Sunday, October 10, 2021

অভীককুমার দে

জলমিছিলের স্রোত 

অনন্ত তপস্বী মাটি। মাটির হৃদয় পাঠ করতে করতে কেউ মাটিকে অনুভব করে, কেউ করতে পারে না। যারা অনুভব করতে পারে, মাটির সন্তান ওরা। ওরা মাটিবুক ভেদ করে শূন্য বুকেও মেলে ধরতে জানে ফসলের নদী। এই নদী আগামীর জীবন। এই নদীজল দৃষ্টির আলো। অন্ধকারের পথ পথিকের হৃদয় খোঁজার রশ্মি জোগায়। এই নদীপথ সমূহ সুখের, জীবনসুর। যদিও শূন্যে মাথা রেখেই মাটির নাড়ি আঁকড়ে ঝুলে থাকে, তবুও বুকের সেতার বেজে উঠলে বাতাসের কানে যৌবনের গান। তারপর সবুজ নদীটি রোদ মাখে, মায়াবী দেখায়। সোনালী রঙের অলংকার পড়ে পায়ে পায়ে হেঁটে গেলে জীবনের জলকথা। শিহরিত বয়স আরো উতলা হয়, তানপুরা ছন্দ যখন স্রোতের মতো, এগিয়ে যায় শরীর থেকে শরীরে। 

কিছু মানুষ, দিনের পর দিন বিকশিত শরীর দেখে স্বপ্ন সাজায়। বেঁচে থাকার স্বপ্ন। বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয় জীবন। জীবিকার কষ্টপাড়া পেরিয়েও এই মানুষ নিজের জন্য বাঁচে না। বাঁচবার চেষ্টা করতে করতে কেবল বাঁচিয়ে রেখেই মরে যায়। যতদিন বেঁচে থাকে আল থেকে আলে ঘুরে ঘুরে আগলে রাখে জমি। 

জমি ফসলের জন্য, মাটির সংগঠিত আয়োজন। লালন করতে করতে লালনের মতো নির্ভেজাল তপস্বীর তপস্যাঘর। ঘরের সাথে ঘর যেমন, জমির সাথে জমি। বুকে বুক লাগিয়ে সুখের পত্রিকামাঠ। এখানে ফসলের মেলা বসাবে বলে সেই মানুষগুলো কাঁচি হাতে, কোদাল হাতে আজন্ম চাষা। ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে চায় বলেই স্বপ্ন বোনে। ফেরি করে স্বপ্নসময়। 

একটু একটু বড় হয় নদীটি। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে সোনালী সুখের রথ। এই রথে যিনি রাজা দুধের শিশু। বুকে সূর্যের তাপ শুষে হামাগুড়ি দেয় ভেতর ঘরে। শক্ত হয় শরীর। বেড়ে উঠতে উঠতে একদিন পূর্ণতায় ভরে ওঠে। এই পূর্ণতা মাটির আদর। মায়ের বুকের দুধের মতো প্রাণীজ শিশুর শক্তি জোগায়। এমন সুখভাবনায় চাষির কপালে ধ্যানবিন্দু আলোকিত হয়। 

যেই আলো পথ দেখানোর জন্য, সেই আলোকেই নিভিয়ে দিতে চায় পরগাছার দল। ফসল ধ্বংসকারী আবহ তৈরী করে সাময়িক বেঁচে থাকে ধ্বংসস্তুপের উপর। এরা জীবনের জীবাণু আর পোকামাকড়। ফলন্ত জমির বুকে আক্রমণ করে স্বপ্নের সবুজকেই দিশেহারা করে দেয়। আবার এরা কখনো কখনো মেঠো ইঁদুরের মতো, ভয়ঙ্কর। কষ্টের জল যখন নদীস্বপ্নে ঝর্ণার মতো ঝরে, ঠিক তখনই ভেঙে দেয় সমারোহ। চাষির কপালের মাটি ক্ষত হয়। গোড়া থেকে কেটে ফসলের স্বপ্নকেই তছনছ করে দেয়। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে পড়ে থাকে মাটি। বোকার মতো চেয়ে থাকে নিঃস্ব জমি। বোবার মতো চেয়ে থাকে চাষি। 

এই যন্ত্রণা, এই বোকা অনুভব, এই বোবা চোখ শূন্যকেও ভারি করে তোলে। এক অদ্ভুত ভয়াবহ চুপ সময় অচল করে পদক্ষেপ। সেই এক শিহরণ জাগানো ভাষা। বুক থেকে মস্তিষ্ক পথে চোখ ভাসিয়ে নেমে আসে নিঃশব্দ ব্যথা। নদীর জন্যই কেবল অবিশ্বাস্য রূপান্তর। 

অভীক বলে, হিমালয় কখনও জলশূন্য হতে পারে না। নদী তার জেগে উঠতে জানে। দুর্বার গতিতে নেমে আসতে পারে জলমিছিলের স্রোত। এই গতিপ্রবাহের সামনে কোনও বাঁধ চিরস্থায়ী নয়। নদী তার উচ্ছ্বাসে ভেঙে, গুড়িয়ে, উড়িয়ে দেবে সব বাধা। 

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...