Friday, November 16, 2018

কল্যাণব্রত বসাক

ফেনী ব্রিজ (শেষ পর্ব)

সরকারি নথি বলেছে সাল 2017 থেকে ফেনী ব্রিজ নিয়ে কাজ হচ্ছে ।নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকের যে গুজব তার কিছুটা যে সত্যি টের পেলাম সাল 2009 এ স্থান নির্বাচন ।জমি জরিপ। ছোট বড়ো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির আনাগোনা । আনন্দ আশঙ্কা গুজব । সব মিলিয়ে একটা জমাটি ব্যাপার ।

শুধু কেবল ব্রিজ তৈরি হবে তা নয়। হবে LCS,ICP। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের গুরুত্ব মাথায় রেখে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করে গড়ে উঠবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে। বাণিজ্যিক চেহারার জৌলুস বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে ,সমৃদ্ধ হবে গোটা উত্তরপূর্ব ভারত । বৃহৎ পরিকল্পনা । এতো বড়ো কাজের জন্য চাই প্রচুর জমি । প্রায় 500 একর জমি চিহ্নিত হয়ে গেছে।জরিপের কাজ শেষ ।

এতো বড়ো কাজ আমারও অংশগ্রহন থাকবে না তা কি হয়!
গতগতকা12/11/2017 থেকে স্বপ্নের ফেনী ব্রিজের কাজ শুরু হয়ে গেছে। জুড়ে যাবে আমার প্রিয় রামগড় সাব্রুম ব্রিজ,  স্থল শুষ্ক বন্দর এবং ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে আমার ভদ্রাসন টুকু।আমার পৈত্রিক ভিটে। সরকার কিছু টাকা পয়সা হাতে গুঁজে আমাকে ভিটে ছেড়ে চলে যেতে বলবে।
আমি কি সত্যিই এতটা ভালো রামগড়কে বেসেছিলাম। ভালো হয়তো এভাবেই বাসতে হয় ,ভিটে মাটির মায়া ছেরে,এক কঠিন প্রস্থানের মধ্যে দিয়ে, এক নিরুদ্দেশ যাত্রা মধ্য দিয়ে ।
আর ইতিহাস! সে যেন ফিরে এসেছে আমারই  অন্তরে কোন সুগভীর টানে। একদিন আমার বাপ ঠাকুরদা,মা ভিটে ছেড়েছে।উপাধি জুড়েছে শরণার্থী । সে দিনের প্রেক্ষাপট ছিল অবিশ্বাস,অসহিষ্ণুতা,বিচ্ছেদ।
আজ আমি ভিটে ছাড়বো । প্রেক্ষাপট ভরসা,মৈত্রী, যৌথ সমৃদ্ধি । আমি গর্বিত আমি শরণার্থী । আমার তিন পুরুষ শরণার্থী ।

চলে যাবো অন্য কোথাও । যেখানে থাকবে একটি নদী ।থাকবেনা সীমান্ত ।এপাড় ওপাড় দুপাড় এই আমার । আবার ঘর হবে ,সংসার হবে।ফেনীর সীমান্তে পরে থাকবে ঘর ভাঙা ভিট। পরিচ্ছন্ন উঠোন। আমার বউয়ের সাধের তুলসীতলা, একটা শিউলি গাছ।
পরে থাকবে প্রিয় নদী ফেনীর মায়াবী স্রোত ।
ওকে তো আর ছুঁতে পারবনা । কাঁটাতার পরে গেছে নদীর কিনারায়ে। নদীতে নানা অঘোষিত নিষেধ ।

ব্রিজ হওয়ার পর রামগড় যেতে গেলেও নদী ছুঁতে হবে না ।টপকে যেতে হবে ।
    ভাই আজ শেষবারের মতো নদীতে গেলাম ওর সাথে দেখা করতে । স্থান করলাম ।আদর করলাম   হাত বুলিয়ে দিলাম স্রোতকে । চোখের ক-ফোটা দিয়ে আমি ওকে ভিজিয়ে দিলাম।দুপা হেঁটে ওকে স্রোতের অনুকূলে ওকে এগিয়ে দিলাম। কানে কানে বললাম ... যা নদী যা আমার 'দেশ বাড়ি 'কে ভিজিয়ে উর্বর করে দে। আমার চোখের যে ক' ফোটা তোকে দিলাম ভাসিয়ে আমার মামা মামী যারা এখানে ভিটে আঁকড়ে পাহাড়া দিচ্ছে তাদের পা ধুইয়ে দে।.....

লেখক পরিচিতিঃ-
------------------------------

কল্যাণব্রত বসাক মূল্যত ছোটগল্পকার। প্রাবন্ধিক,  তিনি কবিও। লেখকের জন্ম ৪টা অক্টোবর ১৯৭৫ইং দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে। ১৯৯৩ সাল থেকেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ। তারপর থেকেই বিভিন্ন ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত হন। শিক্ষাবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে গ্রেজুয়েশন শেষ করে কখনো কোনো চাকুরীর সাক্ষাৎকারমুখী হননি। নিজে কিছু করার প্রচেষ্টা লেখকের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। ছোটগল্প ও প্রবন্ধে লেখকের চিত্রকল্পের জন্য লেখক এক স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করেছেন। মনন স্রোতে লেখকের 'ফেনী ব্রিজ' ধারাবাহিক গল্পটি পাঠক মহলে দারুণ সমাদৃত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...