Monday, April 27, 2020

সুধীর দাস

অন্ধকার রাত্রি


রাত্রি অনেক হল । প্রায় দশটা। সময় বয়ে যায় । ঘড়ির কাঁটা টিকটিক শব্দে এগিয়ে চলল কিন্তু রহিম এখনো আসছে না এতে করে যেন রিনার বুকটা ভয়ে ধড়ফড় করছে । বাইরে রাস্তাঘাট , দোকানপাট সবকিছুই বন্ধ । কি যেন একটা মারনব্যাধী কোরোনা ভাইরাসের আবির্ভাব হল হাজার হাজার মানুষ ভয়ে ভয়ে জীবন কাটাচ্ছে, সরকার এই নিয়ে কারফিউ জারি করেছে 21 দিনের জন্য। 

রিনা সোফায় বসে রহিমের কথা ভাবছে আর অনুপের মাথায় হাত বুলাচ্ছে । অনুপের বয়স ৭ বছর । অনুপও তার বাবার অপেক্ষায় ভাত না খেয়ে বসে আছে ।  রহিম একজন সাধারন রিক্সাচালক । ঘরের অন্ন শেষ হয়ে যাওয়ায় সে কিছু অর্থ উপার্জনের আশায় বেড়িয়েছে । কিন্তু আসতে দেরী হচ্ছে দেখে মা ও ছেলে দুজনেই খুব চিন্তিত। রাত যেন শেষ হয় না । মা ছেলের চিন্তার ও শেষ নেই।

রাস্তামুখো বাড়ি ।রাস্তা দিয়ে যখনই কেউ সাইকেল দিয়ে বেল বাজিয়ে যায় তখনি অনুপের দরজা খুলে দেখে তার বাবা এসেছে কিনা। ঘড়ির কাটা এগিয়ে চলছে রাত্রিও গভীর হতে লাগল । ঘড়িতে তখন এগারটা । রহিমকে আসতে না দেখে অচেনা গভীর রাতে রিনা অনুপকে ঘরে রেখে বেড়িয়ে পড়ল রহিমের খুজে।

রিনা যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই তার  টেনশনে মুখ ভার হয়ে যাচ্ছে । কিছু দূরে যেতেই তার নজরে পড়ল রাস্তার পাশে যেন কি একটা পড়ে আছে কর্দমাক্ত রক্তাক্ত অবস্থায় । দূর থেকে দেখে রিনা ভয়ে ভয়ে এগোতে থাকে  ।কর্দমাক্ত ব্যক্তিটির কাছে গিয়ে ব্যক্তিটির মুখ দেখে যেন রিনা হতবিম্বিত হয়ে রইল । এ যে আর কেউ নয় তার স্বামী রহিম । সে রক্তাক্ত কর্দমাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকে সাহায্যের জন্য । কিন্তু কারফিউ এর সময় গভীর রাতে শূন্য জনবিহীন রাস্তা তার উপর ঘন অন্ধকার যেন অমাবস্যার রাত তার ও তার পরিবারের জীবনকে ধ্বংস করতে নেমেছে এই ধরনীতে। রিনা কিছুই ভাবতে পারছে না যে সে কি করবে। সে রাস্তার এদিক ওদিক তাকাতে লাগল  আর অশ্রুসজল চোখে রহিমের দেহটাকে  কোলে নিয়ে আর্তনাদ করে চিৎকার করতে শুরু করল । তার এই আর্তনাদে আমাবস্যার অন্ধকারও তার সঙ্গে একাকার হয়ে রইল। সে চোখে জল বুক ফাটা কান্না নিয়ে আর্তনাদে চিৎকার বলতে লাগল তার "তুমি যে বলেছিলে রহিম আমাকে ছেড়ে যাবেনা কোনোদিন । যতই ঝড় আসুক তুফান আসুক থাকবে পাশে চিরটাকাল । " আজ তার কি হল? সব কি তাহলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছিল ?

সে তবুও বুকে বল নিয়ে রহিমকে রিক্সায় ঝাপটে ধরে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায় । হাসপাতালে ডাক্তার রহিমকে মৃত বলে ঘোষনা করে এতে যেন রিনা মানসিক আঘাত পেয়ে ধীরে ধীরে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পেতে সে পাগল হয়ে যায় । এই ছিল মনে হয় তার পরিবারের ভবিতব্য।
                         

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...