Wednesday, September 19, 2018

সমীর ভাদুড়ী

ভারতীয় দর্শনে গুরূশিষ্য পরম্পরা

ভারতবর্ষ মুনি ঋষির দেশ।আধ্যাত্মিকতাই এর প্রান।সুপ্রাচীন এই দেশ সত্য উপলব্ধির দেশ,সাধনার দেশ।এই মহা্ন সাধকদের দেশ ভারতবরসে্ গুরু শিষ্য পরম্পরা সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে।ভারতীয় আধ্যাত্মিক জীবনে গুরুর স্থান একটা অবিসংবাদি কৌলিন্যের স্থান।এমন কোনো ধর্মমত বা ধর্মমপথ ভারতে প্রায় নেই যার গোড়ায় গুরুর প্রয়োজনীয়তা খুব দৃঢ়তার সহিত সমর্থিত হয়নি।অতএব গুরুতত্তে্র আলোচনা একটা অত্যাবশকীয় আলোচনা এতে সন্দেহ নাই।যে শক্তি দ্বারা মানুষ ঈশ্বরের পথ অনুভব ও আস্বাদন লাভ করতে পারে, তাহাই হল গুরুশক্তি।শিষ্য ঠিক ঠিক গুরু বাক্য পালন কালে যে কর্ম শিক্ষালাভ করে এবং নিজ বিশ্বাসে ও ভক্তির দ্বারা কর্মে গুরু শক্তির কৃপা পায়।কর্ম করতে করতে আপনা থেকেই নিরহংকার ও সেবাভাব মনে আসে।তখন পূর্ন মাএায় গুরুর চরনে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয় শিষ্য।তখন গুরু শক্তি নিজে থেকেই শিষ্যের উপর বর্ষিত হয়।গুরুশক্তি শিষ্যের ভিতর কর্মের প্রকাশ ঘটায়।আর গুরুর শক্তি নিরবিকল্পে শেষ হয়।এখন প্রশ্ন হল গুরু কে?যিনি অন্ধকার দুর করেন,সংশয় দুর করেন তিনিই গুরু।গুরু অমর,তাঁর মৃত্যু নাই।ব্রহ্মই হল গুরু, সর্বভুতে তিনি বিরাজমান,সর্বএ তাঁর গতি ও স্থিতি।নিঃশ্বাসও প্রশ্বাসরূপে তিনিই আমাদের প্রান রক্ষা করেন।জলরূপে তৃষ্ণা নিবারন করেন,আহার্য্য রূপে ক্ষুধাগ্নি নিরবাপিত করেন।তিনি অখন্ড চৈতণ্য স্বরূপ।সদগুরু নিজেই একটা বিশ্ববিদ্যালয় যার জ্ঞান ভান্ডার থেকে আমরা জ্ঞান অর্জন করি।গুরু হলেন অভয়দাতা,সন্তাহারী,প্রানের প্রান আপনার জন।যতদিন শিষ্য উন্নত সংস্কারের অধিকারী না হবে,ততদিন তাঁকে উন্নত তত্ত দান করা গুরুর দায়িত্ব।গুরুর কাছ থেকে শিষ্যরা যে উদ্দীপনা ও যে প্রেরনা পায় তাকে বিশ্বজগতে ছড়িয়ে দেওয়ার নামই গুরু দক্ষিনা।যতটা স্বার্থ ত্যাগ গুরু আমাদের জন্য করেন ততটা স্বার্থ ত্যাগ আমাদের ও জগৎ কাল্যানের জন্য করতে হবে তবেই গুরু শিক্ষা স্বার্থক।সদ্ গুরু ও সৎশিষ্যের পরস্পরের সম্পর্ক বড় বিচিএ।কখনো এঁরা মাতা-পুএ,কখনো এঁরা ভ্রাতা-ভগ্নি,কখনো এঁরা সখা-সখী, কখনো এঁরা প্রভু-দাস,কখনো অভেদ সত্তা।ভালবাসার যতগুলি বিকাশ আছে সবগুলি ক্রমে ক্রমে এঁদের জীবনে ফোঁটে। সৎ শিষ্য পেয়ে সদ গুরু ভাবেন এমন শিষ্যের আমি যোগ্য নই,শুধু ভাগ্যগুনে পেয়েছি।সদ গুরু পেয়ে শিষ্য ভাবেন এমন গুরুর কৃপা লাভের আমি মোটেই যোগ্য নই,শুধু পূর্ব জন্মার্জিত পুন্যেরফলে লাভ করেছি- “শ্রী গুরু নির্ভরে শ্রীনাম উজ্জ্ব্ল, শ্রীনাম-নির্ভরে বুকে ভরা বল।’’ সৎ শিষ্য মনোময় উপচারে প্রানের আবেগ দিয়ে নিয়ত গুরুপূজা করেন,সদ গুরু শিষ্যকে ভগবানের প্রতিমুর্তি বোধে মনে মনে ভক্তির পুষ্পাঞ্জলি সমর্পন করেন- “ তোমারি কাজে হরি পেয়েছি যারে, তোমারি অবতার ভাবিয়া পায়ে তার প্রনতি করিয়াছি বারে বারে।’’ অনেকে দেখা যায় পিতৃমাতৃ দ্রোহী কিন্ত খুব গুরু ভক্ত,তারা ভন্ড। পিতৃদ্রোহী মাতৃদ্রোহী কার্যত গুরু দ্রোহীই। ধর্ম সনাতন শাশ্বত ও নিত্য।যে সকল আচার ব্যবহার গৌণভাবে মাত্র ধর্ম,এবং গৌণভাবে তারা শাশ্বত সত্যে জীবের অন্তরকে লগ্ন করার চেষটা করে বলে তারাই ধর্ম বলে সামাজে গৃহীত ও পূজিত। এইসব আচার ব্যবহারের মধ্যে যখন proportion and equilibrium এর অভাব ঘটে,তখন আচার ব্যবহারের পরিবর্তন সর্বজনিন ভাবেই প্রয়োজন হয়ে পরে।এরই নাম যুগ ধর্ম।সদ্ গুরু আমাদের দীক্ষা দেন।দীক্ষার মানে হল-rejuvenation of life বা আরো সত্য করে বলতে গেলে দীক্ষা হল-rebirth বা নবজন্ম।no one can take diksha if not inspired within by a zeal for a new life i.e rebirth.ভগবানের প্রকৃত নামে ডুবে যাওয়াই জীবের সবচেয়ে পবিত্র কর্তব্য।ঐ নামকেই দীক্ষা গুরু শিক্ষা গুরু জ্ঞাণ করা উচিত। নাম কত্তে কত্তে পরমাত্মার সেবায় জীবনোৎসরগের একনিষ্ঠ সংকল্প যখন এসে গেল জানতে হবে তখনই দীক্ষা হয়ে গেল।সাধারন বিচারে সাদা চোখে গুরু একজন শিক্ষক ব্যতীত আর কিছু নয় ।তিনি যা শিখেয়ছেন তা আমাদের শিখাচ্ছেন।তিনি যে সব কৌশল আয়ত্ত করেছেন তা অপরের কল্যান হেতু শিখাচ্ছেন।তিনি যে পথে চলেছেন ,সেই পথ আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছেন।কলেজে ইতিহাসে এম.এ ইতিহাস পড়ান,এই দৃস্টিতে যখন গুরু কে দেখি তখন তাঁর প্রনামের মন্ত্র- “অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া। চক্ষুরূন্মীলিতং যেন তাস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ’’ এই অবস্থাতে তাঁর বন্দনা হবে- তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ। শাস্ত্রে কুলগুরুর থেকে দীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ আছে এবং পৈতৃক গুরুর কাছ থেকে ও দীক্ষা নিয়ে সকলে কুলগুরু গ্রহন করেছি বলে মনে করেন।কিন্তু পিতার গুরুর যিনি কন্যা বা পুত্র তিনি বাস্তবিক প্রস্তাবে হয়ত নিজ জীবনে সত্যের জাগরন অনুভব না ও করে থাকতে পারেন।এমন অবস্থাতে শিষ্যের মধুলুব্ধ ভ্রমরের নেয় পর্যটন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।কুলকুন্ডলীনী যাঁর জেগেছে তিনিই কুল গুরু,তিনি আমার পুর্ব পুরুষের গুরু না ও হতে পারেন,এমন কি হয়ত আমার পৈতৃক দাস-বংশে তাঁর জন্ম হতে পারে।কুলকুন্ডলীনী নীচ বংশে ও জাগতে পারে যথা-কবীর,রুহিদাস,স্ত্রী লোকে ও জাগতে পারে যথা-মীরাবাঈ,যমুনাবাঈ,সারদা মা।স্বগুন স্তরে শিষ্য গুরু কে প্রনাম করে- গুরুরবিষ্ণুঃ গুরুরেব মহেশ্বর বলে।নিরগুন স্তরে শিষ্য গুরু প্রনাম করে-গুরুরেব পরং ব্রহ্ম বলে।সগুন স্তরে শিষ্যগুরুকে প্রনাম করে-যস্মাৎ জাতং জগৎ সর্বং যস্মিন্নবে বিলীয়তে,যেন দং ধার্য্যতে চৈব বলে।নিরগুন স্তরে শিষ্য গুরুকে বন্দনা করে-ব্রহ্মানন্দং পরমসুখদং কেবলং জ্ঞান মূর্তিং দ্বন্দাতীতং প্রভৃতি বলে।গুরু শিষ্যের এই পবিত্র সম্পর্ক আজ ও আমাদের এই মহান ভারতবর্ষে বিদ্যমান। “আমার গুরু তোমার গুরু, রামের গুরু শ্যামের গুরু, সবার গুরু একই গুরু, এই বোধেতেই সাধন শুরূ।’’ গ্রন্থপুঞ্জী-গুরু গীতা , অখন্ডসংহিতা,অমৃত সিন্ধু।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...