Thursday, August 13, 2020

প্রণব দাস

বন্ধন
                  

দিনটা সোমবার। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে হবে ভাব। আজ সকাল থেকেই প্রচন্ড গরম। মনে হচ্ছে সূর্য যেন আমার উপরেই চোখ রেখেছে। যে জায়গায় একবার স্নান করতাম এখন পাঁচবার স্নান করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। তবুও যেন গরম যায় কি যায়না। বিকেল চারটা থেকে ইংরেজি স্যারের বাড়ি। মিনিট দশেক আগে আমি বাড়ি থেকে বের হই। এই গরমের মধ্যে আড্ডা দেওয়া আমার একদম পছন্দ নয়। এক মিনিট আড্ডা দেওয়া থেকে এক মিনিট জলে ভিজে থাকলে যেন শরীরটা শান্তি পায়। তা যাইহোক,তারমধ্যে আমি আবার টি-শার্ট পরিনা। এই গরমে শরীর স্বেদে ভিজে গেলেও আমি ফুলহাতা শার্ট পরে বাড়ির বাইরে যাই। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখা জন সিনার মত বডি বানাবো। তা আর হয় কৈ! এখন আমি ক্লাস ইলেভেনে। সেই ক্লাস নাইন থেকে আমার ওজন পঁয়তাল্লিশ থেকে বারেও না কমেও না। এই সেই করতে করতে নিজের হারকুলিস সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্যারের বাড়ি যাবো বলে। মাঝ রাস্তায় ভৈরব টিলার গলিতে যেতেই ডাক পড়ল,,
-'অভী।'
আমি ভাবলাম এই সময়ে আবার কে ডাকলো। পেছনে ফিরে আমি সাইকেলটা থামিয়ে দেখলাম মৌ ডাক দিয়েছে। সামনে যেতেই,
-'কিরে কিছু ভুলে যাচ্ছিস নাকি?'
-'মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?
আমি ভুলে যাচ্ছি এমন কি হতে পারে!'
-'মনে করে দেখ কি ভুলেছিস?'

         ঠোঁটে আঙুল চেপে ভাবতে লাগলাম কি ভুলছি আমি! তাড়াহুড়োর মধ্যে বললাম-
-'আমার কিছু মনে পড়ছে না। এবার তাড়াতাড়ি বলে ফেল কি ভুলছি আমি?'
-'আমি তোকে বলতে পারি তবে একটি শর্তে।'
-'শর্ত!'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ শর্ত।'
-'কেমন শর্ত শুনি?'
-'এটা শোনানো যাবে না, তার জন্য তোকে একটা কাজ করতে হবে।'
-'আচ্ছা বল কি করব?'
-' আগে দুচোখ বন্ধ কর।'
-'আচ্ছা ঠিক আছে বন্ধ করছি।'

ভাবতে লাগলাম হঠাৎ চোখ বন্ধ করার কথা বলল কেন মৌ! তবে যাই হোক মৌয়ের কথায় আমি দুচোখ বন্ধ করি। ঠিক তারপরই যখন মৌ আমাকে বলল-
-'এখন তোকে আরেকটা কাজ করতে হবে। তারপর পরই দেখবি সারপ্রাইজ।'

আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে বললাম,
-'আচ্ছা তাড়াতাড়ি বল কি করতে হবে? এদিকে আবার আমার স্যারের বাড়ি দেরি হয়ে যাচ্ছে।'
-'তোর হাতটা উপরে তোল তারপর বলছি।'
-কেনরে,আবার হাত উপরে তুলবো কেন?'

         আমি ঠিক তাই করলাম। হাতটা উপরে তুলে মৌয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলাম। ততক্ষণে আমি অনুমান করে নিতে পেরেছিলাম যে আজতো রাখি পূর্ণিমা। মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দ সঞ্চার হচ্ছিল। মৌ আমার হাতে রাখি পরিয়ে দেয়। আনন্দে ছটফট আমি খুব খুশি। ঐ দিকে স্যারের বাড়ির দেরি হয়ে যাচ্ছে। এক মিনিট লেট হলেই স্যারের কথা শুনতে হয়। তার জন্য দেরি করলাম না। রাখি নিয়েই আমি চললাম স্যারের বাড়ির দিকে।
 
            আমাদের আগে ছিল গার্লস স্কুলের ব্যাচ। তাদের পড়ার শেষে এখন আমাদের পড়া শুরু হবে। রুমে ঢুকতেই বন্ধু বিদ্যুৎ আমাকে ডেকে বলল যে কে যেন আমাকে ডাকছে। আমি ওর কথা শুনে আবার গেটের বাইরে যাই। দেখলাম মধুরিমা ও প্রীতমা আমার জন্য রাখি নিয়ে অপেক্ষা করছে। সামনে যেতেই ওরা আমার হাতে রাখি পরিয়ে দেয়। বোনদের জন্য কোনো গিফটও নিতে পারলাম না। কারণ রাখি পূর্ণিমা নিয়ে পূর্বপ্রস্তুতি আমার কিছুই নেই। তবুও ছিল বোনদের জন্য হাজার ভালোবাসা।

         সত্যি যেন তাই, কিছু সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় কথা বলার অভাবে আর কিছু সম্পর্ক রয়ে যায় ভালোবাসার পরিপূর্ণতায়। ভাই-বোনের এই সুতোর বন্ধন যেন রাতের আকাশের ঐ পূর্ণিমার চাঁদের মতো দামি। বোনদের মুখের সেই মিষ্টি হাসিটা দেখে আমিও সেদিন ডুবেছিলাম অনন্তে । শুধু ভাই বোনের অদ্ভুত ভালোবাসার অনন্তে। সে অপূর্ব অনুভূতি এখনো আমার হৃদয়ে কড়া নাড়ে। সেদিন বোনদের চোখে ভেসে উঠছিল সেই লিরিক্যাল গানটা -

     "মেরা ভাই তু,মেরা ভাই তু।"

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...