Monday, February 22, 2021

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী

উমা এলো ঘরে

আশ্বিনের এক শেষ বিকেলের আলো এসে গলে পড়ল দরমার বেড়ার ফাঁক দিয়ে। ঠিকরে  উঠল, প্রতিমার মুখের  উপর পড়ে । আগত কার্তিক শিউলি ভেজা পথ বেয়ে এগিয়ে আসছে ক্রমে। উৎসবের মেজাজ, ছন্দ কোভিড মহামারীতেও যেন থির থির পায়ে কম্পমান। 

তুলির শেষ টান সারা। সুবল পাল  আচ্ছন্ন হয়ে আছেন নিজেই নিজের সৃষ্টির মাঝে। এখনো এক ঘোরের মধ্যেই বিচরণ করে চলেছেন তিনি। এই প্রতিমা যাবে পাঞ্চালী দেববর্মার  বাড়ি। মেডিকেল ডাইরেক্টর। সেই যবে থেকে পুজো শুরু হয়েছে ম্যাডামের বাড়িতে, সুবলের হাতের প্রতিমা ছাড়া  তাঁর হয় না। ষষ্ঠীর দিন এসে  নিয়ে যাবে লোক লস্কর বাজা বাদ্যি সহ। তারপরে গিয়ে হবে মায়ের বোধন।  ধূপে, দ্বীপে ফুল নৈবেদ্যে হবে মায়ের আরাধনা, তিন দিন ধরে। হাজার আলোর রোশনাই গর্জন তেলে পড়ে আরো একবার ঠিকরে উঠবে সেখানে।

   পেটে, পিঠে দলা পাকিয়ে আছে তবুও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সুবল পালের। আজ কতদিন হয়ে গেল ক্ষিদে শব্দটার সাথেই যেন আড়ি দিয়ে বসে  আছেন! বৌ কাজের বাড়ি থেকে ফিরলে আজ না হয় ভালো মন্দ কিছু হবে। উমা আসছে যে।

সেই সে কবে বাংলাদেশ থেকে আর সবার সাথে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুবল আগরতলা। বাপ ঠাকুর্দারা বংশ পরম্পরায় ছিলেন কুমোর। মাটির সাথেই সন্ধি তাদের। একজন থেকে আরেকজনে চলত এই ধারা উত্তোরোত্তর। নিজে হাতে শিখিয়ে দিয়ে যেতেন মৃত্তিকা শিল্প পূর্বোজোরা, উত্তর প্রজন্ম কে। তারপর একদিন হাঁড়ি, কলসি, মাটির পাত্র বানানো ছেড়ে বাবা তাঁর  মূর্তি শিল্পী হয়ে উঠলেন। ডাক আসতে লাগলো বাংলাদেশের বড় বড় জমিদার বাড়ি গুলি থেকে । সুবল তখন ছোট । বাবা সাথে করে নিয়ে যেতেন মূর্তি বানাতে সাহায্য  করার জন্য ।  জমিদার বাড়িতেই তখন দশভূজার মূর্তি তৈরী হত। শেষ না হওয়া অবধি থাকতে হত। অবশেষে অনেক অর্থ, উপঢৌকন সহ বাড়ি ফেরা। নাম ডাক বাড়তে থাকলে, অর্ডার বেশি আসতে লাগলো। তারপর থেকে বাড়ির পাশেই একচালা ঘর করে একসাথে চার পাঁচটা থেকে আট দশটা মূর্তি অবধি বানিয়েছিলেন সুবল পালের বাবা।

 সুবল বাধ্য ছাত্রের মতন বাবার কাছ থেকে হাতে হাতে এগিয়ে দিতে দিতে শিখে নিয়েছিলেন সেই সব নিখুঁত কাজ। নির্দিষ্ট করে তালিম দিতে হয়নি তাকে। সুবল ও তাঁর বাবার মতন নামকরা মূর্তি শিল্পী হয়ে উঠলেন অচিরেই। মূর্তি গড়া পেশার থেকেও নেশা তখন সুবলের। 

 তারপর হঠাত্  যে কি এক অশান্তি শুরু হল বাংলাদেশে, সুবলদের সবাই পাড়া কি পাড়া খালি করে যা আছে তাই নিয়েই পালিয়ে চলে এলেন ত্রিপুরা, আসাম, পশ্চিমবঙ্গে। বাংলাদেশের চারিদিকে তখন এক ডাক, "আইয়ে আইয়ে।" তাঁদের গ্রামের পুরো কুমোর পাড়াটাই যেন চলে এলো।  যে যেদিকে পারে।  কারোর সাথে যোগাযোগ আছে তো কারোর সাথে নেই। অনেকেই ইন্ডিয়া এসে পেশা পরিবর্তনও করেছেন । কিন্তু সুবলরা রয়ে গেছেন সেই এক পেশাতেই। 

আগরতলা এসে অসুবিধে বিশেষ হয় নি  সুবলদের।মূর্তি বানিয়েই বেশ সংসার চলে গেছে। বারো মাসের তেরো পার্বনের এই দেশে প্রতি মাসেই লেগে থাকে মূর্তির বায়না। দুর্গা পূজায় ক্লাব আর বাড়ি ঘরের পূজার বায়নাও থাকত বেশ। সুবল একটু বয়স কালে বিয়ে সাদি করে এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সংসার পাতেন। বড় সাধ করে মেয়ের নাম রাখেন ,উমা। মা তাঁর গত হয়েছেন কবেই। বাবা  বৃদ্ধ হয়েছেন। রোগ জরায় আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী।

তবে সুবলের ছেলের কখনোই তেমন আগ্রহ ছিল না মূর্তি বানানোর এই পেশায়। এই নিয়ে নিত্য অশান্তি লেগেই থাকতো । সে তখন ব্যাঙ্গালোরের রঙিন গল্পে মশগুল। আশ পাশের  অনেকের ঘর থেকেই যে তখন কুড়ি বাইশ বছরের ছেলেরা পারি জমাচ্ছে ব্যাঙ্গালোর ।কত বড় শহর! স্বপ্নের মতন সাজানো গোছানো। ইয়া বড় বড় হাইরাইজ বিল্ডিং।  যেনো আর একটু হলেই আকাশ ছুঁয়ে  ফেলে। সুবলের ছেলে সঞ্জিতের মতন গরিব মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেপুলেদের ও স্বপ্ন তেমনই আকাশ ধরে ফেলার থেকে কম নয়। 

কিন্তু রোজগারের ধান্দায় পড়াশুনা বন্ধ করে  ত্রিপুরা থেকে ছেলেরা   ওখানে গিয়ে হয় ড্রাইভারি করছে নয়তো দারোয়ান। কেউ সখে, আবার কেউ বা পেটের দায়ে । সোজা, সস্তায় টাকা কামাই বড় বড় শহরে। কে পড়ে থাকে নেতাজী পাড়ার মূর্তি বানানোর ঘিঞ্জি কারখানায়! 

কিন্তু  মেয়ে তাঁর মন প্রাণ দিয়ে  মূর্তি গড়তো । মাটি মাখা থেকে খরের গাদায় প্রলেপ লাগানো অবধি। কি নিখুঁত কাপড় পরায় মাকে। মাটির গয়নার ছাঁচে  ছাপ দিয়ে গড়ে তোলে মাটির গয়না। রাঙিয়ে তোলে  একেক ঠাকুরকে একেক রঙে। কখনো সাবেকি মূর্তি ও একটা দুটো গড়েন সুবল। মায়ের তখন অতসি ফুলের মতন  রঙ, তিল ফুলের মতন নাক আর পটল চেরা চোখ। চোখ আঁকাটা সুবল নিজের হাতেই রেখেছেন এখনো। রাখলেও মেয়ের বায়না, শিখবেই সে মা'য়ের চোখ আঁকা। বাবার চোখ আঁকার পরেই তো মৃন্ময়ী মা চিন্ময়ী হয়ে উঠেন। 

সামনের বিল্ডিংএ আর্ট কলেজের এক দিদিমণি থাকতেন। প্রায় সময়ই এসে বলতেন , "ওরে সুবল এবার মেয়ে টুয়েল্ভ দিলে পরে আর্ট কলেজে ভর্তি করিয়ে দিস।।মেয়ের হাতে জাদু আছে রে জাদু। একজন প্রতিষ্ঠিত ভাস্কর হতে সময় লাগবে না।  সমস্ত গুণ আছে ওর আঙুল গুলোয়। রামকিংকর বেইজের নাম শুনেছিস তো!! "

না শোনেনি এইসব নাম সুবল। সে কি করে শুনবে! সে তো ছাঁচে ফেলে মায়ের মুখ গড়ে। কাঠামোতে খড় লাগায়। মাটির প্রলেপ দিয়ে সেই একই ভাবে গড়ে তোলে অসুরের পেশি, সিংহের নাক চোখ ,ত্রিনয়নী'র তিনটে অলৌকিক নয়ন...
এর বাইরে সে দেখেনি আর কোন জগত্। জগত্ জুড়ে জগতের আভা এসে লাগেনি গতে বাঁধা সেই মূর্তি কারখানায়। সুবল ভাবে, কেবল ভাবে এইসব কি বলে গেলেন গো দিদিমণি!    

এমতাবস্থায় আগরতলা তে বড় বড় ক্লাবের রমরমা বাড়তে থাকে। এক একেকটা ক্লাব যেন পাল্লা দিয়ে  প্রতিযোগিতায় নেমে গেল । শৈল্পিক শৈল্পিক, আধুনিকতা চাই। গতে বাঁধা নয়। আর্ট কলেজের বড় বড় শিল্পীরা, পটু ছেলে মেয়েরা কাজ করে । যেমন প্যান্ডেল, তেমনি মূর্তি। কত বড় বড় মূর্তি একেকটা! বায়না দিয়ে আনতে থাকে ওরা শিল্পী  কুমোরটুলি থেকে নদিয়া, নবদ্বীপ  আরো কত জায়গার। বিশাল বড় বড় মূর্তি সব প্যান্ডেল জুড়ে । চুড়ান্ত পেশাদারিত্ব তাদের মধ্যে । সুবল নিজেই অবাক হয়ে থাকেন। কুশলতা তুঙ্গে তাদের। 

কাজ ছুটতে থাকে সুবলের হাত থেকে। প্রমাদ গুণলেন সুবলের স্ত্রী সুজাতা। সময় থাকতে বিদেয় কর  মেয়েকে ।বিয়ে দিতে তাগাদা দিতে লাগলেন বারংবার। 

অবশেষে পরিস্থিতির কাছে হার মানলেন সুবল। অনিচ্ছা স্বত্বেও জাত চেয়ে , ভাত দেখে পাত্রের কাছে দান করেই দিলেন মেয়েকে। মেয়ে তার কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিলো। খোয়াইতে শ্বশুর বাড়ি।শ্বশুর ,শাশুড়ি, ননদ, দেওরে ভরভরন্ত সংসার। একদিকে মেয়ে বিদায় হল আর আরেক দিকে সুবলের সংসারে যেন অলক্ষ্মী এসে বাসা বাঁধলো। সুবলের অর্ডার কমতে কমতে  দুই চারটে । 

কিন্তু  মেয়ে বিয়ে দিয়েও শান্তি কোথায়! অশান্তির আগুনের ছাইচাপা আঁচ লুকিয়ে থাকে না। এসে ছুঁয়েই দিলো মেয়ের বাপের বাড়িতেও। জামাই তার শিলচরে পোস্ট আফিসের পিওন। মন দিয়ে বসে আসে ওখানেই  আরেক মেয়েকে। মা বাবার অমত। তাই প্রায় জোর করেই বিয়ে করানো হয়েছে মা বাবার পছন্দের মেয়েকে। সেই যে সে ফুলশয্যাটুকুও না হবার আগে ঘর ছাড়লো আর এলোই না । সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিছিন্ন করেছে  বাপ মা'য়ের সাথে। আর সদ্য বিয়ে করা বৌ'টার এর সাথেও। অনায়াসে নষ্ট করে দিতে পেরেছে আরেকটা মেয়ে মানুষকে। পারবেই তো মেয়ে মানুষই তো তায় আবার অভাবী ঘরের।  তার আবার জীবন কি!
শাশুড়ি বলেন , ডাইনে ধরেছে আমার ছেলেকে, ডাইনে।

মেয়ে তার কান্নাকাটি করে নিয়ে যাবার জন্য । এ বিয়ে কি আর কোন বিয়ে! এ যেন এক সোনার খাঁচা। এ খাঁচায় প্রিয় মানুষ  ছাড়া কী সুখ! 

 কিন্তু শ্বশুরবাড়ির মানুষ দিতে নারাজ । এত বড় সংসার! জমি জিরেত ধান চালের কারবার ! এত কাজ করে কে! এমন পেটে ভাতে কামলা  পাওয়া যায় নাকি আজকাল! সুবলের সংসারে তখন কোনমতে যাও কিছু একবেলা জোটে  তো আরেক বেলা নাই। ছেলে কখনো সখনো টাকা পাঠায় তো কখনো না। সুবলের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে," থাকুক ওখানেই পড়ে ,দুটো ভাত তো দুবেলা করে  মুখে দিতে পারে!"   

পাড়া প্রতিবেশিরা বলেন, ডিভোর্সের কেইস কর খোরপোষ পাবে। কিন্তু সেটা করতেও তো উকিলের টাকার জোগাড় করতে হবে আগে। 

সুবল নির্বাক হয়ে পড়েন। বৌ তার বাসাবাড়ির কাজ নিয়েছেন দুটো। সুবলের আর কোন কাজ  জানা নেই। অনেকেই বলে রিকশ ভাড়া নিতে। কিন্তু সুবলের সেই অভ্যাস কোথায়! নেই। হাত যে তার শিল্পীর! সে হাতে রিকশ টানবেন কি করে! কিন্তু সংসার ও যে আর টানতে পারছেন না সুবল!

এর মধ্যে এলো হতচ্ছাড়া মহামারী কোভিড । চারিদিকে হা হুতাশা। সবাই দিশেহারা! পুজোও অনেক কম এবছরে। মা মনসা আর বিপদনাশিনীর  কিছু মূর্তি বিকেছে ব্যাস ওই পর্যন্তই ।তাও মূর্তি বানানোর খরচের সাথে পেরে উঠা যাচ্ছে না। বাবার ওষুধের খরচ বইবে না নিজের সংসার! ছেলেটা কাজ হারিয়ে ফিরে এলো ঘরে। সারাক্ষণ মোবাইল একটা নিয়ে ঘরেই পড়ে থাকে। 

সেদিন সোনামুড়া থেকে এসেছিলেন নুরুদ্দিন। গোলবাজারের পাইকারি বিক্রেতা। পাওনা টাকা নিতে এসেছিলেন। খুব খুশি! বলছিলেন এবারে বাইরে থেকে ছেলে নাতি  গুলো ফিরে আসাতে বেশ চাষ বাস করেছেন সবাইকে নিয়ে । ফসল নাকি তাঁর উপচে পড়া!

সুবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। কিছু জমি  যদি তারও থাকতো আশপাশে!
মনসা মূর্তি আর বিপদনাশিনী কয়েকটা বিকোতে পেরেছেন এবছর। ব্যাস ঐ পর্যন্তই । 


দুর্গা পূজা ও হবে কি হবে না কে জানে! মল মাস পড়াতে পুজো পিছিয়ে গেছে একমাস ।কোভিডের  যথেষ্ট সতর্কতা চারিদিকে। কত নতুন নতুন নাম আর নিয়ম। লকডাউন, আবার আনলক আবার নতুন করে সব স্বাভাবিক । চারিদিকে কত রকমের ভয়! মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। আজ এর ঘর , কাল ওর ঘর থেকে পজিটিভ পেয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোভিড সেন্টার গুলিতে চোদ্দ দিনের জন্য । 

  হঠাত্ সরকারি ফরমান এলো ছোট মূর্তি করে স্বল্প খরচে সারতে হবে পুজা। কাট ছাট করতে হবে বাজেটে।

এই যখন অবস্থা যে কটা অর্ডার পেত বাড়ি ঘরের সে গুলো ও এবার আর এলো না। শুধু আশায় বুক বেঁধে একটা মূর্তি গড়া শুরু করেছিলেন , পাঞ্চালী দেববর্মণের বাড়ির , সেটাই একটু একটু  করে  গড়ে তুলছেন। 

তেমনি এক শংকিত মারী ভেজা  দিনে হঠাত্  কে বা কারা বাইরে এসে হাঁক পারে,-"সুবলদা আছো নিও!"
কে কে ডাকে! শহরের বড় ক্লাব গুলির একটা বিদ্যাসাগর প্লে সেন্টার  ক্লাবের সেক্রেটারি। 
সুবল অবাক! সেই কবেই তো তারা সুবলের বাড়ির রাস্তা ভুলেছে। এখন কি কারন!
-"এবার আমরার মূর্তি তুমি বানাইবা দাদা । বায়না করতে আইছি। বাইরের থেইক্যা শিল্পী আনা রিস্ক। আর বাজেট ও কম তাই!" 
সুবল যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখছে। পরের দিন আরেক বিখ্যাত  ক্লাব -
পরের দিন আরো দুটো - এইভাবে পরপর দশটা মূর্তির অর্ডার এসে গেলো। সুবল  হতভম্ব! একি লীলা তব মাতেঃ!
  বাইরে থেকে শিল্পীরা আসেনি এবার। সুবলের যেন এক পলকেই  ভাগ্য খুলে গেলো। 
কিন্তু এত মূর্তি! এত মূর্তি  সে এই কদিনে রেডি করবে কি করে! ছেলে তো তার বাবু। হাতও লাগাবে  না। বৌ না হয় এটা সেটা এগিয়ে দেবে। এই পেশায় ওস্তাদ ছেলে পাওয়া অন্ততঃ এই দিনে খুব  মুশকিল এই মূহুর্তে ! ইসস্ যদি উমা থাকতো! বাপ মেয়েতে মিলে এরচে বেশি অর্ডার ও নিতে পারত। 

যেমন ভাবা তেমন কাজ। সুবল শুনলেননা কারোর কথা। খবর পাঠালেন মেয়ের শশুড়বাড়িতে। ওদের কোন ওজর আপত্তিই টিকলো না । স্পষ্ট বলে দিলেন সুবল, মেয়ে ফেরত না দিলে কেইস করে জেলের ভাত খাওয়াবেন ঘর শুদ্ধ সবাইকে।   সুবল মরিয়া! যেভাবেই হোক নিয়েই আসবেন সে উমাকে। এ বছর যেমন তেমন কিছু পয়সা হলে না হয় একটা দোকান দিয়েই বসবেন সামনে। বেশ চলে যাবে বাপ মেয়েতে দোকানদারি করে। সুজাতাকেও আর কাজে পাঠাবেননা। 

না না আর্ট কলেজের দিদিমণির সাথে দেখা করবেন সুবল। কি যেনো বলেছিলেন তিনি! সুবল স্বপ্ন দেখেন মেয়ে তার বড় আর্টিস্ট হয়েছে। কোভিড চলে গেলেও বায়না তার ঠিকই থাকবে।

একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন দশভুজার দিকে সুবল। হাতের তুলিটা তখনো হাতেই ধরা। চোখে সেই আদ্দিকালের কালো ফ্রেমের চশমা। পাওয়ারটা এবার চেঞ্জ করে নতুন ফ্রেমে বাঁধাতে হবে। মুখে, গায়ের গেঞ্জিটাতে এখানে ওখানে রঙের ছোপ লেগে চিত্র বিচিত্র হয়ে আছে। যেন পোড় খাওয়া চেহারায় বিগত দিনের ইতিহাসের আধুনিক চিত্রকলা। সংকেতে বুঝে নিতে হয় সব। মন তার শক্ত হয়ে উঠছে প্রচন্ড পরিশ্রম করার জন্য। সব গুলি অর্ডার সময় মত দিতে হবে।   

বাইরে একটা অটো থামার আওয়াজ পাওয়া গেল না! মেয়েলি গলায় ডাক,- "মা মা ও মা! বাবা ও বাবা কই তোমরা!" 
শুকনো ফেটে যাওয়া সুবলের ঠোঁটে ফুটে উঠে হাসি। অস্ফুটে দশভুজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন, " উমা আইলি!!

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...