ড. মানস মজুমদার লোকসংস্কৃতির আলোচনায় বলেছে
"লোক সংস্কৃতির আলোচনায় 'লোক' বলতে কোন একজন মানুষকে বোঝায় না। বোঝায় এমন এক দল মানুষকে যারা সংহত একটি সমাজের বাসিন্দা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি একটি ভু-খন্ডে তারা বসবাস করে, তাদের আর্থিক কাঠামো একই রকম, জন্ম থেকে মৃত্যু এবং বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলে একই ধরনের বিশ্বাস-সংস্কার, আচার-আচরণ, প্রথা-পদ্ধতি, উৎসব অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।"
"লোক সংস্কৃতির আলোচনায় 'লোক' বলতে কোন একজন মানুষকে বোঝায় না। বোঝায় এমন এক দল মানুষকে যারা সংহত একটি সমাজের বাসিন্দা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি একটি ভু-খন্ডে তারা বসবাস করে, তাদের আর্থিক কাঠামো একই রকম, জন্ম থেকে মৃত্যু এবং বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলে একই ধরনের বিশ্বাস-সংস্কার, আচার-আচরণ, প্রথা-পদ্ধতি, উৎসব অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।"
লোক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য :-
- লোক সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে পল্লীজীবন বা গ্রামীন জীবন কথার চিত্রে ধরা পড়ে। কৃষিসমাজই এর প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র।
- সংহত বা গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ এর অবলম্বন।
- লোকসংস্কৃতির স্রষ্টা সাধারণ সমষ্টি বা গোষ্ঠী বন্ধ মানুষ।
- লোকসংস্কৃতির সৃষ্টি সাহিত্য মূলত নিরক্ষর মানুষের সৃষ্টি। এই সাহিত্য অলিখিত।
- লোক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোনো রচয়িতার বা স্রষ্ট নাম পাওয়া যায় না।
- লোকসংস্কৃতি মাধ্যম মৌখিক।
- লোকসংস্কৃতি মূলত স্মৃতি ও প্রতি নির্ভর।
- লোকসংস্কৃতি প্রাণের তাগিদে স্বতস্ফূর্ত রচনা।
- সরল, অকৃত্রিম ও আটপৌরে সৃষ্টি এটি।
- লোক সংস্কৃত মূলত ঐতিহ্য নির্ভর।
- লোক সংস্কৃতি বিবর্তনধর্মী এবং নমনীয়।
শিষ্ট সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য :-
- শিষ্ট সংস্কৃতি শিক্ষিত, শিষ্ট সমাজের ক্ষেত্র।
- শ্লথ সংহত সমাজে এর বিকাশ লক্ষনীয়।
- একক বা ব্যাক্তিপ্রতিভা উচ্চ সংস্কৃতির স্রষ্টা।
- এই সংস্কৃতির রূপটি হয় লিখি।
- শিষ্ট সংস্কৃতির রচয়িতা ও শ্রষ্ঠার নাম পাওয়া যায়।
- কোনো নির্দিষ্ট রচনা, পুঁথি, পুস্তক এর মধ্য দিয়ে এই সংস্কৃতির প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।
- উচ্চ সংস্কৃতির প্রকাশ লিপি বা মুদ্রন নির্ভর।
- শিষ্ট সংস্কৃতি প্রযত্ন নির্ভর সৃষ্টি।
- শিষ্ট সংস্কৃতি মূলত বৈদগ্ধময় রচনা।
- উচ্চ সংস্কৃতি চলমান সমাজ ও জীবন নির্ভর বলেই এই সংস্কৃতির সর্বদা পরিবর্তনশীল।
লোকসংস্কৃতির শ্রেনীবিভাগ বা উপাদান :-
যে কোন সমাজ সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পরিচয় হল- শিল্প-ভাস্কর্য সাহিত্য। একথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে সাহিত্যের মাধ্যমেই সংস্কৃতির স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়ে থাকে। সেখানে উচ্চ সংস্কৃতির সঙ্গে নিন্ম সংস্কৃতির এক সুস্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তাই অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় যে, একটা অন্ত্যজ মানুষের জীবন যাত্রার সাথে লোকসংস্কৃতির উপাদান গুলি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সেই লোক সংস্কৃতির উপাদান গুলিকে আমরা মোটামুটি নিম্নে আলোচনা করব-বাককেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি :-
লোক সংস্কৃতির এই ধারাটি মৌখিক এবং ঐতিহ্য নির্ভর। যা দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। লোক মানুষেরা গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে তথ্য সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করে, সমাজে বসবাস করা কালিন তারা দৈনন্দিন জীবনে কাজের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা লাভ করে সেই অভিজ্ঞতার বাস্তব এবং সর্ব্বৈ সত্য রূপ বাক্ময় হয়ে তাদের কর্ম পদ্ধতির মধ্য দিয়ে বাইরে প্রকাশিত হয়।লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী মৌখিক সত্তাটি ধরা পড়ে এই বাককেন্দ্রিক বা কথাকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির মধ্যে। সাধারণত, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, লোককথা, লোকগীতি, মন্ত্র, গীতিকা, লোকনাট্যের সংলাপ অংশ এই শাখার অন্তর্গত।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় -
"ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়া
বর্গী এলো দে
বুলবুলিতে ধান খেয়ে
খাজনা দেবো কিসে"
দোলনায় ঘুমপাড়াতে গিয়ে মায়ের মুখের এই যে ছড়া, কিংবা, একটুখানি মামা, গা বোঝাই জামা' (পেঁয়াজ) ধাঁধাটি অথবা 'জন জামাই ভাগ্না, তিন নয় আপনা'– প্রবাদটি এই বাককেন্দ্রিক শ্রেণীর উদাহরণ।
বস্তুকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি :-
লোক সমাজের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত উপাদানকেই বস্তুকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির উপাদানের পর্যায়ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সেখানে বাড়ি ঘর, খাদ্য, পানীয়, পোশাক পরিচ্ছদ, কুবিসরঞ্জাম, শিকার দ্রব্য আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, যানবাহন প্রভৃতির পরিচয় উঠে আসে।একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষেরা একবিশেষ ধরনের উপাদানের মাধ্যমে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। পাহাড়ি অঞ্চল আর সমতল ভূমির পার্থক্য ও ব্যবহৃত দ্রব্যাদির দ্বারা সম্পৃষ্ট হয়ে ওঠে বাংলার লোক সমাজে খাদ্য পানীয়ের মধ্যে রয়েছে ভাত, ডাল, রুটি, চিড়ে, মুড়ি, মই, নাড়, পিঠে, দুধ, ঘোল, খেজুর, তালের রস, খেজুরের গুড় ইত্যাদি। অঞ্চল ভেদে এই লোক মানুষের খাদ্যেরও পরিবর্তন ঘটে।
No comments:
Post a Comment