Sunday, June 21, 2020
সম্পাদকীয়
ড. সমীর ভাদুরী
অরিজিৎ মজুমদার
হামিদুল ইসলাম
নিপু দাস
শিপ্রা দেবনাথ
অসীম দেববর্মা
সজীব পাল - (ধারাবাহিক)
মনীষ অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে দেখলে তার ঘরটা এখন আলো অন্ধকার ।তার মতে আকাশে যখন সূর্য থাকবে তখন স্বাভাবিক নিয়মে হবে দিন।চাঁদের রাতকে বলা হবে রূপাত্রি।অর্থাৎ চাঁদের রুপোলি রাত্রি। আর রাতের অন্ধকারে যখন আলো জ্বালানো হবে তখন তাকে বলা হবে,আলো অন্ধকার ।তার ঘরটা এখন আলো অন্ধকার।বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।এখন ত সংবিধানের মত ধারা হয়েছে, একটু সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলেই কারেন্ট চলে যাওয়া ।এখন এমনটাই হয়েছে । বৃষ্টি কমে মাটি শুকিয়ে গেলেও কিন্তু কারেণ্ট আসে না সহজে ।মনীষ চৌকিতে বসে মোমবাতির আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।ঘরের দরজাটা ঘুণে খেয়ে একেবারে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে ।কয়েকদিন আগে মনীষের প্রচন্ড জ্বর আসে ।একা মানুষ,জ্বর হোক আর যাইহোক নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয় ।সে চৌকিতে শুয়ে আছে,কিন্তু অনেকক্ষণ ধরেই জলের পিপাসা।জ্বরের তাড়নায় বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছে না ।কিন্তু কি আর করা,জ্বরের কাছে পরাজিত হয়ে জল না খেয়ে মরার চেয়ে জল খেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে মরা অনেক ভালো।কাঁপতে কাঁপতে ওঠতে গিয়ে কয়েকবার বিছানার মধ্যেই পড়ে গেল।কিন্তু তাকে যে জল খেতেই হবে ।উঠলো,কোনো মতে মেঝে পা রাখা মাত্রই সারা শরীরে মুহুর্তেই লোম দাঁড়িয়ে যেন হার্টবিট বেড়ে গেল ।শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো ।ছোট্টঘরেই জলের ফিল্টার,দুইটা প্লাস্টিকের চেয়ার এবং খাওয়ার জায়গা। ফিল্টারটা দরজার কাছে রাখা ছিল।ধীরে ধীরে দরজার কাছে যাওয়া মাত্রই হুমড়ি খেয়ে পড়তে গিয়ে দরজায় ভরসা করতে গেলো।কিন্তু দরজা তার খুঁটি হতে অক্ষম হল ।ঘুণে খাওয়া দরজাটা হাতের আঘাতে অনেকটা ছিদ্র হয়ে গেছে।দরজাটা পাল্টানোর জন্য মালিককে অনেকবার বলা হয়েছে,কিন্তু মালিক কর্ণপাত করলো না।এই ছিদ্রপথে শোঁ শোঁ করে বাতাস এসে মোমবাতির আলোটাকে কাঁপাচ্ছে।মনীষ বসে বসে আলো বাতাসের খেলা দেখছে আগ্রহ নিয়েই।এই যেন এক কঠিন লড়াই।অনবরত বাতাস এসে হামলা করছে,কিন্তু মোমবাতির ছোট্ট আলোর শিখা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার অপ্রাণ চেষ্টা ।এইভাবে চলতে থাকলে আলোটি বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারবে না।ঘড়ির দিকে মনীষ লক্ষ্য করে দেখল রাত বেশি নেই ।সে না উঠলেও পারতো,শুধু শুধু বৃষ্টির মধ্যে মোম জ্বালিয়ে বসে থাকা কোনো দরকার ছিল না।কিন্তু এই অভ্যাস তার বাবার ছিল ।কখন যে তার মধ্যে এই জঘন্য অভ্যাস বসে গেল সে টের পেল না।রাত দুপুরে ঘুম থেকে ওঠা খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল তার কোনো বিরক্তিই লাগছে না।অদ্ভুত ভালো লাগছে ।আচ্ছা মানুষের ভালো লাগাটা কোথায় থেকে সৃষ্টি হয়,মস্তিষ্ক!তবে সবাই যে মন বলে !মন ভালো থাকলে সব শান্তি ।তবে কি মন বলতে মস্তিষ্ককে বোঝাতে চেয়েছেন!মোমবাতি হেরে গেছে,হাওয়া জয়ী।ভেন্টিলেটার দিয়ে নরম আলো ঘরে ঢুকছে।মনীষ এই আলোর একটা নাম খুঁজছে কিন্তু মাথায় আসছে না।এই সময় মানুষের ঘুম খুব গভীর হয়,কিন্তু পাখিরা প্রকৃতির নিয়মে এই সময় জাগে।মনীষ এতক্ষণ বসে ছিল,এইসব ভাবতে ভাবতে বালিশে মাথা লাগতেই চোখ জরিয়ে আসছে ।চেষ্টা করেও মনীষ বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারল না ।
আজ রবিবার মনীষের অফিস নেই ।দুপুরে নীপাদের বাড়ি যাওয়ার কথা ।কিন্তু ভালো লাগছে না ।আবার না গেলে নীপা এসে সারা বাড়ি গরম করে ফেলবে।শেষে বাড়ির মালিক উত্তেজিত হয়ে,মনীষকে বলবে এ-কিরকম মেয়েছেলের সাথে চলেন বলুন ত মশাই?এইরকম ব্যবহার করে কেউ পুরুষ মানুষের সাথে ?নীপা একটু জেদি তবে খারাপ নয়।রসিকও বটে।মনীষ চায় না তার জন্য নীপার সম্পর্কে অন্য কেউ কটু কথা বলুক। এই জন্যে তাকে যেতে হবে ।নীপা তার অফিসের সহকর্মী।মনীষের সাথে প্রথম দিন থেকেই তার খুব ভাব হয় ।নীপার গায়ের রং খুব ফর্সা নয়,কিন্তু মুখের গঠন অসম্ভব সুন্দর।দেখলেই কেমন কাছের কাছের লাগে ,মনে হয় তার সাথে অনেকদিনের পরিচয়।টানা টানা চোখ,ঘন কাজল ভ্রু।তীক্ষ্ণ নাক।মেদহীন সুঠাম দেহ।তার গলার একটু নিচে একটা কালো তিল,অদ্ভুত মানিয়েছে তাকে।তাকে কালো ব্লাউজ এবং হালকা বেগুনি শাড়ি পড়লে সোনালী পরীর মতো লাগে।এই সোনালি পরীরা কারণ ছাড়া অন্ধকার ভালোবাসে।এরা সাদা পরীর শত্রু।মনীষ এই শত্রুতার একটা ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা বের করেছে ।একদিন সাদা পরী এবং সোনালী পরী স্নান করতে নদীতে যায় ।নদীতে তখন হাঁটু জল।কেউই ডুব দিয়ে চুল ভিজাতে পারছে না বলে সবার মনে দুঃখ।তখন আকাশে পূর্ণ চাঁদ,কিন্তু অদ্ভুত কাণ্ড হল এই চাঁদের কোনো জ্যোস্না নেই।সোনালী পরী সাদা পরীকে বলল,এই রাত আমার জন্য নির্ধারিত তোমরা ফিরে যাও ।আমি এখন এই অন্ধকার জ্যোস্নায় বিবস্ত্র হয়ে স্নান করব ।কিন্তু সাদা পরী বলল, এই রাত আমাদের! মেঘছায়ার জন্য চাঁদের জ্যোস্না নদীতে আসতে পারছে না ।এইভাবে অনেকক্ষণ তর্ক বিতর্ক করে সাদা পরী সোনালী পরীর গালে থাপ্পড় মেরে পালিয়ে যায়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে কি নিজেকে খুব ভালো করে কখনো দেখেনি ?দেখলে নিশ্চয়ই অহংকার বাসা বাঁধবে । গলার নিচে তিলটা যে তাকে মানিয়েছে সেটা কি নীপা জানে?এবং সে যে এত রূপবন্ত তা কি জানে না !আর জানে না বলেই বোধহয় মনীষের মতো একটা শান্ত অচঞ্চল ছেলের সাথে সখ্যতা করেছে।মনীষ ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না,অন্যের প্রশ্নের উত্তর খুব সংক্ষেপে দেয় ।যেমন তাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে,মনীষ আপনে এই অদ্ভুত রহস্যময় পৃথিবীর সম্বন্ধে কিছু বলুন।তখন সে মনে মনে দীর্ঘ বিস্তারিত চিন্তা করবে,কিন্তু মুখে শুধু বলবে,এই পৃথিবী রহস্যময় তাই এত সুন্দর এবং মানুষ বার বার পৃথিবীতে আসতে চায় ।এর বেশি বললে আমার কথায় রহস্য জাল বুনতে শুরু করবে ।এই বলেই মনীষ একটু মুচকি হাসবে।নীপার ঠোঁটগুলো বেশ আকর্ষণীয় ।চিকন ঠোঁট,হাসি দিলে গালে টোল পড়ে ।দেখতে বেশ লাগে ।একদিন অফিসে দুপুরের লান্স করার সময় এই ঠোঁট নিয়ে মনীষ নীপাকে বলল," নীপা"
" হু"
" তোমাকে একটা কথা বললে খুব রাগ করবে ?রাগ করলে বলব না"
"খুব রাগ করব না,কিন্তু এখন যদি তারাতারি না বলো তাহলে রাগ করব।"
" তোমার ঠোঁট কিন্তু খুব সুন্দর ।বিশেষ করে যখন তুমি হাসো,তখন গালের টোল পড়া,দাঁত এবং ঠোঁট এই তিনটা এক সাথে দেখতে আরো ভালো লাগে।"
নীপা একটু মুচকি হেসে বলল," তুমি বুঝি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার অনুমতি না নিয়ে আমার ঠোঁট দেখতে প্রতিদিন?"
"এ-মা,না না প্রতিদিন কেন দেখবো যখন তোমার সাথে কথা বলি তখন দেখি।তাছাড়া আমি কিন্তু কথাটা এমনি বললাম ।আবার অন্যকিছু ভেবে বসে থেকো না যেন।"
এরপর নীপা যে কথাটা বলল,সেটার জন্য কোনো পুরুষ মানুষ প্রস্তুত থাকে না।নীপা মনীষের দিকে ঝুঁকে বলল,দেখতে যতটা ভালো লাগে ছুঁয়ে দেখতে আরো বেশি।"কথাটা বলে নীপা হা হা হা করে হাসতে লাগলো ।মনীষ তার কথাটায় লজ্জা পেলো।কিন্তু এই লজ্জার জন্য সে আরো লজ্জা পেলো ।সে মেয়ে হয়ে একটা যুবক ছেলের কাছে কথাটা বলতে যখন কুণ্ঠাবোধ করেনি,সে মিছে মিছে কেন লজ্জা পাচ্ছে! সেদিন এই নিয়ে আর কথা হয়নি নীপার সাথে মনীষের।
মনীষ অনেকক্ষণ অটোতে বসে আছে,আরেক জন প্যাসেঞ্জারের জন্য ড্রাইভার অটো ছাড়ছে না ।এতটা পথ একজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে গেলে পোষাবে না।মটর স্ট্যান্ড থেকে শিবনগর প্রায় আধা ঘন্টার পথ।ড্রাইভারকে জোর করলেই বিপদ।কথায় কথা বাড়বে ।বলবে ,"ভারা ত দিবেন কুড়ি টাকা!আর এই কুড়ি টাকা দিয়ে নিশ্চয়ই একটা সংসার চলে না !যদি দুই জনের ভারা দিতে চান তো যেতে পারি! "এইরকম অনেক অভিজ্ঞতা আছে মনীষের।মনীষ ছোট থেকে বড় হয়েছে গ্রামের জল হাওয়া খেয়ে।পড়া শোনার জন্য,কাজের জন্য তাকে অনেক গাড়ি চড়তে হয়েছে। হয়তো এখন চাকরির খাতিরে শহরের বুকে তার বিচরণ।
মনীষের পাশে লাল শালু পড়া একজন সন্ন্যাসী উঠেছে।লম্বা আধপাকা দাঁড়ি,গাঁট্টাগোট্টা শরীর ।দেখে মনে হয় কোনো নির্দিষ্ট আশ্রমে থাকে।কিছু সন্ন্যাসী আছে যাদের শরীরে এক ধরনের অসহ্য গন্ধ থাকে ।অপরিষ্কার পোশাক পরিচ্ছদ ।মনে হয় কতকাল স্নান করে না ।কিন্তু এই সন্ন্যাসীর শরীর ও পোশাক বেশ পরিচ্ছন্ন।মনীষের আবার এইসব সাধু সন্ন্যাসীদের প্রতি যথেষ্ট ভাব ভক্তি।অটো অনেকক্ষণ হল চলছে।সন্ন্যাসীটি বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ।মনীষ সন্ন্যাসীকে জিগ্যেস করল," সাধু বাবা আপনে কোথায় যাবেন?"
সন্ন্যাসীটি তার দিকে ফিরেও তাকাল না ।মনীষ অবাক হল,সাথে লজ্জিতও।সে ভাবলো সন্ন্যাসীটা তার কথা পাত্তা দেয়নি।তখন সে মনে মনে বলল,সন্ন্যাসীরা ত এমন না !ওদের মধ্যে কোনো অহংকার থাকবে না ,ঘৃণা থাকবে না লজ্জা থাকবে না,মায়া থাকবে না,লোভ থাকবে না।এদের শুধু একটাই মন্ত্র হবে,সব জীবের প্রতি প্রেম। এরা একটা মানুষের সাথে যেরকম প্রণয়ী আচরণ করবে,একটা পশুর প্রতিও সে আচরণ করবে । মনীষ আবার ডাক দিলো," এই যে বাবা শুনছেন ?"
সন্ন্যাসীটি বাইরে তাকিয়ে কোনো একটা চিন্তা করছে ,মনীষের দ্বিতীয় ডাকে তার দিকে ফিরে বলল," আমাকে কিছু বললে বাবা?"
"হ আপনাকেই ত বলছি ,কোথায় যাবেন ?"
"আমাদের কি নির্দিষ্ট কোনো যাওয়ার জায়গা আছে বাবা?যেতে যেতে যেখানে সূর্য অস্ত যায় সেখানেই রাত কাটিয়ে নিই।তুমি কোথায় যাবে ?"
"আমার এক বন্ধুর বাসায়,আজ দুপুরে ওখানে নিমন্ত্রণ আছে ।কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হয় কোথাও নির্দিষ্ট থাকেন!"
" তোমার যখন মনে হল,তখন নিশ্চয়ই থাকি ।এমনি এমনি কারোর মনে কোনো কিছু আসে না।কিন্তু কোথায় থাকি তা বলতে পারব না তোমাকে ।"
" কেন?"
"আমার গৃহ দেখতে হলে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।"এই কথা বলেই গাড়ির মধ্যে বিকট শব্দে হাসলো ।
"আপনার সাথে আপনার গৃহে!" সে বিস্মিত হল। দুঃখিত সাধু বাবা,আমার বন্ধু খুব জেদী ।মধ্যাহ্ন আহারের আগে না গেলে আস্ত রাখবে না ।"
" বন্ধুকে যে দেখছি খুব ভয় পাও? তা তোমার বন্ধু নীপা কি রান্না করছে আজকে ?"
মনীষের বিস্ময়ের আর সীমা রইল না ।সে সন্ন্যাসীর মুখে নীপা নামটা শুনেই চমকে উঠল!তার ভেতরে ধাক্কা লাগল।একজন অপরিচিত লোক নীপার নাম কিভাবে জানল!এই সন্ন্যাসীর আবার অলৌকিক কোনো শক্তি-টক্তি নেই ত !মনীষের মন অস্থির লাগছে ।সন্ন্যাসীর প্রতি কৌতূহল যেন দ্বিগুণ হয়ে গেছে ।সে সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞেস করল," বাবা আপনে নীপার নাম কিভাবে জানলেন?"
" মনে আসল ,তাই বলে দিলাম ।তাছাড়া তোমার বন্ধুর নাম কি নীপা ?"
"হু"
"দেখলে বাবা বললাম না মানুষের মনে এমনি এমনি কোনো কথা আসে না।দেখ ত পৃথিবীতে এত নাম থাকতে এই নামটাই বা কেন আসল!মানুষের সাথে মানুষের এইটাই সংযোগ।যাক,আমি ত সামনে নেমে যাব,তুমি যাবে আমার সাথে?"
" কোথায়?"
কোথায় মানে !আমার গৃহে !"
" এখন না অন্য একদিন দেখা হলে ।"
"আচ্ছা,বেশ তাহলে ।"মনীষ সাধুর যুক্তিকে পুরো বিশ্বাস করতে পারল না।কাকতালীয় ব্যাপার নামের উপর যে হতে পারে,এই প্রথম অভিজ্ঞতা তার।লোকটির কথা যত শুনেছে এবং দেখেছে ততই যেন কৌতুহল বেড়েছে । সন্ন্যাসীটি নেতাজি চোমুহনী নেমে গেছে।নামার সময় মনীষের মাথায় হাত রেখে বলেছে ,আমাদের আবার দেখা হবে ভোলানাথের কৃপায়।মনীষও সঙ্গে সঙ্গে বলেছে ,নিশ্চয়ই । অন্য রাস্তা দিয়ে অটো যাচ্ছে ।মনীষ কখনো এই রাস্তায় আসেনি।সে আরো দুই বার নীপা দের বাড়ি গেছে ,তার স্পষ্ট মনে আছে যাওয়ার পথে 'রূপসী সিনেমা হল'পড়ে ।কিন্তু আজকে তার নামগন্ধও নেই ।হাইওয়ে অবশ্য এই পথেও আছে ।সে অটোর ডান পাশ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছে বিরাট বিরাট বিল্ডিং ।কোনোটার মধ্যে ত্রিপলার মতো বড়ো সাইনবোর্ড টাঙানো ।সাইনবোর্ডে মহেন্দ্র সিং ধোনি সিমেন্টের বস্তা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আবার কোনো সাইনবোর্ডে কোটেশনে লেখা,"This life is yours, let's make our life beautiful."তার পাশে একজন অসম্ভব সুন্দর মহীলা ,হাত জোড় করে আছে ।কোনো মডেলিং হবে ।একটু পর পরই জুয়েলারি দোকান ।এই শহরের মতো মানুগুলাও অনেক উন্নত।কিন্তু শহরের রাস্তায় কোনো নতুন আসা ব্যক্তি সুস্থ স্বাভাবিক শ্বাস নিতে পারবে না ।রাস্তার দুধারে,কোথাও মাঝখানে আবর্জনার নোংরা ড্রেইন ।জঘন্য গন্ধ ।গন্ধে যেন ভেতরের সব বেড়িয়ে আসছে ।মনীষ পেছনের পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ ঢাকলো ।
প্রনব রুদ্র
কবিতা সামন্ত
স্নেহাশীষ রায়
বর্ষা দে
রূপালী মান্না
জনম সাহা
দিপ্সী দে
সুমিত বণিক
ও বাবা তুমিও বুঝি একদিন খোকনের মতো অবুঝ আবদার করতে?
ছোট্ট সেই তুমিই তো নাকি ঘুম থেকে উঠে কান্নার হাট বসাতে!
ঝরে পড়তো তোমার এই দুই চোখ থেকে কম দামী জল।
এখনতো দেখি না বাবা আর কোনো আবদার পরিপূর্ণ না হওয়ার জল।
শুনেনা এখন আর কেউ তোমার হাউমাউ কান্নার শব্দ ।
খুব পরিবর্তন করে নিয়েছ তুমি নিজেকে ।।
বাবাদেরকে বুঝি এইভাবে পরিবর্তন হয়ে যেতে হয়।
সত্যি করে বলো তো বাবা ইচ্ছে করে না এখন আর কিছু আবদার করতে ?
নাকি আমার আবদারের পূর্ণতা ঘটাতে তোমার মাটি চাপা দাও ।
বলো না বাবা কালকে আমি বাবা হলে আমিও বুঝি আর আবদার করতে পারবো না ।।
অভিজিৎ রায়
রুবেল হোসেন
সুনন্দা দাস
প্রীতম শীল
দীপিকা রায়
গৌতম মজুমদার
প্রশান্ত লস্কর
সংগীতা শীল
প্রাপ্তি মুখোপাধ্যায়
কাউচার খান
বাবা এক যোদ্ধা
যেদিন আমি ছোট্ট ছিলাম, যুবক ছিলেন বাবা।
সে দিনটি আসবে ফিরে,যায় কি তা আজ ভাবা?
বাবা তোমার কাছেই প্রথম আমার হাঁটতে শেখা আর প্রথম বাবা বলে ডাকা।
সেই ছোটবেলায় সারাটি দিন কাটতো যে, জড়িয়ে তোমার গলা।
বাবার হাতেই হাতেখড়ি আমার প্রথম পড়া-লেখা,
বিশ্বটাকে প্রথম আমার বাবার চোখেই দেখা।
আজকে বাবার চুল পেকেছে গ্রাস করেছে জরা,
তবুও বুঝি বাবা থাকলেই লাগে ভুবন ভরা।
যুদ্ধ ক্ষেত্রে অস্ত্র হাতে লড়াই করলে যদি হয় সে যোদ্ধা।
তাহলে জেনে রাখো, আমার বাবাও অস্ত্রবিহীন রোজ লড়ে ,
তাই আমার কাছে বাবা সবচেয়ে বড় বীরযোদ্ধা।
বাবা তুমি শুধু যোদ্ধা নয় তুমি যে দেবতা তুল্য,
জীবন আমার সার্থক হল বাবা তোমারি জন্য।
সংগীতা দেব
অভিজিৎ পাল
গৌতম দাস
আমার নিঃশ্বাসে বাবা
অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রাণময় স্বর্গ হল বাবা।
সন্তানের ইচ্ছাপূরণে সহ্য করে বাঘের থাবা।
ডাল, ভাতের খোঁজে নানা কষ্টকে বুকে পোষে।
হাসিতে উড়িয়ে দেয় দুঃখ, কেউ যেন না বুঝে।
নিজ ইচ্ছা অনিচ্ছা মুক্ত চিত্তে দেয় বিসর্জন।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ করে উপার্জন।
পরিশ্রমী,সত্য নিষ্ঠা হলেও জীবন চলে-
এই উপদেশ দেয় সুধাময় কথার ছলে।
স্বাচ্ছন্দে কাটিয়ে ফেলি অর্ধেকটা জীবন।
বিনামূল্যে খাবার পাই বাবার হোটেলটাই এমন।বাবা আমার অন্ধকার পথের জীবন্ত মশাল।
ভদ্রসমাজে আজও-
বৃদ্ধ জন্মদাতা সন্তান কর্তৃক নির্যাতনের সংখ্যা গুনে।
আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পাঠাবো না বৃদ্ধাশ্রমের বনে।
অতনু রায় চৌধুরী
বাবাকেই পাশে পাই
ক্লান্ত মনে হ্লাকা হেসে
যখন বাড়ি ফিরে বেলা শেষে ।
বুঝতে দেয়নি আজও কিছু
বাবা আগলে রাখে ভালবেসে ।
এই জীবন পথে চলতে চলতে
যখন হেরে যায় ।
আমার দুঃসময়ে আমি
আমার বাবাকেই পাশে পাই ।
আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবা নিঃশব্দে খাটে
গ্রীষ্ম বর্ষা বারো মাসই মাঠে কিংবা ঘাটে ।
আমার সাফল্যতে বাবা প্রাণ খুলে হাসে
সত্যি বাবা আমায় বড্ড ভালোবাসে ।
বাবার ইচ্ছে গুলো হারিয়ে যায়
আমার আবদারের ভিড়ে ।
বাবার যত ভালো থাকা
সব আমায় ঘিরে ।
না ভুলতে পারব না
বাবার আত্মত্যাগের কথা ।
বাবাকে খুশি রাখতে না পারলে
হবে আমার জীবনের চরম ব্যর্থতা ।
অনুপম দেব
সাহেবের বাপ
মানুষটি হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছিলো
কাঁধে করে কতো না ঘুরিয়েছিলো,
বড় হয়ে বেটা সুটে-বুটে সাহেব হবে
এমনি একটা স্বপ্ন দেখেছিলো।
কাঁধে কোদাল নিয়ে সকালে বের হলে
সন্ধ্যা রাতে বাড়ি আসতো,
এমনি করে সারা জীবন
সুখ বিষাদে কাঁটিয়ে দিলো।
বৃদ্ধ বয়সে সেবা সুখ জুটবে
এটাই তো একটা আশা ছিলো।
মানুষটির স্বপ্ন সত্যি হলো
সাহেব বেটার বাপ হলো,
কঠিন দুনিয়ায় লড়াই করে
মানুষটি আজ বৃদ্ধ আর অসুস্থ,
সাহেব বেটার কাছে ঔষধ চাইলো
ক্ষিপ্ত স্বরে খেদিয়ে দিলো।
অসুস্থতায় সেই বৃদ্ধ মানুষটি
একটু ছেলে মানুষী করতো,
বাপের ঘৃণ্যতা আসে বেটার
তাই পাগল বলে চালিয়ে দিলো।
যে না থাকলে সর্বহারা হতো
সেই সাহেব বাপকে বাড়িছাড়া করলো।
রূপাঞ্জনা মজুমদার
প্রণব দাস
জয় দেবনাথ
তনুজা রায়
সমীরণ বিশ্বাস
সঞ্জয় দত্ত
পিতৃদেব
ভগবান তুমি দিয়েছ কি?
খোলা আকশের নীচে
দাঁড়িয়ে আছে সেই অক্লান্তের পথিক,
তুমিই শ্রেষ্ট,তুমিই বীর।
তুমি ছাড়া শান্ত এই বিশ্বভূমি
হয়েছ তুমি আবার কখনো করুণাময়ী।
অনেক দায়িত্ব নিয়ে কীভাবে
পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখ তুমি?
আমার এই স্বপ্ননীড়ে
চাই তোমায় বারে বার,
কেউ কি চাই যে
তোমাকে হারাবার!
তুমিই পারবে আমার
ওই বিশ্বপ্রকৃতির নতুন রূপ দান করতে,
তোমারই কোমল স্পর্শে
জাগরিত হবে কত নতুন প্রাণ।
হে বীর, তুমিই অসীম
শোধিতে পারবোনা তোমার ওই ঋণ,
তোমায় জানাই সহস্র প্রণাম
তোমারই পদতলে দাও একটু স্থান।
জয়ন্ত শীল
জয়ীতা লস্কর
অভ্রজিৎ দেবনাথ
সোমা চক্রবর্তী
বিশ্ব পিতা
সুন্দর সকাল বেড়ে উঠা হল শুরু পথ চলার
পিতার দেওয়া মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলার।
বলতেন উনি সৎপথ আর সত্য কথায় যত বাঁধা আসবে,
তত বাঁধার পরেই যে এক সুন্দর সকাল আসবে।
আদর স্নেহ ও শাসনে আমি হয়েছি বড়ো,
তাই তো উনার অনুসরণে হয়েছি জ্বড়ো।
ছোট বেলা বুঝিনি কদর এই সংসারের মায়া
বড়ো হয়েছি এখনো দীক্ষিত উনার ছায়ায়।
আগলে রেখেছেন সারা জীবন হৃদয়ের মাঝে
বুঝিনী কভু দুঃখ নতুন আঙ্গিনার সাঁঝে।
এতটা সময় পেড়িয়ে তিনি হঠাৎ চলে গেলেন,
সময়ের যে ব্যথা এখন যন্ত্রনায় ভরিয়ে দিলেন।
উনিই জগৎ উনিই ভগৎ উনিই সংসারের পিতা,
আজ বুঝেছি বিশ্ব জগৎ, তিনিই বিশ্ব পিতা।
দেবব্রত চক্রবর্তী
তোমার ভালোবাসায়
মনে পরে তোমার কথা,
খুব মনে পরে;
যখন কোথাও যাওয়ার সময়
কেউ বলে না কোথায় যাস্ , তাড়াতাড়ি ফিরিস বাড়িতে।
সকাল,বিকাল ভাত খাওয়ার সময় যখন
কেউ ডাক দেয় না
তখন মনে পরে! তোমায়।
আজ তুমি নেই
আমি বড়ো একা
আমার স্বপ্ন বিলাস,আনন্দ উল্লাস হাঁরিয়ে গেল।
তোমার অকালে চলে যাওয়ায়,
তুমি আজ স্মৃতিতে মিশে গেছো।
এখনও তোমার উপস্থিতি,স্পর্শ অনুভব করি;
তোমার স্মৃতিতে।
তোমার শ্বাষন আদর আমার বায়না আর,ভালোবাসা হাঁরিয়ে ফেলেছি খুব কম সময়েই।
হয়তো তোমার সাথে অবহেলায় কাঁটানো দিনগুলো জীবনের শেষ পর্যন্ত কাঁদাবে ,
সৃষ্টির নিয়মে শেষটা অনেক কষ্টের,
অনুভুতি গুলি জমিয়ে রাখলাম; মনের গহনে।
তোমার ভালোবাসায়।
উর্মি সাহা
বাবার পরিচয়
হালখাতার নিম্নগতি সাথে
আমার আবদারের হিসেব,,
দুই মিলে এক অবাধ্য বিজ্ঞান।
তপ্ত দুপুরে কনফারেন্স চলে;
বাবার মাথা বয়ে ঝরা ঘামের ফোটায়--,
আর ইকোনমিক গণনায়।
চাহিদা হোক একটা কিংবা পাঁচটার!
রক্তকরবী বলো না কেনো---,
''কি দরকার এতোটার''??
সংঘ জুড়ে কিংবদন্তি হয়েছে প্রচুর জন,,,
তুবুও হাজার জনে---
তুমি আমার কিংবদন্তি একজন।।
আমার গল্পে তুমি আমার নায়ক,
আমার কাব্যে বাবা তুমি-ই আমার সহায়ক,,
আমার বিরহে বন্ধু তুমি-ই শ্রেষ্ঠ;;
ভয়-সংকোচে বাবা-ই আমার বটবৃক্ষ।
শৈশবের কন্ঠ ভাঙা অস্পষ্ট শব্দ আর-
বর্তমানের বাস্তব মেশানো বাক্য উচ্চারণে,
অবলম্বন একমাত্র তুমি।
যান্ত্রিক জীবনেও উত্তম পুরুষ---
মাত্র তুমি-ই আমি জানি।
পরিচয় আমার সামান্যখানি!!
পরিচিতি দিলে তোমারই শুভ্র নামে,
তোমার শার্ট এর গন্ধে-,
তোমার হাতের বাষ্পে।
শহর জুড়ে আমি কেবল,এক অবলম্বী নারী,
তবুও তোমার চিলেকোঠায় আমি সাহসী।
তোমার পরিচয়ে আমিই তোমার রাজকন্যা,,
বাবা তোমারই জন্যে আমি বিশ্ব শ্রেষ্ঠা।
মন্দিরা শীল
দুলাল চক্রবর্তী
পিনাকী ভৌমিক মুন
ভাশ্বতী হান্দাল
ড. রঞ্জিত দে
বিনয় শীল
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
উর্মি সাহা
মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...
-
আজ আশ্বিনের শেষ কার্তিকের শুরু এই দিনটা বিশেষ ভাবে বিশেষ, বাংলার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। জানি না বাংলার বাইরেও এইভাবে বিশেষ হয়ে উঠেছে কিন...
-
মূক ফেনীর মুখর পাঁচালি একটি বহুল প্রচারিত বাংলা প্রবাদ ‘ভাগের মা গঙ্গা পায়না’ ৷ প্রবাদটির মধ্য দিয়ে মায়ের অসহায়ত্বের যন্ত্রণাটিই ব্যক্ত হয়ে...