোদ গায়ে মাখে,
রাতের আঁধারে গুহার পিঠে স্বপ্নেরা মাথা ঠুঁকে।
অজানা স্টেশনের ল‍্যাম্পপোস্ট দেখে স্বপ্নভঙ্গ ,
কুয়াশার সান্ধ‍্যভাষায় শেষদিনের কবিতার ভাবনা খেলায় মত্ত থাকে।
অকুল দীর্ঘ পথের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে "সময়" ভবিতব‍্যের রেখা আঁকে।
এ কোন্  শূন্যতার পাকে ঘোরছে!
অবশেষে গন্তব্যের চিরকুট ছেঁড়া বাতাসে মেশে।
যে বাতাস ধরতেই টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যায় ব‍্যয়িত সময়ের সাথে‌!
জীবনশৈলীর  এলোমেলো ঘড়ি  অঙ্কিত আকাঙ্ক্ষার গন্ডির বাইরে!!

পৌষালী ভৌমিক

ছিল কী!

ছিল কী সব? 
তিক্ততার আগুনের এই স্পর্শ,
না বোঝার অনলে করুনাহীন দৃশ্য
ছিল কী সব?
মূক বধিরতার পেছনে জমা কথা,
চেয়েও না চাওয়ার সেই ব্যাথা
ছিল কী সব? 
জেনেও সেসব না জানার ভান, 
অযথা রাখা নিজের মান
ছিল কী সব? 
অশ্রু ভেজা রাতের কাহিনীতে,
পারলেনা যেন আপন করে নিতে
ছিল কী সব? 
একপথে হেঁটে চলা,
তবুও যেন অধরা
ছিল কী সব?
সত্যিই কি ছিল সব?

কণিকা দত্ত চৌধুরী

এ কেমন স্বাধীনতা


স্বাধীনতা তোমাকে জানাই আমার অন্তরের ভালোবাসা  আর  সুভাসিত অভিনন্দন। 
শত শত বীর পুরুষ, বীর শহীদদের জানাই কোটি কোটি প্রণাম। 
অক্লান্ত পরিশ্রম, নিপীড়ন, নির্যাতনের গ্লানি, অসহ্য যন্ত্রণা, নারী শোষণ। 
অবশেষে পূর্ণতা প্রাপ্তি স্বাধীনতার। 
স্বাধীনতা করেছ তুমি তিয়াত্তর বছর পার,
বলো স্বাধীনতা বলো?  জবাব দাও
আছে কি কোনো সঠিক উত্তর তোমার কাছে?   

নেই, এখন আর সুট বুট পরা খাকি পোষাকের আড়াল, নেই নীলচাষ, নেই কোন বাঁধা ধরা শৃঙ্খল। 
নেই পরাধীনতার কেন্দ্রীয় কারাগার !
তবুও কেন, কেন বলো স্বাধীনতা? 
কেন অবাক করছ তুমি আমাকে? 
স্বাধীন জনগণ উত্তর দাও? 
জবাব চাই আমার? 
কোথায় সেই বীর পুরুষদের আত্মবলিদান? 
আজও কেন সমাজের একশ্রেণীর মানুষ অসহায়, নিঃস্বহায়? 
আজও কেন শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধবনীতরা সভ্য সমাজে ধর্ষিত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত? 
জবাব দাও আজও কেন মানুষের দুবেলা জুটে না অন্ন?
নোংরা দুর্ণীতিতে ভরা স্বাধীন সভ্য সমাজ !
নেই উপযুক্ত শাস্তি, ন্যায় বিচার। 
এমন স্বাধীনতা তো আমি চাইনা।
 যেখানে হানাহানি , বিদ্বেষ, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, শোষক, শোষিতার বর্বরতার খবরে 
রোজ করতে হয় দৃষ্টিপাত !
সুসজ্জিত জাতীয় পতাকা, আর
জয়হিন্দ, বন্দেমাতরমে হয়না স্বাধীনতা প্রাপ্তি। 
আমি চাই সুভাতৃত্বের বন্ধন, নারী জাতির সন্মান, মমত্ববোধ, ন্যায় বিচার, দুর্ণীতি মুক্ত সমাজ। 
তবেই হবে আমার স্বাধীনতা প্রাপ্তি;
গর্বিত হব আমি স্বাধীন ভারতীয় নাগরিক বলে।

লিটন শব্দকর

তুমি

তোমার টানা টানা চোখে
তাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস সুমেরীয়, 
সিন্ধু মহেঞ্জোদারো হরপ্পা
 আর নীল মিশরীয়।
নূপুরের রঙে বিলীন
হোয়াংহো ইয়াংসির বুক,
কাছাকাছি রূপেও চঞ্চল
 আহা ওই হাসিমুখ।
দুপুরের নদীর জলে মেশে
দাগী বসন্তবৌরী কিংবা
 ধনেশের পালকের রঙ;
পলির সবুজ আদর
কাছিমের ডিম বালির তলায়,
তোমার বয়স আমার 
চোখেই পড়েনা কোনদিন 
হেমন্তরাতের শিশির
 শিহরণ আঁকে যখন
জ্যোৎস্না জলের রেখায়।

প্রীতম ভট্টাচার্য্য

কথা রাখতে পারিনি      

যারা একটু নেতা টাইপের লোক, রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা পরিবর্তনে তাদের কোন অসুবিধা হয় না। তারাও সময় মত বদলে যায়। অসুবিধা হল আমার মতো সাধারণ মানুষের। হঠাৎ করে বদলির কাগজ হাতে এলো। ধারণা ছিল না। তবে সরকারী চাকরি, যেখানে পাঠায়, যেতে তো হবেই।কিছুই করার নেই।আগরতলা থেকে ধূপতলি। দূরত্বটা নেহাৎ মন্দ নয় । তার আগেও আমি বেশ কয়েকবার বদলি হয়েছি বটে, তবে শহরের বাইরে কখনো যাই নি। 

তুলামুড়াতে আমার এক বন্ধু থাকে,বিপ্লব। সেই আমার জন্য বাড়িটা ঠিক করেছে। বাড়ির মালিক নেপাল মুড়াসিং বয়স্ক মানুষ। গাল ভর্তি হাল্কা হাল্কা  পাকাপাকা দাঁড়ি। চোখগুলো ছোট ছোট। চোখের চাহনিটাওকেমন যেন এলোমেলো। কোথাও যেন স্থির হয়েতাকিয়ে থাকতে পারে না। দেখেই মনে হয় যেন লোকটিপুরো পৃথিবীর উপর বিরক্ত। যদি পুরো পৃথিবী ধংসহয়ে যায় তাহলে তিনি আরাম পাবেন। আমি উনার সামনে গিয়ে তাকাতেই তিনি  চোখ সরু করে আমারদিকে তাকিয়ে রইলেন । চোখে মুখে সন্দেহ। যেন আমিকোনো জেল পলাতক আসামী। বাড়িতে প্রবেশ করতেই নেপাল বাবু বলল-

 

- কি দরকার আপনের ?

- আপনিই কি নেপাল মুড়াসিং?

- হ। কেরে?

- আমার এক বন্ধু বোধ হয় আপনার সাথে কথা বলেছে। ভাড়া থাকার ব্যাপারে ।

- হও। কইছে তো।  নাম কি?

- আমার নাম আদিত্য কর্মকার 

- এই নেন চাবি। আর একটু সাবধানে থাইকেন।

খেয়াল করলাম চাবি দেয়ার সময় লোকটার হাতকাঁপছে। আমি বেশ অবাক হলাম

- আপনি কি একাই থাকেন?

- হও। ছেলে বউ নিয়া উদয়পুরে থাকে। মাঝে মাঝে আসে। নাতিটা ইংলিশ স্কুলে পড়ে।

- ও। ঠিক আছে।

আমি চাবিটা হাতে নিয়ে এগিয়ে এলাম ঘরের দিকে।

উদয়পুর শহর থেকে একটু দূরে হলেও ঘর ভাড়ার জন্য,যে বাসাটা ঠিক করা হল সেটা নেহাৎ মন্দ হবে বলে মনে না। ঘর গুলো কেমন হবে জানিনা, তবে চারদিকের পরিবেশ,দৃশ্যাবলী খুবই সুন্দর।একদিকে ক্ষেত, আরেকদিকে রাবার বাগান। ও এত কম দামেএখানে ঘর পাবো ভাবিনি। তাও আবার বিল্ডিং ঘর। যাই হোক ভালোই হয়েছে।

দরজাটায় চাবি ঢুকাতেই কেমন যেন অস্বস্থি হচ্ছে হটাৎ কেন জানি ঘরটায় ঢুকতে ইচ্ছে করছে না। যেনআমার অবচেতন মন আমাকে সাবধান করছে। অনেকবার চাবি ঘুরানোর পরও দরজাটা খুলছে না।অনেকদিন ধরে দরজা না খুলার কারণে মনে হয় মরিচাপড়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দরজাটা খুলেগেল। দরজাটা খুলে ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই একতীব্র পোড়া গন্ধ নাকে এসে বিঁধল। আমি দাঁড়িয়েপড়লাম। পরক্ষণেই গন্ধটা কেমন যেন কর্পুরের মতোউবে গেল। এটা কি মনের ভুল ছিল? নিশ্চয় মনেরভুল। এরকম বন্ধ একটা ঘর, যে ঘরে অনেকদিন কারোআসা যাওয়া নেই সেই ঘরে নিশ্চয় পোড়া গন্ধ থাকবেনা? আমি ঘরে ঢুকলাম ।  ঘরময় ধুলো বালিতেবাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া আসবে, ঘরটা পরিস্কার করে রাখলেই পাড়ত; মনে মনে বাড়িওয়ালার চৌদ্দ গোষ্ঠীনিয়ে বেশ কয়েকটা গালি হাঁকলাম। অফিস সেরেই এখানে এসেছি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।  

 

ঘরে  ইলেক্ট্রিসিটি  আছে কিন্তু বাল্ব গুলো জ্বলছে না।মনে হয়  সস্তার তিন বস্তা আর কি। গ্রামের কম দামেরভাড়া ঘরে এতো কিছু আশা করাও নিশ্চয় ভুল। এইসময়  আবার বাল্ব কোথায় পাবো। কি যে এক যন্ত্রণারমাঝে পড়লাম না। প্রচণ্ড  রাগ উঠছে। এখন আরবাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না। আবার অন্ধকারে বসেথাকাও  সম্ভব  হবেনা।  অগত্যা যেতেই  ল 

 

বাজার বেশী দূরে নয় তবুও বাল্ব কিনে বাসায় ফিরতেফিরতে ৭ টা  বেজে গেল। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে।বাল্বগুলো লাগিয়ে  রান্না ঘরের দিকে এগুলাম। খাবারবাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছি। রুটি আর আলু ভাজা।  আবার নাকে পোড়া গন্ধ আসছে! কোথাও তো কিছুইপোড়ছে না তাহলে গন্ধটা আসছে কোথা থেকে? বাইরেথেকেও আসার উপায় নেই। জানালা গুলোতো সববন্ধ।আস্তে আস্তে গন্ধটা কেমন যেন অসহ্য লাগছে।আমি আর থাকতে পারলাম না। এতো তীব্র গন্ধ? যেনহাজারটা টায়ার একসাথে পোড়ানো হচ্ছে।আমি গিয়েজানালা গুলো খুলে দিলাম যাতে গন্ধটা বাইরে চলেযেতে পারে। তাতেও বেশ সুবিধা করতে পারলাম না। আমি দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। তারপরযেমন হঠাৎ করে গন্ধটা এসেছিল ঠিক তেমনি হঠাৎকরেই গন্ধটা চলে গেল। আমি যেন হাঁফ ছেড়েবাঁচলাম।

 

খেতে বসলাম ।  কেমন যেন অস্বস্তি  হচ্ছে। মনে হচ্ছেকেও যেন ঠিক আমার পিছনে নিশব্দে দাঁড়িয়ে আছে।তার নিশ্বাসের শব্দ যেন পাচ্ছি। কেও যেন আমার ঘাড়েতার গরম নিশ্বাস ফেলছে। আমি পিছনে তাকালাম।না,পিছনে কেউ  নেই। সবকিছুকেও আমি নিজের মনেরভ্রান্তি হিসেবে ধরে নিলাম। সারাদিন অনেক ধকলগেছে। যার ফলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এই ক্লান্তমস্তিষ্কেরই হয়তো হেলুসিনেশন হচ্ছে। যে কারণেআমার এরকম অনুভুতি হচ্ছে। এসব নিয়ে মাথাঘামানোর কোনো কারণ নেই। আমি খাবার খেয়েল্যাপটপ টা নিয়ে বসলাম। অনেক কাজ পরে আছে।আজ যা যা হয়েছে সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।এখানে একা আসা ঠিক হয়নি। জয়াকে নিয়ে আসাউচিত ছিল। একা আছি বলেই কি এরকম অনুভুতিহচ্ছে। হয়তো তাই হবে। ভেবেছিলাম এখানটায়সবকিছু ঠিক করে তারপর জয়াকে নিয়ে আসবো।নতুন জায়গা । আগে সবকিছু গুছিয়ে নিই। এখন কিজয়াকে একটা কল করবো? কি জানি কি করছেআমার একটা মাত্র বউ।

 

- হ্যালো জয়া ?

- হুম। আমিই এখন তোমাকে ফোন করতাম হলে । যাইহোক ভালোই করেছো কল করে।  কি করছো?

- কিছুনা অফিসের কাজ করছি

- এক্ষণ আবার অফিসের কি কাজ?

- কাজ আছে জয়া। অনেক কাজ আছে।

- খেয়েছো?

- হুম কিছুক্ষণ আগেই খেয়েছি। তুমি খেয়েছো?

মাত্র আটটা বাজে। আরও পরে খাবো। 

 

হঠাৎ করে রান্না ঘর থেকে  কিছু একটা শব্দ কানেআসছে।

 

জয়া একটু পড়ে কথা বলি?

- কেন? কি হয়েছে?

- না এমনি আরেকটু পর কল করছি

- আচ্ছা সাবধানে থেকো

- আচ্ছা ঠিক আছে।

আমি ফোনটা রেখে পিছন ফিরে তাকালাম। আবারশব্দটা হলো। খুব ক্ষীণ কিন্তু স্পষ্ট যেন কেও আমারমাথার ভেতর চাপা স্বরে বলছে "চলে যা! চলে যা এখানথেকে! একটা শব্দই বারবার। শব্দটা কি শীতল! শেষ্মাজড়ানো। একেবারে বুকে গিয়ে বিঁধে যাচ্ছে শব্দটা।এসবি কি আমার উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা না সত্যি সত্যিএসব কিছু ঘটছে আমার সাথে? না এসব কি ভাবছি? নিশ্চয় আমার মনের ভুল! আমি আবার কাজে মনদিলাম। হঠাৎ বাল্বগুলো কেমন যেন কাঁপতে লাগলো।আমি বাল্বগুলোর দিকে তাকালাম। বাল্বগুলো কাঁপছে।যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। তারপর হঠাৎ শব্দ করেবাল্বগুলো ফেটে গেল। ঘরময় অন্ধকার হয়ে গেল।নিকষ কালো। বাল্বের কাচগুলো আমার শরীরে এসেপড়েছে। হাত জ্বালা করছে। হাতে কি বিঁধেছে? আমিফোনের লাইটটা অন করলাম। হাতে কিছু কিছু জায়গাকেটে গেছে। আমি অবাক হয়ে বাল্বগুলো দেখছি। এরআগে কখনো বাল্ব এমনভাবে ফেটে যেতে দেখেনি। এইবাড়িতে আসার পর থেকেই কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনাঘটছে। এগুলোর কোনো মানে খুজে পাচ্ছি না আমি।হঠাৎ কি যেন ঝনঝন করে উঠলো। কে? কে ওখানে? খুব জোড়ে যেন কিছু একটা পড়ে গেছে। শব্দটা রান্নাঘর থেকে আসলো মনে হয়। আমি ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে এগুলাম।  কিসের যেন গন্ধ পাচ্ছি। আবারপোড়া গন্ধ? আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বসার ঘরে চলেআসছিলাম। আমি থমকে দাঁড়ালাম। মনে হলো কেওযেন খুব দ্রুত আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। এতঅন্ধকারের মাঝেও যেন আমি স্পষ্ট দেখলাম। লাললাল চোখগুলো যেন এখনো আমার চোখে ভেসেআছে। কি ছিল এটা? এটাও কি চোখের ভুল? আমিকিছুই বুঝতে পারছি না। আমার মস্তিষ্ক কি আমাকেনিয়ে কোনো মজার খেলা খেলছে? আমি বিষয়টাকেমন থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম। নিজেকে বুঝাতেলাগলাম আমি যা দেখেছি সবই ভুল। আমার চোখেরভুল। আমি আবার বসার রুমে চলে আসলাম।ল্যাপটপটা এখনো অন করা। কাজগুলো করে ফেলাউচিত। কিন্তু কাজে কেন জানি মন বসছে না। কেমনজানি অস্বস্তি হচ্ছে। কেও যখন আপনার দিকেসারাক্ষণ কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকে তখন যেরকমঅস্বস্তি হয় ঠিক সেরকম। কেও যেন আমার দিকেসবসময় তাকিয়ে আছে। খুব কাছ থেকে যেন আমারউপর নজর রাখছে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে যেন আমারদিকে তাকিয়ে আছি। আমি যেন তার উপস্থিতি টেরপাচ্ছি। মাঝে মাঝে যেন সে আমার শরীরের উপর তারগরম নিশ্বাস ছাড়ছে। মেঝেতে কি যেন ধপাস করেপড়ে গেল। আমি বসা থেকে উঠে পড়লাম। কিসেরশব্দ ছিল টা? আমি খুজতে লাগলাম। অন্ধকারেবিশেষ সুবিধা করতে পারছি না। ফোনের লাইটটা দিয়েখুজছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম মেঝেতে ফুলদানিটাভেঙে পড়ে আছে। ফুলদানিটা ভাঙলো কি করে? ফুলদানিটার ভাঙা টুকরো এদিক সেদিক ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।এ ঘরে আবার ফুলদানিই বা আসলো কথা থেকে।  " চলে যা!" কেও যেন কানের কাছে এসেবলে গেল। আমি চেচিয়ে উঠলাম কে? আবার বলেউঠলো, " চলে যা! বাঁচতে চাইলে চলে যা! কি হাড়কাপানো হিমশীতল গলার স্বর! হঠাৎ খেয়াল করলাম,ঘরের কোনায় কেও একজন ঘুটি শুটি মেড়ে বসেআছে। কালো একটা অবয়ব। আমি কে? বলে আতকেউঠলাম। আমার চিৎকার শুনে অবয়বটি একটু নড়েউঠলো। আমি আমার ফোনের লাইটি অবয়বটির দিকেতাক করলাম। একজন মহিলা উলঙ্গ হয়ে বসে আছে।সারা শরীর দগ্ধ। আগুনে পুড়ে গেলে যেরকম হয় ঠিকসেরকম। সারা শরীরে লাল বর্ণের দগদগে ঘা। কি বিশ্রীদেখাচ্ছে। অবয়বটি যেন আমার দিকে হামাগুড়ি দিয়েএগুচ্ছে। আমার হৃদস্পন্দন থেমে যাবার উপক্রমহলো। আমি নিজেকে বুঝাতে লাগলাম যা কিছু দেখছিসব কিছুই আমার মস্তিষ্কের কল্পনা  আমার মস্তিষ্কউত্তেজিত। এর বেশি কিছু না। আমার হ্যালুসিনেশনহচ্ছে। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। ভূতে বিশ্বাস করি না। করা উচিত ও না।  আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। নিজেকেবুঝাতে লাগলাম তুমি কিছুই দেখনি। যা দেখেছ সবচোখের ভুল। চোখ খুললেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়েযাবে। চোখ খুলতে কেন জানি সাহস হচ্ছে না। মনেমনে প্রার্থনা করছিলাম যেন চোখ খোলার পর সবকিছুঠিক আগের মত হয়ে যায়।মনে মনে গুরুদেবকে ডাকলাম,  চোখ খোলার পর যেন আমার চোখেরসামনে কোন খারাপ  কিছু না থাকে। আমি ধীরে ধীরেচোখ খুললাম-

মনে এই আশা নিয়ে যে চোখের সামনে কিছু থাকবেনা। সত্যিই চোখের সামনে কিছু ছিল না। আমি একটাদীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। তার মানে যা কিছু আমি দেখেছিতার সবকিছুই চোখের ভুল। কেমন জানি একটাপ্রশান্তি ছেয়ে গেল সারা মন জুড়ে। নিজের চোখকেভুল প্রমাণিত করে যেন আনন্দ হচ্ছিল। এখন পর্যন্তআমার সাথে যা কিছু ঘটেছিল তার সবকিছু মাথাথেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম। আমি চাইছিলামসবকিছু ভুলে যেতে কিন্তু কেন জানি সেই বিশ্রী কুৎসিতচেহারাটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।নিজেকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিলাম না যে আমিএতক্ষণ যা কিছু দেখেছি সব কিছুই আমার মনের ভুল।আমি ঘরের বাইরে  গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার এখনপ্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন। আমি জোরেজোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকলাম। বারান্দায় প্রচুর বাতাসবইছে। শরীরটা মুহূর্তেই জুড়িয়ে গেল। হটাৎ দেখি ঘরের আলো জ্বলে উঠেছে। এই যে কিছুক্ষণ আগে ভূমিকম্পের মতো হল, বাল্ব ভেঙ্গে গেলো,সেটা কি? আমিতো হাতেও ব্যাথা পেয়েছিলাম। বা হাতটা ধরে দেখি, কই না তো, রক্তের কোন দাগ নেইতো।  

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আজ আকাশটা সত্যি খুবসুন্দর লাগছে।বেশ বড় একটা চাঁদ উঠেছে।

 

এই পর্যন্ত এই বাড়িতে আসার পর থেকে আমার সাথেযা কিছু ঘটেছে সবকিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।এখন আমার প্রয়োজন একটা দীর্ঘ ঘুম। সকালে উঠেআবার সবকিছু নতুনভাবে শুরু করব। নতুন বাড়িঅনেক কাজকর্ম পড়ে আছে। সবকিছু পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করতে হবে। ঘরটাকে থাকার মতো করে গড়েতুলতে হবে। কাজটা সহজ নয়। কালকে প্রচুর পরিশ্রমকরতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণেবিশ্রাম। তাই ঠিক করলাম তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো।

 

আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম। ঘুমাতে চেষ্টা করছি কিন্তুকেন জানি ঘুমাতে পারছিনা। বার বার সবকিছু মনেপড়ে যাচ্ছে। সেই পোড়া দুর্গন্ধময় কুৎসিত অবয়ব টাচোখের সামনে ভেসে উঠছে। কিছুতেই ভুলতে পারছিনা। নিজেকে বারবার বুঝাচ্ছি সেটা ছিল উত্তপ্তমস্তিষ্কের নিছক কল্পনা। কিন্তু ভুলতে পারছি না।

কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম টেরই পেলাম না। ঘুম ভাঙলোপ্রচন্ড কোন


উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...