Tuesday, October 20, 2020
সম্পাদকীয়
সজীব পাল [ ধারাবাহিক]
(শেষ পর্ব)
এক রজনী দিবস কত কোটি বছর ঢেকে দেয় তার মায়ায়।আলোহীন,প্রাণহীন মানুষগুলো ভেসে ওঠে ।ওঠে না কেবল তারাই যারা এক পৃথিবী আলো নিয়ে বুকের গহীনে আমরণ বাসা বেঁধেছে ।তারা এখন একমুখী জীবনের দূরত্ব অতিক্রম করেছে।তারা মিশে গেছে অনন্ত এক সন্ধ্যায় ।সেই সন্ধ্যায় সুখ নেই দুঃখ নেই কষ্ট নেই কেবল নিস্তব্ধতা ।তবুও তারা ভালো থাকুক,ভালো থাকুক নিগুঢ় দেশে উধাও হওয়ার মানুষগুলো।
নীপা এখন পাথরের চেয়েও কঠিন ।এক জীবনে মানুষের যে রূপান্তর,যে পরিবর্তন নিজেকে নিজের প্রিয় করে তুলে সেই পরিবর্তনের চরমে নীপা।তার এখন আর স্থায়ী কোনো যত্নে ঘুমানোর মতো কোনো কোল নেই ।
ঈশ্বর জানেন মেয়েরা কেন এত বাবার প্রিয় বা মেয়ের কাছে বাবা এত আপন ।
তিন মাস হল সৌরাংশ বাবু ইয়লোকে আর নেই ।তার মৃত্যুটা শুধু মৃত্যু নয় ।এই মৃত্যুর সাথে আরো দুইটা মানুষের জীবনের সুখ অস্বাভাবিকভাবে চিরতরে হারিয়ে গেছে ।
জগত জানে কারোর কারোর মৃত্যু কেবল মৃত্যু নয় মৃত্যু মানেই প্রিয় মানুষদের চোখের জলে বেঁচে থাকা।
সেকেরকোট নিউ ইকো পার্কে নীপা বসে আছে ।শরতের নরম কুয়াশা আলতোভাবে ছুঁয়ে আছে ঘাসের স্নিগ্ধ শরীর ।নীপা পায়ের জুতো জোড়া খুলে সেই ঘাসের উপর অদ্ভুত মায়ায় পা দুটো ফেলে রেখেছে ।পাশে বসে আছে রঞ্জিত ।রঞ্জিতের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে ।রঞ্জিত সদ্য ডাক্তারি পাশ করেছে ।এখনো প্র্যাকটিস শুরু করেনি।তার ইচ্ছে বিয়ের পর কর্মজীবন শুরু করবে ।
রঞ্জিত অনেকক্ষণ ধরে নীপার কাঁধে হাত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু সাহসে কোলাচ্ছে না।একটা সিগারেট ধরাতে পারলে হতো কিন্তু সাইনবোর্ডে লেখা "নো স্মোকিং"।এইসব লেখার কোনো মানে হয় না ।এগুলো নিছক ফাজলামি ছাড়া আর কিছুই না।অন্যের ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছায় নাক গলানো স্বাভাব হয়ে গেছে মানুষের।
নীপা এখন কেমন যেন গম্ভীর মুখে থাকে সারাক্ষণ।মাঝে মধ্যে যদিও হাসি দেয় তা হল কৃত্রিম।এই কৃত্রিমতাকে রঞ্জিত বড্ড ভয় পায়।মনে হয় সেও যেন এই হাসির মতোই তার কাছে অপ্রকৃত।
রঞ্জিত অবিচল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,"এত সকাল সকাল এখানে ডাকলে যে কোনো সমস্যা হয়েছে ?"
" সমস্যা হবে কেন ! বাড়িতে এখন আর ভালো লাগে না ।মাও কথা বলে না । "
"তুমিও ত বেশি কথা বলো না ।মাকে যদি সবসময় কথা বলে সুস্থ না রাখো সেও তো একদিন....."
নীপা আবার মুখ ফিরিয়ে চুপ করে গেছে।রঞ্জিত এবার সাহস সঞ্চার করে কাঁধে হাত রাখল ।সে এই প্রথম এতটা কাছ থেকে কোনো নারীর শরীর স্পর্শ করল ।বুকের ভেতর কেমন যেন শব্দ হল ।
নীপা আনমনে বলল," আরো শক্ত করে ধরো ।জানো মনীষের ভালোবাসার স্পর্শ কোনো দিন পাইনি।সেই মানুষটাকে অনেক ভালোবাসতাম ।কিন্তু এই কথাটা তাকে বলার সুযোগ পাইনি কোনোদিন ।"
" এখন সেই কোথায় আছে ?"
" জানি না ।আগে যেখানে থাকতো সেখানে এখন আর থাকে না ।"
" এরপরে আর কোনোদিন দেখা হয়নি তার সাথে ?"
" সেদিন সে এসেছিল,কিন্তু স্বপ্নে না বাস্তবে তা জানি না ।আগের সেই মনীষ ।যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার তুমুল বাসনা ছিল।চারিদিক বিষাদ অন্ধকার।বিছানায় ছটফট করছি ঘুম আসছেনা।কয়দিন ধরে ইনসোমনিয়ার জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছে না ।মোবাইলে টাইমটা দেখলাম,রাত প্রায় দুইটা ।কোথাও কোনো শব্দ নেই ।মোবাইলের আলো দিয়ে জগ থেকে জল ঢেলে খেয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি ।জানালা দিয়ে ক্লান্ত রাস্তা গুলো দেখা যায়।ওদের দেখে মনে হল যেন এই ক্লান্ত শ্রান্ত রাস্তাগুলো রাতের বেলাও এদের বিশ্রাম নেই ।এরা স্বার্থহীন যোদ্ধা।এরা অন্ধকারকেও ভরশা দেয় আমরা জেগে আছি ।ল্যাম্প পোস্টে আলো জ্বলছে।হঠাৎ দেখলাম একটা লোক রাস্তায় পায়চারি করছে ।চোখের ভ্রমও হতে পারে। নিজেকে সম্পূর্ণ জাগিয়ে দেখি না এতো ভ্রান্তি নয়।কে এই লোক ! নিশুতি রাতে সে কি করছে এখানে ।একটু পরে সেই লোক আমাকে ডাকলো ।সেই কি স্পষ্ট কণ্ঠ ।বলল 'বাইরে এসো নীপা ।কতদিন তোমাকে দেখি না ।এসো আমরা আজ অন্ধকার পথে হারিয়ে যাই ।'আমার বুকের ভেতর ব্যথা শুরু হল।এই তো মনীষ !সুস্থ সবল আমার সেই মনীষ।আমিও বললাম ,' তোমার সব মনে পড়েছে মনীষ ?'
মনীষ অট্টহাসি দিয়ে বলল,'সব মনে পড়েছে। তুমি আসবে না কাছে?'
" আসবো আগে বলো কিভাবে মনে পড়ল ? সেদিন এইভাবে কেন অবহেলা করলে আমাকে ?কেন বলোনি তুমি অভিনয় করছ ?
" সেদিন আমি সত্যিই অসুস্থ ছিলাম নীপা ।আজ আমি সুস্থ ।মানুষ মৃত্যুর পর আর অসুস্থ থাকে না ।তোমার টানে আজও আমার এই জগত থেকে মুক্তি হয়নি।"
"তুমি মৃত,,,,!
সেই রাতে কী হয়েছে আর জানি না।যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই পড়ে গেছি।
অনেকদিন ধরে বারান্দায় যেখানে সৌরাংশ বাবু বসতেন সেখানে সবিতা বসে না ।এখানে বসলেই লোকটার অস্তিত্ব অনুভব হয়।মনে হয় সেও পাশে বসে কথা বলছে ।মৃত্যুর পরে একদিন সবিতা বারান্দায় বসে আছে ।অতীতের স্মৃতিগুলো ভাবতে ভাবতে মনে হল স্বামীও তার পাশে বসে ।
সবিতা রান্না সেরে রাতের এঁটো থালা বাসনগুলো ধুতে বসেছে।সে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে চায় কিন্তু সম্ভব হয় না।তার অজান্তেই মন উদাস হয়।
কাজ শেষ করে সোফাতে বসেছে সবিতা।শরীরটা আজ একটু অন্যদিনের চেয়ে ফুরফুরে লাগছে ।ধীরে ধীরে বোধহয় মানুষটার স্মৃতি কালের স্রোতে মিলিয়ে যাচ্ছে ।এই তো জগতের নিয়ম।
কোথাও একটু কথা বলতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু তার তেমন আত্মীয় নেই ।নেই বলতে আছে যোগাযোগ নেই তেমন।সবিতা ফোনটায় নাম্বার লিস্ট চেক করে মমিতাদের নাম্বার টা পেলো ।মমিতা তার পিসতুতো বোন।গুজরাট থাকে।স্বামীর বিশাল বিজনেস সেখানে।সবিতার অনেক ছোটো ।কলটা রিসিভ করলো একটা শিশু।
" হ্যালো কে বলছেন?"
" তোমার মা আছেন ?"
" মা'মনি তো ঘরে নেই !অফিসে গেছে ।আপনে কে ?মাকে কিছু বলতে হবে ?"
" বাবা তোমার মাকে বলো আগরতলা থেকে সবিতা আন্টি ফোন করেছিল,কেমন !"
"আচ্ছা ঠিক আছে বলব "
কলটা কেটে দিলো ।শরীরটা হঠাৎ কেমন যেন ঝিমুচ্ছে ।সবিতা ঢকঢক করে এক গ্লাস জল খেলো।শ্বাস ভারী হয়ে আসছে ।সে সোফাতেই শুয়ে পড়ল।ঘরে কেউ নেই।মেয়েটাও দুদণ্ড ঘরে থাকে না আজকাল।
এই সময় কাউকে পাশে পেলো বোধহয় শান্তিতে মরা যেতো ।
বিকালে রঞ্জিত আর নীপা ঘরে ফিরল।ঘন আঁধারের মতো ঘর নিস্তব্ধ ।দুজনেরই চোখ গেলো সোফাতে পড়ে থাকা সবিতার দিকে।কাছে গেলো না কেউই।নীপা ভেবেছে ঘুমিয়ে আছে মা।অথচ সে জানলোই না এই ঘুম চিরনিদ্রার ঘুম ।এই ঘুম কারোর ভাঙে না।
রঞ্জিত নীপাকে ঘরে পৌছে দিয়ে চলে গেছে ।নীপাও নিজের চলে গেছে ।
দেবব্রত চক্রবর্তী
শুভজিৎ চক্রবর্তী
উর্মি সাহা
সংগীতা দাস
ভাবের নদীর বুকে জলরাশির ভান্ডার,
দেখলেই যে লাগে অনিশ্চয়তার সংহার।
গভীরতার মাঝে হারিয়ে যাবার শখ,
সন্ধানের খুঁজে গিয়েছি অন্তিম পথ।
নদীর পাড়ে পাড়ে ঘুরে বেড়াই,
হাজারো অনুভূতিরা ছুটে পালাই।
তন্ন তন্ন করে গহীনতার নিমগ্নে,
অন্তরায় হয়েছি ব্যর্থতার সাথে।
জলের আয়নাতে দেখা যায় রূপের প্রতিচ্ছবি,
স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে হাজার তরী।
তলিয়ে যাবার ভয়ে যায় নি নিবিড়তায়,
কি করে পাবো পাড়ের সন্ধান তার.?
বাঁধ ভেঙে পড়ে পথের দ্বারে,
বিলীন হয়ে যায় আবেগের ঝড়ে।
স্তূপের পাহাড় পড়ে বিনষ্ট হয়ে,
ভব নদীর পাড় ডিঙিয়ে যাবার তরে!
মন যদি হতো বৈরাগী,
তবে কি পাড়ের সন্ধান পেতে হতো দেরি!
যেতে যদি হয় অকুল পাতারে,
তবে ভব সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে।
অনুপমা দেবনাথ
দিপ্সী দে
অতনু রায় চৌধুরী
শাহেলী নমঃ
সুজন দেবনাথ
তুমি আসবে বলে,
শরৎ যেন তাই
নব রুপের সাজে।
বাতাস যেন মুখরিত হয়
আগমনী সুর বাজে।
হাজার মুক্তা ঝিকিমিকি ঐ
শিশির ভেজা ঘাসে।
কাশের বনের ফুল গুলিও
হাওয়ার দোলায় ভাসে।
তুমি আসবে বলে,
সোনার রঙে সাজানো
কৃষকের খেত-মাঠ।
শিউলি ছিটিয়ে সাজিয়ে রাখা
গ্রাম্য পথ-ঘাট।
তুমি আসবে বলে,
শ্রমিক কৃষক মেতে উঠে সব
সারি গানের সুরে।
হাতছানি আশে বুক বাঁধে ঐ মানুষ
যারা রয়েছে আস্তাকুঁড়ে।
তুমি আসবে বলে,
অসহায় নারী আত্মরক্ষার
শক্তি খুঁজে পায়।
মত্যবাসী দুই হাত তুলে তাই
আছে তোমার অপেক্ষায়।
তুমি আসবে বলে,
সম্পর্ক আর মানবিকতার
পথ চলা হোক সচল।
নরপিশাচ ডাস্টবিনের ঐ
কীটগুলি হোক অচল।
তুমি আসবে বলে,
গোটা বিশ্ববাসী আজ
তোমার পানে চায়।
সব অশুভ শক্তি বিনাশ করো
মাগো তারই বন্ধনা আমিও
রাখছি তোমার পায়।
পিয়াল দেবনাথ
শিপ্রা দেবনাথ
উজ্জ্বল ভট্টাচার্য
সম্রাট শীল
নীল সরকার
আক্তার হোসেন
ঢেউ
যদি আমি নৌকা হতাম
ভাসতাম নদীর জলে,
ভাটার টানে চলতাম ছুটে
ঢেউয়ের তালে তালে।
সুখ গুলো সব বিলিয়ে দিতাম
দরিয়ার ওই মাঝে,
দুঃখ নিয়ে চলতাম ছুটে
শ্রাবণের ওই সাঝে।
দু–ধারের ওই গাছ গুলো সব
ছুটতো আমার সাথে,
ফুল গুলো সব দুলবে হাওয়ায়
মন নদীর ওই ঘাটে।
হঠাৎ যদি দমকা হাওয়া
ছুটে আসতো ধেয়ে,
দরিয়ার মাঝে থেকে আমি
দেখতাম চেয়ে চেয়ে।
তারই মাঝে মন নদীতে
উঠতো যদি ঢেউ,
ঢেউয়ের বেগে আমায় খুঁজে
পেতো না আর কেউ।
কবিতা সাহা
দিপিকা রায়
সুপর্ণা কর
মা মহামায়ার আগমন
মা মহামায়ার আগমনে
প্রকৃতি আজ উদ্ভাসিত।
শিউলি আর কাশফুলের শোভায়
চারিদিক হলো সুবাসিত।।
মায়ের আগমনী গানে
মনে জেগে উঠলো এক নতুন আশা।
মহাময়ার আগমনে
ঘুচে যাক সকল দুঃখ-দুর্দশা।
মায়ের আগমনে
আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের রাশি।
চারিদিকে শুধুই হাহাকার!
তবুও যেন সবার মুখে,একটু মৃদু-হাসি।
হে মা দুর্গে, দুর্গতিনাশিনী
অসুরনাশিনীরূপে,বিনাশ করো সকল পাপ।
মাগো তোমার আগমনে,
উন্মোচিত হোক সকল অভিশাপ।।
মহালয়ার পূণ্যলগ্নে মায়ের আগমন বার্তা,
শারদআকাশে ভাসছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে
নতুন আশার আলোয় পুনরায় মা আসছে।।
সঞ্জয় দত্ত
মুক্তি নেই
আমিও মানুষ আর তুইও মানুষ,
তফাৎ শুধু মনোভাবের।
আজ দিন দুঃখি কাঁদে
শুধু নির্মম বিচারে।
আমারও স্বাধীনতা আছে
ইচ্ছে মতো উড়ার,
কেন কেড়ে নিয়েছিস বাক্ !
এখন পথ শুধু মরার।
শুস্ক বৃষ্টি ফোঁটার জীবনের ন্যায়
প্রাণ বাঁচাতে ধরেছি পা তোর,
কতো চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলেছি,
ছেড়ে দে আমায়,করেছি হাত জোড়।
পাষণ্ড জানোয়ারের মতো
অসময়ে খেয়েছিস যাদের!
একদিন দৃঢ় কন্ঠে কেউ বলে উঠবে,
মুক্তি নেই তোদের।
সৌরভ দেবনাথ
ওই পাখি
কোথায় গেলে গো তুমি?
তোমার মনের ঘরে
আমায় একটু জায়গা দেবে কি?
যদি ডাকো তবে হব তোমার মন পূজারী
আর,
যদি না ডাকো তবু বলব আমি তোমায় ভালোবাসি।
পাখি মনে পড়ে কি সেদিন রাত ১১ টা থেকে
তোমার মিঠুর কণ্ঠস্বর শ্রবণে শ্রবণে প্রেমময় বার্তা আদান প্রদানে,
সূর্যি মামা-কে জাগিয়ে ছিলাম আমরা দুজনে।
সেদিন প্রভাতে কোকিলের কুহু কুহু ডাক, শালিক পাখিরা আকাশে উড়ছিল,
আর;
মোবাইল ফোনে বাজত শুধু তোমায় যে আমি ভালোবাসি,শুধু তোমায় যে আমি ভালোবাসি।
সত্যি সেদিন সকালটা ছিল খুব কোমল শুরু হয়েছিল চাঁদ মামার হঁাসি আর সূর্যিমামার উদয় দিয়ে।
মাঝে মাঝে বইত স্পর্শকাতর' হাওয়া, দেহের মাঝে লাগলেই মনে হয় পেয়েছে আমি তোমার কোমল হাতের ছোঁয়া।
তারপর ধীরে ধীরে হলো সকাল, জাগলো লোকজন চলল যানবাহন,
সেই যে ফোন রেখে ছিলাম সকাল পাঁচটা নাগাদ,
তারপর চিত্তের অজান্তে কখন যে নিদ্রুায় দ্রবীভূত হয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ বাদে ঘুম থেকে উঠে দেখি আকাশটাও অনেক কষ্টের সহিত কাঁদছে।
জিজ্ঞাসা করলাম কিরে আকাশ তুই কাঁদছিস কেন?
আকাশ বলল ভাই আমার ভালবাসাটাও না তোর মত অসহায়।
কখনো কাঁদিস আবার কখনো চন্দ্র সূর্যের মতো বিরহকে ত্যাগ করে উজ্জ্বল হাসিতে মেতে উঠিস।।
প্রীতম শীল
গোপাল বনিক
গৌতম দাস
আর কত!
উর্বর সমাজে নর রাক্ষসের বীজ বুনছে কন্যা শিশু বিদ্বেষী দল।
তপ্তকন্ঠে ভস্মীভূত হোক তোদের বিষাক্ত বল।
অন্ধকার কুয়োর তলদেশে ওদের বসবাস।
জ্ঞানের আলোতে শক্ত এলার্জি যেন জীবন্ত অভিশাপ।
ভোরের তেজোমূর্তির রক্তিম নির্মল স্পর্শ
স্নেহময়ী বসুন্ধরার স্নিগ্ধরূপ ওদের বাবার সম্পদ-
শ্রেণীগত ডিগ্রিধারী ওরা এই রূপ উপভোগ করে সারা বর্ষ।
ওরা চোখে ঘন কালো পর্দা বেঁধে বসে আছে,
সততা,মানবিকতা,বিশুদ্ধ রক্ত নেই তারার কাছে।
মাথা উঁচু করে বলে
কন্যা শিশুর পৃথিবীর রূপ দেখার অধিকার নেই,
ভূমিষ্ঠের পূর্বেই মৃত্যুর কোলে পাঠিয়ে দেয় সেই।
ভস্ম হয়ে যায় শিশুরা রক্ত চোখ ও কুকথার অগ্নিবাণে।
ওরা রক্ত পিপাসু মুখোশধারী আবার নানা দেবীর পরম ভক্ত।
দেবীর চরণে সর্বস্ব ঢেলে দেয়- ঐদিকে ভ্রুণ হত্যা পাপে যুক্ত।
এই নরপিশাচ আছে যত-
সুস্থ সমাজের অক্সিজেন,ভবিষ্যতের মা রূপীর মুখে মাটি দিচ্ছে শতশত।
একুশ শতকেও থামছে না এই মহাপাপ
ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে,আর কত??
চলো সবাই কন্যা শিশুকে মার কোলে দেই ঠাঁই।
দেশ দুনিয়ায় কন্যার জয়গান গেয়ে যাই।
কন্যা শিশু হত্যা, অবহেলিত সমাজ
চলো চিরতরে মূলোৎপাটন করি আজ।
পূজা মজুমদার
অকুতোভয়
আমি ভয়ার্ত কোনো যোদ্ধা নই যে,
সব মাথা পেতে মেনে নেবো।
আমি হেরে যাওয়া কোনো সৈনিক নই যে,
অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো।
আমি উদ্যম, আমি আগুয়ান,
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের সব অনিয়মকে ভেঙে
দিতে পারি করে খান খান।
আমি দিতে পারি করে দুর সব যত
অন্ধকারের তিমির রাত।
গুড়িয়ে দিতে পারি আমি সব
সমাজের যত কালো হাত।
আমি উদ্যম, আমি আগুয়ান,
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের যত জঞ্জাল মুছে,
মানুষকে দিতে চাই পরিত্রাণ।
অন্যায় যদি দেখি হতে তবে,
দিই না কখনও প্রশ্রয়।
আমি চাই নি নিতে কখনও কভু,
অনিয়মের কাছে আশ্রয়।
মৃত্যকে নিয়ে পথ চলি আমি,
করি না কখনও মরণের ভয়।
অবিচারের কাছে তবুও আমি কখনও,
স্বীকার করিব না পরাজয়।
আমি উদ্যম, আমি আগুয়ান,
আমি চাই হতে সমাজের সেই
শহীদ মায়ের সন্তান।
অন্যায়কে ভেঙে দিয়ে যারা,
হয়ে আছেন গরিয়ান।
বেঁচে যদি থাকি আমি তবে
করে যেতে চাই এই সংগ্রাম,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমি
করেছি মুক্তি পণ।
চয়ন সাহা
রুবেল হোসেন
সাধন নমঃ
শতরূপা ভট্টাচার্য
চৈতী দে
সমীর ভাদুড়ী
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
সাগর চৌধুরী
মিষ্টি মুখো হাসির স্বরে
নীল গগনে ছড়িয়ে দেয়,
সাদা কাশের তুলো ।
সারা বেলা ছবি আঁকে,
মেঘের ভাঁজে মুখ খোঁজে,
অল্পতে তার মন ভরে যায়
হাসিতে ফোটে নতুন রঙা আলো ।
ছুট্টে বেড়াই সারা বেলা
কি জানি কিসের তাড়া ?
নেইকো নজর নিজের বেশে,
শুধু হাজার কাজের ভিড় ।
দিনের শেষে ঘুমিয়ে পড়ে
ক্লান্ত চোখেও স্বপ্ন গড়ে;
এসেছে যেন মিলন তিথির দিন ।
যায় না থাকা অপেক্ষাতে
মনের মাঝে বাঁশি বাজে
এ কিসের আগমনী ?
সবই যেন নতুন লাগে,
চেনা নুপুর কানে বাজে,
এ কোন বালার আগমন ?
নতুন দীপের আলো জ্বালা,
নতুন সুরে গান লেখা,
শব্দ গুলো জাগায় শিহরণ ।
হৃদয় পানে নুতন রং,
স্বপ্নে নুতন ছোঁয়া ।
গভীর তাহার ব্যঞ্জনায়,
স্পর্শে গান গাওয়া ।
তাহার মাঝে নুতন ছবি,
চির চেনা - তবু যেন
অপেক্ষা জাগিয়ে ব্যথা;
শুভ মুক্তির আনন্দে মত্ত সে-
নব রূপে, নব সাজে, নব নব গান গাওয়া।
শুভদীপ পাপলু
লিটন শব্দকর
অভিজিৎ রায়
জবা চৌধুরী
মিঠুন দেবনাথ
সুস্মিতা মহাজন
মাধুরী সরকার
শ্রীমান দাস
রনিতা নাথ
সোনালী রায় বাগচী
চন্দন পাল
বিনয় শীল
অপাংশু দেবনাথ
সোমেন চক্রবর্তী
অভীককুমার দে
হারাধন বৈরাগী
মননস্রোত ও ব্রহ্ম
কবির সাথে নদীর সম্পর্ক মুহুরীকে দেখেই বুঝতে পার।রাতের ষ্টেশন মূলত তোমার এক প্রিয় জায়গা ,শান্ত অথচ নির্ভেজাল এমন কোলাহল ধনী ও গরীবের পায়ের নীচে সখ্যতার মানদণ্ড।বিদায় ও স্বাগত-এই দুয়ের মাঝে নরম চেয়ার যেন পাখি আর মানুষের মধ্যে ঘরে ফেরার নির্ভেজাল তাড়না। তোমার ঘরে ফেরার তুমুল অণুপ্রেরণা।
একজন নিজের বাড়িছেড়ে কি করে অন্যঘরকে ভরসা করতে পারে।অজানা এক ভিটার মাঝে বসতের মতো উদারতা গর্বের সাথে দেখাতে পারে।তুল্য কিছু না পেয়ে তোমার সর্বদা ভয় করে।আর মায়েরা তোমাকে দেখে বাপের বাড়ি ভুলে যায়। তোমারও মায়েদের দেখে মামারবাড়ী বাড়ি মনে পড়ে।এই থেকে নারীকে তোমার মনে হয় নির্মানশিল্পী।নারী ঘর নাবাঁধতে আসলে নতুন কোনো ঘর তৈরী হয় না!নুতন কোনো মা হয়না।এ নুতন নয়, পুরোনো ও নয়।এ তোমার পথচলা।
গ্রামজীবন আর নদীর মাঝে তফাৎ কমই করতে পারো। হাঁসমা আর গ্রামভারতের ভেতর বয়ে চলা অন্তঃসলিলা নদীটির পারে কিশোর দুইভাই যখন একসাথে বসে ভাত খায় ,ভাতের থালায় উঠে আসে উদ্যান হয়ে মায়াবিনী প্রকৃতি। এসব দৃশ্য বলা যায়না, বুঝা যায়।আফশোস হয়,এ কাউকে দেখাতে পারো না।এ বোঝা কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে তুমি জান না!চোখের কোণে জল জমে যায়। সে জলও খুব খারাপ লাগে না!অথচ এ নিয়ত তোমাকে কাঠটুকরার মতো খেয়ে যায়।এমনকি কুকুরের সাথে মানুষের কোন একটা সাদৃশ্য দেখে ভয়ে ডিস্কব্র্যাক লকহওয়ায় মতো গ্রীষ্মদুপুরে আর্যাবর্ত তুমি।
তখন একটা আস্ত বাঁশবাগান পুকুরে স্নান করে এসে বাঁশবেড়ার ছোট্ট রান্নাঘরের মাটিতে বসে ভেজা শরীরে খায় সিদ্ধচালের গরমভাত, দেশিআলু ,শিংমাছের সুক্তো। তখন মৃদু বাতাস শুকনো বাঁশপাতাপাখির মতো উড়ে আসে রান্নাঘরে ।তৃষ্ণামাটির কলস ঘরের কোণ থেকে ঠাণ্ডাজল নিয়ে এসে একটি মাটির গ্লাস ভরে দেয়। পেটভরে খেয়ে উঠলে একটা হাতপাখা নিয়ে আসে পুকুর পাড়। তখন ঘরের পেছনের শেওলা জমানো ছোট্ট পুকুর হয়ে ওঠে সুবর্ণরেখা আমগাছ।বাঁশঝাড় শেকড়ের উপর বসে দেখে পুকুরে দেশি সাঁতারকাটাহাঁসেদের অনাবিল আনন্দ।সাঁতার কাটে কাঁচামাটির গন্ধ।
তখনই গলায় তুলসীমালা জড়িয়ে একজন বাস কন্ডাক্টর যাত্রীর উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ে-সিট খালি। অথচ সিটে বসে আছো তুমি ডবল ভাড়ায়। তখন বুঝো একা নও তুমি,পাশে বসে আছে সমান্তরাল তোমার দ্বৈত পৃথিবী।তখন আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়ে উঠো।এই যে সুস্থ আছো,প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ থাকো। ভাবো এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি!
আর গলার স্বর নরম করে টগবগিয়ে তাকে বলো,- অনাহারীর একটা গল্প শোনাতে ।সে বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায়।ভাবো রাত গভীর হয়েছে বলেই এত নিস্তব্ধতা!মানুষ তো চিরকালের জন্য এই পৃৃথিবীতে কোলাহল করতে আসে না।তাকে না জাগিয়ে বরং ঘুম থেকে উঠলে ,তার কাছে একটা অনিদ্রার গল্প শুনবে বলে আগ্রহ নিয়ে বসে থাকো
অথচ জানো,রোগ একবার বড়লোক হয়ে গেলে শরীরটাকেও কিনে ফেলে! মৃত্যুর এক ঘন্টা পরে আর শরীরটা বসানো যায় না।শক্ত হয়ে যায়। ভাঙতে গেলে মটমট করে। এই শব্দ এতকালের চেনা।অথচ এই শব্দে আতকে উঠো, যেন এর তুল্য পৃথিবীতে আর কোনো শব্দ হয় না। মনে মনে তুলনা খুঁজতে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে ভাবো এ যেন চণ্ডিদাসের বড়শি আর রামির পুকুরের বাতাসের মধ্যেকার ব্রহ্ম!
অশোক দেব
উর্মি সাহা
মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...
-
আজ আশ্বিনের শেষ কার্তিকের শুরু এই দিনটা বিশেষ ভাবে বিশেষ, বাংলার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। জানি না বাংলার বাইরেও এইভাবে বিশেষ হয়ে উঠেছে কিন...
-
মূক ফেনীর মুখর পাঁচালি একটি বহুল প্রচারিত বাংলা প্রবাদ ‘ভাগের মা গঙ্গা পায়না’ ৷ প্রবাদটির মধ্য দিয়ে মায়ের অসহায়ত্বের যন্ত্রণাটিই ব্যক্ত হয়ে...