Wednesday, March 24, 2021

কবিতা সাহা

মা

আবির ও তৃষা এখন খুবই খুশি। বহু প্রতীক্ষার পর, শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, তাদের দীর্ঘ সাত বছরের ভালোবাসা গতরাতে পূর্ণতা পেলো। পারিবারিক সমর্থনে সামাজিক রীতিনীতি মেনে, গত রাতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলো দুজনে। বাবা মায়ের  একমাত্র মেয়ে তৃষা। ছোট থেকেই অনেক আদর যত্নে বড়ো হয়ে উঠেছে,বলতে গেলে কাজকর্ম কিছুই পারে না সে। তাই শ্বশুর বাড়িতে আসার আগে থেকেই একটু ভয় কাজ করছিল তৃষার মধ্যে। যাইহোক আজ তাদের জীবনের এক বিশেষ দিন, আজ তাদের বৌভাত।তাই মন থেকে সব আশঙ্কা দূর করে,তৃষা ভাতকাপড় অনুষ্ঠান শেষে নিজ ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এমন সময় স্পৃহা অর্থাৎ তৃষার ননদ দরজায় এসে কড়া নেড়ে বললো— বৌদি তোমাকে মা নীচে যেতে বলেছে। সাথে সাথেই স্পৃহার সঙ্গে নীচে নেমে এলো তৃষা। তৃষাকে ডেকে শাশুড়িমা বললেন—বৌমা আজ তোমাকে রান্না করতে হবে। এই বাড়ির পুরোনো রীতি, বাড়ির নতুন বৌ নিজ হাতে রান্না করে দুপুরে সকলকে খাওয়াবে। এই কথা শুনা মাত্রই তৃষার পেট চিপতে লাগলো,সে যে কিছুই রান্না করতে পারে না। আবার নতুন বৌ মুখের উপর নাও করতে পারছে না । স্পৃহা যদিও তৃষাকে বলেছিল— বৌদি চলো আমি তোমাকে সাহায্য করে দেবো, কিন্তু শাশুড়ি মার কড়া আদেশ অন্যকিছু না হোক, পায়েসটা আজ তৃষাকে একাই রান্না করতে হবে, বাকিগুলো রান্নার মাসি করে দেবে। আশঙ্কিত মনে তৃষা রান্নাঘরে গিয়ে রান্না শুরু করলো এবং এর ঘন্টা দুয়েক পর  পরিবারের সবাই খাওয়ার টেবিলে একত্রিত হলো।আজ নিয়ম মতো নতুন বৌ-এর হাতের পায়েস দিয়েই খাওয়া শুরু করবে সবাই। তৃষাও পায়েস হাতে হাজির, কিন্তু ওর মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে, কারণ আজই জীবনে প্রথমবার পায়েস রান্না করেছে তৃষা। যাইহোক একে  একে সবার পাতে তৃষা পায়েস তুলে দেয়। পায়েস প্রথমেই মুখে তুলে নিল আবির, তৃষা তীর্থের কাকের মতো আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কেমন হয়েছে জানার জন্য, কিন্তু আবিরকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না আবিরের মা, আবির বলার আগেই তিনি মুখে দিয়ে বলে উঠলেন বৌমা এ তো অসাধারণ, খুব ভালো খেতে হয়েছে,কিগো আবিরের বাবা, স্পৃহা তোমরাও খাও। তৃষার শ্বশুর মশাইও পায়েস খেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে তৃষাকে বললেন মা তুমি স্বয়ং অন্নপূর্ণা। একথা শুনে তৃষা এবার একটু ভয়মুক্ত হলো। এবার তৃষাও খেতে বসেছে, সবার মতো সেও পায়েস দিয়েই শুরু করবে ভেবে পায়েসের বাটি হাতে নিতেই শ্বশুর মশাই বলে উঠলো— মা আমাকে আর একটু পায়েস দাও।ওনাকে পায়েস দিয়ে,তৃষা খাবে বলে বাটির দিকে হাত বাড়াতেই,শাশুড়িমা টেনে নিয়ে আরো কিছুটা পায়েস খেয়ে নিলো, এখন তৃষা মনে মনে ভাবছে—মা তো মা'ই হয়, নিজে খেয়ে সন্তানকে খাওয়ায়, কিন্তু.... শাশুড়িমা!!! যাইহোক আর একটুমাত্র পায়েস বাটিতে পরে আছে,সেটাই তৃষা খাবে ভেবে নিতে গেলে আবির তা চেয়ে বসে। তৃষা এটা অন্তত  বিশ্বাস করতে পারছিল না। আর কেউ না জানুক, আবির তো জানে তৃষা পায়েস খেতে কতটা ভালোবাসে, কিন্তু তারপরও আবির এমনটা করতে পারলো কিভাবে। টলমল চোখে তৃষা অন্য কিছু খেয়ে উঠে পরে। এমন সময় রান্নাঘর ঘোচাতে গিয়ে কাজের মাসি রান্না ঘর থেকে ডেকে বলে- গিন্নিমা টেবিলের উপর রাখা নুনের বয়াম টা কোথায়? এখানেই তো রেখেছিলাম। একটু থতমত খেয়ে আবিরের মা বলতে লাগলো—আরে আস্তে বল ঝুমা আস্তে বল বৌমা শুনতে পাবে। তুই যা, নুনের বয়াম আমি রেখেছি। পর্দার আড়াল থেকে তৃষা একথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে বুঝতে পারে তার সমস্ত ভাবনা ভুল, শাশুড়িরা শুধু শাশুড়ি না, মা-ও হতে পারেন, আমাদের ভাবনা সবসময় ঠিক হয় না, সবাই এক নন। চিনি ভেবে তৃষা এক বয়াম নুন দিয়ে যে পায়েস রান্না করছে কোনো ভাবেই তা খাওয়ার যোগ্য না, তা সত্ত্বেও সকলে কোনো অভিযোগ ছাড়াই, ওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সেই পায়েস হাসিমুখে খেয়েছেন।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...