ফেনী ব্রিজ (তিন)
নদীর ওপারে রামগড় থেকে দেখে এলাম মসজিদ, জেনে এলাম আযান কি? মন্দির কেন নয়! কেন মসজিদ ; পূজার বদলে আযান কেন! -- এসব প্রশ্নে আর কোনো আলোচনা হলোনা। কেননা বাড়িতে জানলে পিঠের ছাল তুলে নেবে।
কিন্তুু আমাদের বাড়িতে এমন কি পাড়ার সব বাড়িতেই দেখতাম ঐ আযানের সময় মেনেই চলে । ভোরের আযানের সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। লেগে যায় যে যার কাজে । মা কাঠের চুলায় চায়ের জল বসিয়ে দিয়ে এঁটো বাসন মাজত। ঠাকুরমা আর পিসি ধান সিদ্ধের হাঁড়ি বসাত, বাবা কাকারা চলে যেত কেউ মাঠে বা যে যার কাজে। দুপুরে আযানের টাইমে অবশ্যই দুপুরে খাওয়া হয়ে যেত। বিশ্রামের পর বিকেলের আযান হল বাজার বা হাটে যাবার সময়। সন্ধ্যের আযানে ফের বাড়ি ফেরা। এর বেশী আর তখন জানতাম না বুঝতামও না।
এদিকে রামগড় যাওয়া আসা গেল বেড়ে। সকালে পেতি পূরোহিতের মতো হেঁয় হেঁয় নমঃ কাইস্যা মন্ত্রের মতো পড়েই দৌড় নদীতে। স্কুল টাইমে নাকে মুখে ক'টা গুঁজে স্কুল। ফিরে আবার নদীর চর। আর সুযোগ পেলেই নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের রামগড়। কিছু একটা যেন পেয়ে বসেছে। ফারুক,শাহ আলম, রুবেলের ছোট-বড় বোন ছিল বেশ কয়েকজন। বাড়ির ঘরোয়া পোশাকে ওদের দেখতে খুব ভালো লাগতো। দেখে থাকতে মন চাইতো। কেমন যেন একটা ঘোর। তখন বুঝিনি -- পরে বুঝেছি শরীরে যৌবন বাসা বাঁধবে বলে বাঁশ,ছন যোগাডের আলামত চলছে। অবশ্য অপুদা ( পাড়ার সিনিয়র,যিনি আমাদের সব বিষয়ে খেয়াল রাখেন) ইতিমধ্যেই নিদার পেয়েছেন প্যান্টের নীচে জাঙ্গিয়া পড়তে হবে।
এত বেশী যেতে থাকলাম যেন রামগড়ই আমার বাড়িঘর। রামগড় বাজার,স্কুল,কলেব,হাসপাতাল, কালীবাড়ি সিনেমা হল,মসজিদ,ঈদ,সেমাই এটা ওটা সব। প্রচুর খাওয়া দাওয়া। আম্মা'রা ভালোবেসে যা'ই পাতে তুলে দিতেন সব খেতাম।
তখনও ধর্মা-ধর্ম বুঝতাম না। নিষ্পাপ ছিলাম। যা পেয়েছি খেয়েছি স বাছাই করিনি।
এখন ধর্মের ষাঁড় হয়েছি খানা-খাদ্যে বাছাই করি।
চলবে -----
(ধারাবাহিকের পাতায়)
No comments:
Post a Comment