Thursday, January 24, 2019

উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

- ধুর, তুমি যে কী একটা ব্যাঙ !
- অ্যাই, তুমি আমারে ব্যাঙ্ কইলা ক্যান্ ?
- আরে ! অহন দেখি সত্যি কথা কইলেও ঘরের মধ্যেই ঝামেলা পাকাইয়া যায় !!

- আরে হিডা কইছি নাতো ...!
- তাইলে কিতা কইছো ? তোমারে কি বেজাতে ডাকলে খুশি হইতা ?
- আরে না, বেজাতে ডাকবা কিলিগা ? ইডা হয় নিকি ?
- তাইলে কও - তোমারে ব্যাঙ্ কমু না, তো- কী কমু ?

- ক্যান, তুমি কি শোনো না - এই বাড়ির মনিবেরে আমডার মালকিনে কেমনে ডাকে ? এমন কইরা ডাকতে পারো না বুঝি - " হা-ই - হ্যান্ড সাম " শুনতেও কত্ত ভাল্লাগে, তাই না ?
- উঁহু, নাহ্ । আমি মিথ্যা কথা কইতে পারতাম না।
- আ:হা ! শুধু মিথ্যা কইবা ক্যান ? সত্য মিথ্যা মিলাইয়া কইলেই তো দোষ কাইট্টা যায়। সত্য মিথ্যার মধ্যে একটা ব্যালান্স করতে শিখো। নাইলে বাঁচতে পারতা না। আর- সত্য মিথ্যা মিলাইয়া কইলে যদি কেউ খুশি হয় - তাইলে ক্ষতি কী কও ?

- তুমি হইলা গিয়া ব্যাঙ্ । তোমার যে গলা বুক পেট সব সমান। তোমারে আমি হ্যান্ডসাম কই কেমনে কও দেখি ? পতি দেবতারে এমন কইরা মিথ্যা কওনডা কি ঠিক ?!
- আহ্ ! কী যন্ত্রণায় পড়লাম রে বাবা ! অহন বুঝছি, তোমারে এই অট্টালিকার মইধ্যে আইন্না আমার কোনো লাভই হইছে না।

- ওমা ! কও কী !! তুমি আনলা কই ? আমরা যে ভাইস্যা আইলাম ইখানে । স্রোতের ঠেলায় যে আমরা আইয়া পড়লাম ইখানে  - ইডা বিলকুল ভুইল্যা গেলা ?!
- আরে, তা তো বুঝলাম । কিন্তু আমি আইছি লিগাই তো তুমি আইছ ? না কি কও ?
- তা অবশ্য ঠিক।

- কিন্তু কথা হইল - এমন কইরা ভাইস্যা গেলে চলবো ?! বন্যার জল কও, কিন্বা স্রোতের টান - যা- ই হোক, এমন ভাবে ভাইস্যা গেলে কেমনে হইবো ? কিছু শিখন লাগত না ? শুধু এই ঘর থিকা ঐ ঘর, আর এই পাড়া থিকা ঐ পাড়া - এমন করলেই হইবো ?!
- আরে, তুমি যা-ই কও না ক্যান্ , যত্ত গল্পই শোনাও না ক্যান্, তোমারে আমি কিন্তু হ্যান্ড সাম কইয়া মিথ্যা কইতে পারতাম না। নাহ্ ... ইডা কিছুতেই হইতো না।এমন ত্রিভূজের মতো প্রাণীরে হ্যান্ড সাম কইয়া আমার এতদিনের শিক্ষা জলাঞ্জলি দিতে পারতাম না।

- হায় রে ! তুমি তো দেখতাছি সবই গুলাইয়া লাইতাছো !!
- যা কিছু হোক। তবুও মিথ্যা কইয়া পিরীত করতে পারতাম না।
- আহ্ ! কী মুশকিলে পড়লাম রে বাবা ! বুঝছি, ইলিগাই মানুষে রাইগ্যা গেলে কয় -"ব্যাঙের জাতে কিছু বোঝে না।"

- অ্যই, জাত তুইল্যা কথা কইও না কিন্তু !
- আইচ্ছা, ঠিক আছে। এইবার কান খাড়া কইরা আমি যা কই তা শোনো -

- আইচ্ছা, কও শুনি।
- তুমি চুপি চুপি ঐ সোফার কিনারে গিয়া বও। আর আমি ঐ আলমারির কিনারে দাঁড়ামু। এইবার চোখ কান খোলা রাইখ্যা - মনিবের কান্ডটা দেইখ্য।
- বুঝছি, আসলে মানুষের কথা কান পাইত্তা শুনতে শুনতে তোমার অহন নিজের বিচার বুদ্ধি সব লোপ পাইছে।

- কী কইল্যা ?!
- ঠিকই তো কইছি। এই যে তুমি কইল্যা - আমি গিয়া বইতাম সোফার কিনারে, আর তুমি দাঁড়াইবা ঐ আলমারির কিনারে - ইডা আবার কেমন কথা ?! .... তুমি কি ব্যাঙের চলন গমনের  জ্ঞানও হারাইয়া লাইলা না কি ?!
- মানে ?!
- তুমি কি জানো না - ব্যাঙেরার দাঁড়াইলেও যা, না দাঁড়াইলেও তা। খুব কিছু পার্থক্য হয় না। কিন্তু মানুষের লিগ্যা অবশ্য বিষয়টা অন্যরকম। আমি ইডা ঠিক জানি, স্বামীজি কেন মানুষেরে কইছিলেন, - "ওঠো, জাগো, পাওনাটা বুইজ্জ্যা লও।"
- খাইছে ! এত্ত কিছু জানো তুমি ?!
- হুঁ, পড়াশোনা ইট্টু হইলেও তো করছি ।
- আইচ্ছা, অহনে রাখো ইসব কথা। ঐ দ্যাখো, মনিব অহনে মোবাইল লইয়া বাইরে যাইতাছে।এতক্ষণ ধইরা ঘরে যা যা কইছে তার কয়ডা সত্য, অহন ঠিক টের পাইবা। আসলে কী জানো, চেনাজানা গন্ডির বাইরে গেলেই আসল রূপটা অনেক সময় ধরা পড়ে।
- অ, অন্য পাড়ায় গিয়া গান গাওন সোজা, তাইতো ?
- আরে ধুর্ । অহন চুপ মাইরা মনিবের কথা শোনো। গান গাইও পরে।
- তুমিও দেইখ্য কিন্তু - বর্ষা আইতে অহনো অনেক দেরি....! তুমি আবার দেখাদেখি গলা ফাটাইয়া গান গাইতে শুরু কইরা দিও না।

পরিচিতিঃ-
-------------------
উমাশঙ্কর রায় ত্রিপুরা রাজ্যের একজন বিশিষ্ট লেখক। তিনি কবিও। গভীর উপলব্দী প্রকাশিত হয় তার কবিতায় এবং প্রবন্ধে। মানুষের ভাবনার জগতে নতুন দৃষ্টিকোন আনে। তিনি বর্তমানে মহারাজা বীর বিক্রম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।

প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ-
১। এক চিলতে সমাজ
২।  প্রশাসনের কানাগলি

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...