বকবকানি
সকালে ঘুম ভাঙে অনিমেষ কাকুর ঝাঁঝালো কন্ঠস্বরে । প্রতিদিন একই ডাইলগ "মজুমদার বাড়ির ছেলেকে দেখে কিছু শিখতে পারিস না? দেখ তো ছেলেটা কেমন সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে থাকে। আর তুই কিনা ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকিস। দিন দিন অমানুষ হচ্ছিস; কাজকর্ম তো নেই, বাপের হোটেলে খাচ্ছিস দাচ্ছিস, এভাবে আর কতদিন!"
এমন ডাইলগে বন্ধুরা সবাই কমবেশ অভ্যস্ত, এক কান দিয়ে ঢোকে, আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর হজমীগুলির মত বিকালের মিটিংও মিস হয় না।
সেদিন বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম, দেখলাম 'সোমু' বেশ চুপচাপ।
'হৃত্তিক'টা হুট করে বলে উঠলো; "কিরে বাপের বেটা আজও গালি খেয়ে এলি নাকি!" হাসির কথায় বেশ জমে উঠলো আড্ডা ।
আমি চাপা সুরে সোমুকে বললাম, বন্ধু মন খারাপ করিস না।
সোমু বললো বাবার কথায় কষ্ট পাইনারে, নিজের উপর রাগ হয়।
শুধালাম কেন?
বললো "যদি আমিও 'কিষাণে'র মতো হতে পারতাম মেধাবী ছাত্র! তাহলে হয়তো রোজ রোজ কথা শুনতে হতো না।"
হেসে বললাম হাতের আঙ্গুলগুলো কি সব সমান? কিষাণ পড়াশুনোতে খুব ভালো কিন্তু ও কি তোর মতো ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে? রমেশের মতো গাইতে পারে! অপুর মত ভালো নাচতে পারে? ওরা সবাই পড়াশুনোয় অশ্বডিম্ব। হাহাহা!
আবার অখিল সারাদিন পড়েও সেই টেনেটুনে পাশ করে। পারুলকে দেখ সারাদিন ঘুরেবেড়ায় তবুও ক্লাশে টপ করে প্রতিবার। আমি মনে করি সমসাময়িককে নকল নয়, এমন কাজ করবো যেন অন্যরা আমাকে নকল করে। তাহলেই অভিভাবকদের বিশ্বাস বাড়বে, বকবে না।
সোমু কিছুই বললো না, কিন্তু অনুভব করলাম, তার চোখগুলিতে আলাদা একটা দ্যুতি খেলছে।
আড্ডা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে গেলাম। এভাবেই কেটে যায় কলেজ দিনগুলি। একদিন শুনি মাস্টার কাকু ছেলেকে বকে বলছে "কি খেলা খেলিস, সোমুর মত অনারিয়াম আনতে পারিস না!"
No comments:
Post a Comment