Friday, March 29, 2019

মুখোমুখি : দীপক দাস

"পৃথিবীর কোনো মানুষ নির্ভুল নয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মহান ব্যক্তিরা তুচ্ছ কাজেও মাঝে মাঝে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে সক্ষম নন"
~ দীপক দাস

দীপক দাস ত্রিপুরার শিক্ষাজগতের একজন জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব। শিক্ষা এবং সংস্কৃতি জগতের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক বহুকাল। বর্তমানে অবসরে। তিনি তাঁর প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে মনন স্রোতের পাঠকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়।  মনন স্রোতের সাক্ষাৎকার বিভাগে উপস্থিত হয়েছেন তিনিও। প্রাবন্ধিক ও বাচিক শিল্পী দীপক দাসের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মনন স্রোত।

♦মনন স্রোত => আপনি বাংলা সাহিত্যের এবং ত্রিপুরার শিক্ষাজগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। সংক্ষেপে আপনার বেড়ে উঠার গল্পটা যদি বলতেন!

দীপক দাস => আমি নিজেকে বাংলা সাহিত্যের এবং ত্রিপুরার শিক্ষাজগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মনে করি না। তবে আমি বাংলা সাহিত্যের একজন রসপিপাসু মানুষ।বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ সাহিত্যের ধারা ধরে বিশ্বসাহিত্যের রস আম্বাদনে সদা উৎসুক ব্যক্তি। আমি ১৯৬৩ সালে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সাবরুম আমার জেঠামশাই হরিভূষণ দাসের বাড়ীতে আমার বড় বোন একক দাদা যিনি মেডিকেলের ছাত্র এবং জেঠামশাই সহ ছিলেন অসাধারণ পড়ুয়া। তখনকার  সাবরুমে পাবলিক লাইব্রেরি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ । করবী দেববর্মণ ছিলেন লাইব্রেরিয়ান। অসাধারণ মহিলা পরবর্তী জীবনে তিনি প্রিন্সিপাল হন।  প্রোগ্রামে শিখতাম সব ধরনের বই । "রামের সুমতি", "বড়দিদি", "মেঝদিদি" পড়তে পড়তে চোখের ফুটেছিল কুয়াশা।  এক অনাবিস্তৃত জগতে আমি ডুবে যেতে থাকি। "পথের পাঁচালি " পড়ে দুর্গার জন্য মন দুঃখে ভরে উঠেছিল । একদিন হাতে এল আনন্দমঠ তখন আমি কৈশোর অতিক্রম করছি যৌবনরাজে প্রবেশপথ আমার কাছে ধরা দিল তার দাবী নিয়ে । আমি বুঝলাম যৌবন দেশকে ভালবাসার শিক্ষায় দীক্ষিত হতে হয়।দেশের প্রতি ভালবাসার টান আজও সমানভাবে প্রবাহিত ।

আমার বাবাও ছিলেন অসাধারণ পড়ুয়া ।একসময় বি কম করার জন্য কলকাতায় যাই। সেখানে রবীন্দ্রসংগীতের  প্রতি আকর্ষণ তৈরী হয়,সেই আকর্ষণের তীব্রতা আজও বহমান। মনে হয় শেষবারের মতো ঘুমিয়ে পড়ার মুহূর্তে যেন আমার শ্রবণ  রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পায়। যৌবনের বেকারত্বের দিনগুলোতে এখন কিছু মানুষের সংস্পর্শে আমি যাদের কাছে মূল্যবান করার জন্যও  নিজেকে তৈরি করতে হয় বই ছিলো সেইসময় প্রিয়তম সাথী। গোপীবসাক, নেপাল সেন, মানিক চক্রবর্তী, হরিনারায়ণ চক্রবর্তী, সুতপা দে,অর্জুন শর্মা , প্রদীপ চৌধুরী কত বন্ধু যারা পড়ুয়া এবং যাদের যুক্তি বুদ্ধি চিন্তা আমাকে প্রভাবিত করেছিল। আমার আমি  হওয়ার পেছনে বই এবং এদের অবদান অনেকখানি আর ছিল ৭০  দশকের উত্থাল সময়। সময়ই একটি মানুষকে তৈরী করে দেয়।

♦মনন স্রোত => আপনার সাহিত্যচর্চায় আগ্রহ ও প্রবেশ কাল কবে?

দীপক দাস => সাবরুমে 'ভারত সংঘ' ক্লাব পূজা উপলক্ষে স্মরনিকা  প্রকাশ করবে লেখা চাইছে, আমি লেখা দিলাম । সব মনে নেই ২০ বছর আগের হবে । ছাপার অক্ষরে আমার আত্মজনকে দেখে খুব ভালো লাগলো। সাবরুম থেকে যেসব স্মরনিকা বের  হয় তাতে লেখা দিতে থাকলাম । ছাপাও হত, বেশ ভালো লাগতো। একদিন ভাবলাম পত্রিকায় দিয়ে দেখি কি হয় । পাঠালাম  ত্রিপুরা দর্পনে ও স্যন্দনে। ওরাও ছাপাল।
মনে দুটি প্রশ্ন উঁকি দিত। মনে হত এসব পত্রিকায় জায়গা ভরাট করার জন্যই আমার লেখা ছাপা হয়েছে । আবার ভাবতাম লেখার মধ্যে সাধারণ কিছু গুন হয়তো আছে। তবে পড়ুয়া এবং সাহিত্য রসপিপাসু  হতে বলতে পারি  শুধু শুধুই কিছু যাদের কাগজে কালি ছিটাচ্ছি।

♦মনন স্রোত => আপনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোথায় গ্রহন করেছেন?

দীপক দাস=> আধারমানিক গ্রাম বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত এক প্রাথমিক স্কুলে আমার শৈশব। পঞ্চম শ্রেণী রামগড় হাইস্কুল। 6-11 সাবরুমে  এইচ এস। বিকম Part-1 city college কলকাতা  Part 2. Mbb college আহরতলা।B. Ed   Tripura University তে আমার প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা।

♦মনন স্রোত => আমরা জানি আপনি যখন সমাজ গঠনের কাজ করতেন, তখন থেকেই আপনার খুব জনপ্রিয়তা। এখনও আপনার সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আপনার জনপ্রিয়তা সেই রকমই আছে। এর মূল কারণ কি? একজন শিক্ষকের সত্যিকারের পেশাগত দায়িত্বশীলতা আসলে কখন শুরু হয়?

দীপক দাস = > আমি  যাদের সাথে মিশি তাদের আমি  ভালবাসি। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি , পালন করি,পালিয়ে যাই না, ছাত্র ছাত্রীদের আমি ভীষণভাবে ভালবাসি। আমার নিয়মানুবর্তিতা ঈর্ষনীয়। আমি  কোন কিছু পাওয়ার জন্য ব্যাকুল নই । হয়ত এইসব বৈশিষ্ট্য গুলি আমার সহকর্মী  বন্ধু ও সহকর্মীদের ভালো লেগে থাকবে ।

♦মনন স্রোত => আচ্ছা একটা কথা জানতে চাই আপনার কাছে, কবি সম্মেলন হয় কিন্তু লেখক সম্মেলন সেভাবে হয়না কেন?

দীপক দাস => আমারও প্রশ্ন কবি সম্মেলন হয়  লেখক সম্মেলন হয় না কেন? উত্তর যদি আমাকে দিতে হয় তবে আমাকে বলতে হয় লেখকদের মধ্যে "কবিতাই কুলীন " ওরা ব্রাহ্মণ অন্যরা সব ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,  শুদ্র। তবে আয়োজকদের কাছে আমি লেখক সম্মেলনের দাবী রাখছি।

♦মনন স্রোত => আপনার পরবর্তীতে কি কি পরিকল্পনা আছে সাহিত্যচর্চায়?

দীপক দাস => যার সাহিত্য সৃষ্টি শুধু বৃথা কালির আঁছড় কাটা তার আবার পরবর্তী পরিকল্পনা কি থাকতে পারে? তবে জয় দেবনাথ, বিজন বসু সাহিত্য রচনায় শ্রবণ মন দিয়ে নিয়োজিত তাদের চাহিদা পূরণ আমার পরবর্তী পরিকল্পনা। তবে এ পর্যন্ত যা ছাপা হয়েছে তা নিজের খরচে  একটি বইয়ে এনে অনেক কাল উপহার দেওয়ার ইচ্ছে আছে। যাদের আমার বইয়ের শরীর ভাগ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথ,বঙ্কিমচন্দ্রের বইয়ের সাথে লেগে যায় বা স্পর্শ করে ।

♦ মনন স্রোত => আমরা লক্ষ্য করেছি মননস্রোতে আপনার পাঠক সংখ্যা অনেক। আপনার প্রবন্ধের জন্য পাঠকেরা মুখিয়ে থাকে। প্রবন্ধে আপনি যে তথ্য দেন, সেগুলি খুঁজতে একজন লেখককে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আপনি কিভাবে সেটাকে নিয়মিত করেন যদি বলতেন? 

দীপক দাস => আমি যা লিখি চিন্তা আমার থাকে তবে অনেক বিখ্যাত লেখকের বানান থেকে নানা ধরনের ফুল তুলে আমি মালা গাঁথি। মালা গাঁথার দক্ষতা আমার প্রাপ্য কিন্তু ফুলগুলো বেশির ভাগ অন্যের বাগানের। আমি অনেক বই পড়ি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

♦মনন স্রোত => সাব্রুমের সাহিত্যচর্চার সংক্ষিপ্ত একটা রূপরেখা জানতে চাই আপনার কাছে।

দীপক দাস => ত্রিপুরার মায়ের উপেক্ষিত সন্তান সাবরুম সাহিত্য চর্চারস্রোত অতন্ত ক্ষীণ। আগে স্কুল ম্যাগাজিন হতো তাতে কেউ কেউ লিখতো। পরবর্তী সময়ে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন  ড. ননীগোপাল চক্রবর্তী,  ড. রণজিত দে, কৃষ্ণধন দেবনাথ, অশোকানন্দ রায়বর্ধন,  তিমিরবরণ চাকমা, রতন চক্রবর্তী যুবকদের মধ্যে বিজন বোস , কল্যাণব্রত বসাক, সঞ্জীব মালাকার , সঞ্জীব দে , জয় দেবনাথ, সোমেন চক্রবর্তী, শান্তনু চক্রবর্তী আরো কিছু নাম উঠে আসছে । সাহিত্যের নানা শাখায় এদের বিচরণ । তবে নাট্যকারের বড় সেভাব খুব ভাল গল্পকার মাত্র দু একজন কবিতা অনেকেই ভাল লেখেন।

♦মনন স্রোত =>  মনন স্রোতের মাধ্যমে আপনি নতুন প্রজন্মের প্রাবন্ধিকদের কি পরার্মশ দেবেন?

দীপক দাস => আমি বলব পাঠক হতে সবাইকে। প্রবন্ধ রচনার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য আমি বঙ্কিমচন্দ্র,রবীন্দ্রনাথ,অম্লান দত্ত, ভবতোষ দত্ত ,অন্নদাশঙ্কর রায়, নীরদ সি চৌধুরীর লেখা  পাঠ করার  অনুরোধ রাখব।

♦মনন স্রোত :=> আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...