Thursday, January 24, 2019

তরুণ কান্তি পাল

ভারত ভ্রমণ

২৫ জুলাই, ২০১৬। জীবনে প্রথম ইন্ডিয়া ভ্রমণের এই দিনে ব্যাঙ্গালুরু থেকে ৪৯ ঘন্টার ট্রেন যাত্রার শুরু। উদ্দেশ্য নিউ-জলপাইগুড়ি। আমার জীবন কাহিনীতে বৈচিত্র্য আনয়নকারী সেই ট্রেনের নাম ‘নিউ তিনসুকিয়া এক্সপ্রেস’। ট্রেনের গন্তব্য তিনসুকিয়া, আসাম। ভ্রমনসঙ্গী বন্ধুসুলভ ছোটভাই, প্রকাশ। রাত ১১:৩০। চেপে বসি আমাদের জন্য পূর্বনির্ধারিত ৩-টায়ার এসি বি-৩ বগীর ৫৬ ও ৫৭ নম্বর সিটে। ট্রেনের সম্মুখদিক বিবেচনায় বগীর প্রথম কামরায় অবস্থান আমাদের। ট্রেন ছাড়ার সময় ১১:৫৫। তথাকথিত লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইটে অবিশ্বাসী আমি তখন আমাদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখতে ব্যস্ত। আমার পূর্ববিশ্বাস গুড়িয়ে দিয়ে আলোক ঝলকানি হয়ে দৃশ্যপটে কারও আগমন। বিগত ৭ দিনের ক্লান্তি ধুয়ে সে আরো প্রাণবন্ত করে দিলো আমায়। খাঁটি বাঙালী আমি। মনোভাব অনেকাংশেই রক্ষণশীল। নিজেকে সামলে নেই। যথাসময়ে চলতে শুরু করে ট্রেন। সকল আধুনিকতা সম্বলিত ট্রেনটিতে যথারীতি ডিনার ও অন্যান্য কাজ শেষে ঘুমিয়ে পরি। ২৬ জুলাই, ২০১৬। ‘চায়ে.... চায়ে......’ চা বিক্রেতার ডাকে ঘুম ভাঙে। ঘড়িতে তখন ৮:৩০। ৩-টায়ারের আপারে সিট হওয়ায় সিড়ি বেয়ে নিচে নামি। ফ্রেশ হয়ে কামরায় ফিরে দেখলাম সবাই উঠে পরেছে। কিছু অপরিচিত মুখ। কাল বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় কারো সাথেই পরিচিতি হয়নি। কাজটি সেরে নিলাম আজ। কামরায় আমরা দুজন ব্যতীত ২জন আসাম নিবাসী, বাকি ২জন পশ্চিম-বঙ্গীয়। মজার বিষয় এই যে ২জন আসাম নিবাসী সহ সবাই বাংলায় পারদর্শী। একসাথে সকালের নাস্তা ও অনেক গল্পগুজব হলো দুদেশ নিয়ে। মুঠোফোনে লো-ব্যাটারী সিগনাল সত্ত্বেও আমার কামরায় চার্জিং পয়েন্ট না পেয়ে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল আমাকে। একজন ভারতীয় সঙ্গীর প্রশ্ন, 'কিছু খুঁজছেন দাদা?'. আমরা দুজন ব্যতীত বাকি সবাই প্রায়শই এই ধরণের ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। তাই আমি বলতেই আসাম নিবাসী একজন বলে দিলেন, 'পাশাপাশি দু-কামরার জন্য যেকোনো এক কামরায় চার্জিং পয়েন্ট থাকে। একটিবার পাশের কামরায় গিয়ে দেখুন দাদা।' ভাগ্যদেবতা অশেষ কৃপাময়। মাত্র একটি দরজা পার হলেই পাশের কামরা। আমি পা বাড়াই। আমার দৃষ্টিসীমায় আরো একবার আলোক ঝলকানি। সেই অপরূপা, এক ঝলক দেখেছি কাল যাকে। আমার অবস্থান সেখানেই, যেখানে ওর অবস্থান। নিজেকে সংবরণ করলাম পুনরায়। চার্জিং পয়েন্টও দেখতে পেলাম। কিন্তু সে অবধি পৌছতে অতিক্রম করতে হবে মেয়েটি সহ ওর ৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারটিকে। বুঝে নিতে কষ্ট হলোনা, সাথে ওর বাবা, মা আর ছোটভাই। কাউকে নির্দিষ্ট না করেই অনুমিত চাইলাম, 'Can I use this charging point please?' অন্য কেউ শুনলোনা বোধহয়। মেয়েটি মুচকি হেসে বললো, 'Sure'. ফোনটি চার্জে লাগিয়ে ফিরে এলাম নিজ কামরায়। মনে উৎফুল্লতার লুটোপুটি। ১.৫ ঘন্টা কেটে গেলো। ওকে পুনরায় দেখার অভিপ্রায় অন্তরে আমার। তাই মুঠোফোনটি ফেরত আনতে গেলাম। এবার ওই কামরায় যেতেই কেন জানিনা মনে হলো মেয়েটিও আমার অপেক্ষায়। আমি মুচকি হাসতেই ও নিজের হাতে ফোনটি চার্জ হতে খুলে দিলো আমায়। ছুঁয়ে গেলো ওর হাত আলতোভাবে আমার হাতটিকে। চলে এলাম আমি। আমার কামরার নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে কিছুটা দেখা যেতো ওকে। কামরার সবার সাথে সুসম্পর্ক হওয়ায় মাঝে মধ্যে ওকে দেখতে ওখানে গিয়ে বসতে থাকি আমি। আমাদের দুই কামরার জন্য নির্ধারিত ওয়াশরুম ও বেসিন ব্যবহারের জন্য প্রতিনিয়ত ওকে পার হতে হতো আমার কামরা। ওর দুহাত ভর্তি প্রসাধনী বা অন্য কিছু নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় বহির্গমন দরজা খুলে দিয়ে সাহায্য করতে সদা প্রস্তুত থাকতাম আমি। আমার প্রাপ্তি ওর পরিতৃপ্তির হাসি। ২৭ জুলাই, ২০১৬। আমার ভাইটি ওকে জিজ্ঞাসা করে,'Excuse me, where are you from?.' ও বলে, 'Guwahati, Assam. You?' প্রকাশের উত্তর, 'Bangladesh. Have you ever visited Bangladesh?' মেয়েটির উত্তর, 'No.' রাত ১২:৫৫। আমাদের ট্রেন থেকে নামার মুহূর্ত আসন্ন। কম্বলে মুখ অবধি ঢেকে নিদ্রাচ্ছন্ন ও তখন। ওকে আর একটিবার দেখার আকুতি পায়ে পিশে ওর কামরায় গিয়ে টেবিলে রাখা গ্লাসের নিচে আমার একটি ভিজিটিং কার্ড রেখে বিদায় বলি ট্রেনটিকে। কার্ডের পিছন পার্শ্বে নিজ হাতে লিখি, ‘Please search on FB & stay connected.’ দার্জিলিং ও কলকাতা ঘুরে দেশে ফিরি ০৩ আগষ্ট। ০৭ আগষ্ট পুনরায় আমার কর্মস্থলে। মনে এক অস্পষ্ট আশা ওকে ঘিরে। ১০ আগষ্ট রাত পেরিয়ে তখন ১১ তারিখে পা দিয়েছে। রাত ১:৩০। মোবাইল ডাটা অন করতেই ফেসবুক মেসেঞ্জারে রিকুয়েস্ট মেসেজ, 'I thought you would recognize me after I liked your pics. But probably you didn't.' বিস্ফোরিত চক্ষে তৎক্ষণাৎ আমার উত্তর, 'Really sorry. My fault that was. Can I get excuse for that?' পরের সকালে ওর মেসেজ, ' it's ok. Have you recognized me or not?' আমি, 'Why not? Is it hard to recognize you? ' কিছুক্ষণ কুশল বিনিময়ের পর মুঠোফোন নম্বর দিয়ে হোয়াটসএ্যাপে আসতে বলে ও আমায়। পরের দিন সন্ধ্যায় ওর মেসেজ, 'Can we talk for 30

পরিচিতিঃ-
------------------
প্রতিবেশী দেশের তরুণ লেখক তরুণ কান্তি পাল।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কর্মরত। তিনি পেশাগত দায়িত্বশীলতার প্রতি যেমন আন্তরিক, তেমনি সাহিত্য চর্চা এবং লেখালেখির বিষয়েও। মননস্রোতের এই সংখ্যায় তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হলো। তিনি মূল্যত বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক এবং মাসিক লিটল ম্যাগাজিনে লেখালেখি করেন। 

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...