Wednesday, December 19, 2018

উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র নবীন ইদানীং গভীর পড়াশুনায় ব্যস্ত।তার আগ্রহ বা পড়াশুনার বিষয়টিও বেশ অভিনব। অর্থাৎ সিঁড়ি।

ছোটো বেলায় সুকান্তের ' সিঁড়ি ' কবিতাটি তার মনে বেশ দাগ কেটেছিল। সেই থেকে তার মাথায় 'সিঁড়ি' জাঁকিয়ে বসেছে।

এত বিষয় থাকতে গবেষণার জন্য সিঁড়িতে তার কেন এত উৎসাহ - এ কথা জানতে চাইলে সে গম্ভীর হয়ে বলল, সিঁড়িই সব। একটি সমাজের বিকাশ, তার গতি প্রকৃতি আসলে ঐ সমাজের বিভিন্ন ইমারতে গড়ে ওঠা সিঁড়ির মধ্যেই নিহিত আছে।তাই সিঁড়ির প্রকৃতি বা ধরন জানতে পারলেই - প্রতিটি সমাজের আসল রূপ, এমনকী ঐ সমাজের মানুষেরও আসল প্রকৃতি জানা সম্ভব।

উরি বাস্ ! বললাম, এ কী করে সম্ভব ?!

নবীন বলল, সম্ভব। কারণ - সিঁড়ি হল উন্নতির প্রতীক।অন্যদিকে ভেবে দেখলে - সমাজের প্রতিটি মানুষই তার জীবনে উন্নতি চায়।তাই তাকে জীবনে কোনো না কোনো সময়, কোনো না কোনো অবস্থায় - সিঁড়িতে পা রাখতেই হয়।

আবার অন্যদিকে সিঁড়ি বিষয়টা বিশ্বজনীনও বটে। সাড়া বিশ্বজুড়েই - এই সমাজ সংসারে ঘরে বাইরে - বাড়িঘরে - হাটে ঘাটে সিঁড়ির অস্তিত্ব আছে। গঠনের দিক থেকে এরা প্রায় একই রকম।যেমন বিশ্ব জুড়ে মানুষের গড়ন।সারা বিশ্বেই সিঁড়িগুলোও তেমনি দেখতে প্রায় একরকম।

কিন্তু তা হলেও তাদের মধ্যে আবার শ্রেণিভেদ আছে।ধনী দরিদ্র আছে।কোথাও দেখবে মার্বেলের সিঁড়ি । কোথাও আবার মাটির। কোনো সিঁড়ি মসৃন। কোনোটা পিচ্ছিল। কোনোটা আবার খসখসে। কোনো সিঁড়ি সোজা। কোনো সিঁড়ি বাঁকা।কোনোটা কাঁচা।কোনোটা আবার পাকা।কোনোটা সরু, লিকলিকে  অথবা প্রশস্ত। কোনোটা আবার লম্বা অথবা ছোটো - ইত্যাদি।

এ সমাজের অন্যান্য নিয়মের মতই খেটে খাওয়া মানুষেরা সিঁড়ি তৈরি করছে।সেই সিঁড়ি বেয়ে দিব্যি উঠে যাচ্ছে অন্যরা। যারা উঠছে, তারা প্রায় কেউই সিঁড়ি বানাচ্ছে না।আর যারা বানাচ্ছে তারা অনেকেই বংশ পরম্পরায় বানিয়েই যাচ্ছে। অন্যরা এই সিঁড়ি দিয়ে ছুটছে।উঠছে।

খুব ভালো হত যদি এই সিঁড়ি বেয়ে সবাই একসঙ্গে উপরে উঠে যেতে পারতো।কিন্তু তা যে হচ্ছে না। তাই নানা নামের  - নানাবিধ লাইন ! সেই লাইনে আছে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি,  কখনো বা মারামারি। এরফলে এই সিঁড়ির কারণেই আবার আমাদের এই সমাজে উথ্থান বা পতনের আরেক ইতিহাস তৈরি হচ্ছে !

নবীন এ নিয়ে খুব ভাবছে।
কে কোথায় ছুটছে, কে কোথায় যাচ্ছে, কে কোন্ সিঁড়িতে - কখন, কিভাবে পা রাখছে - এ নিয়ে নবীনের গবেষণাটা ইদানীং বেশ জমে উঠেছে।

নবীনের কথায় - এই সিঁড়ির প্রকৃতি বিশ্লেষণেই হয়তো একদিন জানা যাবে আমাদের সমাজের ভবিষ্যত !

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...