Tuesday, October 20, 2020

প্রীতম শীল

ক্রসফায়ার 

পূজা আসলো বলে মনীষার মূখে হাসি নেই,বারান্দায় বসে মা পুরুনো ব্লাউজ সেলাই করছে। বাবা কুঁড়াল দিয়ে লাকড়ি কাটছে।
কুঠারের সাথে তাল মিলিয়ে হুম হুম শব্দ করছে। এই শব্দ লাকড়ি কাটতে সাহায্য করে কিনা জানিনা। 
--মা মনীষা এক গ্লাস জল দেতো!
--মনীষা চুপ করে রইলো।
-- কিরে জল দিতে বলছিতো।
--মনীষা চুপ করে রয়েছে।মেয়েরা অভিমান করলে বেশি সময় চুপ করে থাকে।এই স্বভাবটা বছর এগারোর মেয়েটাও রপ্ত করলো।
--বাবা মেয়ের অভিমান টা বুঝতে পেরেছে। কিচ্ছু বলেনি,ঘর গিয়ে মাটির ঘড়া থেকে তিন গ্লাস জল খেয়ে একটা দীর্ঘ্য শ্বাস নিলো।

লাকড়ি কাটা শেষ না করেই হাত মুখ ধুয়ে বাজার উদ্দ্যশো করে রওনা দিলো। 
মনীষার মা পিছন থেকে বলতে লাগলো কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?
-- বাজারে যাচ্ছি গো।
-- অবেলায় বাজারে কেনো?
-- দেখছনা মেয়েটার মুখের অবস্থা।
-- এখন না গেলেই নয়।
-- যাবো আর আসবো।

-- দাদা লাল ফ্রগটা কতো হবে?
-- ৪০০ টাকা মাত্র।
--না না ওটা না, হলুদ টা দেখান তো?
-- ৩৭০ টাকা।
--থাক সাদা টা দেখান?
-- ২৩০ টাকা।
--হ্যাঁ ওটাই দিন। সাথে ঐ সবুজ ব্লাউজ টাও দিন।

৩০০ টাকা দোকানদারের হাতে দিলেন। ১০ টাকা ফিরিয়ে দিলেন। গাড়ি করে যেতে ২০ টাকা লাগবে। মনীষার বাবা পাঁয়ে হেটেই রওনা দিলেন বাড়িতে। রোদের জোর আজ ততটা নেই, হাঁটতে অসুবিদে হচ্ছেনা। ভিষণ খুশি খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন, মেয়ের মুখে হাসিতো ফুটবে।বউটা হয়তো ছেঁড়া ব্লাউজটা ফেলে স্বামীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে,আমার জন্যও এনেছো। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে মনে মনে দারুন খুশি হচ্ছেন। 

চৌরাস্তার মোড়ে আসতেই, খুব দ্রুত যাওয়া  মোটর সাইকেল থেকে একটা বস্তা পড়লো। মনীষার বাবা লোক গুলোকে পিছু ডাকলেন,  তাড়া ছুঁটে চলে যাচ্ছে। তিনি বস্তা টা কুঁড়িয়ে নিলো,কি আছে এর ভেতর?
তখনই বাংলা সিনেমার মতো পিছনে পুলিশের আগমন। 
-- এই যে কি আছে বস্তায়?
-- জানিনা স্যার?
-- বস্তা নিয়ে পালাচ্ছো,আবার জানিনা।
-- বস্তার মুখ খুলো?

সর্বনাশ এতো গাঁজা ভর্তি বস্তা। এই একে তুলো গাড়িতে। 
-- স্যার স্যার আমি কিচ্ছু জানিনা।
-- তোর মতো ধরা পড়লে সবাই বলে।
-- না স্যার আমি সত্যি জানিনা। একটা লোকের বাইক থেকে পড়লো,  আমি ডেকেছিলাম কিন্তু ওনারা শুনেন নি।
-- আর সিনেমা বানাতে হবেনা বাপ, উঠ গাড়িতে।
-- স্যার আমি গরীব মানুষ,আমি এই সব কাজ করতে পারিনা।
-- পারো কি না পারো,থানায় নিয়ে থার্ড ডিগ্রী দিলেই গলগলিয়ে বলবে।

-- মা বাবা এখনো আসছেনা কেন?
-- আসবে মা আসবে।
-- মা বাবা কি আমার জন্য জামা আনবে?
-- নিশ্চই আনবে।
-- কি মজা হবে বলো, বান্ধবীদের আমিও দেখিয়ে দেখিয়ে বলবো, দেখ এটা আমার নতুন জামা।
-- হুম বলিস মা।

-- কিরে বল কোথা থেকে নিলি গাঁজা গুলো?
-- না স্যার আমি কিচ্ছু জানিনা।
-- তবেরে!!!

-- স্যার আমায় একটু জল দেন! খুব তেষ্টা পেয়েছে। 
-- স্যার আমার মেয়ের জামা গুলো পৌঁছে দেবেন। ও মায়া মুখটা আমি আর সইতে পারছিনা। আসার সময় মেয়টাকে খুব খুশি দেখলাম
--সিনেমার কাহিনী করছো ব্যাটা। 
-- স্যার আরো কষিয়ে মারুন। সালা এই ভাবে কিচ্ছু বলবেনা। 
-- ঠিক বলেছো,হারামি খুব শক্ত।
-- প্লাস টা আনো! 
-- ওমা স্যার আমার নখ তুলবেন না।আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি স্যার।
-- তবুও বলবিনা। 
-- রামু গরম জল আন! 
-- বল সালা বল।

স্যার আসামীর অবস্থা ভালো নেই।আর মারবেন না। 
--স্যার ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে মনে হয়।
-- হুম।
-- কি করা যায়?
-- ক্রস ফায়ার।

--মা বাবার কি হলো?
-- আমার জামাটা এতো লাল কেন?

মা নির্বাক বসে আছে।
সাংবাদিকরা হাজারো প্রশ্ন করছে। 
মা কোনো উত্তর করছেনা।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...