Wednesday, June 12, 2019

প্রীতম শীল

অনুগল্পঃ হাড় কিপটের এক টাকা লোকসান।

নগেন বাবু পাড়ার হাড় কিপটে নামে পরিচিত। পাড়ার ছোট হতে বড় সবাই ওনাকে 'কিপটে বুড়ো' বলেই ডাকে। আর এই কিপটে বুড়োর বাড়িতেই একখানি প্রকান্ড লিচু গাছ ছিল,যখন লিচু ধরতো তখন থেকেই বুড়ো গাছটিকে আগলে রাখতেন, ও সাধ্য মতো পাহাড়া দিতো। এবং বুড়ো শরীর নিয়েও কিছু সময় গাছে চড়ে পাহাড়া দিতো বলেই, পাড়ার ছেলে ছোকরার দল ওনাকে লিচু চোরও বলে ক্ষেপাতো।বুড়ো রেগে গিয়ে তোতলানো ভাবে ছেলেদের গালি দিতো-হা- হা- রাম জাদা, বা-দর, ইতর। আর ছেলেরাও কিপটে বুড়ো কিপটে বুড়ো বলেই দৌড় দিতো। জৈষ্ঠের শেষের দিকে তো বুড়ো ভাত ও খেতেন লিচু গাছ তলায়। পাছে ছেলেরা টপা টপ করে দু- একটা থোকা নিয়ে পালায়।ইচ্ছে থাকলেও বুড়ো নিজে গাছ থেকে পেড়ে একটা লিচুও খেতেন না। গাছ তলায় ঝরে পড়লে কুঁড়িয়ে দু এক খানা মুখে দিতেন। এই কিপটে বুড়োই একদিন হাটে যাচ্ছিল, পাড়ার ছেলেরা ইচ্ছে করেই ওনাকে ক্ষেপানোর জন্য ঘিরে ধরে বলতে লাগলো, ও কিপটে দাদু ও কিপটে দাদু আজকে বাজার থেকে মাংস আনো না।  আমরা সবাই মিলে তোমার বাড়ি খাবো।বুড়ো সবার মুখের দিকে একবার করে তাকিয়ে বলতে লাগলো, আমায় কি পাগলা কুত্তা কামড়েছে, তোদের মতো দামড়াদের নিয়ে আমার বাড়িতে গান্ডে পিন্ডে গিলাই। আর শরীরে বল করে আমারেই পিছনে লাগো।ছাড় ছাড় পথ ছাড় বেলা বয়ে যাচ্ছে,,, আমাকে তাড়াতাড়ি হাটে যেতে হবে। ছোকরারা একে অপরে বলতে লাগলো আর বেশি ক্ষেপাসনে, হিতে বিপরীত হবে।ছোকরারা পথ ছেড়ে দিয়ে একটু দুরে গিয়ে আবার বলতে লাগলো, কিপটে বুড়ো ও কিপটে বুড়ো। হাটের দেড়ি হচ্ছে বলে, বুড়ো আর কিছু বললোনা ছোকরাদের।প্রায় তিন মাইল পথ অতিক্রম করে বুড়ো হাটে পৌঁছোল।অথচ অহরহ গাড়ি   চলছে পথে। হাটে পৌঁছে বুড়ো একটি বিশ্রামাগারে বসে রইলো ঘন্টা দুয়েক, পাছে শেষ বাজারে জিনিস পত্রের দাম কিছুটা কমে। দু'ঘন্টা অপেক্ষা শেষে বুড়ো সাতাশ টাকার বাজার সারলেন। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ত্রিশ টাকার থেকে তিন টাকাতো অবশিষ্ট রইলো। একটি দুটাকার নোট ও একটি এক টাকার আধুলি সযত্নে রেখে বুক পকেটে, বুড়ো আবারো পায়ে হেঁটেই রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশ্যে।আড়াই মাইল পথ অতিক্রম করে বাড়ির কাছাকাছি আসতেই বুড়োর তিন টাকার কথা মনে করেই পকেটে হাত দিতেই বুড়োর মাথায় হাত। এক টাকার আধুলিটা নেই। চিকন ঘামে বুড়ো ঘেমে যাচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বুড়োর মনে। এদিকে অন্ধকারও হয়ে এসেছে,, পিছন ফিরে খুঁজতে গেলেও মাইল আড়াই। এসব প্রশ্ন মনে মনে ভাবতেই বুড়ো ভাবলো খুঁজতে গেলে তোর আলোর দরকার। সামনে আধ মাইল পথ অতিক্রম করলেই তো আমার বাড়ি। যেমন ভাবা তেমন কাজ, বাড়ি থেকে লন্ঠন এনে আবার শুরু করলো খুঁজ। আড়াই মাইল পথ খুঁজেও পাওয়া গেলনা। পরে বাজার টা একটু খুঁজবে বলে তিন বার পদক্ষিন করলো। কিন্তু আধুলি আর পাওয়া গেলনা। এখন বুড়ো ক্লান্ত শরীরে আর জোশ নেই। রাতও অনেক হয়ে গেছে। হাটেও লোক জন নেই।  ধপাস করে হাটের এক কোনায় বসে,মন না মানতে চাইলেও একপ্রকার মনকে জোড় করে মানিয়ে, মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো- " হায়রে আমার এক টাকা লোকসান"।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...