আত্মমর্যাদা
রাইমা তার বাবাকে নিয়ে কেক খাবে বলে কেকের দোকানে গেল। শহরে কত বড় বড় সুন্দর কেকের দোকান। বেশ বড় ও সুন্দর দেখে একটি কেকের দোকানে রাইমা ও তার বাবা ঢুকে গেল। কত সুন্দর সুসজ্জিত ভাবে কেক গুলো থরে থরে সাজানো।রাইমা কেক খেতে খুব ভালোবাসে, সে একটা সুন্দর কেক পছন্দ করলো। রাইমার বাবা যখন কেকের দাম মিটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তখন ওরা দেখে, দোকানের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছ-সাত বৎসরের ছোট্ট ছেলে, উড়ো তেলহীন রুক্ষ্ম চুল, পরনের পোশাকেও দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট। সে রাইমার কেনা কেকটির দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে ছিল। সে দৃষ্টিতে ঝরে পড়ছিল এক সীমাহীন আনন্দ। সুন্দর, সুসজ্জিত কেকটির যা দাম, তা কিনে খাওয়া শিশুটির ক্ষমতা বাইরে। রাইমা ও তার বাবার হঠাৎ খুব কষ্ট হল শিশুটির জন্য, তার চোখের দৃষ্টির গভীর অন্তরাল থেকে যেন বার বার এটাই প্রকাশিত হচ্ছে যে কেকটি তার খুব পছন্দ। কিন্তু কিছুই বলার মত বা কাছে ঘেঁষার মত সাহস সে অর্জন করে উঠতে পারছে না। রাইমার বাবা কেকের টাকা মিটিয়ে দিয়ে ভাবলেন যে শিশুটিকে কেকটি দিয়ে দেবেন আর অন্য একটি কেক নিজেদের জন্য নিয়ে নেবেন। উনি শিশুটিকে ডাক দিয়ে কেকটি তার হাতে তুলে দিতে যাবেন এমন সময় নতুন একটি লোকের আবির্ভাব ঘটলো দোকানে। লোকটি একজন রিক্সাচালক, যিনি দোকানের বাইরে এতক্ষন অপেক্ষা করছিলেন আর শিশুটি উনারি ছেলে। কেকটি উনার ছেলেকে দিতে দেখে লোকটি বললেন -"বাবু লাগবে না এত দামী কেক। আমরা খুব সাধারন মানুষ, এত দামী কেক আমাদের সইবে না। " উনি বলে চললেন- " আজ আমার ছেলের জন্মদিন। সে একটি কেক, চকলেট এসব কিনবে বলে এখানে এসেছে...."।
তখন রাইমা ও তার বাবা বললেন " তাতে কি, আমরা ওকে দিইনা এই সুন্দর কেকটা ওর জন্মদিনে উপহার হিসেবে"। লোকটি সবেগে মাথা নেড়ে বললেন " না বাবু, তা হয়না, আমি যতটুকু কেনার সামর্থ্য রাখি ততটুকু কিছুই ওর জন্য কিনে নিয়ে যাবো। আমাদের এত দামী কেক খাওয়ার অভ্যেস নেই বাবু। আজ হয়তো আপনার উপহার নিলাম, তার খেতেও হয়তো ভালো লাগবে কিন্তু আরেকদিন সে ঠিক এমনি একটি কেক কিনে দিতে বাধ্য করবে আর আমি যদি না কিনে দিতে পারি, হয়তো তখন সে চুরির চেষ্টা করবে। অভ্যাসটা তার খারাপ হয়ে যাবে বাবু। আমরা খুব সাধারন, এসব জিনিষ আমাদের জন্য নয়। "
রাইমা ও তার বাবার অবাক, বিষ্মিত চোখের সামনেই লোকটি একটি পাঁচ টাকার ছোট কেক ও দুটাকার চকলেট কিনে ছেলের হাত ধরে দোকান থেকে বেড়িয়ে গেল। দোকানদার রাইমার বাবাকে বললো "স্যার ওরা আমার দোকানে আসে মাঝে মাঝে, কমদামী কেক, চকলেট কিনে নিয়ে যায়। আমি একদিন দিতে চাইলাম একটি ছোট কেক ছেলেটিকে, তার বাবা রাজি হল না। বললাম টাকা লাগবে না, তাও রাজী হল না। স্যার, লোকটি গরীব কিন্তু যা বুঝলাম তার আত্মমর্যাদা জ্ঞান প্রবল। " রাইমার বাবা মাথা নেড়ে সপ্রশংস দৃষ্টিতে বাবা ও ছেলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
No comments:
Post a Comment