Saturday, November 17, 2018

উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

একটু-আধটু অহং না থাকলে কি সৃষ্টি হতে পারে কিছু ? সৃষ্টির যা কিছু বৈচিত্র্য বা গরিমা- সে তো ঐ অহং-এর পরিশীলিত রূপ !
- এ নিয়ে বিতর্কেও যে অহংবোধেরই প্রতিধ্বনি ঘটে - তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে কি নিবারণ অহংকারী ? এমন কানাঘুষো শুনলেও নিবারণের আঁতে ঘা  লাগে না।
বরং সে বলে তখন - নিজে একটু অহংকারী না হলে অন্যের অহংকারটি যে চোখে পড়ে না ঠিকঠাক  !  তাই সময়ের বিচারে তা - ভালো এবং খারাপ দুটো-ই !

তার কথায়,  বিনয়ী ভক্তজনেরা এ কারণেই বোধহয় বেশিরভাগ পর্বতগামী। হিমালয়মুখী ! হিমালয়ের কাছে গেলে সব গরিমা, সব অহংকারকে তো ভুলে যেতেই  হয় ! তাই না ?

আমাদের এই সাংসারিক জীবন বা পারিপার্শ্বিকতা তো নানাহ সৃষ্টি বা অহংকারেরই সহাবস্থান ! আর তা না হলে ঠিক এর ঠিক উল্টো- ঠুকাঠুকির পাঁচালি ! দুটো-ই সত্য এবং স্বাভাবিক !  কিন্তু সব স্বাভাবিকত্বেই কি ধরা পড়ে চরম সত্য ? 

নিবারণের বিচারে, পড়ে না। কারণটা  ঐ অহংকার।

তাই সাধারণ মানুষের কথা আর কাজে অহং ততটাই মানানসই -যতটা অন্যের মর্যাদায় তা আঘাত করে না।

একটু গভীরে পৌঁছালেই দেখা যায়, অহংকারের বিরোধিতা করার মধ্যেও আছে এক শ্রেণির অহংকার ! অনমনীয়তা । অধৈর্য বা অসহনীয়তা !

সৎ মানুষের সততাও যে হতে পারে তাঁর অহংকার ! তাঁর অলংকার ! সেই অলংকার তো ভূষণ। তবে সেই আভরণে ভূষিত হবেন না কেন তিনি ?

শেষ কথাটি যে -ঐ কাজেই নিহিত !

অহংকারী নিবারণ তাই এবার চেঁচিয়ে বলে-
শোন্ প্রতাপ, এটাই সত্য যে- সৃষ্টিতেই অহং মহিমান্বিত হয়। কিন্তু জয় পরাজয়ের প্রশ্ন  যখন আসে - তখনই অহং কলুষিত হয়ে পড়ে । আর এ কারণেই প্রকৃতিতেই রয়েছে বিসর্জনের নিয়ম। একমাত্র বিসর্জনেই অহং শুদ্ধ হতে পারে। নির্মল হতে পারে !  মহিমান্বিত হয়ে উঠতে পারে।

শরতের শেষে  পাতা ঝরার হেমন্ত - দুঃখের তো নয় !  বিদায়েরও নয় !  হতাশারও নয় !  বরং প্রত্যাশার। 

ঝরে গিয়ে - অথবা  ক্ষয়ে গিয়েও - সৃষ্টির বার্তায়, নতুনের সুবাসে, আনন্দে আর প্রত্যাশায় ভরপুর, উজ্জ্বল এই বিসর্জনের রূপ ! বিসর্জনের এই রূপ কি আজকের এই আয়োজন আর এই উৎসবকে মহিমান্বিত করে তোলে না ? শুধুই কি নিঃশেষ  হয়ে যাওয়ার নাম বিসর্জন ?

লেখক পরিচিতিঃ-
---------------------------

উমাশঙ্কর রায় ত্রিপুরা রাজ্যের একজন বিশিষ্ট লেখক। তিনি কবিও। গভীর উপলব্দীকে প্রকাশিত হয় তার কবিতায় এবং প্রবন্ধে। মানুষের ভাবনার জগতে নতুন দৃষ্টিকোন আনে। তিনি বর্তমানে মহারাজা বীর বিক্রম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।

প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ-
১। এক চিলতে সমাজ
২।  প্রশাসনের কানাগলি

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...