Thursday, August 13, 2020

স্পৃহা ভট্টাচার্য্য

বেশি না, সেই গত বছরের রাখী পূর্ণিমার দিনের কথা। এই দিনটির জন্য প্রতিবছরের মত সে বছরও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু এই বছর আমি আর আমার কিছু বান্ধবীরা মিলে এই দিনটাকে অন্যান্য বছরের মতো এঁকঘেয়ে ভাবে নয় বরং একটু অন্যরকম ভাবে পালন করতে চেয়েছিলাম।
অবশেষে চলে এলো রাখী পূর্নিমা।
আমাদের পরিকল্পনা ছিল রাখীর দিন আমাদের সীমান্তরক্ষী ভাইদের রাখি পড়াবো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে বাড়িতে ভাইদের রাখী পড়িয়ে রওনা দিলাম আমরা সীমান্তের উদ্দেশ্যে। যথারীতি নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে গিয়ে তাদের হাতে রাখী পরালাম। সেই সময় তাদের খুশি আর চোখের কোণে জল দেখে আমরা ঠিক করে ফেললাম যে এখন থেকে প্রতিবছর আমরা তাদের রাখী পরাতে আসবো। তারাও আমাদের রাখী নিয়ে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি, উপহার হিসাবে দিয়েছে আমাদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি যা ছিল আমাদের অনেক বড় পাওনা।
কিছুটা সময় তাদের সাথে ব্যতীত করার পর আমরা আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ফেরার পথে জল তেষ্টা পাওয়ায় একটি দোকানে জল কিনতে গিয়ে হঠাৎ দেখি দোকানের সামনে বসে একটি ছোট্ট ছেলে কাদছে। ছেলেটির চোখের দিকে তাকাতেই কেমন যেনো একটা মায়া লেগে গেল। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম "কিরে তোর নাম কি? আর তুই এখানে বসে কাদছিস কেন?" ছেলেটি চুপ করে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো "দিদি আমাকে একটা রাখী দেবে?" ছোট্ট ছেলের আবদার ফেলতে পারলাম না। বললাম "কেন দেবোনা!? অবশ্যই দেবো।" এই বলে দোকান থেকে আমি তার জন্য একটা চকলেট কিনে তাকে দিতেই সে আমার হাত থেকে একটা রাখী এবং চকলেট টা কেড়ে নিয়ে দৌরোতে শুরু করলো। কৌতুহলবশত আমিও পেছন পেছন হেঁটে কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম সে একটা ছোট্ট ভাঙ্গাচোরা ঘরে প্রবেশ করে। চারিদিকের পরিবেশটা দেখে বুঝতে পেরেছিলাম সেটা মুসলমানদের বস্তি এলাকা। আমি তার ঘরের দরজা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম তার একটা ছোট্ট বোনকে সে তার হাতের চকলেট টা দিয়ে রাখিটা পড়িয়ে দিল। এই দৃশ্য আমায় মুগ্ধ করে দিল, চোখে জল চলে এলো এটা দেখে। আমি কিছু না বলেই বেড়িয়ে চলে এলাম আর মনে মনে এই ছোট্ট শিশুটির তার বোনের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে অবাক হয়েছিলাম।
কিন্তু মনে মনে প্রশ্ন ছিল কেন সে এইভাবে পালিয়ে গেল আমার কাছ থেকে? আমি আবার সেই দোকানে গিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন "দিদি আপনি ওই ছেলেটাকে রাখি কেন দিলেন? ওরা মুসলমান। ওদের কে রাখি বিক্রি করবে?" 
আমি বুঝতে পারলাম ধর্মকে রাখির মত পবিত্র বন্ধনের সাথে জড়িয়েছে এই সমাজ। মনে মনে ছোট্ট ছেলেটির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল।
কিন্তু কিছুটা আনন্দিতও ছিলাম কারণ আমার এই ছোট্ট একটি রাখি ছেলেটি আর ছেলেটির ছোট্ট বোনটির মুখে হাসি এনে দিয়েছিল।
ওই কথায় আছেনা "God is great"। সেদিন হয়তো তাই ভগবান আমায় ছোট্ট ছেলেটির সাথে দেখা করিয়েছিল।
আবার সেদিন একটিবার প্রমান হয়ে গেল 'যার যখন যেটা পাওয়ার সে সেটা যেকোনো মূল্যেই পায়।'

No comments:

Post a Comment

অনুপম রায়

সতেরো বছর পর সতেরো বছর পর কি অবসাদ সেটা ধারণা না থাকাই ভালো। যাদের তুমি রেখে গেছ আমাদের হয়ে, তারা এখন উন্মাদ শহরের এক কোণে বসে শ্বাস নেয়। জ...