Tuesday, October 20, 2020

হারাধন বৈরাগী

মননস্রোত ও ব্রহ্ম

কবির সাথে নদীর সম্পর্ক মুহুরীকে দেখেই বুঝতে পার।রাতের ষ্টেশন মূলত তোমার এক প্রিয় জায়গা ,শান্ত অথচ নির্ভেজাল এমন কোলাহল ধনী ও গরীবের পায়ের নীচে সখ্যতার মানদণ্ড।বিদায় ও স্বাগত-এই দুয়ের মাঝে নরম চেয়ার যেন পাখি আর মানুষের মধ্যে ঘরে ফেরার নির্ভেজাল তাড়না। তোমার ঘরে ফেরার তুমুল অণুপ্রেরণা।

একজন নিজের বাড়িছেড়ে কি করে অন্যঘরকে ভরসা করতে পারে।অজানা এক ভিটার মাঝে বসতের মতো উদারতা গর্বের সাথে দেখাতে পারে।তুল্য কিছু না পেয়ে তোমার সর্বদা ভয় করে।আর মায়েরা তোমাকে দেখে বাপের বাড়ি ভুলে যায়। তোমারও মায়েদের দেখে মামারবাড়ী‌ বাড়ি মনে পড়ে।এই থেকে নারীকে তোমার মনে হয় নির্মানশিল্পী।নারী ঘর নাবাঁধতে আসলে নতুন কোনো ঘর তৈরী হয় না!নুতন কোনো মা হয়না।এ নুতন নয়, পুরোনো ও নয়।এ তোমার ‌পথচলা।

গ্রামজীবন আর নদীর মাঝে তফাৎ কমই করতে পারো। হাঁসমা আর গ্রামভারতের ভেতর বয়ে চলা অন্তঃসলিলা নদীটির পারে কিশোর দুইভাই যখন একসাথে বসে ভাত খায় ,ভাতের থালায় উঠে আসে উদ্যান হয়ে মায়াবিনী প্রকৃতি। এসব দৃশ্য বলা যায়‌না, বুঝা যায়।আফশোস হয়,এ কাউকে দেখাতে পারো না।এ বোঝা কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে তুমি জান না!চোখের কোণে জল জমে যায়। সে জলও খুব খারাপ লাগে না!অথচ এ নিয়ত তোমাকে কাঠটুকরার মতো খেয়ে যায়।এমনকি কুকুরের সাথে মানুষের কোন একটা সাদৃশ্য দেখে ভয়ে ডিস্কব্র্যাক লকহওয়ায় মতো গ্রীষ্মদুপুরে আর্যাবর্ত তুমি।

তখন একটা আস্ত বাঁশবাগান‌  পুকুরে স্নান করে এসে বাঁশবেড়ার ছোট্ট রান্নাঘরের মাটিতে বসে ভেজা শরীরে খায় সিদ্ধচালের গরমভাত, দেশিআলু ,শিংমাছের সুক্তো। তখন মৃদু বাতাস শুকনো বাঁশপাতাপাখির মতো  উড়ে আসে রান্নাঘরে ।তৃষ্ণামাটির কলস ঘরের কোণ থেকে ঠাণ্ডাজল নিয়ে এসে একটি মাটির গ্লাস ভরে দেয়। পেটভরে খেয়ে উঠলে একটা হাতপাখা নিয়ে আসে পুকুর পাড়। তখন ঘরের পেছনের শেওলা জমানো ছোট্ট পুকুর হয়ে ওঠে সুবর্ণরেখা আমগাছ।বাঁশঝাড় শেকড়ের উপর বসে দেখে পুকুরে দেশি সাঁতারকাটাহাঁসেদের অনাবিল আনন্দ।সাঁতার কাটে কাঁচামাটির গন্ধ।

তখনই গলায় তুলসীমালা জড়িয়ে একজন বাস কন্ডাক্টর যাত্রীর উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ে-সিট খালি। অথচ সিটে বসে আছো তুমি ডবল ভাড়ায়। তখন বুঝো একা নও তুমি,পাশে বসে আছে সমান্তরাল তোমার দ্বৈত পৃথিবী।তখন আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়ে উঠো।এই যে সুস্থ আছো,প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ থাকো। ভাবো এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি!

আর গলার স্বর নরম করে টগবগিয়ে তাকে বলো,- অনাহারীর একটা গল্প শোনাতে ।সে বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায়।ভাবো রাত গভীর হয়েছে বলেই এত নিস্তব্ধতা!মানুষ তো চিরকালের জন্য এই পৃৃথিবীতে কোলাহল করতে আসে না।তাকে না জাগিয়ে বরং ঘুম থেকে উঠলে ,তার কাছে একটা  অনিদ্রার গল্প শুনবে বলে আগ্রহ নিয়ে বসে থাকো

অথচ জানো,রোগ একবার বড়লোক হয়ে গেলে শরীরটাকেও কিনে ফেলে! মৃত্যুর এক ঘন্টা পরে আর শরীরটা বসানো যায় না।শক্ত হয়ে যায়। ভাঙতে গেলে মটমট করে। এই শব্দ এতকালের চেনা।অথচ এই শব্দে আতকে উঠো, যেন এর তুল্য  পৃথিবীতে আর কোনো শব্দ হয় না। মনে‌ মনে তুলনা খুঁজতে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে ভাবো এ যেন চণ্ডিদাসের বড়শি আর রামির পুকুরের বাতাসের মধ্যেকার ব্রহ্ম!

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...