Tuesday, September 4, 2018

দীপক দাস

আমার মেয়েটি

যদিও আমি লিখছি আমার মেয়েকে নিয়ে  কিন্তু আমার  কেবলই মনে হচ্ছে এ  মেয়েটি শুধু আমার মেয়ে  নয়, এ যেন চিরকালের সকল মেয়ের প্রতিনিধি। আর আমি যে পিতা হিসেবে লিখছি এই আমিও বিশেষ আমি নই সর্বকালের সব পিতার প্রতিনিধি এই আমি। গতকাল একজনের ফেসবুকে দেখলাম রাখীবন্ধন উৎসব উপলক্ষ্যে আমার মেয়ে তার ভাইদের ফটো দিয়ে কাছে আবদার করেছে ওকে যেন ওরা ভুলে না যায়। ফটোগুলি দেখতে দেখতে ওর কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে, আমার মন ভীষণ কষ্টে ভরে যায়। আমি দেখি যে ওর মা বাবার উভয় দিকের সকল ভাইয়ের ছবি জোগাড় করে ফেসবুকে দিয়েছে । কেউ আমাকে যদি হঠাৎ আমাকে ওর সব ভাইদের কথা জিজ্ঞেস করে আমি হয়ত সেই মুহূর্তে সবার কথা বলতেও পারবনা । এছাড়া তাদের সবার  সাথে তার হয়ত যোগাযোগ ও নেই। তবুও ওর মনের মধ্যে সকল ভাইদের প্রতি এই যে প্রীতি ভালবাসা সঞ্চিত হয়ে, আছে তা দেখি আমি অভিভূত। ফটো দেখার সময় শচীন কর্তার একটি গান মনে ভাসছিল---- "ভাই ধনরে কইও আমায় নাইওর নিতো আইয়া" আমার চোখ কুয়াশায় ভরে উঠেছিল ।আমার ছোট মেয়েটি আজ কত বড়ো হয়ে গেছে ।ওর মনের গভীরে ওর মা বাবা ছাড়াও খুড়ততো, মামাতো,পিসতুতো ও আপন ভাইদের জন্য এতবড় জায়গা বিছিয়ে সে বসে আছে আমি ভারতে ও পারছিনা। আমি শুধু ভাবছি আমি কি আমার বোনদের এতখানি ভালবাসতাম?ভাইয়েরা কী বোনদের মত ভালবাসতে পারে?ওর  অতি ক্ষুদ্র লেখাটি পড়ে আমার কেবলই মনে হচ্ছে আমার সকল বোনদের সাথে অন্তত একবার দেখা করি। ওরা ও হয়তো আমার জন্য ভালবাসার আসন বিছিয়ে রেখেছে। দীর্ঘ বছর সে আসনে তো বসার সময় করে উঠতে পারিনি। কেবলি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম । শুধু আমি ও কাজ করব তা নয়,আমি আমার মতো সবাইকে বলব আমাদের বোনগুলি আমার মেয়ের মত অপেক্ষমান আমরা যেন তাদের না ভুলি লেখাটি পড়ে আমার মেয়ের মত অপেক্ষমান আমরা যেন তাদের না ভুলি  লেখাটি পড়ে আমার আরো  মনে হচ্ছে আমার ছোট মেয়েটি আজ বড়ো হয়েও যে ভাইদের জন্য অপেক্ষমান তারা কী ফেসবুকটি দেখেছে?আমার সবাইকে ডেকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে, তোমরা সবাই মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করো ও যে তোমাদের জন্য কষ্ট পাচ্ছে ।

      স্মৃতির গভীরে কত কথা লুকিয়ে ছিল,ফেসবুকটি এক মুহূর্তে স্মৃতির গভীর তলদেশ থেকে সেই সব মণিমুক্তা নিয়ে হাজির ছোট্ট বয়সে ওর মা ওকে যেভাবে ঘুম পাড়াত। মাঝে মাঝে ভেজা কাঁথা পাল্টে দিত, ঠিক সেইভাবে সে আমাকে বিছানায় ঘুম পাড়াত,কাঁথা পাল্টে দিত ,খাওয়াত,শাসন করত। আমি ছিলাম ওর জ্যান্ত খেলার পুতুল,এক ঘন্টা লাগিয়ে সে আমাকে সাজাত।আমি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়তাম কখনো কখনো,ও যখন খুব ছোট,একবার কলকাতা যায় মামার বাড়িতে তিন মাস পরে ফিরে আসে।এয়ারপোর্টে মা মেয়েকে আনতে গেছি প্লেন থেকে ও মায়ের কোলে করে নেমে আসে। ওর দিকে আমি হাত বাড়াই ও প্রথমে ওর মায়ের শাড়িতে মুখ লুকিয়ে রাখে,একটু পরেই আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর শরীরের স্পর্শ আমি আজো অনুভব করছি। ছবির মত আঁকা এই চিরকালীন দৃশ্য । দুজনেরই পরনে ছিল ঘিয়ে রঙের কাপড় । এ যেন রবিঠাকুরের 'যেতে নাহি দিব, কবিতার সেই ছোট্ট মেয়েটি ।বাবাকে সে যেতে দেবে না।অথচ যেতে দিতে হয়, সব চলে যায়' ওর ছোট্ট শৈশবের কত কথা। আমাদের বাড়িতে ওর এক দাদা আসত ও যাতে চলে যেতে না পারে আলমারিতে ওর জুতো। কেউ এলে যেতে পারবে না , সেই ছোট মেয়েটি আজ কত বড়ো হয়েছে, সংসার সামলাচ্ছে তবুও তার অর্থাৎ সকল মেয়েদের মনের গভীরে ভাইদের জন্য ততটা জায়গা থাকে এই ছবিগুলো না দেখলে ওর কথাটি না পড়লে আমার  অজানা থেকে যেত। ফেসবুকে ওকে না ভুলার কথা আমার হৃদয়ে গভীর নাড়া দিয়েছে আমিও সব বোনদের সাথে যোগাযোগ করছিও আমাকে জাগিয়ে দিল,নাড়িয়ে দিল।
                   

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...