Saturday, November 17, 2018

দীপক দাস

বই এবং বইমেলা (ধারাবাহিক)

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন "বিদুৎ কে মানুষ লোহার তারে বাঁধিয়েছে কিন্তু জানিত মানুষ শব্দকে নিঃশব্দে মধ্যে বাঁধিতে পারিবে । কে জানিত সংগীতকে,হৃদয়ের আশাতে জাগ্রত আত্মার আনন্দ ধ্বনি কে আকাশে দৈববাণীকে যে কাগজে মুড়িয়া রাখিবে।কে জানত মানুষ অতীত কে বর্তমানে বন্দী করিবে, অতল স্পর্শ কাল সমুদ্রের উপর একখানি 'বই' দিয়া যাঁকে বাঁধিবে।"
টলস্টয় বলেছেন "জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই ,বই এবং বই,
দুই আধুনিক কবি গোস্বামী ও সুবোধ সরকার -এক প্রশ্নোত্তর পূর্বে তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ;বই যদি তাদের কোনো একটি নির্জন দ্বীপে নির্বাসন করা হয় ,তারা সঙ্গে নিয়ে যাবেন ,
জয় গোস্বামী বলেছেন -বুদুদেব বসুর প্রবন্ধ সমগ্র ,শঙ্খ ঘোষের প্রবন্ধ সমগ্র, গীতবিতান আর অতুলপ্রসাদের গীতিগুচ্ছ।
সুবোধ সরকার বলেছেন - 'আমি একটি এই বই নিয়ে যাব,গীতবিতান ।
      এই যে এতগুলো উদাহরণ ব্যবহার করলাম, কেউ কি এইসব উদাহরণ পড়ে বই পড়েন। তা তো নয়।তাহলে বই পড়া শুরু হয় কীভাবে ! কোন বয়সে কি রকম বই পড়ব বা পড়া উচিত তা কে ঠিক করে দেবে এতে বইমেলার ভূমিকা কী?  এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা যাক।
আমরা ছোট বয়সে বই পড়া শুরু করি বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় বইমেলা।সে সব বই যোগানে সহায়তা করে।শৈশবে শিশুর মনের রূপকথা ,গল্প শুনতে চাই ,তাদের মন জগৎ রূপকথা তাই সেই সময় গল্প বলার পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দিতে হয় রূপকথার জগৎ। সে জগতে হদিশ দিতে পারে উপেন্দ্রকিশোর প্রমুখ লেখকরা।
      শিশুটি বড়ো হতে থাকে -বাবা তার হাতে তুলে দিলেন 'রামের সুমতি'।সে বড় হচ্ছে -তার হাতে এল বিভূতিভূষণের 'পথের পাঁচালি 'অপুর সংসার ' সে পড়বে আর ডাকবে আমি এই তো 'অপু'। দুর্গার জন্য তার চোখ থেকে দু-ফোঁটা জল অজান্তে  বেরিয়ে আসবে । অপরের জন্য কান্না, আনন্দের অভিজ্ঞতা তার জীবনে প্রথম ।তার হাতে আসবে ছোটদের রামায়ণ, মহাভারত । মহাভারতে 'কর্ণ' চরিত্রের জন্য তার বুক বেদনায় ভরে উঠবে। ভীমকে সে ভালবাসবে । অথচ সে কাউকে দেখো কাউকে  চেনে না । সাহিত্য পাঠে সম্ভব  অজানা অচেনা চরিত্রের জন্য -দুঃখ ,কষ্ট ও ভালোবাসার অনুভূতির সঞ্চার ।
ঝমঝম করে জীবনের ট্রেন এসে দাঁড়ায় যৌবনের প্ল্যাটফরমে। আকাশ বাতাস ফুল পাখি চারপাশে মানুষ সব অপরূপ মনে হয়, এর এই মতে তার হাতে এল 'আনন্দমঠ' সে এই বই পড়বে, সে বুঝবে দেশ কি ?কেন দেশকে ভালবাসতে হয়?জীবনের উদ্দেশ্যই যে ভালবাসা আনন্দমঠ পাঠ না করলে তা সম্পূর্ণ জানা সম্ভব নয়। এই বই পড়তে পড়তে সে ও সে ও মনে মনে বলবে -"আমার মা নাই ,বাপ নাই, ভাই নাই -আছে শুধু সুজলা সুফলা এই জন্মভূমি ।

লেখক পরিচিতিঃ-
--------------------------
লেখক দীপক দাসের জন্ম ১৯৫৩সালে বাংলাদেশের ফেনীতে। ১৯৬৩ সালে তিনি ভারতে আসেন। দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমায় স্কুল জীবন শেষ করে তিনি ১৯৭২সালে বি কম বিভাগে এমবিবি কলেজ থেকে গ্রেজুয়েশন করেন। পরবর্তীতে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করে ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্তমানে তিনি অবসরে। অবসর সময়ে লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চাই করেন। রাজ্যের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখেন। তিনি কবি,  প্রাবন্ধিক এবং বাচিক শিল্পীও। চাকুরী জীবনে ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক কল্যাণে তার বহুমুখী প্রচেষ্টা ও ভূমিকা ছাত্রছাত্রীরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...