Thursday, June 14, 2018

মিঠুন দেবনাথ

অনুরাধা  (দুই)




           হেমন্তের মধ্যকাল ; বিকেলের আকাশটা প্রায় পড়িতেছিল | সারাদিনের কর্মকান্ডে ইতি টানিয়া সূর্যটাও লালুদের বাগানের ভিতর দিয়া রক্ত কম্বলের ভিতর দেহটাকে লুকাইবার এক প্রকার বন্দোবস্ত সাড়িয়াছে | পুকুরের জল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিতে লাগিল , ঘোষদের কূপ হইতে আপন মনে গান গাহিতে গাহিতে গাঁয়ের ঝি'রা কলসী লইয়া গৃহে ফিরিতে লাগিল ,  মাঠ ঘাট হইতে সমস্ত পক্ষীকুলও গৃহাভিমুখে রওনা হইল | তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাইবার নিমিত্তে বরেনের বৌ পুজার ঘটিবাটি ধুইয়া হস্তপদে জল ঢালিল ; তখনও বালিকা ঘরে ফেরে নাই ! 


         ইতিপূর্বে বালিকা কখনোই এত দেরী করে নাই তবুও বিন্দু মাত্র চিন্তার কারণ নাই কেন না বহুদিনের চেনা জানা লোক , যদিও একটু দূর সম্পর্কের তবুও আত্মীয় বটে | পদের পর পদ ফেলিয়া গুণিলে বড়জোড় এবাড়ি হইতে ওবাড়ি পর্যন্ত আধ ক্রোশ হইবার পারে | বিগত তিন বৎসর কাঁধে ব্যাগ ঝুলাইয়া সেই পথেই পদের পর পদ ফেলিয়া গায়েত্রী মন্ডল বাড়ির বড় ছেলের নিকট হইতে ইংরেজির পাঠ গ্রহণ করিত |


          বিদ্যা রত্নে মধ্যম ; সবে মাত্র নবম শ্রেণিতে উঠিয়াছে | তবে বর্তমান যুগে নবম শ্রেণিতে বালিকারা যে প্রকারে শারীরিক গঠণের অধিকারী হইয়া থাকে গায়েত্রী তাহার তুলনায় কিঞ্চিত ডাগর হইয়া উঠিয়াছিল | 


         আশ্বিনি ঝড়ে বর্ষা বিদায় লইয়া মাস দুই পার হইলেও তখনও হটাৎ হটাৎ আকাশে মেঘ করিয়া অসময়ে বৃষ্টি নামিত | বরেনের দো চালাটা জীর্ণ শীর্ণ দেহ লইয়া বর্ষা কাটাইলেও হেমন্তে আসিয়া থমকে দাঁড়াইল ! 


           সূর্য ডুবিল | কাঁধের উপর শণের ভাঁড় লইয়া ইষৎ অন্ধকারে বরেন গৃহে ফিরিল | গৃহে ফিরিয়া গিন্নির মুখে কন্যার না ফেরার কথা শুনিবাই বরেন উচ্ছ্বল হইয়া কোনো প্রকার ইতস্তত না করিয়া কাঁধে গামছা ততসঙ্গে হস্তে একখানি টর্চ লইয়া গায়েত্রীর খোঁজে চরম বেগে ধাবিত হইল।

চলবে.......


No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...