Monday, April 27, 2020

মিঠুন দেবনাথ

অবভাস

যতবারই ভাবি প্রতিভাস অথবা স্বয়ং সৎ বস্তু  নিয়ে কিছু লিখব সেটা অবভাসেই রূপ পায় | তাই দ্বন্দ্বের দর্শন বোধ হয় ততটা মন্দ নয় , মন্দ হচ্ছে এর উপর আমাদের অপব্যখ্যা | কারণ আমরা যতই স্বপ্নের বাগানে বিচরণ করি না কেন বাঁচতে গেলে আমাদের কাছে বাস্তব জগৎটাই প্রয়োজন ; কাল্পনিক চিন্তাধারা কেবল ক্ষণিকের মানসিক অবসাদ ও প্রশান্তি ব্যতীত কিছুই দেয় না | কল্পনায় মানুষ বার বার জিতলেও মানুষ তার বাস্তবের কাছে প্রত্যহ হেরে যায় ! বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিদ ডারউইনের বিবর্তন বাদানুসারে এই বাস্তব জগতে কেবল মাত্র যোগ্যতমেরই বাঁচার অধিকার আছে | বিবর্তন বাদের এই বক্তব্যটি কেবল শারীরিক ক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছিল | তবে বর্তমানে এই সংজ্ঞাটির রূপ পাল্টে গেছে ; সেটি হতে পারে বৌদ্ধিক শক্তি , শারীরিক ক্ষমতা কিংবা অর্থ-সম্পদের বল | বর্তমানে বেঁচে থাকার জন্য যোগ্যতা অর্জনে এই তিনটি বিষয় লাভের জন্যই সমগ্র মানব সমাজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপর ভর করে এক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে প্রকৃতির উপর ভয়ানক তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে | যার ফল স্বরূপ ক্লান্ত প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে বার বার আমাদের সামনে অগ্নিশর্মা রূপে ধরা দিচ্ছে | কোথাও সুনামী , কোথাও ভূমিকম্প কোথাও সাইক্লোন-টর্নেডো কোথাও আবার ভয়ঙ্কর বন্যা-মহামারী | বার বার এমন বাস্তব সত্য মানুষের সামনে প্রতিভাত হওয়ার পরও মানুষ একে অপরকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে | কেউ রাজনীতিক ভাবে , কেউ অরাজনীতিক ভাবে - যে যেভাবে পারছে দোষ দিয়ে যাচ্ছে | কেউই নিজ কাঁধে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয় , কেউ হৃদয় থেকে এটা বিশ্বাস করতে পারছে না যে প্রকৃতি ধ্বংসে আমি নিজেই দায়ী | সুতরাং দ্বন্দ্বটা প্রবহমান... 
       এটা আমরা একবারও বুঝতে চাইছি না যে , খারাপ লোক আছে বলেই সমাজে ভালো মানুষের এত দাম | সেই হিসেবে প্রকৃতির উপর ভয়ঙ্কর তান্ডব চালিয়ে কোটি কোটি অসহায় মানুষকে পদতলে দাবিয়ে সম্পদ অর্জন করে কার প্রতি রাজত্ব দেখানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছি আমরা ? যদি প্রজা ঠকানো কিংবা প্রজা হত্যাই আমাদের মূলমন্ত্র হয় তবে রাজত্ব কার উপর করব ? মানুষ তার নিজের কাছে ঠিক কতটা অসহায় সেটা প্রকৃতি আজ মানুষকে বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছে ... তারপরও আমরা থামছি না | যেখানে একটা ভাইরাসকে মোকাবেলায় সারা বিশ্বের ধর্ম-দর্শন , জ্ঞান-বিজ্ঞান সব কোনঠাসা হয়ে গেছে সেখানে মজুত দারের আনন্দ ঠিক কোথায় ? কার জন্য মজুত করছি আমরা ! যদি বিশ্বটাই পাল্টে যায় , যদি নীল-সবুজে ভরা গোলকটি  চিরদিনের জন্য মুছে যায় , যদি দি লস্ট জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয় , তবে কাকে ঠকিয়ে কার কাছে ডাবল দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করব ? কেন করব ? ভেবেছিলাম পৃথিবীটা একটা উন্মুক্ত ভাসমান গোলক , এর আকাশ বাতাস সব কিছুই উদার ... কিন্তু না সেই ভাবনাতেও আজ দ্বন্দ্ব লেগে গেল...! তবে কি পৃথিবী আমার ড্রয়িং রুমের লকারটির মতোই ! যদি লকারটির মতো না হত তবে তার সর্ব রাস্তায় আজ তালা পড়ল কেন ? ভাবায় না বুঝি ? দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় না বুঝি ? তারপরও মজুতের চিন্তাধারা ? আজ একসাথে বাঁচার লড়াইয়ে যদি একসাথে মরতেও হয় তবে এখনও প্রস্তুত নন বুঝি ?
     বিশ্ব আজ বাক্সবন্দী , কীট-পতঙ্গের মতো মানুষ রাস্তায় ঘুরছে , মাইলের পর মাইল চলতে চলতে অনাহারে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটছে... তারপরও মজুতদারি ? তারপরও কৃপনতা ? খুলে দিন হৃদয়ের দ্বার , খুলে দিন বস্তার মুখ...সবাই খেয়ে বাঁচুক...বাঁচবো তো একসাথে বাঁচবো , মরবো তো একসাথে মরবো...কারণ বিবেকের আদালতে যদি এই বিপর্যয়ের বিচার হয় তাহলে প্রথমেই অপরাধী হিসাবে আমি-আপনি উভয়কেই পাশাপাশি দেখবো...কেউ আগেও নয় , পিছেও নয়।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...