Wednesday, March 24, 2021

দীপক দাস

নারীর অতীত ও ভবিষ্যৎ 

বর্তমান ভারতে যে সমস্যা  মারাত্মক  ব্যাধির আকার নিয়েছে  তা হল নারী  নির্যাতন।এই কাব্য আলেখ্য  সেই সমস্যাকে ছুঁয়ে  দেখবার সামান্য  প্রয়াস। নারী সম্পর্কে  নজরুল  বলছেন 
  "বিশ্বে যা কিছু  মহান সৃষ্টি  চির কল্যাণকর
 অর্ধেক  তার করিয়াছে  নারী,অর্ধেক  তার নর"
অথচ যুগ যুগ ধরে  নারী নির্যাতনের শিকার।রামায়ণ  মহাভারত  ভারতের  দুই  প্রাচীন  মহাকাব্যের কেন্দ্রীয়  দুই  নারী চরিত্রই পুরুষ  কর্তৃক নারী নির্যাতনের চরম দৃষ্টান্ত। একবার  নয় দু-দুবার সীতাকে  অগ্নি পরীক্ষার  মধ্য দিয়ে  সতীত্বের পরীক্ষা দিতে  হয়েছে, তবে রামচন্দ্রের  জন্য  কেন নেই  অগ্নি পরীক্ষার  ব্যবস্থা?দ্বিতীয়বার  অগ্নি পরীক্ষার  জন্য  আহুত  হলেন সীতা।
"উঠে  দাঁড়ালেন  সীতা/তারপর অগ্নি কুন্ড থেকে মুখ  ফিরিয়ে /পিছনে রেখে জনতার কৌতূহল /ব্রাহ্মণদের সর্বজ্ঞ  দৃষ্টিপাত/রাজপুরুষদের চকিত  ব্যস্ততা  আর/ইক্ষাকুতিলক রামচন্দ্রের  উত্কন্ঠা/হেঁটে  এলেন  রাজসভার বাইরে /কৃষ্ণা ধরিত্রীর বুকে কিছুক্ষণ  দাঁড়িয়ে  রইলেন /তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা নারী/সামনে আদিগন্ত মাঠে শস্যের সোনালি  আভা/ওইখানে  তাঁর  জন্মের  পরিচয়/ওই কালো মাটির  বাসার দিকে /এগিয়ে  যান তিনি /দুহাত বাড়িয়ে  মাটি বুকে টানে/মাটির  কন্যাকে"।
তীব্র  অভিমানে  সীতা মাটির  বুকে আশ্রয় নেয়। মহাভারতের কেন্দ্রীয়  নারী চরিত্র  দ্রৌপদীকে রজঃস্বলা  অবস্থায়  টেনে  আনা হয় রাজ সভায়-
  " টেনে  ধরলেন  চুল,দুঃশাসন  এসে/সেই  মেঘবর্ণ   চুল যেখানে  ফাল্গুন মুখ বুজে শুয়েছিল  নরম নিশীথে/কন্দর্প নিন্দিত  কান্তি ভীমসেন এইচুলে খেলা করতেন /এই চুলের  সুগন্ধে স্নায়ু শান্ত রাখতেন  রাজা যুধিষ্ঠির /দুঃশাসন সেই  চুল টানতে  টানতে /এনে প্রকাশ্য সভায় দাঁড় করালেন /এক অসূর্যম্পশ্যা  মহিষীকে"।
তোমরা পুরুষেরা বাঁ হাতে ঠেলে  অন্দরে পাঠাও ডানহাতে  তোমরাই  গা থেকে  কাপড়  টেনে খুলে নাও উন্মুক্ত  বাজারে। 
মধ্যযুগের মনসামঙ্গল  কাব্যের  নায়িকা  বেহুলাকে মনে করুন-কিসের বিনিময়ে  সে ফিরে  পেল তার স্বামীর প্রাণ -শুনুন তার কথা
  " হে দেবতারা/আজ তোমাদের  সামনে এসে দাঁড়িয়েছি এই বলে/ফিরিয়ে  দাও এই শবের প্রাণ / ভিক্ষা  নয়, বিনিময়ে  দেব তোমাদের  যা কাঙ্খিত / বানিজ্যের  শর্তে / তোমরা  দেবে প্রাণ, আমি দেব,আর কিছু  নেই, তাই / আমার যৌবন/ দেবতারা প্রস্তুত হও/এই আমি ছিড়েঁ ফেলছি/আমার স্তনাংশুক /এই ছুঁড়ে  ফেললাম সব আভরণ / আর একবার মুহূর্তের জন্য  অবরুদ্ধ  করো দৃষ্টি / আমি  নগ্ন করলাম আমার   শরীর / আর এই নামিয়ে রাখলাম  মৃতদেহ / ওঠো জেগে ওঠো,মৃত,আমার  স্বভূমি / আমার নতুন জন্মের  আশ্রয় / জাগো লখিন্দর  জাগো"।
বেহুলা তার পরমপ্রিয় পুরুষের  জন্য  পুরুষদের  কাছেই  দিতে হল নারীর  শ্রেষ্ঠতম সম্পদ।
এই নির্যাতনের  ধারাবাহিকতা  আজও বহমান।বাংলাদেশের  একজন লেখিকা শুধু  মেয়েদের অধিকারের  কথা বলতে গিয়ে  দেশ থেকে বিতাড়িত  হয়েছেন।অথচ লেখিকা তসলিমা নাসরিনের  কবিতায়  বাংলাদেশের  প্রতি  অকৃত্রিম  ভালোবাসাই প্রকাশিত হয়েছে। দূর  প্রবাসে রাত্রির  বুকে মাথা রেখে বাংলাদেশের  কথা ভাবতে ভাবতে  কত বিনিদ্র রাত  তার কেটে যাচ্ছে  কে রাখে তার খবর?
"ভাত মাছ নিয়ে  আজকাল  ঘনঘন বসি খাবার টেবিলে /কবজি ডুবিয়ে ডাল নিই মাখি,মাছি  তাড়াবার মতো/ বাঁ হাতখানা মাঝে মাঝে  দুলে ওঠে স্ক্যানডিনেভিয়ার শীত নিয়ন্ত্রিত  ঘরে / পোকা মাকড়ের বংশ ও নেই  তবু কী যেন তাড়াই মনে  মনে / দুঃখ/ মাছের  মলিন  টুকরো  সবজি থালার কিনারের নুন/ আর ঘন ঝোল মাখা ভাত থেকে সরতে চায়না মোটে হাত/ ইচ্ছে করে  সারাদিন ভাত নিয়ে মাখামাখি  করি খাই/ খুব  গোপনে কী  বুঝিনা আমি  কেন সোনার চামচ ফেলে রেখে ভাতের  স্পর্শ  এত চাই/ আসলে  ভাত স্পর্শ  করলে ভাত নয়, হাতের  মুঠোয়  থোকা থোকা বাংলাদেশ  উঠে  আসে"।
সমাজের  শ্রেষ্ঠ  নারীদের যদি  এরূপ শিকার  হতে হয় তাই সাধারণ  অসহায়  নারীদের হাহাকারের শব্দে  বাতাস আজ ভারী হয়ে আছে। দিল্লির নির্ভয়া থেকে  সমগ্র  ভারতে কত নারী প্রতি দিন হারিয়ে  যাচ্ছে  কে দেবে তার পরিসংখ্যান? 
 তাই নারীকে  আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার  নিজেই অর্জন  করতে হবে।  এই সময়ে প্রত্যেক নারীকে  রাজকন্যা  চিত্রাঙ্গদা হয়ে  উঠতে হবে। যে নারী শুধু  লালিত্যের সাধনাই করবে না, বীরত্বের  সধনাও করবে
বিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রমে নারীদের জন্য  জুডু, ক্যারাটে বাধ্যতামূলক করতে হবে।নারীদের  নিজেদের  দিকে  তাকানো দরকার।আত্মরক্ষায় যত্নবান হতে হলে শরীরচর্চা  আবশ্যিক  হওয়া চাই। এই বার্তাই  বর্তমান  সময়ে সমগ্র  নারী সমাজের  কাছে  পৌঁছে  দিতে চাই।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...