শরীর চর্চার বৃত্তান্ত
খেলাধুলা, মাঠ, শরীর চর্চার প্রতি আমার কি ভীষন আগ্রহ, কি অমোঘ টান, কতটা উৎসাহী ও সক্রিয় সে কথা আমার খুব কাছের বন্ধুরা বেশ ভালো ভাবেই জানে। বন্ধুরা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী; তাই ওরাই এসব বলে বেড়ায়। আমি নিজে লাজুক প্রকৃতির, আত্মপ্রচার বিমুখ।
আমার সহপাঠী,বন্ধুরাও ভীষণ ভালো খেলত।ক্রিকেট মাঠে প্রায়ই ছক্কা-চার হাকতো; গোটা কয়েক উইকেট পকেটে নিয়ে মাঠ ছাড়তো। ফুটবল মাঠেও কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে। ওরা ভাল খেলতো দেখে আমার ভীষন ভালো লাগতো। পাছে ওরা মন খারাপ করে, উৎসাহ হারায় ...এ সব ভেবে আমি মাঠে কোনদিন চার-ছয় মারিনি।কোনদিন একটা গোল পর্যন্ত করিনি। এ কী কম আত্মত্যাগ!
যদিও আমার অরিজিনাল ইভেন্ট, যে গুলোতে ন্যাশনাল মিট করেছি, সেখানে বন্ধুরা কোন ছাপ ফেলতে পারেনি।
আলসেমি, কুঁড়েমি, ফাঁকিবাজি এবং ঢপ' এ আমার মতো গোল্ড মেডেলিস্ট....ক'জনই বা আছে। ভারতের ক্রীড়াজগতে এই টাফ ইভেন্টে আমার সমুজ্জ্বল দিনের কথা কাঠ কয়লার অক্ষরে পাবলিক টয়লেটের দেওয়ালে লেখা থাকবে।
খেলাধুলার সঙ্গে শরীরচর্চা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।আজ কালকার ছেলে-মেয়েরা অবশ্য এ ব্যাপারে মোটামুটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। অনর্থক শরীরকে ওরা কষ্ট দেয়না।
আমিও বলি ঠিকই আছে, যেমন ধরুন দুধ থেকে ফ্যাট তুলে নিলে বা মনেকরুন দুধ থেকে মাখন তুলে নিল দুধে আর কি থাকে? কিছুই না।
গাছ থেকে গাছের ডাল কেটে নিলে গাছ কি বাঁচবে?বাঁচবে না। জগদীশ sir তো বলেইছেন গাছে প্রাণ আছে।....একটা কথা চুপিচুপি বলি, গাছে প্রাণ আছে জানার পর আমার কেবল বইয়ের কথা মনে পরে। বইয়ে প্রচুর বিদ্যা আছে। তো বই থেকে পড়ে পড়ে যদি সব বিদ্যা বের করে নেয় বেচারা বই তে কি থাকে বলুন ! ক'টা পৃষ্ঠা, আর কিছু লেখা। আসল জিনিষ বিদ্যা-টিদ্যা জ্ঞান-ফেয়ান আগেই বের করে নিয়েছে। এ কারণে বই তখনই পড়ি য়খন খানিকটা বিদ্যার প্রয়োজন হয়।
শরীর চর্চাও একই ব্যাপার। শরীর যখন খারাপ হবে,শরীরের শক্তি কমে যাবে তখন তার চর্চা করতে হবে। আচ্ছা বলুন তো আগেথেকে শরীর চর্চা করে করে শরীরের শক্তি, বল ইত্যাদি বের করে দিয়ে, নষ্ট করে যখন সত্যি সত্যিই শরীরের বল ফুরাবে তখন কি করবে...? কে বোঝাবে কাকে!
এই তো গত পরশুর আগের দিন হঠাৎ খবর পেলাম প্রাণায়াম বিশেষজ্ঞ আসছেন শহরে। প্রাণায়ামে রোগ-ব্যাধি সেরে যাবে। আমাকে আর পায় কে! খোঁজ খবর নিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটায় পৌঁছে গেলাম, প্রাত প্রাণায়ামে। বিভিন্ন কলা কৌশল অতি যত্নে শেখালেন। শিখিয়ে পড়িয়ে দিলেন সব.......ব্যস আর কি চাই। যখনই মাজা (কোমর) ঘেঁডি (ঘাড়) পিঠের দাঁড়া (শিরদাড়া) বেচাল করবে তখন মন দিয়ে প্রাণায়াম করবো। অবশ্য আয়োজক, শ্রদ্ধেয় দাদা কতো আগ্রহ করে আমার ফোন নাম্বার টা রাখলেন। গুনি জনের কদর উনি বোঝেন। সস্নেহে বললেন প্রয়োজনে ভোরে ফোন করে ডেকে তুলবেন। কথা দিলাম ডাকে সাড়া দেবো।
তিনদিন পর আজ দুপুরে দেখা। দাদা ভীষণ লজ্জিত হয়ে বললেন উনি বহুবার ফোন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এয়ারটেল এর নেট খুব খারাপ। এয়ারটেল কোম্পানি, কোম্পানির মালিক সুনীল দা মানে সুনীল মিত্তল কে খুব বকলেন।
আমি বললাম, দাদা আমার ফোন নেটওয়ার্ক রিলায়েন্স জিও। এবারে ক্ষোভ গিয়ে পড়লো রিলায়েন্স জিও'র উপর। অনিল দা, মুকেশ দা, টিনা বৌদি, নিতা বৌদি সবাইকে একপ্রকার ধুয়ে ফেললেন। এমনকি জেঠু....আরে চিনলেন না তো...ধীরু জেঠু...ধীরুভাই আম্বানিকেও চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলেন।
ঠোঁটের কোণে দুধের সর মাখানো মুচকি হেসে আমি বললাম.... দাদা ওঁরা নিরপরাধ। আমি ঘুমনোর সময় ফোন ফ্লাইট মুড করে ঘুমাই।
আয়োজক দাদা তরিতাহতের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন। আমার বিশেষ তারা ছিল, আমি চলে এলাম।
পরিচিতিঃ-
-------------------
কল্যাণব্রত বসাক মূল্যত ছোটগল্পকার। প্রাবন্ধিক, তিনি কবিও। লেখকের জন্ম ৪টা অক্টোবর ১৯৭৫ইং দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে। ১৯৯৩ সাল থেকেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ। তারপর থেকেই বিভিন্ন ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত হন। শিক্ষাবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে গ্রেজুয়েশন শেষ করে কখনো কোনো চাকুরীর সাক্ষাৎকারমুখী হননি। নিজে কিছু করার প্রচেষ্টা লেখকের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। ছোটগল্প ও প্রবন্ধে লেখকের চিত্রকল্পের জন্য লেখক এক স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করেছেন। মনন স্রোতে লেখকের 'ফেনী ব্রিজ' ধারাবাহিক গল্পটি পাঠক মহলে দারুণ সমাদৃত হয়েছে।
No comments:
Post a Comment