Monday, June 28, 2021

অভীককুমার দে

চিরকুট 

মহামারী। মানুষ দেখলেই মানুষের ভয়। বহুদিন পথে নামেনি কেউ। ক্যালেন্ডার থেকে অনির্দিষ্ট বছর এবং তারিখ অজান্তেই হারিয়ে গেছে। 

সূর্যের তেজ এখন প্রখর। নদীগুলি শুকিয়ে কঙ্কাল। মাটি শরীরে জীবাশ্মের রাজত্ব। দৃষ্টির সীমানায় যা কিছু চোখে পড়ে সবই খাবার, জীবিত কিংবা মৃত, তাজা হোক বা পচা। প্রথম প্রথম এক বাড়ির চোখ অন্য বাড়ির উপর। কেউ বেরিয়ে এলে মুহূর্তেই হারিয়ে গেছে। কোনো এক বাড়ির সদস্য চুপিসারে মুছে নিয়েছিল ঠোঁট। তারপর, ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতর, ঘরের দরজাও বন্ধ হয়ে গেছে। পরিষেবা বলতে, বাতাসে সামান্য অক্সিজেন, তা-ও অস্থায়ী। 

মানুষ বলতে, কারোর ভেতরে কোনও উপাদান আর অবশিষ্ট নেই। আরো একদিন বেঁচে থাকার দুঃসাহস করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে শিকারী। এক ঝটকায় কেড়ে নিচ্ছে হৃৎপিণ্ড। টেনে ছিঁড়ে ঢোক গিলছে। কত দিনের ক্ষুধা কে জানে ! চিবোতে চিবোতেই তেষ্টা পেয়ে যাচ্ছে। রক্তই জল। শিরায় ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে দ্বিধা নেই।

শকুনের মতোই ওত পেতে আছে চোখ। খাবার খুঁজতে খুঁজতে শিকারীও খাবার হয়ে যাচ্ছে একসময়। কোথাও কোনও শব্দ নেই। কোনো কোনো ঘরে গুনগুন শোনা গেলেও, কিছুদিন পর সব চুপ। গ্রাম কিংবা শহর, পৃথিবীর ঘরে ঘরে, মানুষ পচা গন্ধে ভারি হয়ে গেছে বাতাস। স্থির চিত্র। 

পায়ের ছাপ কমে এসেছে পথে। শেষদিন, সর্বশেষ উপোসী শকুনটিকে মরে যেতে দেখে প্রাণশূন্য পৃথিবী ভীষণ কেঁপে উঠবে। কাঁদতে কাঁদতে হারিয়ে যাবে মহাশূন্যে। এই পৃথিবী নিঃশব্দ হবার আগে অথবা শিকার হবার আগেই বাসুদেবের এই চিরকুট, রেখে গেলাম। 

মন বলে, এই পৃথিবী প্রাণের নবীকরণ জানে। অন্য কোনো আদলে আবার হয়তো জেগে উঠবে প্রাণী। আবার খোঁজ হবে। খবর হবে। গবেষণা হবে, টিকে থাকার জন্য। না হয়, আরেকটি চিরকুট আবার রেখে যাবে কেউ, পুনরাবৃত্তির আগে।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...