Saturday, July 18, 2020

রনিতা নাথ

স্টেশন 

কাছের মানুষটি যখন দেশমাটির ঘ্রাণ নিয়ে ভেজা দুটি চোখের পাতাকে নীরবে টুপ করে যত্নে তুলে রেখে যায় আমার দুটি চোখের পাতায়।তখন...

যাবার সময় ঘনিয়ে এলেই বুঝতে পারি সময় কতটা দৌড়ে এগুচ্ছিলো।সৃজনের বাবার আপন মনে বেগ গোছানোর কাজে হাত লাগাতে লাগাতে
দেখতে থাকি,যাবতীয় জিনিস পত্রের সাথে কিভাবে ছেলের সাথে কাটানো সময় গুলোকে 
খুব যত্নে ঢুকাচ্ছিল মনের থলিতে।মনের কোণায় কোণায় চেপে রাখচ্ছিলো যতটা পারা যায়।তা নিয়েই বেরিয়ে পড়বে পতাকার মাঝে দেশ মানচিত্রের কথা স্মরণ করে। 

ট্রেন ধরার তাগিদে,পা উঠতে না চাইলেও কাঁধে বেগ সহ সৃজনকে কোলে নিয়ে একবার ঘরের চার দেওয়ালে চোখ রাখে। তারপর সৃজনকে বুকের সাথে মিশিয়ে চৌকাঠ পেরিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে উঠান থেকে যখন রাস্তায় গিয়ে একবার বাড়ির সবার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় সৃজনের বাবা।
তখন সৃজনের ঠাম্মার চোখ থেকে কান্না বৃষ্টি ঝরে অবিরত।আমি নির্বাক। 

স্টেশনে গিয়ে ভিড় ঠেলে একটা খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি তিনজন।ছন্নছাড়া মানুষের ভিড়। সৃজনের বাবার চোখ স্থির রেললাইনের পাতে। 

সৃজনকে বুকের কাছে জড়িয়ে নিয়ে তার বাবা বলতে থাকে সব সময় ভালো থাকবি। মায়ের সাথে দুষ্টুমি কম করবি। মায়ের অসুখ হলে মা যেমন তোমায় ভালোবেসে খেয়াল রাখেন,তেমনি তুমিও মায়ের খেয়াল রেখো। আমি তো তোমাদের কাছে থাকবো না। তুমিই মাকে ভালো দেখতে পারবে। মনে থাকবে তো কথা।সৃজন চুপচাপ মাথা নাড়ে। 

কথা বলতে বলতেই ট্রেন বিকট আওয়াজ করে প্ল্যাটফর্মে ঢুকে।আওয়াজ শুনে সৃজন বাবার গায়ের জামাটাকে খুব শক্ত করে ধরে।বাবাও সাহস জোগায়।আমি আছি বাবা ভয় নেই।সৃজনকে কোলে নিয়েই দৌড়াতে দৌড়াতে জানলার পাশে একটি খালি সিট খুঁজতে থাকে সৃজনের বাবা।পেয়ে যেতেই সৃজনকে যখন আমার কোলে দিতে ফিরে দাঁড়ায়।তখন সৃজন ও তার বাবার কষ্টের নিঃশব্দ কান্না শুনতে পেয়ে আমার কান্না থেমে যায়। 

হৃদয়কে কতটা পাথর বানাতে পারলে বুকে আগলে রাখা সন্তানের কাছ থেকে নিজেকে আলগা করা যায়! 

আমি দেখেছি কিভাবে বাবা ও ছেলে পরস্পরের কাছ থেকে পরস্পর দূরত্বে চলে যাবার মূহুর্তে হৃদয়ে ভালোবাসার স্নেহে দুজনেই  তাকিয়েছিল একে অপরের দিকে অপলক।দূরে যেতে যেতে অদৃশ্য হবার আগে ভেজা দুটি চোখের পাতা আমার চোখে টুপকরে রেখে গিয়েছিলো একটি বাবার হৃদয়।

আবার ফিরে আসার অপেক্ষায় সৃজনকে নিয়ে  বাড়ির দিকে রওয়ানা হই।সৃজন কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে বাবা কেন আমাদের ছেড়ে চলে যায়। আমার কাঁধে মাথা রেখে ভাঙা গলায় বলে  
বাবা যখন আবার ছুটিতে আসবে তখন আমি আগে থেকেই বাবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবো স্টেশনে।

No comments:

Post a Comment

অনুপম রায়

সতেরো বছর পর সতেরো বছর পর কি অবসাদ সেটা ধারণা না থাকাই ভালো। যাদের তুমি রেখে গেছ আমাদের হয়ে, তারা এখন উন্মাদ শহরের এক কোণে বসে শ্বাস নেয়। জ...