Tuesday, October 9, 2018

সৌরব চক্রবর্ত্তী

পক্ষভুক্ত

প্রতিটি কবিতা , প্রবন্ধ , গল্প , উপন্যাসে রাজনীতি থাকা খুব স্বাভাবিক। রাজনীতি ছাড়া কোনো লেখা নেই। যে লেখক রাজনীতির বাইরে নিজেকে ভাবে সেও নিজের অলক্ষে রাজনীতির দেশে বিচরণ করে। সুতরাং আমি নিরপেক্ষ তা কখনও হয় না। পক্ষ নিতে হয়। এই অন্ধকার সময়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে আপনি কোন পক্ষভুক্ত। আপনার পক্ষভূক্তির কারণে বেঁচে যেতে পারে কোনো দলিতের প্রাণ কিংবা ধর্ষণ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে কোনো মেয়ে। সুতরাং আপনি বুঝুন কিংবা সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি , কেন লেখেন, কাদের জন্য লেখেন। আপনিই পারেন , দেশকে সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে। জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের পার্থক্য ঘুচিয়ে দিতে। এই প্রসঙ্গে আমার নিজের কয়েকটা কথা বলার আছে।

জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্যটাই ভারতভাগ ও ধর্ম বিদ্বেষের মূল কারণ।

জর্জ ওর ওয়েলের লেখা "এনিমাল ফার্ম",  কম্যুনিজম বিরোধী বই। সেই ওরওয়েল  জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেম নিয়ে বলেছেন, "জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেম যেন গুলিয়ে না যায়। দুইটি দুই ব্যপার, এবং বিপরীত ধর্মী। দেশপ্রেম অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় না। দেশপ্রেম দেশের জন্য নিজেকে উজার করে দেয়া, আর জাতীয়তাবাদ হল রাষ্ট্র খারাপ করলেও তাকে অন্ধভাবে সমর্থন দেয়া।" 

জাতীয়তাবাদ হল, বিদেশী কেউ দূরে থাক, রাষ্ট্র ব্যবস্থা যদি নিজের দেশের কোনো জাতি গোষ্ঠীকেও যখন নিস্পেষণে নামে, যখন দেশের কাজ তকমা দিয়ে, তাকে সমর্থন করা। জাতীয়তাবাদের কারণেই ভারত দু'টুকরো হয়ে দু'টি দেশ হয়েছে, গান্ধীজী খুন হয়েছেন, হিন্দুস্তান হিন্দুদের বলে ধরে নেয়া, বা নিজের দেশ শ্রেষ্ঠ, এই মনে করা। হিটলারের খুনে নাজি বাহিনী তৈরী করা হয়েছিল এই আদর্শেই।


অপরদিকে, দেশপ্রেম নিজের দেশকে ভালবাসা, উৎসর্গ করা, এবং তার জন্য অন্য কোনো দেশ, জাতিকে অত্যাচার করা নয়। জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকে গুলিয়ে দেয়ার খেলাটিই করে থাকেন জাতীয়তাবাদীরা। ন্যাশানালিজম আর পেট্রিয়টিসমের পার্থক্য এই যে, প্যাট্রিয়টিকদের জন্যই ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল, আর জাতীয়তাবাদের কারনেই দেশভাগ।

'দেশদ্রোহী' এবং 'দেশপ্রেমী' এই শব্দদুটিকে ঠিক এইভাবেই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে সাধারণের উপর। মত প্রকাশ যেখানে দমে যাচ্ছে সেখানে আপনি দেশপ্রেমী আর কথা বলা মানেই দেশদ্রোহী। এই পার্থক্য দূর করতে পারে একজন লেখক , কবি , গদ্যকার তার লেখার মাধ্যমে। লেখা শুধুমাত্র লেখা লেখা খেলা নয় , তা লেখকের মেরুদন্ড। আপনি একজন লেখক হয়ে পারেন না অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে , পারেননা তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। পক্ষভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তবেই জাতির মেরুদন্ড শক্ত হয়। একজন লেখক - কবি তাই করেন সবসময়। এই সত্য অমলিন। আসুন পথে নামি , পথেই হোক দেখা।



No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...