অপর পৃষ্ঠার গল্প (ট্রান্সম্যানের প্রেম কাহিনী)
শানের কলেজ প্রায় শেষ। সুনিতি সবে সেকেন্ড ইয়ার। দুজনের বন্ধুত্ব এতটাই শক্ত যে ভালোবাসা এখনো টিকিয়ে রেখেছে। শান পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে তার সাথে চাকরির জন্য নানান চেষ্টাও করছে তবে ক্রমশই ব্যর্থ। সুনিতির বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। বাবা মাকে বলতে পারছে না শানকে সে ভালোবাসে।
ভালোবাসা অপরাধ না, তবে এমন একজনকে সে ভালোবাসে যাকে নিয়ে সমাজ পরিহাস করে। ছেলে না মেয়ে জানার জন্য কৌতুহলপ্রবণে খিল্লি উড়ায়।
রীতিমতো সুনিতিকে দেখতে আসছে পাত্রপক্ষ। শানের কাছে ফোন আসে যেকরেই হোক সুনিতিকে যেন তার কাছে নিয়ে যায়। সে তাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
শানের হাত পা বাঁধা। সুনিতিকে কোথায় রাখবে? কি খাওয়াবে?
শান একজন ট্রান্সম্যান। সমাজ,পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে লড়াই করে নিজের জায়গায় দৃঢ় থাকে সে।
তারও একটা হৃদয় আছে। সেও ভালোবাসতে জানে। আর পাঁচটা ছেলের মতো সেও চায় সংসার করতে। কিন্তু সমপ্রেমীদের আজো সমাজ কু-দৃষ্টিতে দেখে। দাপিয়ে রাখে তাদেরকে। ভালোবাসার জন্য হৃদয় নয় লিঙ্গ খোঁজে!
তারা এটা ভুলে যায় যে পুরুষ হয়ে জন্মালেই পুরুষ হওয়া যায় না পুরুষ হতে গেলে পুরুষত্ব থাকা দরকার।
ভালোবাসতে হলে সুন্দর একটি হৃদয় থাকতে হয়।
শান সুনিতির বাড়িতে যায়। সবার সামনে সুনিতির হাত ধরে বলে সুনিতিকে সে ভালোবাসে। এই কথা বলতে না বলতেই সুনিতির বাবা শানকে বেধোর মারধোর শুরু করে এবং সুনিতিকে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় ওর মা।
লোকজনের ভীড় লেগে যায়, পুলিশ ডাকিয়ে শানের নামে নানান অভিযোগ রটিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শান নির্দোষ; সে বারবার বলছে সুনিতিকে সে ভালোবাসে ভালোবাসে। যতবার ভালোবাসি বলে ততবারই তার উপর অত্যাচার শুরু হয়।
পুলিশও মিথ্যা অভিযোগ ফাঁসিয়ে দেয় তাকে। সে নাকি ড্রাগস পরিসেবন করিয়ে মেয়ে পাচার করছে।
শানের একটি পরিবার আছে। সে তো চেয়েছিলো নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে দুই পরিবারকে মানিয়ে নতুন এক জীবন শুরু করবে। ছোটো থেকে লড়াই করে আসা শান একদিন সফলতা অর্জন করবে। দেশের কাজে নিযুক্ত হবে। পাশে থাকবে বলে কথা দিয়েছিলো সুনিতিও।
শান নির্দোষে অপরাধী। সুনিতিকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়। সুনিতির কোনো দোষ নেই এতে।
সমাজের দোহাই দিয়ে এভাবেই প্রেমগুলো হারিয়ে যায়।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সুনিতিকে সামনে দেখতে পায় এবং পাশে তার স্বামী দাঁড়িয়ে.....
শান চুপ ছিলো। সুনিতি কেঁদেই যাচ্ছে অনবরত। তাদের একসাথে আর থাকা হল না। শুধু একটি চিঠি দিয়ে যায় সুনিতিকে।
বহু বছর পর একটি অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বক্তব্য রাখছেন একটি ছেলে। মুখে চাপদাড়ি কন্ঠস্বরেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। তার কাছে অর্থ,গাড়ি,বাড়ি বলতে গেলে সমস্ত অট্টালিকায় পরিপূর্ণ। সার্জারী করিয়ে সে একজন প্রতিষ্ঠিত পুরুষ।
শানের দেওয়া শেষ চিঠিটি প্রায় আট বছর পর খুঁজছে সুনিতি। চিঠিতে লেখা ছিলো "আমি আবার আসবো সুনিতি। সেদিন সবকিছু থাকবে আমার সাথে এবং তুমিও; শুধু অধিকারটুকু হারিয়ে যাবে। সুখে থেকো।"
No comments:
Post a Comment