Monday, April 27, 2020

প্রীতম শীল

বন্ধুত্বে করোনা ভাইরাস


 যে বন্ধুটার সাথে আজ চার বছর কথা বলিনা, সকাল সকাল তার ফোন। নাম্বার টা সেভ করা ছিল, সে আমার প্রিয় বন্ধু  স্কুল লাইফের। তবে দ্বাদশ  শ্রেনিতে চরম ঝগড়া,তার পর আমি কলেজে আর ও ফেল করে চেন্নাই। ফোনটা রিসিভ করবো ভেবে ধরতে যাবো কেটে দিলো। খানিক বাদে আবার রিং বাজলো।
হ্যালো--- কে বলছেন?
হ্যালো কথা বলছেন না কেন? হ্যালো হ্যালো
--আমি বলছি?
-- আমি কে?
-- আমি বাসুদেব।
-- কোন বাসুদেব?
-- যার সাথে তোর ঝগড়া, বছর চারেক আগে।
-- হুম বল,চিনতে পেরেছি।কেন ফোন দিলি?
-- কেমন আছিস?
-- হুম ভালো। তা বল কেন ফোন দিলি?
-- এমনি কেনো ফোন দিতে পারিনা?
-- না পারিসনা। তোর সাথে কোনো কথা নেই।
ও এবার কাঁদতে লালগো। আমি প্রথমে তেমন মর্মাহত হইনি কারন দুনিয়াতে শত্রুর কান্না সবার ভালো লাগে। 
-- এতো ভনিতা করিসনাতো,  আর মেয়েদের মতো এতো কাঁদছিস কেন?
-- জানিস কাল রাত থেকে আমার কিছুই ভালো লাগছেনা। আমার জ্বর সর্দি কাশি এই সব উপসর্গ গুলো দেখা দিয়েছে। আমার রুমের সবাই আমাকে আলাদা করে দিয়েছে। আমি বন্ধ একটা রুমে একাই বসে আসি,  আমার কাছে কেউ আসছেনা। রুমা কে ফোন করে বললাম ও শোনার পর বললো আমি কি করবো ডাক্তার দেখাও। আমি তো আর ডাক্তার নই, যে উপদেশ বা ঔষদ দেবো। এই সব বলে ফোনটা রেখে দিলো।
আমি এবার উঠে বসলাম,শুয়ে শুয়ে কথা বলছিলাম বাসুদেবের সাথে।
-- তো খাওয়া দাওয়া করলি কিছু?
-- নারে, এখানে দোকান ঘাট সব বন্ধ।
-- তো কাউকে বল এনে দিতে। 
-- ওরা সবাই আমার থেকে দুরে।  কয়েকটাকে ফোন করেছি বলছে একটু দেরি হবে।
-- ও, টাকা আছে তোর কাছে?
-- অল্প কিছু আছে।
-- তোর পে.টি.এম নাম্বার দে, দিচ্ছি।
--বাসু চিৎকার করে কেঁদে বললো, বন্ধু সরিরে সরি। আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম, তুই ঠিক বলেছিস বিপদে বোঝা যায় কে আপন কে পর।
কি না করেছি রুমার জন্য, তোর মতো বন্ধুর মনে কষ্ট দিয়েছি। চেন্নাই থেকে এতো টাকা পাঠালাম। আর আজ----
-- বাদ দে,, এখন নাম্বার টা দে?
-- হুম দিচ্ছি।
পৃথিবী আজ এতো নিষ্টুর হয়ে গেছে,  একটা ভাইরাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সব।সত্যি পৃথিবীতে সম্পর্ক গুলি যেন আজ কাঁচের ঘরে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। আর মানব দুর থেকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে হাজারো সম্পর্ক।
কথা গুলো ভাবতেই,  চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়ছে টপটপ জল।
-- হ্যালো বল,
-- নাম্বার টা পেলি?
-- হুম, কিছুসময়ের মধ্যে টাকা দিচ্ছি।
তুই চিন্তা করিসনা। তোর কিচ্ছু হয়নি, আরে এইগুলো সিজনাল উপসর্গ। আর দেখ একটা ভাইরাস কখোনো বন্ধুত্বের মাঝে আসতে পারেইনা। 
-- বন্ধুরে,,,,,,,,,,
-- আরে আরে আর কাঁদিসনা পাগলা। তুই ভালো হয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।
-- হুম এসেই তোর সাথে পাড়াগাঁয়ের লেইকে মাছ ধরবো। বর্ষার জলে ফুটবল খেলবো। কালো গরুটা নিয়ে আবার মাঠে যাবো। ছুঁড়ি দিয়ে আম কেঁটে খাবো।
-- আমি তোকে কাঁদা মাখিয়ে দৌড় দেবো। তুই আমার পিছে পিছে ছুঁটবি। না ধরতে পেড়ে গালি দিবি। 
-- সোমা আর ঝুমা কে নিয়ে কতো কথা বলবো। না থাক আমাদের মাঝে আর কোনো মেয়েকে আসতে দেবোনা।
-- হা হা হা।
টাকা পাঠালাম পাঁচ হাজার। কিন্তু কোনো রিপ্লাই পেলাম না।  বাসুদেবের মোবাইল টাও বন্ধ দুদিন হয়ে গেলো। সাত দিন পর বিকেলে একটা ফোন এল।
-- হ্যালো কিরে, তোকেতো টাকা পাঠালাম। পরে আর কোনো খবর পেলাম না যে
-- তোর সাথে আর বোধ হয় দেখা হবেনারে।
-- এই কি বলছিস এই সব?
-- আমার করোনা পজেটিভ এসেছে।ডাক্তার আমাকে আশঙ্কা যুক্ত ভেন্টিলেশানে রেখেছে
আমার শ্বাস ভারী হয়ে আসছে,  কথা বলতে পারছিনা। ডাক্তার কে লুকিয়ে তোকে ফোন দিলাম। ভালো থাকিস,  আর আমায় ক্ষমা করিস।
-- এই বন্ধু তোর উপর আমার কোনো অভিমান নেই। কথা বল,,, হ্যালো হ্যালো হ্যালো।
ফোন টা কেটে গেলো আমি আবার ফোন দিলাম।  রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না।

BRAKING NEWS:- এই মাত্র খবর পাওয়া গেলো, করোনা তৃতীয় মৃত বহি:রাজ্যের এক বাসিন্দার। বিশেষ খবর সুত্রে জানা গেছে। এই রাজ্যে বছর চারেক আগে ত্রিপুরা থেকে কাজের খোঁজে এসেছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়াতে ওর মৃত লাশটিও যাচ্ছেনা পরিবারের হাতে।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...