Sunday, October 10, 2021

দিপিকা রায়

শারদ স্মৃতি


ঢাক আর কাসর শব্দে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ খুলতেই মায়ের চিৎকার,

'কি রে উঠবি না নাকি? আজ যে মহাষ্টমী, ভুলে গেছিস। যা তাড়াতাড়ি স্নান সেড়ে নে। পুরোহিত মশাই তো এসে পড়েছেন।

মায়ের কথা শুনে মনে পড়লো, আজ মহাষ্টমী। আমায় আবার অঞ্জলি নিতে হবে। চোখে একঘোর ঘুম কাটিয়ে তাড়াতাড়ি স্নান সেড়ে, আমার প্রিয় লাল শাড়িটা পরে নিলাম।
আজ সব সাজগোজ কেন যেন ফ্যাকাশে লাগছে। 

দুর্গাপূজায় সবাই কত আনন্দ, হৈ হোল্লর করছে। কিন্তু আমার মনটা কেন জানি অস্থির হয়ে আছে। সব আনন্দ গুলো কেমন যেন মনমরা হয়ে পরে আছে। এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোনের রিংটোনটা কানে বেজে উঠলো। 
ফোনটা দেখে আমার বুঝতে দেরী হল না এইটা যে অভিকের নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ ভেসে এল, 'হ্যালো, রিয়া! '
বললাম হ্যাঁ বলো।

অভিক জানতে চাইলো  কেমন আছি? বললাম ভালোই।

অভিক চুপ ছিলো।
জানতে চাইলাম আজ হঠাৎ ফোন করার কারণ! সে বলল, আমাদের ডিভোর্স যে হয়েছে আজ একবছর হল। 

অভিকের কথায় আমার উত্তর ছিল, ওঃ এই কথাটা মনে করার জন্যই তোমার ফোন?
তখন অভিক বলে উঠলো, না না, আসলে বড্ড মনে পড়ছিলো তোমায়। আজ তো মহাষ্টমী। তুমি আর আমি একসাথে প্যান্ডেলে গিয়ে অঞ্জলি নিতাম। এরপর সারাদিন আমরা ঘুরতাম, পূজা দেখতাম। তোমার সাথে সাথে আমার অপছন্দ আর তোমার পছন্দের ফুচকাও খেতাম। কতই না মজার ছিল ওইদিন গুলো। 
তার কথায় একটু মুচকি হাসি দিয়ে আমি বললাম, থাক না হবে অভিক, এখন ওসব বলে কি হবে? আমাদের সোনার সংসারটা তো তুমি নিজেই শেষ করেছো। আর যার জন্য শেষ করেছো, তাকে নিয়ে ভালো থাকো ! 

আমার কথা শুনে, একটু ভারি গলায় সে বলল,, 
তুমি এই কথা বলছো রিয়া! তুমি তো জানো, যেই মানুষটা কে নিয়ে সংসার করবো বলে, তোমার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ করলাম, সেই মানুষটা কখনো আমায় ভালোবাসেনি। যতটুকু সম্ভব হয়েছে, আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখন যে আমি বড্ড একা। জানো রিয়া মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে কোথাও চলে যাই। যেই ঘরে আমাদের প্রথম রাত ছিল, এখন সেই ঘরে আমি পা রাখি না। ওই ঘরের প্রত্যেকটা দেওয়ালে যে তোমার স্মৃতি। আমার নিজের ভুলের কারনে আমি তোমাকে হারিয়েছে। এখন যে আর মেনে নিতে পারছি না। মাঝে মাঝে আমার বুকটা কেমন জানি করে, হয়তো অসহ্য যন্ত্রণাটা এখন আমার সহ্যের বাইরে। বলো না রিয়া, কি করবো আমি। 
আচ্ছা আমরা কি আবার এক হতে পারি না? সামান্য একটা কাগজ আমাদের এত বছরের সম্পর্ক কি ভাঙতে পারে? এই মহাষ্টমীতে আমি তোমাকে সিঁদুর পরিয়ে আবার আমার করে নিতে পারি না? 

অভিকের প্রতিটা কথা যেন আমার হৃদয়ে অজানা এক ঝড় সৃষ্টি করলো। অঝোরে বইতে থাকে দু চোখের জল। ইচ্ছে করছিলো অভিককে জড়িয়ে ধরে বলি, অভিক তুমি একা নয়, আমি তো আছি তোমার কাছে। আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। 

কিন্তু আমারও যে কিছু করার নেই । সামান্য একটা কাগজে তুমি বেঁধে দিয়েছো, আমার হাত, পা। 

এইসব কথা ভাবতে ভাবতে অভিককে কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম। ওইদিকে মায়ের মহাষ্টমী পূজা। আর এইদিকে বিচ্ছেদের একহ্রাস যন্ত্রনা আমার হৃদয়টাকে শেষ করে দিচ্ছে।শারদ স্মৃতি
--দিপিকা রায়

ঢাক আর কাসর শব্দে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ খুলতেই মায়ের চিৎকার,

'কি রে উঠবি না নাকি? আজ যে মহাষ্টমী, ভুলে গেছিস। যা তাড়াতাড়ি স্নান সেড়ে নে। পুরোহিত মশাই তো এসে পড়েছেন।

মায়ের কথা শুনে মনে পড়লো, আজ মহাষ্টমী। আমায় আবার অঞ্জলি নিতে হবে। চোখে একঘোর ঘুম কাটিয়ে তাড়াতাড়ি স্নান সেড়ে, আমার প্রিয় লাল শাড়িটা পরে নিলাম।
আজ সব সাজগোজ কেন যেন ফ্যাকাশে লাগছে। 

দুর্গাপূজায় সবাই কত আনন্দ, হৈ হোল্লর করছে। কিন্তু আমার মনটা কেন জানি অস্থির হয়ে আছে। সব আনন্দ গুলো কেমন যেন মনমরা হয়ে পরে আছে। এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোনের রিংটোনটা কানে বেজে উঠলো। 
ফোনটা দেখে আমার বুঝতে দেরী হল না এইটা যে অভিকের নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ ভেসে এল, 'হ্যালো, রিয়া! '
বললাম হ্যাঁ বলো।

অভিক জানতে চাইলো  কেমন আছি? বললাম ভালোই।

অভিক চুপ ছিলো।
জানতে চাইলাম আজ হঠাৎ ফোন করার কারণ! সে বলল, আমাদের ডিভোর্স যে হয়েছে আজ একবছর হল। 

অভিকের কথায় আমার উত্তর ছিল, ওঃ এই কথাটা মনে করার জন্যই তোমার ফোন?
তখন অভিক বলে উঠলো, না না, আসলে বড্ড মনে পড়ছিলো তোমায়। আজ তো মহাষ্টমী। তুমি আর আমি একসাথে প্যান্ডেলে গিয়ে অঞ্জলি নিতাম। এরপর সারাদিন আমরা ঘুরতাম, পূজা দেখতাম। তোমার সাথে সাথে আমার অপছন্দ আর তোমার পছন্দের ফুচকাও খেতাম। কতই না মজার ছিল ওইদিন গুলো। 
তার কথায় একটু মুচকি হাসি দিয়ে আমি বললাম, থাক না হবে অভিক, এখন ওসব বলে কি হবে? আমাদের সোনার সংসারটা তো তুমি নিজেই শেষ করেছো। আর যার জন্য শেষ করেছো, তাকে নিয়ে ভালো থাকো ! 

আমার কথা শুনে, একটু ভারি গলায় সে বলল,, 
তুমি এই কথা বলছো রিয়া! তুমি তো জানো, যেই মানুষটা কে নিয়ে সংসার করবো বলে, তোমার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ করলাম, সেই মানুষটা কখনো আমায় ভালোবাসেনি। যতটুকু সম্ভব হয়েছে, আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখন যে আমি বড্ড একা। জানো রিয়া মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে কোথাও চলে যাই। যেই ঘরে আমাদের প্রথম রাত ছিল, এখন সেই ঘরে আমি পা রাখি না। ওই ঘরের প্রত্যেকটা দেওয়ালে যে তোমার স্মৃতি। আমার নিজের ভুলের কারনে আমি তোমাকে হারিয়েছে। এখন যে আর মেনে নিতে পারছি না। মাঝে মাঝে আমার বুকটা কেমন জানি করে, হয়তো অসহ্য যন্ত্রণাটা এখন আমার সহ্যের বাইরে। বলো না রিয়া, কি করবো আমি। 
আচ্ছা আমরা কি আবার এক হতে পারি না? সামান্য একটা কাগজ আমাদের এত বছরের সম্পর্ক কি ভাঙতে পারে? এই মহাষ্টমীতে আমি তোমাকে সিঁদুর পরিয়ে আবার আমার করে নিতে পারি না? 

অভিকের প্রতিটা কথা যেন আমার হৃদয়ে অজানা এক ঝড় সৃষ্টি করলো। অঝোরে বইতে থাকে দু চোখের জল। ইচ্ছে করছিলো অভিককে জড়িয়ে ধরে বলি, অভিক তুমি একা নয়, আমি তো আছি তোমার কাছে। আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। 

কিন্তু আমারও যে কিছু করার নেই । সামান্য একটা কাগজে তুমি বেঁধে দিয়েছো, আমার হাত, পা। 

এইসব কথা ভাবতে ভাবতে অভিককে কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম। ওইদিকে মায়ের মহাষ্টমী পূজা। আর এইদিকে বিচ্ছেদের একহ্রাস যন্ত্রনা আমার হৃদয়টাকে শেষ করে দিচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...