Saturday, July 18, 2020

পিনাকী ভৌমিক মুন

দাগ

গ্রামের নাম দুর্জয় নগর। সেখান থেকে অজয়নগরের দূরত্ব মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটা পথ। এই ছোট দূরত্বের মাঝেই একটা সরকারী আবাসন আছে। সেই আবাসনেই গৌরববাবু ছোটখাটো একটা কাজ করেন যাকে চাকরিও বলা যেতে পারে। তার কাজ রাতের বেলা পাহাড়া দেওয়ার সেই আবাসন । গৌরববাবু এমনিতে সাহসী লোক বটে। কিন্তু সেই আবাসনেরই একজন বাসিন্দা জবা, কয়েক দিন আগে হঠাৎই গত হয়েছেন। জবাকে সবাই দিদি বলেই ডাকতো এবং মায়ের মতো সবাই শ্রদ্ধা করতো। তিনি সকলের বড্ড প্রিয় ছিলেন তার মিষ্ট ব্যবহারের জন্য। জবাদি আর গৌরববাবুর সম্পর্কটা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলো। তাই গৌরববাবুর কাছে জবাদির হঠাৎ চলে যাওয়ার ব্যাপারটা খুবই দুঃখের। জবাদি যাওয়ার পর গৌরববাবু কেমন যেনো মনমরা হয়ে থাকতেন। দেখলে বুঝা যেতো তিনি যেনো তাঁর জীবনের একজন খুব কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। 

              এর পর প্রায় মাস খানেক পরের কথা, তিনি নিত্যদিনের মতোই সেই রাতে পাহাড়াদারের কাজ করছিলেন। আবাসন থেকে কেউ রাতে সাধারণতঃ অকারনে বাইরে বেরুতে পারেন না এবং রাত্রি ১১ টার পর নিয়ামানুসারে সমস্ত রুমের লাইটও বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু গৌরববাবু এখন প্রায়দিনই লক্ষ্য করেন যে আবাসনের একজন মহিলা প্রতিদিনই কোন একটা কাজে বাইরে যান কিন্তু তিনি আর সেই মহিলাকে ফিরে আসতে দেখেন না। কিন্তু পরেরদিন সেই এক‌ই সময়ে আবার বেরিয়ে যেতে দেখেন। গৌরববাবু প্রথম কয়েকদিন খুব একটা গভীরভাবে ভাবেননি বিষয়টা নিয়ে। 
কিন্তু একদিন তিনি ভাবলেন এ‌ই রহস্যের সমস্যা উদঘাটন করবেন। সেই ভেবে তিনি সেই মহিলাকে পেছন থেকে ডাক দিলেন কিন্তু কোন সাড়া দেননি সেই মহিলা। উত্তর না আসায় সেই মাঝ রাতেই গৌরববাবু ঐ মহিলার পিছু ধাওয়া করলেন। মহিলার পেছন পেছন একটু এগোনোর পর কেনো যেনো গৌরববাবুর মনে হলো সেই মহিলার সাথে আমাদের জবা দির কিছুটা মিল আছে। যদি ও তিনি একে ভ্রম বলেই ভেবে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি আরো এগোলেন সেই মহিলার পেছন পেছন। কিন্তু উনার কোন ধারণা ছিল না তিনি আসলে কোন রাস্তা ধরে কোথায় যাচ্ছেন। তবুও তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন এক‌ই ভাবে। হঠাৎ একসময় তিনি বুঝতে পারলেন যে এ রাস্তা তার জন্যে নিরাপদ নয়। যখনই এই ভাবনা আসে ঠিক এক‌ই সময় ঐ মহিলাও গৌরববাবুর দিকে ফিরে তাকালেন। গৌরববাবু যা দেখলেন তাতে তিনি হতচকিত ও বিস্মিত হয়ে গেলেন। এ কি! এতো জবা দি । কিন্তু তা কি করে হয় তা তো সম্ভব হতে পারে না, কারণ তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। তাহলে কি এতোদিনের সমস্ত অভিজ্ঞতা সবকিছুই অলৌকিক ছিল? এ সব প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যেই গৌরববাবু কে নাড়া দেয়। তিনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। সেই রহস্যময়ী ছদ্মবেশী গৌরববাবু কে কিছু বলতে চাইছিলেন। কিন্তু গৌরববাবু ভয়ে সেখান থেকে দৌড়ে আবাসনে চলে আসেন। গৌরববাবু এখন যথেষ্ট বয়স্ক হয়েছেন।কিন্তু সেই রাতের অভিজ্ঞতা এখনো গৌরববাবুকে এখনো  শিহরিত করে। 
               তবে কি এগুলো বিভ্রান্তি নাকি এই সমস্ত অলৌকিক ঘটনার পেছনে কোন সত্যি লুকিয়ে থাকে যা আমাদের অজ্ঞাত বা জ্ঞাত! 


        

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...