Sunday, June 21, 2020

ড. রঞ্জিত দে

পিতৃদিবস
              
"পিতা  স্বর্গ ,পিতা ধর্ম ,পিতাহি পরমং তপঃ"----- পিতা স্বর্গ পিতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অনুভব, ধর্ম, এই বিশ্বাস এই অনুভূতি আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রের নানা জায়গা বর্ণিত হয়েছে । পিতার আদেশে নচিকেতা অম্লান বদনে যমদ্বারে গমন করেন । গুরুদেব অগ্যস্ত  মুনির আদেশে পরাক্রমশালী  বিন্ধ্য আজো নত মস্তকে গুরুর পুন; আদেশের অপেক্ষা করছে। রবীন্দ্রনাথও বলেছেন - "পিতার ভবনে" 

সন্তানকে পরিবার তথা সমাজের প্রতিষ্ঠিত পুনরায় জন্য পিতৃদেব অশেষ চেষ্টা ও শ্রম সাধন করেন ।কিংবদন্তি বলছে- "পুনার্থে ক্রিয়াকে ভাবা'। পুরানো অনেক চিন্তা এখনও বিতর্কিত, কিন্তু সন্তানকে সুস্থ  জ্ঞানী করার জন্য পিতা তার অর্জিত ধন ব্যয় করেন । লোক ভয়,লোক লজ্জা ত্যাগ দিয়ে পরিশ্রম করেন । সমস্ত পৃথিবীপৃথিবীটা জুড়ে একদা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছিল। কিন্তু কালপ্রবাহে এই সমাজ ক্রমশ; পুরুষ প্রধান সমাজে রূপ লাভ করতে থাকে। সম্ভবত আমাদের পুরানো যা ছিল তারই ছবি বহন করে থাকে; সন্তানের বড় হওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকার গুরুত্ব তুলনাহীন । কিন্তু সত্যিকারের মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে শিশুর জীবনে পিতা ও মাতা উভয়ের ভূমিকা খুব জরুরী বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা অপেক্ষা গৃহস্থলীতে পটু হওয়ার গুরুত্ব মায়েরা অধিকতর মনে করেন। সে ক্ষেত্রে পিতার উদারতা মেয়েদের এই গণ্ডী থেকে বের করার চেষ্টায় বা উদ্যোগে খুব  প্রয়োজন হয় । 

  হেমন্ত কুমার দে --- আমার পিতৃদেব আমাদের লেখাপড়া ও স্বাস্থ্য রক্ষায় খুব যত্নবান ছিলেন। তাঁর হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিলে যা আমাকে প্রভাবিত করে। তিনি একটা স্টাইলে লিখতেন।তাঁর হাতের লেখা কাগজ আমার কাছে সংরক্ষণে এখনও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রাক্কালে পঞ্চাশের মন্বন্তরের সংকটাপন্ন অনেকের মতো আমার পিতা বার্মা মুল্লুকে যা ত্রিপুরা রাজ্যে আসার পূর্বে ও পরে তিনি লিখতেন। কিন্তু তাতে যে টাকা পয়সা পেতেন তা ঘর চালানো যেত না। 
 
আমার লেখা পড়ার জন্য বাবা যত্নবান হলেও তিনি সেই সময় দীর্ঘদিন জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েন । ফলে সংসার অচল হয়ে পড়ে । প্রচন্ড আর্থিক সংকটের ফলে, সাবরুমের শ্রদ্ধেয় জগদীশ দে-র বাড়ীতে লজিং এ থেকে পড়তে হয়। কলেজে পড়া কালীন ও লজিং এর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়। বাবা প্রায় শেষ দশ বছর রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি বই পড়তেন । শেষ বয়সে শারীরিক ভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। সামান্য, শারীরিক কষ্ট নিবারণের জন্য হাসপাতালে এনেছিলেন। পরিচিত ডাক্তারবাবু ভালো চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে নেন। কিন্তু দুঃখের হলেও সপ্তাহে আশি বৎসর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান । পিতৃদেবের শেষ বয়সে তাঁর আদেশে এবং আমার নৈতিক বোধ থেকে ছোট ভাই এর বি.এ (অনার্স)পাশ বা চাকুরী পর্যন্ত সার্বিক দায়িত্ব বহন করেছি। যা পিতৃদিবসে উচ্চারণ করতে পেরে ভালো লাগছে । আজকে সকল পিতাকে প্রণাম জানাই।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...