Saturday, September 12, 2020
সম্পাদকীয়
সজীব পাল (ধারাবাহিক)
পর্ব ৩
চারিদিক নিস্তব্ধ ।কেউ কোনো কথা বলছে না।সবিতার মুখোমুখি বসে আছে নীপা ।পাংশু ও শুষ্ক মুখ দুজনের।এক ঘন্টা হবে সৌরাংশ বাবুকে বেডে এনেছে ।ডাক্তার বলেছে এক দুই ঘন্টা লাগবে জ্ঞান ফিরতে।নীপা সবিতাকে বলল," বাবার হঠাৎ এমন হলো কি করে ?"
সবিতা শান্ত এবং মৃদু কণ্ঠে বলল " দুপুরে একটা রঙ নাম্বারে কল আসে এবং বলে দুই লাখ টাকা না দিলে চুরির অপবাদের কেসটা হারিয়ে দেবে ।উকিল জর্জ নাকি সব তার হাতে ।"
" কে লোকটা বাবা চিনতে পারেনি?"
" কণ্ঠটা নাকি অফিসের পরিচিত কারোর ।তারপর ঘামতে থাকে ,আমাকে ডাক দিয়ে এইসব বলতে বলতে সোফার মধ্যেই পড়ে যায় ।"
নীপা আর কোনো কথা না বলে বাবার রুমে উঁকি দিলো ।একটা গাঁট্টাগোট্টা লোক সাদা বেডের উপর শুয়ে আছে অনড়।দেখতে অসহায় মানুষের মতো লাগছে।জঙ্গলের বড়ো গাছটা যখন কাঁটা হয় তখন ওই জঙ্গলের শোভা যেমন বিনষ্ট হয় তেমনি এখন সবিতা ও নীপার মানসিক অবস্থা । বাবার পাশে এসে বসল সে ।হাতটা আলতোভাবে ধরল । তার এখন বিকট শব্দে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ।কিন্তু পাশে একজন নার্স দাঁড়িয়ে,চিৎকার করলেই কথা শুনিয়ে বের করে দেবে।শব্দকে আটকানো যায় জলকে না ।তার চোখ ভিজে গেছে ।বাবাকে সে খুব ভালোবাসে।পেছন পেছন সবিতাও এসেছে ।মেয়ের চোখের জল সবিতা দেখে কাঁধে হাত দিয়ে শক্ত হতে বলে।অথচ সে নিজেই অনেক ভেঙে পড়েছে ।
সৌরাংশ বাবুর জ্ঞান ফিরে সকাল নয়টায়।ঘুম ভাঙার পর থেকেই প্রচন্ড বুক ব্যথা ।ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে গেছে কিন্তু ব্যথার কোনো পরিবর্তন নেই ।সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।সে কখন থেকে ছটফট করছে ।নীপা সারারাত কিছুই খায়নি ।কেবল সবিতা আর সে দুইকাপ চা খেয়েছিল বিস্কুট দিয়ে।সে এখন বাইরে দোকানে টিফিন করতে গেছে।এবং সে আসলে সবিতা যাবে।
সবিতা একা বসে আছে সৌরাংশ বাবুর সামনে ।
সবিতা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করল ," খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার ?"
" আহা! ডাক্তারকে একটু আসতে বলো না ।আর সহ্য করতে পারছি না ।"
" একটু ধৈর্য্য ধরো ইনজেকশন দিলো ত।ঠিক হবে আস্তে ।"
" কখন ঠিক হবে সবিতা ? সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে ।ঈশ্বর এ কেমন পরীক্ষা তোমার?"
নীপার চোখ উত্তেজিত ।এইটা ভ্রম নাকি সত্যি,কে বোঝাবে তাকে এখন? চোখকে কেন তার এমন অবিশ্বাস হচ্ছে!কেন তার মনে হয় সে এখন ঘোর স্বপ্নে আছে ! সে অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে ।
সে দোকান থেকে বেরিয়ে দেখলো মনীষ তার সম্মুখ দিয়ে উপেক্ষা করে চলে গেল অপরিচিত লোকের মতো ।তিন চার মাস চুল দাঁড়ি কাটা হয়নি ।তবুও মনীষকে চিনতে তার এতটুকু অসুবিধা হয়নি ।কিন্তু সে তাকে চিনলো না কেন ? সে মনীষের পেছন পেছন হাঁটা শুরু করলো।মনীষ মন্থর গতিতে রোবটের মতো ডাক রোডের উত্তর গলিতে ঢুকলো ।নীপাও তাকে লক্ষ্য করে এগোচ্ছে।এইদিকটায় লোকের তেমন যাতায়াত না থাকলেও মালবাহী কিছু টমটম এবং রিক্সা চলাচল করে।নীপা এই রাস্তায় একেবারে নতুন বলে সামনে কি আছে সে জানে না।মনীষ সামনে একটা ফলের দোকানের সামনে দাঁড়ালো ।নীপাও তার থেকে দশ পনেরো হাত পিছে দাঁড়িয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পাশের বড়ো বড়ো বিল্ডিং এর দিকে তাকাচ্ছে,মনীষের চোখকে এড়াবার জন্য।অবশ্য মনীষ কিন্তু একবারের জন্যও পিছনে চোখ বুলায়নি ।মনীষ কিছু ফল কিনে ডান দিকের মেইন রোডের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
নীপার কি এখন মনীষকে ডাক দেওয়া উচিত ? হয়তো সে তাকে তখন সত্যি সত্যি দেখতে পায়নি ।সে একটা দ্রুত সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে ।একবার ডাক দিতে গিয়ে আবার চিন্তা করল দেখা যাক না কোথায় যায় !
মনীষ অটোতে ওঠে গেল ।ড্রাইভারকে কোথায় যেতে নির্দেশ করেছে সে শুনতে পায়নি ।এতটা দূর থেকে শোনার কথাও না ।কাজেই তাকে এখন ফলো করা ছাড়া দ্বিতীয় পন্থা নেই।কিন্তু ওই দিকে বাবার অবস্থা কেমন তা তো জানা দরকার!মা একা একা সামলাতে পারবে না।শুধু শুধু একটা মানুষের জন্য কেন সে সারা শহর ঘুরবে ! একটা পরপুরুষের জন্য সে এমন উতলা হচ্ছে কেন ?তার সাথে তো কয়েক মাসের পরিচয় মাত্র! এমন দুর্বার আকর্ষণ কেন তার প্রতি ! সে তো এই জীবনের কেউ নয় !
নীপাও অন্য একটা অটোতে ওঠে গেল ।এবং মনীষের অটোটাকে ফলো করতে বলল।
অটো থামলো একটা বিরাট জলে ভরাট পুকুরের পাশে ।পুকুরে অনেকগুলো হাঁস সারিবদ্ধভাবে এইপাড় থেকে ওপাড়ে যাচ্ছে।নিম্নশ্রেণীর প্রাণীদের মধ্যে শৃঙ্খলা খুব সুন্দর ।এরা উচ্চশ্রেণী কোনো জীব দ্বারা বাঁধা না পেলে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা কখনো লঙ্ঘন করে না।পুকুরের ঘাট অদ্ভুতভাবে বাঁধানো ।প্রথমে কয়েকটা সিঁড়ি,তারপর জল ডুবা সিঁড়ি ।এর পরে আবার ভাসা সিঁড়ি ।বেশ চমত্কার লাগছে দেখতে ।বোঝাই যাচ্ছে শৌখিন ব্যক্তিদের কাজ । বারো চৌদ্দ বছরের দুইটা ছেলে জলে সাঁতার কাটছে বেশ আমোদ করেই।যেন এইটাই এদের চরম সুখ।নীপা কি গভীর উৎসুক নিয়ে দেখছিল এই মনোজ্ঞ দৃশ্য ।তার মনোসংযোগ ভাঙলো ড্রাইভারের প্রশ্নে।ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো, ম্যাডাম এখন কি করব?
নীপা ড্রাইভারের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মনীষের অটোটাকে খুঁজতে লাগলো চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে ।ড্রাইভার আবার বলল,ম্যাডাম কি খুঁজছেন?
" যাকে ফলো করছিলে সে অটোটা কোথায় ?"
" সেটা তো অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছে !"
"চলে গেছে মানে কি !তোমাকে না বললাম ওই অটোটাকে ফলো করতে ?"
"ম্যাডাম ওই অটো থেকে একজন লোক নামার পর খালি অটো ফিরে গেছে ।আপনে নিশ্চয়ই লোকটাকে ফলো করতে বলেছেন ।ওই লোকটা তো নেমে ওই সামনের কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করলো ।ওই রাস্তায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।সকালে বোধ হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে ।এইবছর যা বৃষ্টি হচ্ছে ।তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি ।ভাবলাম আপনে বুঝি নজর রাখছেন ।"
নীপা লোকটার বুদ্ধি দেখে বিস্মিত ।কেমন দক্ষ স্পাই এর মতো গড় গড় কথা বলতে লাগলো ।কিন্তু এইসব লোকদের প্রশ্রয় দেয়া ঠিক না ।প্রসঙ্গ পাল্টে নীপা বলল," বৃষ্টি হয়েচে মানে কি !সকালে তো বেশ রোদই ছিল ।"
" ম্যাডাম আমরা শহর ছেড়ে অনেকটা দূরে একটা গ্রামে এসে পড়েছি।দেখেন না ছেলেরা কেমনে জলে ডুবাডুবি করছে! শহরের ছেলেরা তো সাঁতার জানে না ।"
পুকুর হাঁস দেখে নীপার বোঝা উচিত ছিল।সে একটু লজ্জা পেলো।তার বুদ্ধি তার সঙ্গ দিচ্ছে না সে টের পাচ্ছে।মোবাইলে সময় দেখলো,প্রায় পনে এগারোটা ।," আচ্ছা আমরা এখন কোথায় আছি ?"
ড্রাইভার ঠোঁটচেপে বিজ্ঞের হাসি হাসলো।,"আমরা হাঁপানিয়ার কাছে একটা গ্রামের ভেতর ।"
" আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন যাও।"
নীপা ড্রাইভারের ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ওই পথ ধরে হাঁটছে।ড্রাইভারটি এখনো কৌতূহলী বড়ো বড়ো চোখ নিয়ে ভ্যাবাচ্যাকার মতো চেয়ে আছে।তার সঃন্দেহ নীপা কোনো আইনের লোক।তা না হলে একটা মেয়ে মানুষ শুধু শুধু পুরুষ মানুষকে কেন ফলো করবে !সে অটো থেকে নেমে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে সিগারেট টানলো।
নীপা অনেকক্ষণ হাঁটার পর ছোট একটা শিবমন্দিরের পাশে মনীষকে দেখতে পেলো ।অদ্ভুত ভঙ্গিতে সুখদুঃখবোধ এবং চেতনাহীন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।নীপা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে তার দিকে। আর ভেতরে ভেতরে কাজ করছে এক আশ্চর্য ভয়।হারানোর ভয়!কি হারাতে পারে তার ! কিন্তু তার সমস্ত সংশয় দ্বিধাকে দূরীভূত করে দিলো মনীষ।যদিও সেটা মূহুর্তের জন্য।আর মূহুর্তের সুখটাই মানুষের জীবনে বিরাট রেখাপাত সৃষ্টি করে।
মনীষ স্বাভাবিক ভাবে নীপাকে বলল," আসুন,কেমন আছেন আপনে?"
নীপা একটু অবাক বটে তবে সে ভেবেছে দীর্ঘদিন দেখা সাক্ষ্যাত না থাকার কারণে তুমি থেকে আবার আপনেতে উঠেছে ।
" ভালো,তুমি কেমন আছো মনীষ ?
" ভালো।"
" তুমি এখানে কেন ?"
মনীষ কথার জবাব দিলো না ।চোখমুখ স্থির করে আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে ।নীপা আবার বলল," তোমার সাথে বলতে চাই ।"
স্বাভাবিকভাবেই বলল,"আসুন ভেতরে আসুন ।"
একটা বাসের তরজার বেড়া এবং টিনের ছাউনি দেওয়া একটা ঘরে গেল মনীষের পেছন পেছন।সারাঘর অগোছালো।যেখানে কাপড় থাকার কথা সেখানে কাপড় নেই ।তা দলামুছা করে চৌকিতে রাখা।জলের কলসির পাশে রাখা বৈদ্যুতিক চুলা ।এবং তার উপর ছোট একটা ডেকচি।
নীপা বসেছে চৌকির একটা কোণে।তার সামনেই একটা ভাঙা চেয়ারে বসেছে মনীষ।"এতদিন ধরে এখানে পরে আছো কেন ?"নীপাই আগে বলল।
মনীষ না বোঝার মতো ভ্রু কুঁচকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলল," কি বলছেন আপনে!"
" তুমি অফিস ছেড়ে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে এমন একটা নির্জন কুৎসিত গ্রামে কেন পড়ে আছো?আর এমন এক্সপ্রেসশেন করছ যেন তুমি আমাকে চেনো না! অনন্তকাল ধরে এই জায়গায় বাস করছ ?"
নীপাকে অবাক করে মনীষ বলল ," কিছু মনে করবেন না আমি আপনাকে সত্যি চিনতে পারছি না।সেই কখন ডাক রোড থেকে দেখছি আপনে আমার পিছু নিচ্ছেন।তাই ভাবলাম আপনার বোধহয় আমাকে প্রয়োজন।"
কথা শুনে নীপার হাত পা কঠিন হয়ে আসছে ।এই কি বলছে পাগলের মতো ।কেউ কাউকে প্রয়োজনে চোখের সামনে রেখে ফলো করে আবার ! সে কি সত্যি তাকে চিনতে পারছে না নাকি ! " আমি নীপা মনীষ ।আমরা একসাথে অফিসে কাজ করতাম ।কিন্তু তুমি হঠাৎ করে পাক্কা তিন মাস বিনা নোটিসে লাপাত্তা হয়ে গেলে।আমরা ভেবেছি তুমি বুঝি বাড়ি গিয়েছ ।কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল সেখানেও নেই।দারুণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম সবাই।এখন তোমার নাটকীয়তা থামিয়ে একটু স্বাভাবিক হও ।"
মনীষের কপালে ভাঁজ পড়ল ভ্রু কুঁচকাতে গিয়ে ।চেহারায় কেমন যেন একটা কাঠিন্য ভাব চলে এসেছে।কালো কালো দাঁড়ি গোঁফের মাঝেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেয়েদের মতো তার অধর কাঁপছে ।কি রকম একটা অস্বস্তি বোধ করছে।নীপা লক্ষ্য করল এই তার স্বভাবে নতুন যুক্ত হয়েছে ।কাঠিন্যতার মধ্যেও কিরকম শিশু শিশু ভাব আছে ।কিন্তু এইটা স্পষ্ট নয়।দেখতে মায়া মায়া লাগছে।
মনীষ অপরাধীর মতো বলল," আমি সত্যি বলছি, আপনাকে চিনতে পারছি না!বিশ্বাস করুণ আমাকে !"
" তুমি এইভাবে কথা বলছ কেন?"
" আপনে তো আমার কথা বিশ্বাসই করছেন না ।আর পৃথিবীতে মিথ্যে অবিশ্বাসের আগুনের মতো উত্তপ্ত এবং পীড়াদায়ক আর কিছু নেই ।জানেন এইখানে কেউ আমাকে বিশ্বাস করতে চায় না ।সবাই বলে আমি নাকি কি একটা ফন্দি ফিকির করতে এসেছি ।"
" সত্যি তোমার পূর্বের কোনো স্মৃতি মনে নেই ?"
" এখানে সত্যি মিথ্যে আসছে কোত্থেকে!"
" ঠিক আছে তোমার কিছু মনে করতে হবে না ,চলো আমার সাথে আমাদের বাসায়।"
মনীষ বিরক্তি সুরে বলল," আচ্ছা মানুষ তো আপনে ! জান তো আপনে এখান থেকে আমার কাজ আছে ।"
নীপা ভীষন আহত হলো।মনীষ কখনো এইরকম ছিল না ।তবে কি সে মানসিকভাবে অসুস্থ! যদি তা হয় তাহলে তো তাকে এখানে ফেলে রাখা কোনো মানে হয় না।কি করবে সে বুঝতে না পেরে আর কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে পড়ল।এই বিষন্ন হৃদয় নিয়ে তার আর কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই।রাস্তায় নেমে সে কোনো গাড়ি না থামিয়ে নিঃসঙ্গ পাখির মতো হাঁটছে।
হাঁটতে হাঁটতে সে আকাশ পাতাল চিন্তা করেও খোঁজে পারছে না মনীষের প্রতি এত আবেগের কারণ।পাশ দিয়ে একটা বড়ো ট্রাক চলে গেছে ।আর একটু হলে ছিটকে পড়ত ।কিন্তু সেদিকে তার ভাবান্তর নেই।সে অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটেই যাচ্ছে।কে জানে হয়তো পরের আরেকটা গাড়ি এসে তাকে রক্তাক্ত না করে দেয় ।
রূপালী মান্না
পিয়াল দেবনাথ
অদিতি সাহা
স্নিগ্ধ শীতল শরৎ পবন,
মাতালো যখন এই ভুবন,
শিশিরে শিশিরে সিক্ত ঘাসে,
রাঙা পায়ে পদ্ম-পলাশে:
ধবল মেঘে নীল গগনে
মাঠে ঘাটে ছুটে কাশবনে,
আঙিনা ভরা পুষ্প কাননে
ভরিয়ে দিয়ে ভ্রমর গুঞ্জনে,
প্রজাপতির রঙিন পাখায়,
ডালে ডালে পাতায় পাতায়,
কুয়াশা ভরা ভোরের বেলায়,
সুভাষ ছড়িয়ে শিউলি তলায়,
তালপাতার ছোট্ট কুটিরে,
আধার সরিয়ে আলো করে,
আম্রপল্লব,দূর্বাধানে
নানা পাখির মিষ্টি গানে,
ঢাকুরীয়ার ঢাকের আওয়াজে,
অসুর নাশে দূর্গা সাজে,
শুনিয়ে দিয়ে চিরন্তন বানী,
সিংহবাহনে আসছে ভবানী।
ঝুমা সরকার
মা
মা নামটি ভারী মিষ্টি
মধুমাখা মহাসৃষ্টি।
মায়ের মাঝে ভালোবাসা
সাগর প্রমাণ অতলতা।
তুমি যে মোর সর্বসুখ
মা নামতে জুড়ায় বুক।
তোমায় ডেকে জুড়ায় অন্তর
সকল দুঃখ হয় যে দূর।
সুস্মিতা মহাজন
অনুপম রায়
রাহুল শীল
উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য
চয়ন ধর
সৌরভ শীল
পরিতোষ সরকার
দিপিকা রায়
সঞ্জয় দত্ত
গৌতম মজুমদার
সাধন নমঃ
প্রীতম শীল
রুবেল হোসেন
দিপ্সী দে
সম্রাট শীল
কবিতা সাহা
পূজা মজুমদার
তোমার দুর্গা আমার দুর্গা
তোমার দুর্গা মহালয়া ভোরে শরৎ মাখছে গায়
আমার দুর্গা এখনো দেখছি ফুটপাতে জন্মায়।
তোমার দুর্গা অকালবোধন একশো আটটা ফুল
আমার দুর্গা দূর থেকে দ্যাখে খিচুড়ির ইস্কুল।
তোমার দুর্গা আগমনী গান গিরিরাজ কন্যার
আমার দুর্গা ঘর দোর ভাসা বাঁধ ভাঙা বন্যার।
তোমার দুর্গা প্রতিবার আসে বাবা মা'র বাড়িতেই
আমার দুর্গা মা'র কোলে পিঠে, বাবার খবর নেই।
তোমার দুর্গা টেক্কা দিয়েছে এবার থিমের পুজো
আমার দুর্গা ইট বয়ে বয়ে এক্কেবারেই কুঁজো।
তোমার দুর্গা হুল্লোড়ে মাতে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে
আমার দুর্গা বাঁচতে শিখছে অতীতকে ছুঁড়ে ফেলে।
তোমার দুর্গা আলো ঝলমল চেনে না অন্ধকার
আমার দুর্গা রোজ সেজে গুজে খোঁজে তার সংসার।
তোমার দুর্গা শপিং মলের কফির ধোঁয়ায় ওড়ে
আমার দুর্গা চা বানাচ্ছে, তিন রাস্তার মোড়ে।
তোমার দুর্গা বহুজাতিকের বহুজনহিতায়চ
আমার দুর্গা কালকে যেমন, আজো তথৈবচ।
তোমার দুর্গা ছবির ফ্রেমের শিউলি এবং কাশে
আমার দুর্গা এখনো আশায় কেউ যদি ভালোবাসে।
তোমার দুর্গা ধুনুচি নাচের ঢ্যাম্ কুড় কুড় ঢাকে
আমার দুর্গা ঘুরেই মরছে দশচক্রের পাকে।
তোমার দুর্গা অঢেল খাবার অঢেল নষ্ট হয়
আমার দুর্গা দিন আনাআনি কিছু নেই সঞ্চয়।
তোমার দুর্গা কুলকুল নদী, স্নেহের প্রথম পাঠ
আমার দুর্গা নখের আঁচড়ে ভয়েই শুকিয়ে কাঠ।
তোমার দুর্গা অস্ত্র শানায় সিংহবাহিনী রূপ
আমার দুর্গা কাঁদতে কাঁদতে নির্বাক, নিশ্চুপ।
তোমার দুর্গা দশভুজা হয়ে অসুরের মাথা কাটে
আমার দুর্গা অপুষ্টি নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে হাঁটে।
আমার দুর্গা কবে বলো আর তোমার দুর্গা হবে ?
আমার আকাশ ভরবে তোমার উৎসবে উৎসবে !
শিপ্রা দেবনাথ
গৌতম দাস
এই দিন আসছে
অন্ধকার প্রিয় মানুষজন অন্ধকারই ভালোবাসে।
জ্ঞানের আলোতে তারার উল্টি আসে।
নাতির বেলায় বড্ড জল
নাতনির বেলায় গা মুছে ঘরে চল।
বাবুরার দাঁত মাজার ফাঁকে
জল চলে নিজ পথ এঁকে।
জলের মৃত্যুতে পাড়া যখন শূণ্য।
ওরা চিৎকার শুনে না হেডফোনের জন্য।
ভদ্র বাড়ির অন্নপ্রাশনটা হল পন্ড
জলের অভাবে ঘটল এই কান্ড।
টাকার কুমীর ও বিছানা আছে যত
পাড়ায় পাড়ায় জল নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে শত শত।
হবু বরের একমাত্র পণ-
একশ লিটার বিশুদ্ধ জল।
শত চেষ্টার পরও কনের বাবা হল বিফল।
সোনা,রূপা চায় না বর
বিয়ে হবে সেখানেই যে দেবে খাবার জল।
আধুনিক যুগের বর্বরতা
ভুলে যাচ্ছে জলের মর্মকথা
অপচয়ের জগতে এতই মশগুল
শুকনো খাবার খেয়ে দিচ্ছে ভুলের মাশুল।
তিন দিনের স্নান চলে এক বালতি জলে
এটাও জোগাড় হল বহু কষ্টের ফলে।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে চাও যদি ভাই
কাজের ফাঁকেও চলো জলকে বাঁচাই।
জীবন নিয়ে যারা হেলার ভেলায় ভাসছে।
চিন্তার কারণ নেই এই দিন আসছে।
অসীম দেববর্মা
সাগর চৌধুরী
অতনু রায় চৌধুরী
নিপু দাস
অন্তরা সাহা
তনুজা রায়
মোহাজির হুসেইন চৌধুরী
বর্ষা দে
অমিত রুদ্র পাল
শ্রীমান দাস
মাধুরী সরকার
দেবাশ্রিতা চৌধুরী
উর্মি সাহা
মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...
-
আজ আশ্বিনের শেষ কার্তিকের শুরু এই দিনটা বিশেষ ভাবে বিশেষ, বাংলার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। জানি না বাংলার বাইরেও এইভাবে বিশেষ হয়ে উঠেছে কিন...
-
মূক ফেনীর মুখর পাঁচালি একটি বহুল প্রচারিত বাংলা প্রবাদ ‘ভাগের মা গঙ্গা পায়না’ ৷ প্রবাদটির মধ্য দিয়ে মায়ের অসহায়ত্বের যন্ত্রণাটিই ব্যক্ত হয়ে...