Monday, February 22, 2021

প্রাণেশ দেবনাথ

পিসির পিঠে 
                    

দীর্ঘ ৫ বৎসর আগের কথা । আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়তাম তখন একবার পিসিমনির বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমার পিসুমশাই নেই, তিনি দাদার বয়স যখন ১২ তখন এই পৃথিবী ছেড়ে দূরের অসীম ওই আকাশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন । আমার দাদা এমনিতে একটু দুষ্টু কিন্তু মন থেকে খুব ভালো । যাইহোক  আমার পিসিমনিই আমার দাদাকে এই সুন্দর ভবিষ্যত প্রদান করল পিশুমশাইয়ের অনুপস্থিতিতে । দীর্ঘ ৫ বৎসর আগে আমি যখন পিসিমনির বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন ছিল পৌষ মাস, আর পৌষ মাস মানেই হল বাঙ্গালিদের কাছে পৌষ সংক্রান্তি বা মকরক্রান্তি, আর মকরসংক্রান্তি মানেই হল পিঠের মেলা । আহ্ ...... বলতেই মুখে মিষ্টি রসালো ভাব  চলে এলো । আমি যখন পিসিমনির বাড়িতে যাই তখন দেখলাম পিসিমনি আমি যাওয়ার আগেই বিভিন্ন রকমের পিঠে বানিয়ে বসে আছেন । আমি তাদের বাড়ির প্রধান দরজা পেরোতেই আমাকে দাদা এবং পিসি দুইজনই ঝাপটে ধরলেন । পিসিকে প্রনাম করে ঘরে প্রবেশ করলাম । এরপর পিসি আমাকে বিভিন্ন রকমারি পিঠে খেতে দেয় যা পিসি নিজের হাতে সকাল থেকে বানিয়ে রেখেছেন । সরাই পিঠের সঙ্গে খেজুর রস ....... আহ্, কী স্বাদ । তখন অনুভূতিটা এমন হচ্ছিল যেন আমি সেই খেজুর রসে ডুবে যাচ্চি। পাটি সাপটা, গোকুল পিঠে, পুলি আরো কত রকমারি পিঠে যে পিসি বানিয়েছে তা আমি চিনিও না । খাওয়া শেষ করার পরে দাদা বলল " চল ভাই এখন একটু ঘুরে আসি " । পিসিমনির বাড়ির কাছে একটি মাঠ ছিলো ওইখানে দেখলাম ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে ঘুড়ি উড়ানোর প্রচেষ্টা করছে । দাদা একটু দুষ্টু স্বভাবের আমার সাথে রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে কখন যে আঁখ খেতে ঢুকে গেলো আমি টেরও পাইনি । ওই আঁখ খেত থেকে দাদা খানিকের মধ্যে আঁখ তুলে এনে একটি অংশ আমাকে দেয় আর বাকিটা নিজে চিবোতে লাগলো । যখন বেলা ২ টো বাজে তখন হল স্নান করার পালা ।সেখানে গিয়েও দাদার দুষ্টুমীর শেষ নেই । আমি যতবার স্নান করে উঠে আসতে লাগলাম ততবার দাদা আমাকে কাদা দিয়ে ভরিয়ে দিতো । শেষমেষ আমাকে রেহাই দিলো আর নিজেও স্নান সেরে বাড়ির পথে রওনা দিলো । অনেক সময় কাটলো পিসিমনির বাড়িতে এবার নিজের গন্তব্যস্থলে অর্থাৎ নিজের আবাসিক বাসভবনে ফিরে যাওয়ার পালা । ভাত খেয়ে যওয়ার কথা বলল পিসিমনি কিন্তু ওইদিন ছিলো ওইদিনের শেষ বাস যেটা ধরতে না পারলে আমার আর বাড়ি যাওয়া হবে না সেইসঙ্গে আমার আগামীকালকের ক্লাসটাও হারানো হবে, যেটা আমি কোনোমতেই হারাতে চাই না । শেষে বাস আসল এবং আমাকে পিসিমনির সকল মায়া-মমতা ত্যাগ করে নিজের গণ্ডিতে ফিরে আসতেই হল । আজকের এই মকরসংক্রান্তির দিনে আমার আবার কথা গুলো মনে পড়ল। জানিনা দাদার ও পিসিমনির কতটুকু মনে আছে কিন্তু আমার পক্ষে ওইসব ঘটনা ভুলে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার । বর্তমানে আমি দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠ্যরত এবং দাদাও নাকি টেট পাশ করে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হয়েছেন এবং আমার পিসিমনি ছেলের জন্য মেয়ে খুজতে ব্যস্ত আছেন ।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...