Wednesday, February 27, 2019

কল্যাণব্রত বসাক

দ্বান্দ্রিক সতী (১ম পর্ব)
       

তুমিও ভাই বেশি বুঝ!
হ্যাঁ বেশি বুঝি । তোরে কইছে ।
বেশি বুঝ না তো কি? ভদ্রমহিলা কি রকম শিক্ষিতা রুচিশীল সেটা এটা তো ওনার চলন বলনেই বোঝা যায়। আমার যতটুকু মনে পড়ছে কোনো দিন উগ্রমান পোষাকেও দেখিনি ওনাকে বললো অভিক স্বপনকে ।

আড্ডা আজ বেশ জমেছে, ঘন বসন্তে চাপা মনে, দক্ষিণা হাওয়ায় বসে পরের নিন্দা অভবনীয় আনন্দ দিচ্ছে। মশগুল সবাই । আজ  প্রায় দুইদিন ঐ একই কথা নিয়ে কথা কাটাকাটি ।

ওরাই বা করবে কি! শিক্ষিত বেকার, হাতে প্রচুর সময় বাজে কাজ বার করার মতো। তাই সকলে স্থানীয় কালীবাড়ির পুকুরপারে বসে আড্ডা মারে। কথায় আছে দুজন ইংরেজ একত্র হলে গড়ে ক্লাব, দুজন স্কচ একত্র হলে গড়ে ব্যাংক, দুজন জাপানি একত্র হলে গড়ে সিক্রেট সোসাইটি আর দুজন বাঙালি একত্র হলে করে দলাদলি  এবং একটা কালীবাড়ি। এটা অনেক আগেকার কথা বর্তমানে বিবর্তিত বাঙালির সাধারণ নূন্যতম কর্মসূচীর মধ্যে আরো একটা বিষয় এসেছে, তা হলো 'পর নিন্দা ' ' পরাচর্চা '। অনুপস্থিত ব্যাক্তির কেচ্ছা কেলাঙ্কারী ঘাটাঘাটি বেশ মুন্সিয়ানার সঙ্গেই বাঙালি করতে পারে এবং করে।
   
আড্ডাবাজ ছেলেগুলোর পরনিন্দা পরচর্চার কথা আসরে হচ্ছিলো পাড়ার মেয়ে রুমিকে নিয়ে। অবশ্য রুমি এখন আর মেয়ের পর্যায়ে নেই। একের বিবাহিত স্ত্রী, দুইয়ের জননী, একাধিকের প্রণয়িণী প্রেয়সী ছিলো বটে রুমি মেয়ে একদিন । চঞ্চলা, চপলা, সূনয়না-সূবসনা প্রেমময়ী রূপবতী। আনন্দিত গৌর কান্তি,  স্নিগ্ধ  স্বরূপিনী সুন্দরী বালিকা কুন্দনন্দিনী । ঈশ্বর তার সৃষ্টিতে উপকরণ উপাদান দান করতে কার্পণ্য করেন নি ।
সম্ভবতঃ স্রষ্টা তার বিভিন্ন কলা কৌশুলীদের নিয়ে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ কেবিনেট মিটিং করে এক অনবদ্য রমণী তৈরীর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত করছেন।

অত্যাধুনিক উন্নতমানের আকর্ষণীয় বডি স্ট্রাকচার করার জন্য দেব আকিটেক চীফ এক জিকিউটিব ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মার হাতে দায়িত্ব দিয়েছেন।দেব রাজ সভার চীফ সেক্রেটারি স্বয়ং ব্রক্ষ্মা। শোনা যায় সেই নিখুঁত কাঠামোর উপর মাংশল আবরণ গড়তে বিষ্ণুর হাত লাগিয়েছেন । বয়ঃসন্ধিতে যৌবনাগমন ঘটানোর জন্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের শ্রীমতি রতি দেবী দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু লগ্ন পর্যন্ত টিকসই রং ধরে রাখার জন্য স্রষ্টা কোন ডিসটেম্পার ব্যবহার করেছিলেন, জানা যায় নি, তবে কালার করেছেন অর্থ সচিব শ্রীমতি সরস্বতী  দেবী।এশিয়ান পেইন্টের সিলক কালার । প্রোমোটার ছিলেন মুরলি মোহন সেন এবং ওর স্ত্রী অনুরাধা সেন।

আসল কথা এই মহিলা যাচ্ছে তাই ,কোয়ালিটি বলতে ওনার কিছু নেই বললো শ্যামল । বক্তব্যের উপর শ্যামলের কত গভীর বিশ্বাস তা বোঝা গেল আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে ।
    
জবাবে মলয় বললো ব্যাপার কি ? তোর কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে আমরা  ঝগড়া করছি। সাধারণত কথা নিয়ে এতো ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ তো দেখছি না ।

আজ ব্যাপারটা নিয়ে বেশ একটু হৈ চৈ হচ্ছে। জল ঘোলানো হচ্ছে অনেক। সেন্ট আজ আসেনি। থাকলে আরো জমতো। ওইতো কাল কি সব ঘটনার জট আরো জড়িয়ে দিয়ে গেল। উপস্থিত পাঁচ বন্ধুর মধ্যে তিনজনই এক পক্ষ নেওয়াতে অন্য দুজনের কথা বললে সুবিধা করতে পারছেনা। তাও আবার দুজনের একজন নিরপেক্ষ। সে মলয়। স্বপন,শ্যামল  রকির এক কথা। রুমি রায়  চৌধুরী এককথায় বাজে,অসতি নষ্টা মহিলা। এদের সম্মিলিত প্রেসার ,মিডিয়াম  প্রেসার ,স্পিন আক্রমণের সামনে যুক্তি আধুনিক দৃষ্টি ভঙ্গির ব্যাট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভিক রুমি রায় চৌধুরী সতিত্বের উইকেট রক্ষায়।
    
 রুমি রায় চৌধুরী রং, রূপরস ,গন্ধ স্পর্শ যেমন চিরকাঙ্কিত,  সুকোমল, অনাস্বাদিত, অবিস্মনীয়,বিস্ময়কর, তেমনি তার জীবনের  যৌবনাগমনের  অভিষেক লগ্ন থেকে শুরু করে মনোরাজ্য বিস্তার এবং রাজ্যত্ব কালের এক ঘটনা বহুল ইতিহাস আছে। লিখিত নয় লিখিত হলে কয় খন্ডে প্রকাশক প্রকাশ করতেন বলা যায় না । তবে কথায় বললে খুব বেশী সময় যে নষ্ট হবে না সেটা নিশ্চিত ।

রুমি তখন ক্লাস 12 এ পড়ে । সাবালিকার চলমান অধিকার মনের দরজায় এসে টোকা দিচ্ছে । পড়াশুনায় খুব ভালো ! বিয়ে হয়নি। রুমির বাবা মুরলি মোহন সেন এখানকার এম.এস .বি অফিসার । বাবার সাথেই রুমি থাকতো। মেয়েদের স্কুলে পড়াতো রুমি । স্কুলের পোষাকেও একটা নাম আছে বটে ,তবে পোড় খাওয়া প্রেমিকরা নাম দিয়েছে 'হাউসসেন্টার ' নাম টি একদিকে যথার্থ। পুরুষ হৃদয়ে শূন্যতার ক্ষত সপ্টি হলে এই বালিকা বিদ্যালয়ে কোন না কোন বালিকার সহচর্যে  পূর্ণতা লাভ করে । আবার কত শত সংগঠিত  হৃদয়ে সাজানো স্বাদ স্বপ্ন ভেঙে থান থান হয়ে যায় ।


পরিচিতিঃ-
--------------------
কল্যাণব্রত বসাক মূল্যত ছোটগল্পকার। প্রাবন্ধিক,  তিনি কবিও। লেখকের জন্ম ৪টা অক্টোবর ১৯৭৫ইং দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে। ১৯৯৩ সাল থেকেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ। তারপর থেকেই বিভিন্ন ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত হন। শিক্ষাবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে গ্রেজুয়েশন শেষ করে কখনো কোনো চাকুরীর সাক্ষাৎকারমুখী হননি। নিজে কিছু করার প্রচেষ্টা লেখকের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। ছোটগল্প ও প্রবন্ধে লেখকের চিত্রকল্পের জন্য লেখক এক স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করেছেন। মনন স্রোতে লেখকের 'ফেনী ব্রিজ' ধারাবাহিক গল্পটি পাঠক মহলে দারুণ সমাদৃত হয়েছে। নতুন পাঠক যারা পাননি,  ওয়েবসাইটের পূর্ববতী মাসের সংখ্যাগুলো পড়তে পারেন

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...